আবুধাবিতে গিয়ে আমার দূর সম্পর্কের এক চাচা একটু বিপদে পড়ে গেলেন। রাস্তায় চলাচলে বেশ সমস্যা হতে লাগলো তাঁর। একদিন ফোনে কথা বলার সময় তিনি যখন তাঁর এই সমস্যার কথা আমাকে বললেন তখন স্বভাবতই আমি জিজ্ঞেস করলাম এর পেছনের কারণটা কী?
চাচা বললেন, আবুধাবিতে নাকি গাড়িঘোড়া সবকিছুই রাস্তার ডানদিক দিয়ে চলে। আমি একটু চমকে উঠলাম বৈকি! বয়স কম আমার, কার্টুন নেটওয়ার্কে টম অ্যান্ড জেরি আর বিটিভিতে সিসিমপুরের মাঝেই জ্ঞান সীমাবদ্ধ। জন্ম থেকে দেখে এসেছি রাস্তায় সবকিছু বাম দিক দিয়ে চলছে।
তাই যখন চাচার কাছে শুনলাম আবুধাবিতে গাড়িঘোড়া সব ডানদিক দিয়ে চলে, তখন ভেবেই নিলাম যে চাচা আমার সাথে একটু মজা করছেন!
ধীরে ধীরে আমি বড় হলাম। কার্টুন নেটওয়ার্ক থেকে চোখ এলো এইচবিও, স্টার মুভিজের দিকে। হঠাৎ করেই একদিন আবিষ্কার করলাম, হলিউডের সব মুভিতে গাড়ি চলছে রাস্তার ডানদিক দিয়ে।
ইন্টারনেটে একটু ঘেঁটে দেখতে পেলাম, ইউএসএ-তে নাকি সবসময়ই গাড়ি রাস্তার ডানদিক দিয়ে চলে। শুধু ইউএসএ না, সত্যিকার অর্থে পৃথিবীর বহু দেশেই যে গাড়ি রাস্তার ডানদিক দিয়ে চলে, সেটাও জানতে আর দেরি হলো না।
মিছে কথা বলে মজা করেছেন দেখে চাচার উপরে যে রাগ আমি বহুদিন জমিয়ে রেখেছিলাম, হঠাৎ করে সেই রাগটা হতে লাগলো নিজের অজ্ঞতার উপর, কেননা, আসলেই আবুধাবিতে গাড়িঘোড়া রাস্তার ডানদিক দিয়ে চলে।
ঘুরে আসুন: ছাত্রজীবনেই বিদেশ ঘুরে আসুন কম খরচে!
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ চলাচল করে রাস্তার বামদিক দিয়ে। কোন কোন জরিপ এই হিসাবটা ৪৫ শতাংশও দেখিয়েছে। কিন্তু আসল ব্যাপারটা হলো, পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই চলাচল করে রাস্তার ডানদিক দিয়ে।
১৭০০ সালের দিকে এসে এই চিত্রপটে পরিবর্তন দেখা যায়
বাংলাদেশে জন্মের পর থেকেই রাস্তার বামে চলাচল করি বলে, বিষয়টা মেনে নিতে যদিও আমার প্রথমদিকে বেশ কষ্ট হতো, কিন্তু এটা একটা পুরোপুরি সত্যি কথা!
ইতিহাস ঘেঁটে একটু পেছন দিকে গেলে কিন্তু আমরা উল্টো চিত্র দেখতে পাই। এককালে প্রায় সব মানুষই রাস্তার বাম দিক চলাচল করতো। সে যুগটা ছিল আসলে ঢাল-তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ-বিগ্রহের যুগ।
যেহেতু বেশিরভাগ মানুষই ছিল ডানহাতি, তাই ঘোড়ার পিঠে চড়ে অপর দিক থেকে আসা বিপরীত পক্ষের যোদ্ধার কল্লাটা তলোয়ারের এক কোপে কেটে দিতে চাইলে রাস্তার বামদিক থেকে এগোনোই সবচাইতে সুবিধাজনক ছিল!
যুদ্ধ-বিগ্রহ আজীবন আমাদের সমাজকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। এমনকি রাস্তায় কোনদিক দিয়ে চলতে হবে, সেটিও যে এই হানাহানি থেকেই প্রভাবিত- সেকথাও এখন আর আমাদের অজানা নয়!
সুন্দরভাবে কথা বলা সাফল্যের অন্যতম রহস্য!
মানুষের সাথে সুন্দর ও মার্জিতভাবে কথা বললে যেকোন কাজ কিন্তু অনেক সহজ হয়ে যায়!
কথা বলার এমন সব টিপস নিতে ঘুরে এসো এই প্লেলিস্টটি থেকে!
১৭০০ সালের দিকে এসে এই চিত্রপটে পরিবর্তন দেখা যায়। ফ্রান্স আর ইউএসএতে বড় বড় ফার্মে জিনিসপত্র আনা নেয়ার কাজে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন শুরু হয়। গাড়িগুলো ভারী জিনিস বয়ে নিতো বলে এক গাড়ির জন্য ঘোড়া লাগতো দু’টিরও বেশি।
এই গাড়িগুলোতে চালকের জন্য কোন আসন ছিল না, চালকেরা সবার বামের ঘোড়াটার উপর ছড়ি নিয়ে আয়েশ করে বসতেন। বেশিরভাগ মানুষ ডানহাতি, তাই চালকেরাও বামের ঘোড়ায় বসে যদি কোন ঘোড়ার মাথা একটু বিগড়ে যেতো তবে সেটাকে ডান হাত দিয়ে বাগে আনতে বড্ড ভালোবাসতেন।
চালকেরা তখন চাইতেন বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িগুলো তাদের বাম দিক দিয়ে যাক, কেননা এতে করে নিজ গাড়ির চাকা অপরদিক থেকে আসা গাড়ির চাকার সাথে বেঁধে গেলো কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে বেশ সুবিধা হতো। ব্যস, সেই থেকেই শুরু হয়ে গেল ফ্রান্স আর ইউএসএতে রাস্তার ডানদিক থেকে চলাচল।
ঘুরে আসুন: ছাত্রজীবনেই বিদেশ ঘুরে আসুন কম খরচে: পর্ব ২
পৃথিবীর প্রায় সব বৃটিশ কলোনিই রাস্তার বাম দিক থেকে চলাচল করে। মায়ানমার ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত বৃটিশ কলোনি থাকলেও ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তারা রাস্তার বাম দিক থেকে গাড়ি চালানো চালিয়ে যায়।
১৯৭০ সালে দেশটির তৎকালীন শাসক জেনারেল নে উইন হঠাৎ করেই দেশে রাস্তার ডানদিক দিয়ে চলাচলের আদেশ জারি করেন। বলা হয়ে থাকে এক জাদুকরের কথার উপর ভিত্তি করেই নাকি তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যাই হোক, যদি কখনো রেঙ্গুনের শহরতলিতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়, কপাল ভাল থাকলে হয়তো এখনো রাস্তার ভুলদিকে নির্দেশ করা ১৯৭০ সালের কিছু ট্রাফিক লাইট তোমার চোখে পড়তে পারে।
এখন পর্যন্ত পৃথিবীর যতগুলো দেশ রাস্তায় চলাচলের দিক পরিবর্তন করেছে সবক্ষেত্রেই পরিবর্তনটা এসেছে রাস্তার বাম থেকে ডানে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম মাত্র তিনটি দেশের ক্ষেত্রে। ১৯৭৫ সালে পূর্ব তিমুরে, ১৯৭৮ সালের ৩০ জুলাই ওকিনাওয়ায় এবং ২০০৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সামোয়ায় রাস্তায় চলাচলের দিক পরিবর্তন করে ডান থেকে বামে নেয়া হয়!
আমার দূর সম্পর্কের চাচার মতন এমন মানুষ নেহায়েত কম নয় যাদের কিনা বিদেশে গিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে প্রথমদিকে একটু সমস্যা হয়। যেহেতু কখনোই বিদেশ যাওয়া হয়নি আমার, তাই এই অনুভূতিটা যে কেমন তা জানা নেই।
যদি তুমি বিদেশে যেয়ে থাকো আর রাস্তার ডান বাম নিয়ে এই ছোট্ট ধাঁধাঁটা একটু গুলিয়ে ফেলো, তবে তোমার অভিজ্ঞতাটুকু আমাকে জানাতে ভুলোনা যেন!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: [email protected]