একটা বছরের পর আরেকটা বছর আসে, সেই সাথে আমাদের দেয়াল দখল করে নেয় নতুন ক্যালেন্ডার বা বর্ষপঞ্জি। শুধুই কী দেয়াল? ক্যালেন্ডার থাকে আমাদের ফোনে, টেবিলে এমনকি পকেটেও! ক্যালেন্ডারে তারিখ দেখা ছাড়া আমাদের একদিনও চলে না। কিন্তু কখনো কি আমাদের এই ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করে না? চলো আজকে তাহলে আমাদের এই বন্ধু ক্যালেন্ডারের কেচ্ছা-কাহিনী জেনে আসা যাক!
ক্যালেন্ডারের ইতিহাস
আমরা ইংরেজি সাল বা খ্রিষ্টাব্দ বলতে যা জানি, আসলে তা হলো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। আর ১লা জানুয়ারিতে আমরা যেই নববর্ষ পালন করি, তাও পালন করা হয় এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে৷ কিন্তু এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারটা এলো কোত্থেকে? এর পেছনে রয়েছে এক বি-শা-ল ল-ম্বা ইতিহাস। উফফ… দেখো কান্ড! ক্যালেন্ডারের কাহিনী তোমাদের জানাতে যেয়ে সেই কোন আমলে চলে যাচ্ছি! কিন্তু জানতে হলে যে একটু পেছনে ফিরে তাকাতেই হবে।
ক্যালেন্ডার যখন ছিল না, তখন দিনক্ষণ নির্ধারণ করা বেশ কঠিন একটা কাজ ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে মিশরীয় জ্যোতির্বিদরা একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে দিনকে ১২ ঘন্টা ও রাতকে ১২ ঘন্টা হিসেবে ভাগ করে ২৪ ঘন্টায় একটি পূর্ণ দিন ধার্য করা হয়৷ গ্রিক দার্শনিক প্লেটো একটি বিশেষ পানির ঘড়ি তৈরি করে তাঁর আশ্রমের ছেলেদের পাঠ দিতেন৷
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের মূল কাঠামোটা আসলে সৌর বর্ষের উপর নির্ভরশীল। এর বর্তমান যেই কাঠামোটা আমরা দেখতে পাই, এখানে পৌঁছাতে সময় লেগেছে কয়েকশো বছর! সেই সাথে করা হয়েছে নানান পরিবর্তন ও পরিমার্জন।
চাঁদ নাকি সূর্য?
একটু ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম, মানুষ যেদিন বছর কীভাবে গুনতে হয় তা শিখলো, সেদিন চাঁদের হিসেবেই শুরু করেছিল বছর গোনার কাজ। সৌর গণনার ব্যাপারটা শুরু হয় আরো পরে। তবে তার মানে এই না যে সৌর ও চন্দ্রের সাপেক্ষে গণনার নিয়ম একই। সৌর গণনার সাথে ঋতুর যোগসদৃশ থাকলে, চাঁদের গণনার সাথে ঋতুর কোনো সম্পর্ক নেই।
সুমেরীয় সভ্যতায়, সর্বপ্রথম ক্যালেন্ডারের মতন এক বস্তু লক্ষ করা যায়৷ আগেকার দিনে মিশরীয়রা জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিক দিয়ে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর থেকে অনেক এগিয়ে ছিল। ধারণা করা হয়, এই সভ্যতাতেই পৃথিবীর প্রাচীনতম সৌর ক্যালেন্ডার আবিষ্কৃত হয়৷ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেন যে, খ্রিষ্টপূর্ব ৪২৩৬ অব্দ থেকে মিশরীয়রা ক্যালেন্ডার ব্যবহার শুরু করে।
আরো পড়ুন: রঙে ভরা বৈশাখ!
দরকারটা যখন কৃষকদের:
কৃষকেরা তাদের ফসল উৎপাদনের নির্দিষ্ট সময় নির্ণয় করার জন্য কালেন্ডারের প্রয়োজনীয়তা বেশি অনুভব করতো৷ যেহেতু আগেকার দিনে চন্দ্রের উপর নির্ভর করে দিন-তারিখ নির্ধারণ করতে হতো, আর এর সাথে ঋতুর কোনো যোগসদৃশই ছিল না, তাই তাদের ফসল উৎপাদন করতে বেশ অসুবিধায় পড়তে হতো। পন্ডিত পন্ডিফোরাই ৭৫৬ অব্দে সর্বপ্রথম ক্যালেন্ডারের মতনই একটা জিনিসের আবিষ্কার করেন।
চাষাবাদের উপর ভিত্তি করেই এটি তৈরি করা হয়৷ মাস সংখ্যা ছিল ১০। প্রবল শীতে ইউরোপে চাষাবাদ বন্ধ থাকতো দেখে শীতের দুই মাস এইখানে যোগ করা হতো না৷ এর নাম দেওয়া হয় ‘ক্যালেন্দি’। এখান থেকেই ‘ক্যালেন্ডার’ শব্দটির উৎপত্তি৷ তবে বছর গণনা শুরু হতো সেদিন থেকে, যেদিন দিন ও রাত সমান হতো৷ তখনকার মতে মার্চের ২৫ তারিখ থেকে। তবে বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর দিন ও রাত সমান হয়৷
মাস যখন ১০টি!:
সভ্যতার সব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের দিক দিয়ে অন্যদের থেকে অনেক অনেক বেশি এগিয়ে ছিল গ্রিক ও রোমানরা। গ্রিকদের ক্যালেন্ডার তৈরির আইডিয়াটা নেওয়া ব্যবলিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে। অবশ্য রোমানরা তাদের ক্যালেন্ডারের ধারণা নেয় গ্রিকদের কাছ থেকেই৷ তবে তাদের ক্যালেন্ডারে মাস ছিল ১০টি আর বছর গণনা করা হতো ৩০৪ দিনে। সেই হিসেবে মাসে সপ্তাহ থাকতো ৩টা করে আর সপ্তাহে দিন থাকতো ১০টি করে।
মজার ব্যাপার হলো শীতের দুই মাস তারা তাদের বর্ষ গণনার হিসেবের মধ্যেই ধরতো না! আর তাদের বছর শুরু হতো মার্চ মাস থেকে৷ অর্থাৎ তারা বর্ষবরণ করতো ১লা মার্চে৷ তবে বছর গণনা করতে যেয়ে যে মাঝের ৬০ দিন বাদ পরে যেত, এইটা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথাই নেই!
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
রোমের প্রথম সম্রাট ছিলেন রমুলাম। একই সাথে ছিলেন বেশ বিখ্যাতও। তিনিই আনুমানিক ৭৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে রোমান ক্যালেন্ডার প্রচলন করার চেষ্টা করেন।
লিপ ইয়ারের সূচনা:
কিন্তু সেই যে ২ মাস বাদ পরে যায়, তার কথা কি মনে আছে? ৭১৩ অব্দে আগের ১০ মাসের সঙ্গে নতুন করে সেই দুই মাস যোগ করেন রোমান সম্রাট নুম পামপিলিয়াস৷ আর সেই দুটো মাস হচ্ছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি। তিনিই জানুয়ারিকে প্রথম মাস হিসেবে ক্যালেন্ডারে যুক্ত করেন। প্রথম দিকে জানুয়ারি মাস ২৯ দিনে এবং ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে ধার্য করা হয়। এই ১২টা মাসের বাইরে আরো একটা মাস যুক্ত করা হয়, যার নাম ছিল মারসিডানাস। এই মাস আবার ছিল ২২ দিনের৷ মজার ব্যাপার হলো এই মাস গণনা করা হতো এক বছর পর পর৷ তাও আবার ফেব্রুয়ারির ২৩ ও ২৪ তারিখের মাঝখানে! এই মাসের হিসাব পরিবর্তন করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪৩২ অব্দে৷ চার বছর পর পর আমরা যে লিপ ইয়ার পালন করি, তার প্রবর্তকও এই রোমানরাই।
৪৫১ অব্দে রোমের শাসনভার পরিচালনা করতেন ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেটের একটি পরিষদ দ্বারা, যা ‘দিসেসভিরস’ নামে পরিচিত ছিল। এই পরিষদই প্রথম মার্চের পরিবর্তে জানুয়ারি থেকে বছর গণনার নির্দেশ দেন।
জুলিয়াস ক্যালেন্ডার:
বিখ্যাত রোমান সম্রাটদের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে সবার আগে আসে জুলিয়াস সিজারের নাম। তিনি তার আমলে চালু করলেন নতুন ক্যালেন্ডার। জুলিয়াস সিজারই মিশরীয় ক্যালেন্ডার এখানে আনেন। জ্যোতির্বিদদের পরামর্শে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সেই বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মাঝখানে ৬৭ দিন ও ফেব্রুয়ারির শেষ ২৩ দিনসহ মোট ৯০ দিন যুক্ত করে আগের ক্যালেন্ডারটা পরিমার্জন করেন৷ আর সেই ক্যালেন্ডারটাই জুলিয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে পরিচিত।
‘30 days in September, April, June and November…’ এই ছোট্ট কবিতাটা ছোটবেলায় আমরা সবাই শিখেছি। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারেও মার্চ, মে কুইন্টিলিস ও অক্টোবর মাসের দিন সংখ্যা ছিল ৩১ এবং জানুয়ারি ও সেক্সটিনিস মাসের সঙ্গে দুইদিন যুক্ত করে দিন সংখ্যা করা হয় ৩১৷ ফেব্রুয়ারি মাস গণনা হতে থাকে ২৮ দিনে। পরবর্তীতে জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে প্রাচীন কুইন্টিলিস মাসের নাম করা হয় জুলাই এবং তাঁর পুত্র অগাস্টাস সিজারের নামানুসারে সেক্সটিনিস মাসের নাম দেওয়া হয় অগাস্ট। এই দুই সম্রাটই তাঁদের নামের মাসটিকে ৩১ দিনের করার নির্দেশ দেন।
ফলে পন্ডিতেরা বাধ্য হয়ে ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের করে ফেলেন। তাঁর আমলেই লিপ ইয়ারের প্রচলন শুরু হয়৷ তিনি আলেকজান্দ্রিয়া থেকে গ্রিক জ্যোতির্বিদ মোসাজিনিসকে নিয়ে আসেন ক্যালেন্ডার সংস্কারের জন্য। তিনি খেয়াল করেন, পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা। সেই হিসাবে প্রতি বছর যদি ৩৬৫ দিন এবং চার বছর পরপর ৩৬৬ দিনে বছর হিসাব করা হয়, তাহলে আর কোনো ঝামেলাই থাকবে না! মোসাজিনিস এই অতিরিক্ত দিনের নাম দেন লিপ ইয়ার এবং সংযুক্ত করেন জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে। ৩৪৫ অব্দে রোমান কনসালের কার্যভার গ্রহণের সময় থেকেই জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের কার্যকারিতা শুরু হয়।
তবে ৩৬৫ দিনে সৌর বর্ষ গণনার কাজটি করতো মিশরীয়রা। কিন্তু রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সংস্কারের ফলে তা এসে দাঁড়ায় তিনশ সাড়ে ৬৫ দিনে!
আমরা যে খ্রিস্ট বছর বা খ্রিস্টাব্দ বলি, তার সূচনা হয় আরো পরে৷ যিশুখ্রিস্ট যেদিন জন্মগ্রহণ করেন, সেদিন থেকে ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াম নামের এক পাদ্রি (মতান্তরে রোমান পন্ডিত প্রগমাকিউলাস) ৫৩২ অব্দ থেকে যে বছর গণনা শুরু করেন, তাই হলো খ্রিস্টাব্দ।
আরো পড়ুন: নতুন বছরে জীবন বদলাতে ১০টি লক্ষ্য
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার
এবার একটু সামনে আসা যাক৷ ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের কথা৷ রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিদদের পরামর্শে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার পরিমার্জন করেন৷ তিনি হিসাব করে দেখেন একটি বছর পূর্ণ হয় ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে। কিন্তু জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ১১ মিনিট ১৩ সেকেন্ড সময় বেশি ধরা হয়েছে৷ ফলে ১২৮ বছরে পুরো একটি দিনই উল্টোপাল্টা হয়ে যায়।
এই অসুবিধা দূর করতে তাঁর নির্দেশে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাস থেকে দেওয়া হয় ১০ দিন৷ ফলে ওই মাসেরর ৪ তারিখকে করা হয় ১৫ তারিখ। এরই নামগ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। আর এর সর্বশেষ সংস্করণটি সবাই গ্রহণ করে।
মাস ও বারের নামকরণ:
রাষ্ট্রের শাসনের কাজে থাকা কিছু প্রভাবশালী মানুষ নিজেদের সুবিধামত দিন-মাস যোগ করতেন ক্যালেন্ডারে। অবশেষে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটান। তবে রোমানদের হাতে ক্যালেন্ডারের জন্ম ও বিকাশ হয়েছে বলে বারো মাসের বেশিরভাগ মাসের নামকরণ করা হয়েছে রোমান সম্রাট ও দেবতাদের নামানুসারে। চলো সেগুলো জেনে আসা যাক-
জানুয়ারি: রোমান দেবতা ‘জানুস’ এর নামানুসারে এই মাসের নাম রাখা হয় জানুয়ারি। জানুস অর্থ হলো ‘দুটি মুখ’। যার একটি মুখ পেছনের দিকে এবং আরেকটি মুখ সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অর্থাৎ তিনি পিছন বা অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনে বা ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করছেন। নববর্ষের প্রথম দিনটিও অতীত ও ভবিষ্যতের মেলবন্ধন ঘটায়।
ফেব্রুয়ারি: ফেব্রুয়ারি এসেছে ‘ফেব্রুয়া’ থেকে, এর অর্থ হলো পবিত্র।
মার্চ: রোমান যুদ্ধদেবতা মার্সিয়াস বা মরিসের নামানুসারে এই মাসের নাম মার্চ।
এপ্রিল: ল্যাটিন শব্দ ‘এপিরিবি’ থেকে এসেছে এপ্রিল, যার অর্থ খুলে দেওয়া। এপ্রিল মাসে যেহেতু বসন্তের দ্বার খুলে যায়, তাই এমন নাম। কেউ কেউ মনে করেন গ্রিক শব্দ ‘এপ্রিনিস মাইসা’ থেকে এসেছে এপ্রিল শব্দটি। আবার অনেকে মনে করেন দেবি আফ্রোদিতির নাম থেকেই এসেছে এপ্রিল।
মে: রোমান আলোকদেবী ‘মেইয়ার’ এর নামানুসারে নাম রাখা হয় মে।
জুন: ‘জুনো’ নামের রোমানদের একজন নারী, চাঁদ ও শিকারের দেবী ছিলেন। তাঁর নামেই জুনের উৎপত্তি।
জুলাই: রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে এই মাসের নাম জুলাই।
অগাস্ট: অগাস্টাস সিজার নামে জুলিয়াস সিজারের এক পুত্র ছিল। সেখান থেকেই এসেছে অগাস্ট নামটি।
সেপ্টেম্বর: ল্যাটিন ভাষায় সেপ্টেম্বর অর্থ হলো ৭। কিন্তু বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসটি হলো ৯ নম্বর মাস। অবশ্য এটা আর পরে পালটানো হয়নি৷
অক্টোবর: অক্টোবর শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ৮ থেকে।
নভেম্বর: ‘নভেম’ অর্থ ৯। যদিও বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এটি এখন ১১ নাম্বার মাস।
ডিসেম্বর: ল্যাটিন শব্দ ‘ডিসেম্বর’ অর্থ হলো ১০।
মাসের পাশাপাশি সপ্তাহের একেকটা দিনও একেক ধরণের মানে ধারণ করে। যেমন:
- Saturday বা শনিবার: রোমান সাম্রাজ্যের লোকেরা বিশ্বাস করতো, ‘স্যাটান’ নামের চাষানাদের জন্য একজন দেবতা আছেন। তাঁর হাতেই নাকি আবহাওয়া ভালো-খারাপ করার শক্তি আছে৷ তাই তাঁর সম্মানে তারা সপ্তাহের একটি দিনের নাম রাখেন ‘স্যাটনি ডেইজ’। সেখান থেকেই আসে Saturday।
- Sunday বা রবিবার: অনেক অনেক দিন আগের কথা। আগেকার দিনের দক্ষিণ ইউরোপের বাসিন্দারা বিশ্বাস করতো একজন দেবতা রয়েছেন, যিনি শুধু আকাশে গোলাকার আলোর বল আঁকেন। আর ল্যাটিন ভাষায় তাঁর নাম হলো ‘সলিছ’। তারা তাঁকে ডাকতো ‘সলিছ ডে’ বলে। তবে উত্তর ইউরোপের বাসিন্দারা তাঁকে ‘স্যানাল ডেইজ’ নামে ডাকতো। সেখান থেকেই Sunday শব্দটির উৎপত্তি।
- Monday বা সোমবার: রাতের বেলার আকাশের গায়ে রূপালী বল দেখে দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা একে ডাকতো ‘লুনা’ বলে। এটিও একটি ল্যাটিন শব্দ৷ তবে উত্তর ইউরোপের মানুষরা একে ডাকতো ‘মোনান ডেইজ’। সেখান থেকেই এসেছে Monday
- Tuesday বা মঙ্গলবার: আগেরকার দিনে রোমানরা বিশ্বাস করতো, টিউ নামে তাদের একজন দেবতা আছে, যিনি কিনা যুদ্ধ দেখাশোনা করেন৷ তাদের মতে, যারা টিউকে মেনে চলতো তাদেরকে টিউ যুদ্ধের ময়দানে সাহায্য করতো। আর যারা পরলোকগমন করেছে, তাদের বিশ্রামের জায়গা করে দিতে টিউ একদল মহিলাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে পাহাড় থেকে নিচে নেমে আসতো। তারা একে ‘ডুইস’ বলে ডাকতো। সেই থেকে এসেছে Tuesday।
- Wednesday বা বুধবার: দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা ভাবতো, দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলে ‘উডেন’। একবার তিনি জ্ঞান আহরণ করতে যেয়ে নিজের এক চোখ হারান। সেই চোখটি তিনি তাঁর লম্বা টুপি দিয়ে ঢেকে রাখতেন। তাঁর আবার ছিল দুইটি পাখি, যারা তাঁর গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতো। সেই পাখি দুইটা সারারাত পুরো পৃথিবীর ঘটনাবলী উডেনকে শোনাতো। এভাবেই উডেন পুরো পৃথিবীর খোঁজখবর রাখতো৷ এইজন্য লোকেরা বলতে ওয়েডনেস ডেইস। সেই থেকে এসেছে Wednesday।
- Thursday বা বুধবার: আগে মানুষ মনে করতো, বিদ্যুৎ চমকানো ও বজ্রপাতের পেছনে রয়েছে ‘থর’ নামের এক দেবতা৷ তাদের মতে থর যখন রাগান্বিত হন, তখন তিনি তাঁর ছাগলের গাড়িতে বসে আকাশের দিকে তাঁর হাতুড়ি নিক্ষেপ করেন। ছাগলের গাড়ির চাকার শব্দ হচ্ছে বজ্রপাত ও হাতুড়ির আঘাতে সৃষ্ট শব্দটি হচ্ছে বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দ। থরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য তারা সপ্তাহের একটি দিনের নাম রাখেন ‘থার্স ডেইস’। সেই থেকে এসেছে Thursday।
- Friday বা শুক্রবার: পুরাণমতে, ওডিন নামের একজন দেবতা ছিলেন। আর তাঁর স্ত্রী ছিলেন ফ্রিগ৷ তিনি ছিলেন প্রকৃতি, ভালোবাসা ও বিবাহের দেবী। ওডিনের পাশে সবসময় তাঁর স্ত্রী ফ্রিগ থাকতেন। তাঁরা একসাথে পৃথিবীকে দেখতেন এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতেন। তাই সপ্তাহের একদিনের নাম রাখা হয় ‘ফ্রিগ ডেইজ’। সেখান থেকেই এসেছে ‘ফ্রাইডে’।
এবার ফিরে আসা যাক আমাদের ক্যালেন্ডারের গল্পে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১লা জানুয়ারি হচ্ছে বছরের প্রথম দিন। আর এটাই নববর্ষ হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তবে এটা কিন্তু ইংরেজি নববর্ষ না। কারণ ব্রিটিশরা যেহেতু পার্লামেন্টে আইন পাস করে নিজেদের ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাই একে কোনোভাবেই ইংরেজি নববর্ষ বলা যাবে না। ১লা জানুয়ারি মূলত রোমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ বা আন্তর্জাতিক নববর্ষ।
এখনো আছে ভিন্ন ভিন্ন সব ক্যালেন্ডার:
তবে এখনো সারাবিশ্বে প্রায় ৪০ ধরণের ভিন্ন ভিন্ন ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন: উত্তর- পূর্ব আফ্রিকার প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ইথিওপিয়ার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছর পূর্ণ হয় ১৩ মাসে! মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া বা কপটিক ক্যালেন্ডারের মত তাদের ক্যালেন্ডারের প্রতিটি মাস ৩০ দিনের হওয়ায়, বছরের ৫ বা ৬টি দিন অতিরিক্ত থেকে যায়। আর সেখান থেকেই আসে ১৩তম মাসটি৷ ১৯১৭ সালে রাশিয়ান বিপ্লবের আগ পর্যন্ত রাশিয়াতে নতুন ক্যালেন্ডার গ্রহণযোগ্য ছিল না। এ কারণে ১৯০৮ সালের লন্ডন অলিম্পিকে রাশিয়ান দল ১২ দিন দেরিতে পৌঁছায়! আবার, ১৭৫২ সালে যখন ব্রিটেনে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করা হয়, তখন জনসাধারণ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিল ১১ দিন হারানোর কারণে!
সূত্র:
- https://m.banglanews24.com/kids/news/bd/162391.details
- http://archive1.ittefaq.com.bd/print-edition/kishur-kotha/2015/01/14/25740.html
- https://m.timecenter.com/articles/the-history-of-the-western-calendar/
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন