ষাটের দশকে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক খুব ইন্টারেস্টিং একটা পরীক্ষা করেন। তিনি চার বছর বয়সের কয়েকজন শিশুকে একটা রুমের মধ্যে রাখেন। শিশুদের সবার সামনে একটা করে মার্শমেলো, যেটা একজাতীয় মিষ্টি খাবার, রাখা হয়। সবাইকে এবার একটা শর্ত দেয়া হয়। শর্তটা হলো যে, পনেরো মিনিট পরে ওই শিক্ষক রুমে আসবেন, এবং কেউ যদি ওই পনেরো মিনিটে তার মার্শমেলোটা না খেয়ে থাকে, তাহলে আরেকটা মার্শমেলো পাবে সে।
লোভনীয় প্রস্তাব, কিন্তু চার বছরের শিশুরা সে প্রস্তাবের কতটুকুই বা বুঝবে? যা হোক, ক্যামেরায় পুরো এক্সপেরিমেন্টটা ধারণ করা হয়। পনেরো মিনিট পরে শিক্ষক রুমে প্রবেশ করেন, এবং দেখেন যে বেশিরভাগ সময়েই গড়ে প্রতি তিনজন শিশুর একজন তার মার্শমেলোটা রেখে দিয়েছে, যাতে সে পরে আরেকটা মার্শমেলো খেতে পারে!
পরীক্ষার পরের ধাপটা হয় এই শিশুগুলো একটু বড় হলে, একাডেমিক পড়ালেখা শুরু করলে। স্ট্যানফোর্ডের সেই শিক্ষক শিশুদের বেড়ে ওঠার দিকে নিবিড় লক্ষ্য রাখেন, দেখেন যে, কে কোনদিকে ভালো করছে। শিশুরা বড় হয়, কলেজে ভর্তি হয়। এসময়ে ওই শিক্ষক একটা বিষয় খেয়াল করেন।
সেই যে, তিন জনে একজন মার্শমেলো না খেয়ে জমিয়ে রেখেছিল? সেই ছেলেগুলো তিনটি ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে আছে। এই ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে:
১. SAT Score:
SAT হচ্ছে আমাদের দেশের ভর্তি পরীক্ষাগুলোর মতো। বাইরের দেশে এই স্কোরের উপর ভিত্তি করেই বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ভর্তি নেয়া হয়। তো দেখা যায় যে, এই এক্সপেরিমেন্টের সেই বাচ্চাগুলোর মধ্যে মার্শমেলো জমিয়ে রাখা বাচ্চারা SAT-এ অন্যদের থেকে অনেক ভালো নম্বর পেয়েছে!
২. Low Drop Out Rate:
আরেকটা বিষয় খেয়াল করা যায় ওই শিশুগুলোর মধ্যে। যারা তখনই মার্শমেলোটি খেয়ে নিয়েছিলো, তাদের মধ্যে ড্রপ আউট বা কলেজ থেকে বের হয়ে যাবার প্রবণতা বেশি ছিল। অন্যদিকে, যারা জমিয়েছিলো, তাদের এই ড্রপ আউটের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য! নেই বললেই চলে।
BMI বা Body Mass Index রেটিং থেকে বোঝা যায় একজন মানুষ কতটুকু সুস্থ, সে শারীরিকভাবে কতটুকু ফিট, ফ্যাটের পরিমাণ কেমন আছে এসব। এই রেটিংয়ে ভালো থাকাটা সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্যে অনেক বেশি দরকার। আর ওই মার্শমেলো জমানো ছেলেগুলো রেটিংয়ের দিক দিয়ে একেবারে উপরের দিকে ছিলো!
এই এক্সপেরিমেন্টের একটা ফল দেখা যায়। সেটা হলো যে, শর্ট টার্ম গ্র্যাটিফিকেশন বা সাময়িক মোহকে পাত্তা না দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী কোন সিদ্ধান্ত যারা নেয়, জীবনে তাঁদের সফল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই টেস্টের যে ছেলেগুলো মার্শমেলো পনেরো মিনিটের জন্যে জমিয়ে রেখেছে, বড় হয়ে তারাই অন্যদের থেকে এগিয়ে গেছে। এই একটা দক্ষতা আছে বলেই তারা এটা পেরেছে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিন্তু এটাই অহরহ ঘটতে থাকে। সাময়িক মোহের পেছনে ছুটতে থাকি আমরা, কখনো তার দেখা পাই আমরা, কখনো পাই না। কিন্তু এই ছোটাছুটিতে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনাগুলো আর কাজে লাগানো হয় না আমাদের। এক পর্যায়ে সাময়িক মোহের চক্রেই আটকা পড়ে যেতে হয়।
আজ ঘুমাতে যাবে বলে যে পড়ালেখাটা কম করলে, সেটা গিয়ে তোমার পরীক্ষায় বাজে ফল আনতে পারে। কিংবা বন্ধুদের সাথে চিল করবে ভেবে যে প্রজেক্টের কাজটা বাদ দিলে, সেই কাজটাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে তোমার বিশাল সাফল্যের।
তাই চেষ্টা করো লং টার্মে চিন্তা করতে। সাময়িক এসব মোহ, আনন্দ বারবার আসবে। এগুলো হারিয়ে যাবে না। কিন্তু এদের পেছনে ছুটলে লং টার্মে গিয়ে ভুগতে তোমাকে হবেই! তাই এই সাময়িক মোহ বা Instant Gratification কে ত্যাগ করে লং টার্মের প্ল্যান করলেই দেখবে সাফল্য আসবে। এখন তো জেনে নিলে, এই প্রক্রিয়াটা সায়েন্টিফিক্যালিও প্রমাণিত!
এই লেখাটি লিখতে সহায়তা করেছে অভিক রেহমান
এই লেখাটি নেয়া হয়েছে লেখকের ‘নেভার স্টপ লার্নিং‘ বইটি থেকে। পুরো বইটি কিনতে চাইলে ঘুরে এসো এই লিংক থেকে!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন