আমরা প্রায়ই ঘর থেকে বেরোবার সময় কিছু না কিছু নিতে ভুলে যাই। এইতো সেদিনই অ্যাসাইনমেন্ট ফেলে রেখে ক্লাসে চলে গেলাম। এছাড়া কখনো ফোনটা, কখনো বা তালার চাবি – মনের ভুলে ঘরে ফেলে রেখে যাওয়ার জিনিসের কি অভাব আমাদের?
কিন্তু কখনো কি তোমার জীবনে এরকম হয়েছে যে, তুমি তোমার জুতো জোড়া ফেলে রেখে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছো? কখনো না, তাই না? জুতো এমনভাবে আমাদের জীবনের সাথে মিশে আছে যে আমরা একটা জুতোহীন জীবন কল্পনাও করতে পারি না। আজ আমরা দেখে নেবো আমাদের এই চিরচেনা জুতোরই অজানা কিছু ইতিহাস।
১. মিশরীয় বৈষম্য
আদ্যিকালের মিশরে মানুষে মানুষে তফাৎ বোঝাতে কিন্তু জুতোর ব্যবহার করা হতো। সবাইকে সব রকমের জুতো পরতে দেয়া হতো না। যারা দাস শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, তারা পরতেন পাম গাছের পাতা দিয়ে বানানো জুতো। কিছু কিছু সময়ে তো তাদেরকে জুতাই পরতে দেয়া হতো না! সাধারন জনগণ পরতেন প্যাপিরাস পাতা দিয়ে বানানো জুতো।
আর সমাজের একেবারে উঁচুস্তরের মানুষদের জুতোর মাথা থাকতো চোখা। রঙের ব্যাপারেও তাদের পছন্দ একটু আলাদা ছিল। লাল আর হলুদ রঙটা তারা নিজেদের করে রেখেছিলেন। সমাজের বাকি শ্রেণির মানুষেরা আর যা-ই করুক না কেন, কখনো লাল কিংবা হলুদ রঙের জুতো পরতে পারতেন না। আজ আমরা নিজেদের ইচ্ছেমতো নানান রঙের-ঢঙের জুতো পরতে পারি। বিষয়টা কল্পনা করতেও কষ্ট হয় যে এককালে মানুষ নিজেদের পছন্দমতো জুতো পরে ঘুরতে পারত না।
২. বাম পায়ের জুতো ডান পায়ে
ছোটবেলায় এই ভুলটা আমি সবসময় করতাম, বাম পায়ের জুতোটা ডান পায়ে পরে ফেলতাম। মজার ব্যাপার কি জানো, ১৮১৮ এর আগে জন্ম নিলে এই ভুলটা আমার করা হতো না! কেননা, ডান আর বাম পায়ের জুতা যে আলাদা হওয়া সম্ভব সেটা আবিষ্কারই হয়েছে ১৮১৮ সালে।
ফিলাডেলফিয়ায় ১৮১৮ সালে ভিন্ন পায়ের জন্য ভিন্ন জুতো আবিষ্কৃত হওয়ার আগে জুতোকে স্রেফ প্রয়োজন বলে মনে করা হতো। কিন্তু এর পর থেকে জুতোকে আরামদায়ক সামগ্রীতে পরিণত করে তোলার চেষ্টাও শুরু হয়ে যায়।
৩. খড়ম আবিষ্কার
আমরা সবাই কি খড়ম চিনি? খড়ম হলো কাঠের তৈরি জুতো। খড়ম প্রথম ডিজাইন করা হয় হল্যান্ডে। হল্যান্ডের বেশিরভাগ এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিচে হওয়ায় এ অঞ্চলে জলাভূমির পরিমাণ বেশি ছিল।
পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যেত বলে চামড়ার তৈরি স্যান্ডেলগুলো এ অঞ্চলে মোটেও ধোপে টেকেনি। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বুদ্ধিমান ডাচেরা কাঠের জুতোর ডিজাইন করে বসে। এই কাঠের জুতোর প্ল্যান যে সুদূরপ্রসারী ছিল সেটা বলাই বাহুল্য। কেননা আজও কিন্তু আমরা বিভিন্ন অঞ্চলে খড়মের ব্যবহার দেখতে পাই।
৪. শূন্যে ভেসে থাকা বুট জুতো
One small step for a man, one giant leap for mankind
চাঁদে পদার্পণ করা প্রথম মানুষ নিল আর্মস্ট্রং বলেছিলেন কথাটি। মজার ব্যাপার হলো, যে বুট জোড়া পরে তিনি প্রথম চাঁদের বুকে হেঁটেছিলেন সেই বুটজোড়া এখনো কিন্তু মহাকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে! শুনতে হাস্যকর মনে হলেও সত্যি যে শুধু সংক্রমণের ভয়েই তাঁর বুট জোড়াকে মহাকাশে রেখে আসা হয়।
৫. হাই হিল
১৬ শতকের যেসব মেয়েরা সমাজের উঁচু শ্রেণিতে বসবাস করতেন, হাই হিল জুতোর উপর তাদের ছিল দুর্নিবার আকর্ষণ। মাঝে মাঝে তাদের জুতো এতটাই উঁচু হতো যে হাঁটার সময় পরিচারিকার সাহায্য ছাড়া তারা চলতেই পারতেন না।
জুতোর আকার এতটাই লাগামছাড়া হয়ে ওঠে যে জুতোর আকার ঠিক রাখতে এই শতকে আইনের প্রচলন হয়। আজগুবি ডিজাইনের জুতো যে শুধু সেসময়ই ছিল তা কিন্তু নয়। এ ধরণের চিন্তাভাবনা প্রতি প্রজন্মের ডিজাইনারদের মাঝেই লক্ষ্য করা গেছে।
আলেক্সান্ডার ম্যাককুইন নামের একজন ডিজাইনার ২০১০ সালে একটি ফ্যাশন শো এর জন্য ১০ ইঞ্চি উচ্চতার একটি হাই হিল জুতো ডিজাইন করেন। কিন্তু বিধিবাম, বিপজ্জনক বলে কোন মডেলই তাঁর ডিজাইন করা এই বিশাল জুতো জোড়া পরতে রাজি হন নি। ম্যাককুইন সাহেব কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন মডেলদের এই সিদ্ধান্তে সেটা একবার ভাবলে আমার নিজের মনটাই খারাপ হয়ে যায়।
আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী জুতোর পেছনেও যে এত চমৎকার সব ইতিহাস জড়িয়ে ছিল তা কি আমরা সবাই আগে জানতাম? এরকম চমকপ্রদ ও প্রয়োজনীয় আরো বিষয় সম্পর্কে জানতে ঘুরে এসো আমাদের অন্য ব্লগগুলো থেকে।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন