পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
১. সফটওয়্যার স্কিল
এখন সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন, ঘরে ঘরে ল্যাপটপ। প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা এতবেশি অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে, সফটওয়্যারের স্কিল না থাকলে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা ভীষণ কঠিন। আমাদের আগের প্রজন্মের মানুষগুলো প্রযুক্তিতে সাধারণত বেশ আনাড়ি হয়ে থাকেন, সেটি নিয়ে অনেক সময় আমরা এক রকম কৌতুক অনুভব করি। মজার ব্যাপার হচ্ছে পৃথিবী এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে যে, তাল মিলিয়ে না চললে তুমি নিজেও সেই আনাড়িদের তালিকায় পড়ে যাবে এবং তোমার থেকে বয়সে অনেক ছোট মানুষজন তোমার প্রতি এক রকম করুণা অনুভব করবে!
তাই আজই, এই মুহূর্তে, অফিস স্যুটে যা যা আছে- মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট এবং এডোবি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, ভিডিও এডিটিং এগুলো খুব ভালভাবে শেখা শুরু করো। এই দক্ষতাগুলো সারাজীবন তোমার কাজে আসবে, সবখানে তোমাকে এগিয়ে রাখবে আর দশজনের চেয়ে।
২. পথ দেখানোর মানুষ
বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট, মার্ক জাকারবার্গ সহ পৃথিবীর যত সফল মানুষদের উত্থানের গল্প রয়েছে, সবগুলোতে একটি জিনিস পাবে- তাঁরা সবসময় সবার সাথে যোগাযোগ করেছেন, চারপাশের মানুষের থেকে শিখেছেন, সাহায্য নিয়েছেন প্রয়োজনে। যেমন ধরো একটি টপিক তুমি কিছুতেই বুঝতে পারছো না, নিজে নিজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও মাথায় ঢুকছে না। অথচ কেউ এসে পাঁচ মিনিটে বিষয়টি একদম জলের মতো সহজ করে বুঝিয়ে দিল তোমাকে!
জীবনে চলার পথেও এমন “কেউ একজন” এর দরকার হয়, যিনি তোমাকে পরামর্শ দেবেন, সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবেন। একা একা তুমি খুব বেশিদূর আগাতে পারবে না, তোমার অনেক মেধা থাকতে পারে কিন্তু অভিজ্ঞতা একটি অমূল্য জিনিস সেটির সাথে অন্যকিছুর তুলনা হয় না। একজন অভিজ্ঞ মানুষ তোমাকে যেভাবে সাহায্য করতে পারবেন যেখানে পৌঁছে দেবেন, একা একা কখনো তুমি সেই জায়গাটিতে সহজে পৌঁছাতে পারবে না। সুতরাং আজই খুঁজে নাও একজন পথ দেখানোর মানুষ, হতে পারেন তোমার আত্মীয়, পরিচিত বড় ভাই/আপু যেকোন একজন যাকে তুমি চোখ বুঁজে অনুসরণ করতে পারো।
৩. পড়ার বাইরের অর্জন
মনে করো তুমি একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছ। চারপাশে সবার সিভিতে আড়চোখে চোখ বুলিয়ে নিলে, এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করলে এতগুলো মানুষের মাঝে তোমাকে আলাদা করে চেনা যায় এমন কোন বৈশিষ্ট্যই নেই তোমার সিভিতে! তুমি SSC, HSC তে জিপিএ পাঁচ, তোমার ডানে বামে সবারই জিপিএ পাঁচ! চাকরিদাতা তোমাকে কেন নেবেন?
আজকাল শুধু পড়ালেখা দিয়ে কিছু হয়না। পাঠ্যবইয়ের বাইরে কতো বড় একটি জগত – বিতর্ক, বিজনেস কম্পিটিশন, কেইস সলভিং কতো কি রয়েছে করার! তোমার সৃজনশীল কোন গুণ থাকলে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটাও। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যোগ দাও, আয়োজনে তদারকি করো। এতে শুধু সিভিই ভারি হবে না, তোমার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারটিও হবে সমৃদ্ধ, জীবনে আগাতে হলে অভিজ্ঞতার কোন তুলনা হয়না!
৪. কর্পোরেট হালচাল
শিক্ষাজীবনে আমাদের জন্য শিক্ষকেরা থাকেন, তাঁদের কাজই হচ্ছে বিভিন্ন বিষয় আমাদের শেখানো। পড়ালেখা শেষ করে যখন তুমি কর্মক্ষেত্রে যাবে, সেখানে কিন্তু কেউ এমন হাত ধরে ধরে তোমাকে কিছু শেখাবে না। সেখানে সবকিছু প্রতিযোগিতামূলক, প্রতি মুহূর্তে তোমাকে নিজ উদ্যোগে এগিয়ে থাকতে হবে অন্যদের চেয়ে। সুতরাং এখন থেকেই তোমাকে শিখতে হবে কর্পোরেটের হালচাল, কিভাবে সবার সাথে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়, বিভিন্ন সমস্যা কিভাবে সমাধান করতে হয়, কিভাবে উপস্থাপন করতে হয় সবার সামনে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Personal Fitness
ভাবছো কিভাবে শিখবে? হতে পারে বিভিন্ন মুভি, টিভি সিরিজ থেকে (The Apprentice নামে একটি টিভি সিরিজ রয়েছে। আমেরিকান, ব্রিটিশ, এশিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান নানারকম ভার্সন আছে সিরিজটির, কর্পোরেট কালচার শেখার জন্য অসাধারণ কাজে দেবে সেটি দেখলে) এছাড়া তুমি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছো সেখান থেকেও শেখার আছে অনেককিছু!
আরো পড়ুন: পরীক্ষায় ভালো করার উপায়: জানতে হবে যা কিছু
৫. সিভি তৈরি করা
আমাদের অনেকের একটি ধারণা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ বর্ষে গিয়ে সিভি বানালেই চলবে। বিশেষজ্ঞদের মতে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছরেই একটি সিভি তৈরি করে ফেলা দরকার! এর পেছনে একটি চমৎকার ব্যাখ্যা রয়েছে। একটি সেমিস্টার শেষে তুমি যখন নিজের সিভিটি হালনাগাদ করতে যাবে, অবাক হয়ে লক্ষ্য করবে সিজিপিএর পয়েন্টটি সামান্য পরিবর্তন করা ছাড়া গোটা সিভিতে যোগ করার মত আর কিছু খুঁজে পাচ্ছ না!
পুরো সেমিস্টারজুড়ে তুমি এমন কোন কৃতিত্ব অর্জন করতে পারো নি যেটি সিভিতে লেখা যেতে পারে! তাই প্রতি সেমিস্টারে তোমার লক্ষ্য থাকবে কিছু না কিছু অর্জন করার, নিজের সিভিটিকে সাজিয়ে তোলার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষে গিয়ে দেখবে কি অবাক একটি ব্যাপার- তোমার আশেপাশের মানুষগুলোর চেয়ে অর্জনের পাল্লায় অনেকদূর এগিয়ে আছো তুমি!
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
৬. নিজে নিজে সমাধান করতে শেখো
ছোটবেলায় জীবনটা ছিল অনেক সহজ – যেকোন সমস্যায় পড়লেই দে ছুট বাবা মার কাছে! তারা থাকলে আর কোন চিন্তা নেই! যত বড় হতে থাকবে তুমি নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেওয়ার ভারটা ততোই বাড়তে থাকবে। আমাদের একটি অভ্যাস রয়েছে কোন সমস্যা সামনে আসলে সেটির সমাধান না খুঁজে আমরা নানারকম প্রশ্ন তুলতে থাকি, পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এই অভ্যাসটি কর্মক্ষেত্রে তোমাকে অনেক বিপদে ফেলবে। নিজে দায়িত্ব নিতে শেখো, এবং কোন সমস্যায় পড়লে ঠাণ্ডামাথায় সেটির সমাধান নিজেই খুঁজে বের করার চেষ্টা করো। নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারা অনেক বড় একটি গুণ, সেটির চর্চা শুরু করো আজ থেকেই।
৭. প্রেজেন্টেশনের ভয় করো জয়
তোমার কি প্রেজেন্টেশন ব্যাপারটি নিয়ে একটি ভয় কাজ করে? চিন্তার কিছু নেই, পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যেই দেশের মানুষেরা প্রেজেন্টেশনকে ভয় পায় না! তবু মানুষ সেই ভয়টিকে জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক ভাইয়ার কথাই ধরো। প্রথম যেদিন প্রেজেন্টেশন দিতে উঠলেন মঞ্চে, হাত পা কাঁপাকাঁপি, গলা শুকিয়ে যাওয়া, লাইন ভুলে যাওয়া কি হয়নি তার সাথে! অথচ এখন সারা দেশে ছুটে চলেছেন শিক্ষার আলো নিয়ে, মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন সবাইকে অসাধারণ প্রেজেন্টেশনের গুণে!
কিভাবে রাতারাতি বদলে গেল সবকিছু? ভাইয়া রহস্যটি খোলাসা করে জানান- “আগে যখন প্রেজেন্টেশন দিতে গেলে ভয় পেতাম, আমি প্রেজেন্টেশনটিকে সরিয়ে দিতাম মন থেকে। এখন মঞ্চে উঠে টেনশন কাজ করলে আমি ভয়টিকেই সরিয়ে দিই মাথা থেকে!”
সত্যিই তো, ভয়টিকে সরিয়ে দিতে যদি পারো একবার, দেখবে বিষয়টি আসলে মোটেই কঠিন কিছু নয়!
৮. ইংরেজিতে পারদর্শিতা
ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা, এই ভাষাটিতে দক্ষতা থাকতেই হবে, এর কোন বিকল্প নেই। আজ হোক কাল হোক শিখতে তোমার হবেই। আজ ইংরেজি শিখছো, কাল ম্যান্ডারিন শিখতে হতে পারে (মজার ব্যাপার পৃথিবীজুড়ে ২০% মানুষ চীনা ভাষায় কথা বলে, ইংরেজিতে কথা বলে মাত্র ১০% মানুষ!)। মাতৃভাষার বাইরে একটি দুটি ভাষায় দক্ষতা থাকা অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ, এখনই যদি ইংরেজিতে দখল মজবুত না করো, পরে কিন্তু ভয়াবহ সমস্যায় পড়বে!
৯. সাজিয়ে তোলো ডিজিটাল প্রোফাইল
আজকাল বিয়ের বাজার থেকে চাকরির বাজার- সবখানে তোমার ফেসবুক প্রোফাইলটি খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়, একটি মানুষের ডিজিটাল প্রোফাইলটি দেখলেই মানুষটি সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া যায়। আমাদের বেশিরভাগেরই ফেসবুক প্রোফাইল জুড়ে থাকে গাদা গাদা সেলফি আর খেলাধুলা নিয়ে স্ট্যাটাস – বিষয়টি মন্দ তা নয়, কিন্তু তোমার সম্পর্কে কিছু কি আদৌ জানান দিচ্ছে এগুলো?
ফেসবুককে কাজে লাগাও একটি ডিজিটাল সিভি হিসেবে। তোমার সৃজনশীল প্রতিভাগুলো তুলে ধরো, যেই ক্ষেত্রটিতে কাজ করতে চাও সেখানকার মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলো। তোমার বিভিন্ন কাজের নমুনা, অর্জন তুলে ধরো, তোমার প্রোফাইলটি একনজর দেখেই যেন মানুষের চমৎকার একটি ধারণা তৈরি হয় তোমার সম্পর্কে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Personal Finance Course
১০. নেটওয়ার্কিং
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গুণটি কি জানো? সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকতে জানা! তাই শুধু দক্ষতা গড়ে তুললেই হবে না, সেটি জায়গামতো মানুষকে জানাতেও হবে! বিয়ের দাওয়াত থেকে শুরু করে বিজনেস কম্পিটিশন- যেখানেই যাও না কেন, সবসময় চেষ্টা করবে মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার। প্রতিযোগিতায় তোমার বিচারক ছিলেন যারা, বা তোমার পছন্দের ক্ষেত্রটিতে কাজ করছেন এমন সিনিয়র কোন মানুষ – চেষ্টা করবে তাদের সাথে ফেসবুকে হলেও যোগাযোগ বজায় রাখার।
তারা যেন তোমাকে দেখে চিনতে পারেন, কোন কাজের সন্ধান আসলে তোমার নামটি যেন চলে আসে তাদের মাথায় সবার আগে! চাকরির বাজারে একসময় “মামা চাচার লাইন থাকা লাগে” বলে একটি কথা প্রচলিত ছিল, এখন সেটি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যায়! ফেসবুক, লিংকড ইন সহ নানারকম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তুমি নিজেই এমন হাজার হাজার “মামা চাচার লাইন” তৈরি করে ফেলতে পারবে, সেজন্য কাজ শুরু করতে হবে আজ থেকেই!
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery by Mark Anupom Mollick
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন