ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো- বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের কাছে ভালবাসার এক নাম। তাঁর পুরো নাম Cristiano Ronaldo dos Santos Aveiro। কীভাবে পর্তুগালের মাদেইরার সেই ছোট্ট শিশুটি আজকের বিশ্বখ্যাত ফুটবলার হলেন- সে গল্পটি কি সবার জানা আছে? চলো, জেনে নেওয়া যাক রোনালদোর ছেলেবেলার গল্প।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
সরকারি চাকরি প্রস্তুতি বেসিক কোর্স
রোনালদোর জন্ম ১৯৮৫ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি, পর্তুগালের পশ্চিমে অবস্থিত মাদেইরা নামের ছোট্ট একটি দ্বীপে। শৈশব থেকেই তাঁর দারিদ্র্যের মাঝে বেড়ে ওঠা। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রোনালদো এক রুমে সবার সাথে গাদাগাদি করে থাকতেন। তার মা ছিলেন একজন রাঁধুনী, আর বাবা ছিলেন বাগানের মালী। স্কুলে রোনালদোকে তার সহপাঠীরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো কারণ তার বাবা স্কুলে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবেও মাঝেমধ্যে কাজ করতেন।
দারিদ্র্য-অপমানের দুঃখ ভুলতে শিশু রোনালদো বেছে নেন ফুটবলকে। হাতের কাছে একবার ফুটবল পেলে আর কিছু লাগতো না তাঁর, সব কষ্ট ভুলে যেতেন! এতোটাই খেলার পাগল ছিলেন, যে ঘুমানোর সময়ও ফুটবল জড়িয়ে ধরে ঘুমাতেন! পড়ালেখায় একদমই মন ছিল না তাঁর। মা পড়াশোনার কথা বললেই রোনালদোর ঝটপট উত্তর হতো, ‘আজকে স্কুলে কোন হোমওয়ার্ক দেয় নি তো!’ তাও জোর করে পড়তে বসালে, মা একটু চোখের আড়াল হলেই চুপিচুপি ফুটবল হাতে জানালা দিয়ে পালিয়ে বেরিয়ে পড়তেন রোনালদো!
মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি তাঁর এলাকা মাদেইরার একটি জনপ্রিয় ক্লাব ন্যাসিওনালে যোগ দেন। সেখানে দারুণ খেলে সবার নজরে পড়েন রোনালদো। ফলাফল স্বরূপ ১২ বছর বয়সে পর্তুগালের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনে খেলার সুযোগ পান। কিন্তু একটি সমস্যা- তাঁকে পাড়ি জমাতে হবে পর্তুগালের রাজধানীতে। ছোট্ট রোনালদোকে প্রথমবারের মতো বাবা-মাকে ছেড়ে একা একা থাকতে হয় সেখানে। তাদের কথা মনে করে প্রতি রাতেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতেন তিনি।
সেখানে স্কুলে বন্ধুদের মাঝে তিনি বেশ জনপ্রিয় হলেও পড়ালেখায় তাঁর একদমই মন ছিল না। স্কুলের এই গণ্ডিবদ্ধ জীবনে তাঁর মন টানতো না। তিনি জানতেন, অফিসে সারাদিন চাকরি করার জন্য তাঁর জন্ম হয়নি। তিনি এর চেয়ে অনেক বড় কিছু করবেন। তাই পড়ালেখার বদলে খেলাধুলাতেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। মোটামুটি কেটে যাচ্ছিল সময়। কিন্তু স্কুলে এক শিক্ষক ছিলেন যিনি রোনালদোর কথার আঞ্চলিক টান নিয়ে তাচ্ছিল্য করতেন। অন্য ছাত্ররা হলে মুখ বুজে সয়ে যেতো, কিন্তু রোনালদোর তো বয়ে যায়নি স্কুলের কর্তৃপক্ষের ভয় করতে, তিনি এর থোড়াই কেয়ার করেন। একদিন কথায় কথায় সেই শিক্ষক আবার তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে ১৪ বছর বয়সী রোনালদো রেগে চেয়ার তুলে ছুঁড়ে মারেন সেই শিক্ষকের উপর। স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয় কিশোর রোনালদোকে। তারপর তিনি আর পড়ালেখার ধার ধারেননি।
আরো পড়ুন: মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার: হতে পারে যে ৪টি রোগ
যাক, পড়ালেখার আপদ আর নেই! ইচ্ছামতো মনের খুশিতে ফুটবল খেলে ভালোই যাচ্ছিল সময়। কিন্তু ১৫ বছর বয়সে এক কঠিন পরীক্ষায় পড়লেন রোনালদো। ডাক্তারি পরীক্ষায় তার একটি অসুখ ধরা পড়লো, ‘Racing Heart disease’ যার মানে হচ্ছে রোনালদোর হার্টবিট স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। খেলাধুলা করার সময় এমনিতেই মানুষের হার্টবিট বেড়ে যায়, আর এমন অসুখ থাকলে তো খেলার কথা কল্পনাই করা যায়না! ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দিলেন রোনালদোর আর ফুটবল খেলা চলবে না। কারণ এর আগেও অনেক ফুটবলার এই অসুখে ভুগে খেলার মাঠে হৃদপিণ্ড বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন!
কিন্তু ফুটবল ছাড়া রোনালদো বাঁচবেন কী নিয়ে? কল্পনা করে দেখো, রোনালদো ফুটবলার হওয়ার বদলে অফিসে ডেস্কে বসে নয়টা-পাঁচটা চাকরি করছেন! এমন জীবন বেছে নেওয়ার চেয়ে মৃত্যুই যেন ভাল। তাই রোনালদো কঠিন একটি সিদ্ধান্ত নিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লেজার সার্জারি অপারেশন করালেন। এবং স্রষ্টার অশেষ কৃপায় সুস্থও হয়ে গেলেন! ডাক্তারদের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই খেলার মাঠে ফিরে এলেন রোনালদো!
এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি। ২০০৩ সালে মাত্র আঠার বছর বয়সে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে চুক্তি করেন ১২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে। তিনি ক্লাবটির ইতিহাসে প্রথম পর্তুগিজ খেলোয়াড় ছিলেন। সেখানে তিনি দারুণ কৃতিত্বের সাথে ভূমিকা রাখেন ক্লাবের জন্য। ২০০৮ সালে ফিফা সেরা খেলোয়ার এওয়ার্ড পান, এমনকি তিনটি প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে সহায়তা করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে।
২০০৯ সালে তিনি রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান রেকর্ড ১৩১ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে! তারপর থেকে রিয়ালকেই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা বানিয়ে নিয়েছেন। ক্লাবটির ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবেও ফুটবলপ্রেমীদের কাছে বিবেচিত হন তিনি।
শুধু ক্লাবেই নয়, জাতীয় দলেও রোনালদো লড়াকু সিংহের মতোই খেলেন! পর্তুগালের জার্সি গায়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। বলতে গেলে তাঁর উপর ভর করেই ফুটবলের পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে পর্তুগাল, স্বপ্ন দেখেছে বিশ্বকাপেও অভাবনীয় কিছু করে দেখানোর।
মজার কিছু তথ্য!
- ছোটবেলায় রোনালদোর ডাকনাম ছিলো ‘Cry baby’ বা ‘ছিঁচকাঁদুনে’! কারণ খেলার মাঠে রোনালদো কাউকে বল পাস দিলে সে যদি গোল করতে না পারতো রাগে-দুঃখে ছোট্ট রোনালদো একদম কেঁদে ফেলতেন! সেখান থেকেই তাঁর মাঝে অভ্যাস গড়ে উঠে কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেই ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার, যে বৈশিষ্ট্য এখনও রোনালদোর খেলায় লক্ষণীয়।
- তার নাম ‘রোনালদো’ রাখা হয়েছে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের নাম থেকে। রিগান প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে হলিউডের একজন অভিনেতাও ছিলেন। রোনালদোর বাবা তার এই প্রিয় ব্যক্তিত্বের নামেই ছেলের নাম রাখেন ‘রোনালদো’।
- রোনালদো এতো বিলাসবহুল আমোদ-প্রমোদের মাঝে থেকেও কখনোই মদ্যপান করেন না। রোনালদোর বয়স যখন ১৪ বছর, তখন তার বাবা মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েন। সংসারে অশান্তি লেগে থাকতো। রোনালদোর বয়স যখন মাত্র ২০ বছর তখন বাবাকে হারান। জানা যায়, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণেই তার মৃত্যু ঘটেছিল। রোনালদো আক্ষেপ করে বলেন, ‘তখন আমার অর্থ-বিত্ত কিছুই ছিল না, কিন্তু আমার বাবা ছিলেন। আজ আমার সব আছে, কিন্তু পাশে বাবা যে নেই!’ সেই থেকে রোনালদো এলকোহল জাতীয় পানীয় ছুঁয়েও দেখেন না।
- পৃথিবীর অনেক দেশের হাসপাতালেই নিয়ম হচ্ছে শরীরে উল্কি আঁকার তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত রক্তদান করা যাবে না, কারণ এতে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এজন্যই রোনালদোর শরীরে অন্য খেলোয়াড়দের মতো কোন উল্কি নেই। কারণ তিনি নিয়মিতই রক্তদান করে থাকেন।
- রোনালদো হরর মুভি দেখতে ভীষণ ভালবাসেন! তার ছেলেকে নিয়ে প্রায়ই বসে যান দেখতে গা ছমছমে ভূতের কোন মুভি!
- রোনালদো তার খোদাই করা গ্রীক দেবতাদের মতো শরীরের গড়নের জন্য বিখ্যাত। এর পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম এবং নিয়মানুবর্তিতা। তিনি প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা ব্যায়াম করেন। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও সুশৃংখল ডায়েট মেনে চলেন। গুগল করলেই পেয়ে যাবে রোনালদোর ওয়ার্ক আউট এবং ডায়েটের চার্ট। রোনালদো চান তাঁর ভক্তরাও তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হোক ব্যায়াম করার প্রতি।
শেষ করছি রোনালদোর একটি উক্তি দিয়ে।
‘Talent without working hard is nothing.’
আমরা অনেকেই মনে করি রোনালদোর মতো খেলোয়াড়রা জন্মগতভাবেই প্রতিভাবান, কিন্তু আমরা ভুলে যাই সফল হওয়ার পেছনে কতোটা পরিশ্রম, কতোখানি আত্মত্যাগ স্বীকার করে চলেন তিনি প্রতিদিন। ভক্তদের কাছে তাঁর অনুরোধ- শুধু তাঁর খেলার ভক্তই যেন না হই আমরা। তার পরিশ্রম, অধ্যবসায়, ব্যায়াম, নিয়মানুবর্তিতা থেকে যেন শিক্ষা নেই এবং নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করি। তবেই আমরা হয়ে উঠতে পারবো রোনালদোর সত্যিকারের ভক্ত।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Personal Fitness
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে আব্দুল্লাহ আল মেহেদী
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন