মাদার তেরেসা শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে নীল পাড়ের সাদা রঙ্গের এক বিশেষ পোষাক পরিহিত সংকীর্ন শরীরের এক বৃদ্ধাকে। কোঠরের ভেতরে থাকা ঘোলাটে চোখ তখনও বেশ উজ্জ্বল। মনে হয় যেন বয়স নয় ; বরং কাজ করে ক্লান্ত হয়ে তিনি নুয়ে পরেছেন। নামের সাথে পার্মানেন্টলি ‘মাদার’ শব্দটি জুড়ে যাওয়া এই মহিলাকে আমরা প্রায় সবাই চিনি। কিন্তু তার সম্পর্কে কতটুকুই বা জানি। আজ আমরা জানবো তার জীবন ও দর্শন সম্পর্কে। ভালো কাজ ও মানবতার দূত হিসেবে যিনি আমৃত্যু কাজ করলেও এ কাজের পেছনের গল্পটা খুব সহজ কিন্তু ছিলোনা। তার জীবনেও ছিলো উপন্যাসের মত নানামুখী বাঁক। কিন্তু এসব ছেড়েও দেশত্যাগী হয়ে তিনি ছুটেছেন শান্তির পেছনে। আর তাকে নিয়েই থাকছে আজকের লেখা।
তিনি জন্মগ্রহন করেন ২৬শে আগস্ট ১৯১০ সালে আলবেনিয়ায় জন্মগ্রহন করেন। বংশগত ভাবে তিনি আলবেনীয় হলেও তিনি ছিলেন ভারতীয় ক্যাথেলিক সন্নাসী। সন্নাসীনী তেরেসার একমাত্র পেশা ছিলো মানবসেবা। ছোটবেলা থেকেই তিনি সবার জন্য কিছু করে যাবার স্বপ্ন দেখতেন। দুর্বল ও দরিদ্র লোকেরা যেন কোন জায়গায় তাদের অর্থ বা শক্তির জন্য পিছিয়ে না পড়ে এটি তিনি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তবে আমাদের মত তার স্বপ্ন এতটা ফিকে ছিলোনা। তার স্বপ্নের গন্ডি ছিলো পুরো পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার। মাদার তেরেসার বাবা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু কিশোরী তেরেসা কখনোই তার বাবার পেশা দ্বারা প্রভাবিত হননি। ১৯১১ সালে তেরেসার বয়স যখন মাত্র আট বছর, তখন তার বাবা দূর্ভাগ্যবশত মারা যান। তার বাবার মৃত্যুর পর তার মা তেরেসাকে ক্যাথলিক ধর্মের প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। এবং এর আদর্শে লালন পালন শুরু করেন। তিনি এতে এতই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তার চার বছর পরেই মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি ধর্মীয়ভাবে সন্নাসী হয়ে জীবন যাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। তবে তিনি শুধু ক্যাথলিক বা খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে কাজ করেন নি। তার উদ্দেশ্য ছিলো মানবসেবা। এখানে তিনি কোন ধর্মকেই ভেদাভেদ করেননি। আর তাই আজও পুরো পৃথিবীর যে কোন ধর্মের মানুষই তার নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করে।
সন্ন্যাসীনী জীবন
আঠারো বছর বয়সে গৃহ ত্যাগ করে তেরেসা সিস্টার্স অব লেরোটা নামের একটি সংস্থায় মিশনারী হিসেবে যোগ দেন। একটা তথ্য দিয়ে রাখা যেতে পারে যে, এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার মা অথবা বোনের সাথে তার কখনোই দেখা হয়নি।
১৯৩১ সালে সন্নাসীনী হবার জন্য শপথ গ্রহন করলে therese de Lisieux এর নাম অনুসারে তার নাম টেরিজা বা তেরেসা রাখা হয়। এর আগে তার নাম ছিলো অ্যাগনেস গঞ্জা বয়াজু। তিনি ইংরেজি শেখেন সিস্টার্স অব লেরোটা সংস্থার একমাত্র ভারতীয় শিক্ষার মাধ্যম রথফার্নহ্যামে লেরোটা অ্যাবেতে। যেটি ছিলো আয়ারল্যান্ডের একটি মিশনারি শিক্ষাকেন্দ্র। তিনি সন্নাসীনী হবার জন্য চূড়ান্ত শপথ গ্রহন করেন যখন তিনি কলকাতার একটি লেরোটা কনভেন্ট স্কুলে পড়ছিলেন।
কলকাতার স্কুলে কিন্তু তার সময় ভালোই কাটছিলো। কিন্তু কলকাতায় চলা চরম অর্থনৈতিক মন্দা ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের দারিদ্রতা তাকে ভাবিয়ে তুলছিলো। কেননা মানুষের সেবার জন্যই তিনি গৃহ ত্যাগী হয়ে এত দূর দেশে থাকছিলেন। সুতরাং তার মধ্যে তখন তীব্র বাসনা আসতে থাকে এসব বিপদগ্রস্থ মানুষের জন্য কিছু করার জন্য। তবে ভাবা যতটাই না সহজ ছিলো বাস্তবে রূপ নেয়াটা ছিলো তার চাইতে অনেক কঠিন।
তার বয়স ও সামর্থ্য কোনদিক দিয়েই তিনি কারো বিপদের দূরবর্তী কোন সমাধান করতে পারতেন না। তাছাড়া ধর্মের বিভেদও এখানে বড় একটি পর্দা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো বলেই মনে হয়েছিলো। পঞ্চাশ শতকের শেষের দিকে কলকাতায় নেমে আসে চরম বর্ণনাহীন দুঃখ। যাতে অনেক মানুষ মারা যায়। ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। এসব ঘটনা তেরেসার মনে গভীর ভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ছেলেবেলাতেই জন্ম নেয়া তার মনের সুপ্ত ভালো শক্তিটি আস্তে আস্তে জাগ্রত হতে শুরু করে।
ভারতের বেশীর ভাগ মানুষই সনাতন তথা হিন্দু ধর্মের অনুসারী। আর টেরিজা বা তেরেসা ছিলেন ক্যাথলিক খ্রিস্টান। কিন্তু ভালো কাজে ধর্ম বা অন্য কোন বিভেদ আসলে যে কোন অন্তরায় সৃষ্টি করেনা বা মানব ধর্মই যে আসল, সেটি খুব সুন্দরভাবে প্রমান করেন মাদার তেরেসা। তেরেসা এমন একটি চ্যারিটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যেটি তৎকালীন সময়ে ভাবাই দুস্কর।
সবার জন্য সেবা
দিনটা ১০ই সেপ্টেম্বর। ১৯৪৬ সাল। ধর্মীয়ভাবে বিজন জায়গায় বসবাসের জন্য কলকাতা থেকে মাদার তেরেসা দার্জিলিং যাচ্ছিলেন। এ সময় তার মনে হঠাৎ করেই এক গভীর উপলব্ধি তার বিবেক কে নাড়া দেয়। এ ব্যাপারে তিনি বলেন,
“কনভ্যান্ট ত্যাগ করে দরিদ্রের মাঝে তাদের নিজেদের হয়ে বেঁচে থাকা ও তাদের সাহায্য করা ছিলো আমার জন্য এক আবশ্যিক দায়িত্ব। এটা আমার জন্য ছিলো সরাসরি আদেশ স্বরূপ। এই আদেশ পালনে অক্ষমতা প্রকাশ করা মানে হলো বিশ্বাস ভঙ্গ করা।“
তার মনে তখন চলা গভীর সেই উপলব্ধির অভিজ্ঞতাটাকে মাদার তেরেসা নাম দেন ‘the call within the call’।
এর দু’বছর পর অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে এই মোতাবেক সুবিধা বঞ্চিত ও দরিদ্রের মাঝে তিনি মিশনারি কাজ শুরু করেন। ঠিক সেসময় তিনি প্রথাগত সকল অভ্যাস ত্যাগ করেন। পোশাক হিসেবে বেছে নেন নীল পারের একটি সাধারণ সাদা সুতির বস্ত্র। মাদার তেরেসার নাম শুনলেই আমরা যেই পোশাক পরিহিতা অবস্থায় তাকে চিন্তা করি এটি সেই পোশাকই। তখন সৌভাগ্যবশত তিনি ভারতীয় নাগিরকত্ব পান।
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
সেসময় তিনি বস্তিতে কাজ শুরু করেন। তার কাজের সূচনা হয় ছোট্ট একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। পরবর্তীতে তিনি অভুক্ত ও স্বজনহারা নিঃস্বদের নিয়ে কাজ করতে থাকেন। তখন তার কর্মকান্ড ভারতীয় বিভিন্ন উচ্চ মহল ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নজরে আসে। তৎকালীন সময়ের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং মাদার তেরেসার কাজের স্বীকৃতি প্রদান করেন।
তবে মাদার তেরেসার কাজের প্রথম দিকের দিনগুলো মোটেও সুখকর ছিলোনা। এ সময় তিনি নিয়মিত ডায়েরী লিখতেন। ডায়েরীতে এসব দিনগুলোর বাস্তব চিত্র ফুটে উঠে। যেমন তাঁর ডায়েরীর একটি লেখা ছিলো হুবহু এরকম,
“our lord wants me to be a free nun coverd with the proverty of the cross. Today I learned a good lesson. The proverty of the poor must be so hard for them. While looking for a home I walked and walked till my armns and legs ached. I thought how much they must ache in body and soul, looking for a home, food and health. Then the comfort of Loreto [her former order] came to tempt me. ‘You have only to say the word and all that will be yours again,’ the Tempter kept on saying….. Of free choice, my God, and out of love for you, I desire to remain and do whatever be your Holy will in my regard. I did not let a single tear come.”
দরীদ্র ও অনাহারীদের জন্য খাবারের বন্দোবস্ত্য করতে অথবা আবাসনহীন মানুষের থাকার জায়গার জোগান দিতে তিনি মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরতেন। ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনি নিজে অর্থ সংগ্রহ করতেন। এসব কাজ করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন বাধার মুখে পড়তেন। কখনো বা হতাশা, কখনো বা একাকিত্ব অথবা মানুষের সন্দেহ তাকে মাঝেমধ্যেই ঘিরে ধরতো। তিনি এও ভাবতেন এসব ছেড়েছুড়ে আগের সেই কনভেন্টের জীবনে ফিরে যাওয়াই তার পক্ষে শ্রেয়। এসব তিনি ডায়েরীতে বিভিন্ন সময়েই লিখেছেন। তবুও তিনি ছিলেন তার সৎ সাহসের বেলায় অনড়।
ভ্যাটিকেনের থেকে তিনি ১৯৫০ সালের ৭ই অক্টোবর একটি সমাবেশ করার অনুমতি পান। যেটিকে বলা হয় ‘ডায়োসিসান কনগ্রেগেশন’। এই সমাবেশই পরবর্তীতে তার নিজস্ব দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। যেটি হলো মাদার তেরেসার বিখ্যাত সেই ‘মিশনারিস অফ চ্যারিটি’। এ সম্পর্কে তেরেসা বলেন,
“Its mission is to care for the hungry, the naked, the homeless, the crippled, the blind, the lepers, all those [eople who feel unwanted, unloved, uncared for throughout society, people that have become a burden to the society and are shunned by everyone.”
মিশনারিস অফ চ্যারিটি
কলকাতায় থাকা মাত্র ১৩ জন সদস্য নিয়ে মাদার তেরেসা মিশনারিস অফ চ্যারিটির যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে এটির অধীনে চার হাজারেরও বেশী মানুষ কাজ নানা ভাবে করছেন। চ্যারিটির অধীনে রয়েছে সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য এতিম খানা, এইডস আক্রান্তদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র। বিশ্বব্যাপী নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শরণার্থী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, পক্ষাঘাত গ্রস্থ, দরিদ্র, আনাসনহীন, মাদকাসক্ত, দূর্ভিক্ষ বা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবায় চ্যারিটির সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মাদার তেরেসার রেখে যাওয়া পথে।
১৯৫২ সালেই মাদার তেরেসা কলকাতায় একটি মুমূর্ষদের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র চালু করেন। ভারতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি পরিত্যাক্ত প্রাচীন মন্দিরকে পরিনিত করেন মুমূর্ষদের জন্য। এর নাম দেন ‘কালিঘাট হোম ফর দ্য ডায়িং’। অবশ্য এটিকে পরবর্তীতে এই কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘নির্মল হৃদয়’।
এখানে মুমূর্ষ ও সুবিধাবঞ্চিত যে কেউ সেবা নিতে আসতে পারতো। তাদেরকে যথাসম্ভব চিকিৎসাও দেয়া হতো। মৃত্যুর পূর্বে ধর্ম ভেদে সকল নিয়ম পালনের সুবিধাও সেখানে গড়ে তোলা হয়। হিন্দুদের জন্য গঙ্গার জলে স্নান, খ্রিস্টানদের জন্য লাস্ট রাইটের সুবিধা ও মুসলিমদের জন্য ছিলো নামাজ অথবা কুরআন পড়ার সুযোগ। মাদার তেরেসা এ সম্পর্কে একটি সুন্দর কথা বলেছেন। যেটি হলো,
‘A beautiful death is for people who lived like animals to die like angels loved and wanted.”
এর কিছুদিন পরই কুষ্ঠরোগীদের জন্য একটি সেবা কেন্দ্র খোলেন। যার নাম দেয়া হয় ‘শান্তি নগর’। এশব গুলোই ছিলো মাদার তেরেসার দাতব্য সংস্থা মিশনারিস অফ চ্যারিটির অভ্যন্তরীণ উদ্যোগ। এছাড়াও এটির উদ্যোগেই কলকাতার বাইরেও বেশ কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে সেবা পৌছেনি সেখানে হ্যানসেন বা কুষ্ঠরোগীদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
এ তো গেলো অসুস্থদের কথা। মিশনারি শিশুদেরও লালন পালন করতো। এক সময় শিশুর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়তে দেখা যায়। তখন মাদার তেরেসা শুধুমাত্র শিশুদের সেবার জন্য ১৯৫৫ সালে ‘নির্মল শিশু ভবন’ নামে একটি আলাদা হোম স্থাপন করেন। বলা হয় এটি ছিলো এতিম ও বসতহীন শিশুদের জন্য একটি স্বর্গ বিশেষ।
আস্তে আস্তে পুরো পৃথিবী জুড়েই এই দাতব্য সংস্থার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এবং এর মাধ্যমে দেশ বিদেশের বহু দাতা সংস্থার মিশনারিস অফ চ্যারিটির কর্মকান্ড নজরে আসতে শুরু করে। এর ফলে অনেক অর্থ জমা হয়। ১৩৬০ সালের মধ্যেই ভারতের প্রায় সব জায়গায় মাদার তেরেসার প্রতিষ্ঠিত চ্যারিটির পরিচালনায় প্রচুর দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে উঠতে শুরু করে।
শেষ পর্যন্ত ভারতের বাইরে প্রথমবারের মত ভেনিজুয়েলায় ১৩৬৫ সালে একটি কেন্দ্র চালু হয়। যেটি মাত্র পাঁচজন সিস্টারকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। আর এভাবেই আস্তে আস্তে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন দেশে এটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৮ সালে রোম, তানজানিয়া এবং অস্ট্রিয়াতে চ্যারিটির শাখা খোলা হয়। ১৩৭০ এর দশকে আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় কয়েক ডজন খানেক দাতব্য সংস্থা গড়ে উঠে।
ভালো কাজেও সমালোচনা
ভালো কাজে সমালোচনা থাকবে না তা কি করে হয়! মাদার তেরেসার মানব সেবায় অসামান্য কাজ নিয়েও শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। যদিও মাদার তেরেসার সমালোচকেরা খুব কম তথ্য প্রমানই হাজির করতে পেরেছিলেন। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল এবং দ্য ল্যান্সেট নামের মোটামুটি জনপ্রিয় পত্রিকা মাদার তেরেসার সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অনেকে তো আবার ইনজেকশনে একই সূচ একাধিকবার ব্যবহারের কথা বলেছেন। সমালোচনা করা হয় কেন্দ্রগুলোর জীবন যাত্রার মান নিয়েও। কিন্তু এগুলো ছিলো মাদার তেরেসার মানব সেবার মত বিশাল কাজের শরীরে ছোট্ট ধাক্কা মাত্র!
অর্জন
তিনি অসুস্থ ও মুমূর্ষদের চিকিৎসা, বাস্তুহীনদের আবাসন প্রদান এবং এতিম শিশুদের লালন পালন সহ মানবিক সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখায় ১৯৭৯ সালে মাদার তেরেসাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়াও তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮০ সনে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মানীয় পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ অর্জন করেন মাদার তেরেসা। এছাড়াও মাদার তেরেসা যথাক্রমে ১৯৮৫ সালে প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং ১৯৭৮ সনে বালজান পুরস্কারে ভূষিত হন।
মৃত্যু
১৯৮৩ সনে পোপ জন পল ২ এর সাথে দেখা করতে রোম যাবার পথে মাদার তেরেসা প্রথম বারের মত হার্ট এ্যাটাক করেন। তার ছয় বছর পর ১৯৮৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মত হার্ট এ্যাটাকের শিকার হোন। তখন তাঁর শরীরে কৃত্রিম ভাবে পেসমেকার স্থাপন করানো হয়। তারও দুই বছর পর ১৯৯১ সালে মেক্সিকোতে থাকার সময় নিউমোনিয়া হওয়ায় তার হৃদরোগের অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। এমতাবস্থায় তিনি তার নিজস্ব দাতব্য সংস্থা মিশনারিজ অব চ্যারিটির প্রধান পদ থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু সিস্টারদের অনুরোধের চাপে তিনি দায়িত্বে পূনর্বহাল থাকতে রাজি হন।
রোগ যেন তার পিছু ছাড়ছিলোই না। ১৯৯৬ সালের আগষ্টের দিকে তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। এতে তার বামপাশের হৃৎপিন্ডের নিলয় রক্ত পরিবহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ তিনি পুরোপুরিভাবে মিশনারিজ অব চ্যারিটির থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। সে বছরই ৫ই সেপ্টেম্বর মাদার তেরেসা মৃত্যু বরন করেন।
অমীয় বাণী
যারা অদম্য ব্যক্তি হন তাদের কিছু কথা হয় অমর। মাদার তেরেসাও এর বাইরের কেউ নয়। তার সৎ কাজের সাহস তাকে করে তুলেছে অদম্য ও অসাধারণ। তার গুটি কয়েক অমীয় বানী নিচে তুলে ধরা হলো
“ আমাদের মধ্যে সবাই সব বড় কাজ গুলো করতে পারবে তা না, কিন্তু আমরা অনেক ছোট কাজ গুলো করতে পারি আমাদের অনেক বেশী ভালবাসা দিয়ে। ”
এছাড়াও মাদার তেরেসা মানুষকে ভালোবাসা সম্পর্কে বলেন,
“ যদি তুমি মানুষকে বিচার করতে যাও তাহলে ভালবাসার সময় পাবে না ”
মাদার তেরেসা যখন মারা গেলেন তখন তার প্রতিষ্ঠিত মিশনারি অফ চ্যারিটি নামক দাতব্য সংস্থাইয় সিস্টারের সংখ্যা ছিলো চার হাজার। তার সাথে আরো তিনশো জন ছিলেন ব্রাদ্রারহুড সদস্য। আর তখন পুরো পৃথিবীতে এটির স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা ১০০,০০০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। এসব মানুষের মাধ্যমে পুরো পৃথিবীর একশত তেইশটি দেশে ৬১০টি মিশনারির মাধ্যমে চ্যারিটির কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এসব মিশনে এখনো এইডস থেকে শুরু করে কুষ্ঠরোগ ও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। মাদার তেরেসা নেই। কিন্তু পৃথিবীর ১২৩ টি দেশে হাজারো চ্যারিটিতে মাদার তেরেসা বেঁচে আছেন অনবদ্য ভাবে। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন হাজারো প্রতিকুলতার মাঝে কিভাবে ভালো কাজের জন্য নিজেকে বিসর্জন দিতে হয়।
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
আপনার কমেন্ট লিখুন