“Multitasking” শব্দটি “কম্পিউটার মাল্টিটাস্কিং” থেকে এসেছে। এটি একটি কম্পিউটারের একই সময়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতাকে বোঝায়। তাই মানুষের ক্ষেত্রে মাল্টিটাস্কিং বলতে, একজন মানুষের একই সময়ে একাধিক কাজ করার ক্ষমতাকে বোঝায়। আমরা প্রায়ই নিজেদের উপলব্ধি ছাড়া একাধিক কাজ একসাথে করে থাকি। যেমন টিভি দেখার সাথে সাথে আপনার বন্ধুর সাথে চ্যাট করা, কাজ করা বা হাটার সময় গান শোনা বা কারো সাথে কথা বলার সময় হাঁটা ইত্যাদি। আপনি যদি সঠিকভাবে এবং দক্ষতার সাথে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারেন তাহলে এটি আপনার মস্তিষ্কের জন্য অনেক ভালো অনুশীলন হিসেবে কাজ করবে।
দক্ষ Multitasker
Multitask গবেষকরা একজন ব্যক্তিকে “দক্ষ Multitaker” হিসেবে উল্লেখ করেন যখন সেই ব্যক্তি একাধিক ভিন্ন কাজ করতে চেষ্টা করে। মানুষের উপর Multitasking এর প্রভাব বুঝতে বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন সময় নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। যেগুলোর ফলাফল থেকে জানা যায় একজন “Multitasker” এর একজন সাধারন মানুষের তুলনায় একজন “Multitasker” নিজের মস্তিষ্কের ব্যবহার বেশি করে এবং যেকোন জটিল সমস্যা সমাধানে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
Multitasking এ পারদর্শী হওয়ার উপায়
আমরা সকলেই একসাথে অনেকগুলো কাজ সম্পাদন করতে চাই। কিন্তু সব সময় কাজগুলো সম্পাদন করা সহজ হয়না। কিছু কৌশল অবলম্বন করলে আপনি খুব সহজেই Multitasker হয়ে উঠতে পারবেন। এমনই কিছু কৌশল আলোচনা করা হবে এই লিখাতে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক…
সারাদিনের কর্ম পরিকল্পনা বা To-Do List তৈরী করুন
প্রতিদিনের শেষে পরবর্তি দিনে কি কি কাজ করবেন তার একটি তালিকা তৈরী করুন। সেগুলোর মধ্যে কোন গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন গুলো কম গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারন করুন। এতে পরবর্তি দিনে আপনাকে কি কি কাজ করতে হবে বা কোন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে সে সম্পর্কে একটি ধারনা পেয়ে যাবেন। একই সাথে একই ধরনের কাজ গুলোকে একত্রিত করুন। এতে আপনি একই ধরনের কাজ গুলো একসাথে করে নিজের মূল্যবান সময় বাচাতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া
এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনার কোন কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এতে আপনি সেই কাজটির দিকে আরো মনোযোগ দিতে পারবেন। এর ফলে, আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভুল করার সম্ভাবনা কম থাকে। আপনার কাজের অগ্রাধিকার তালিকাটি ব্যবহার করার আরেকটি উপায় হল শীর্ষ-অগ্রাধিকারযুক্ত কাজ গুলিকে একযোগে পরিচালনা করা।
প্রতি সন্ধ্যায় বা দিনের শেষে আপনার আবসর সময়ে আপনার অগ্রাধিকার দেওয়া কাজের তালিকার কাজ গুলিতে আপনি কি কি ভুল করেছেন এবং সেগুলো কিভাবে শুধরানো যায় সেগুলো নিয়ে ভাবুন। একই সাথে সেগুলো শুধরানোর চেষ্টা করুন। কাজ করার সময় নিজের ফোকাস স্থির রাখুন।
সময় ভাগ করে কাজ করুন
আপনি যখন খুব সহজেই আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং একই ধরনের কাজের একটি তালিকা তৈরি করে ফেলতে পারবেন তখন আপনার সময় ভাগ করে নিন কখন কোন কাজটি করবেন। যেমন ধরুন আপনাকে কোন তথ্যের জন্য কয়েকটি ই-মেইল পাঠাতে হবে, চেষ্টা করুন সবগুলো ই-ইমেইল একবারে পাঠিয়ে ই-মেইল সংক্রান্ত কাজ শেষ করতে। পাশাপাশি সারাদিনের মধ্যে অল্প অল্প সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় না করে, দিনের নির্দিষ্ট ১ঘন্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করতে। এই সময়ের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাদের সাথে যোগাযোগ করার ইচ্ছা সেগুলো করুন, আপনার পছন্দের জিনিস গুলো শেয়ার করুন অথবা নতুন কোন তথ্য থাকিলে সেটি পড়ুন। এতে আপনার সময়ের অপচয় কম হবে।
Distraction এড়িয়ে চলুন
কাজের ক্ষেত্রে মনোযোগ ধরে রাখা খুব জরুরি। সব সময় চেষ্টা করুন কাজ করার সময় আপনার মনোযোগ নষ্ট করতে পারে এমন বিষয় এড়িয়ে চলতে৷ যেমনঃ যখন অফিসের কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবেন তখন মোবাইল ফোন বন্ধ রাখুন বা Silent Mode এ রাখুন। এখই ভাবে যখন বাসায় থেকে কাজ করবেন, চেষ্টা করুন পরিবারিক জীবন আলাদা রেখে কাজ করার।
অনুশীলন করুন
এই বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যেকোন কাজই করুন না কেন সেই কাজে আপনি যদি দক্ষ হতে চান বা কম সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে চান তাহলে অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই। যখন আপনি কম সময়ে কাজ করার দক্ষতা অর্জন করবেন তখন খুব সহজেই আপনি একই সময়ে একাধিক কাজ করতে পারবেন। তাই যেকোন কাজের ক্ষেত্রেই প্রচুর অনুশীলন করুন এবং আপনার দক্ষতা বাড়াতে থাকুন।
সময়ানুবর্তিতা মেনে চলুন
চেষ্টা করুন নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজগুলো সম্পাদন করতে। আজকের কাজ আগামী দিনের জন্য ফেলে রাখবেন না। এতে আপনার কাজের পরিমানই শুধু বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই সময়ে মেনে কাজ করুন। যদি সম্ভব হয় নির্ধারিত দিনের পূর্বেই কাজ গুলো শেষ করে রাখুন। এতে আপনার সময় সাশ্রয় হবে এবং একই সাথে আপনি নতুন কোন কাজের জন্য অতিরিক্ত সময় পাবেন।
সর্বশেষ কথা হল, আপনাকে ধীর-স্থির মানসিকতার হতে হবে। কারন একটি কাজ একবারে না হতেই পারে এজন্য আপনি চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লে আপনার সারাদিনের অন্যান্য কাজের উপরও এর প্রভাব পড়বে। তাই মানসিক ভাবে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। একই সাথে প্রচুর অনুশীলন করুন। কারন অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই। যত বেশি অনুশীলন বা চর্চার মধ্যে থাকবেন আপনার Multitasking বিষয়ে পারদর্শিতা তত বৃদ্ধি পাবে।
লিখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন