পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
কানে তালা লাগার মত শব্দে মুখরিত হলরুম। সপ্তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের ফলাফল ঘোষণার আসর। এর মাঝেও শোনা যায় মাইকে উপস্থাপক বলে চলছে- “এ বছরের রৌপ্য পদক অধিকারী বাংলাদেশের সেবন্তি জাহান। সেবন্তি, তোমাকে অনুরোধ করা হচ্ছে তুমি স্টেজে এসে তোমার পুরষ্কারটি গ্রহণ কর।” কিন্তু বাংলাদেশের ছোট্ট শহরের ছোট্ট মেয়ে সেবন্তির তখনো নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। আসলেই কি সকল বাধা পেরিয়ে, রাত দিনের প্রাণান্ত চেষ্টা শেষে, দূরের দেশে পাড়ি দিয়ে আজ কোন ছোটখাটো পুরষ্কার নয়, বরং রৌপ্য পদক অর্জন করার সৌভাগ্য পেতে যাচ্ছে সে?
সেবন্তি জাহান মিলি। ছোটবেলা থেকেই গনিতের প্রতি প্রবল ঝোঁক মেয়েটির। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে, গেল বছর কলেজে উঠল। স্কুলে লেখাপড়ার চাপ ও সিলেবাস আয়ত্তে ছিল বলে সঠিক নিয়মে, মনোযোগ সহকারে দিনের কাজ দিনেই শেষ করে ফেলতে পারত। সেসব করে দিব্যি সময় দিতে পারত নিজের শখের (স্বভাবত নানা জায়গা থেকে সংগ্রহ করা ও তার ভাই এর উচ্চতর শ্রেণির বই থেকে পাওয়া অংক করা) কাজগুলোর জন্য। পড়াশোনার পাশাপাশি, এক্সট্রা কারিকুলার বা সহশিক্ষার তাগিদে নানান স্কুল, একাডেমী ও প্রতিষ্ঠানে অংশ নেওয়া ছিল তার নিত্য দিনের তালিকায়।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
তবে উচ্চমাধ্যমিকে উঠতে না উঠতেই পড়ালেখার যে ভয়াবহ চাপ শুরু হল, তাতে বাইরের প্রতিষ্ঠানের সহশিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা তো দুরের কথা, পাঠ্যবইয়ের বাইরের দু’চারটা অংক করারও যেন সময় মেলেনা। আর দিনের সবটুকু সময় যদি ফিজিক্সের এস্কেপ ভেলোসিটির সূত্র না হয় বাংলা সাহিত্যের ‘বিলাসী’র নৈর্ব্যক্তিক সমাধান করতেই পার হয়ে যায়, তবে আত্মার শুদ্ধি তথা শখের কাজের সময় কই?
কিন্তু তার মন তো আবদ্ধ থাকে না পাঠ্যবইয়ের এক মুঠো গৎবাঁধা নিয়মের অংকের মধ্যে। কিন্তু আবার কলেজের কাজ আর মনের কাজ- এ দু’য়ের মধ্যে সে ভারসাম্য রাখবেই বা কি করে?
আরেকটি গল্প শুনি। কাজলের গল্প। কাজল- যে কিনা গান করতে ভালবাসে, ভালবাসে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ধ্যানে মগ্ন হতে, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী ও ওস্তাদ রশীদ খাঁর সুরে বিভোর হতে।
ছোটবেলা থেকে নিয়মিত রেওয়াজ করে আসা কাজল, বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে পা রেখে হঠাৎ আবিষ্কার করে যে, এই শখের কাজটি ও এর পাশাপাশি যত ধরণের সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে সে মনোনিবেশ করত- সেসব কিছুর জন্যই সে সময় বার করতে পারছে না। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিফারেন্সিয়েশান সমীকরণগুলি আত্মস্থ করার ফাঁকে খাম্বাজ রাগে গলা মেলানোটা যেন তার ঠিক হয়ে ওঠে না। জোর করে মেলাতে চাইলেও, প্রজেক্ট ও অ্যাসাইনমেন্টের বিভীষিকাময় চাপে গান করার মত মানসিক ও শারীরিক অবসর তার কোথায়? কোথায় ফিরে পাবে সে সেই অফুরন্ত বিকেল, যখন ছিল না ব্যস্ত রুটিনে পরের দিনের কুইজের টেনশান, ছিল না CV ভারি করার জন্য “অর্থপূর্ণ ও লাভজনক শখ” খোঁজার তাগিদ।
তোমরা লক্ষ্য করে দেখবে, ওপরের দুটি গল্পই কিন্তু অসম্পূর্ণ। দুটোতেই রয়েছে অপূর্ণ স্বপ্নের হাতছানি। যে স্বপ্নে শখের রূপে সহশিক্ষার মতো একটি বিষয় বিসর্জিত হয়। যে স্বপ্ন সময়ের অভাবে, কর্মব্যস্ততার কারণে, “Real Jobs, Real Education” এর আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়।
যে স্বপ্ন আমাদের বৈশ্বিক চিন্তাধারায়, সেটি স্মৃতির এতই গভীরে চলে যায় যে, আমরা ভুলে যাই সেই চিরচেনা পংক্তি “বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর”। যেখানে পুরো পৃথিবীটাই জ্ঞানের রাজ্য-ভাণ্ডার, সেখানে প্রতিটি সহশিক্ষা থেকেই শেখার সুযোগ অসীম। প্রচলিত অর্থে সহশিক্ষা কোন প্রকার “লাভজনক” শিক্ষা না হলেও, জীবনের দৌড়ে সহশিক্ষার গুরুত্ব তুলনাহীন- তা হোক নতুন ভাষা শেখার মত জ্ঞানগর্ভ, বিতর্ক করার মত যুক্তি-যুদ্ধের, কি ছবি আঁকার মত নিতান্তই শৈল্পিক একটি শখ।
আজকের সহশিক্ষাই তো আগামীর শিক্ষা
পড়ালেখার পাশাপাশি এরূপ সহশিক্ষায় সময় দিতে গিয়ে অনেকেই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেনা। আগ্রহ ও মেধা থাকা সত্ত্বেও, পড়ালেখাকে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে গিয়ে সহশিক্ষাকে বিদায় জানায় তারা। আসলে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় তো এই মনোভাব পরিহার করারও সুযোগ নেই। তাহলে উপায়? দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খাওয়া, ঘুম, আর মুঠোফোনের (বলা বাহুল্য!) জন্য সময় বরাদ্দ রেখে, কিভাবে বের করবে বাকি দুটির জন্য পর্যাপ্ত সময়?
সময় ও সাধন:
এ যেন এক চিরায়ত সত্য। যাবতীয় সকল কিছুর ভিড় থেকে সরে এসে একটু চিন্তা করলেই আমরা দেখব, পড়ালেখায় সময় দেয়ার পাশাপাশি আমরা কতো ভাবেই না সময়ের অপব্যবহার করি। অনেক সময় নিজের অজান্তেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাটিয়ে, অসময়ে প্রয়োজনের অধিক ঘুমিয়ে, কিংবা, শুধু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেই চলে যায় দিনের সিংহভাগ। তুমি নিজেই বলো তো, এই ছোট্ট জীবনকালে, একেকটি মুহূর্তের মূল্যকে এভাবে অবহেলিত করা কি ন্যায়সংগত? উত্তরটি আশা করি আমার দেয়ার অপেক্ষা রাখে না। এতকিছু বোঝার পর, শুধুমাত্র সময়ের সদ্ব্যবহার করে কি ঘুরিয়ে দিতে পারো না তোমার জীবনের ঘড়ির কাঁটা?
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Microsoft Office 3 in 1 Bundle
অভ্যাসের দাস আমরা সকলেই:
কোন অভ্যাসই একদিনে অভ্যাস হয়ে ওঠে না, তা হোক ভালো কি মন্দ। জীবনের প্রতিটা কাজই কোন না কোন অভ্যাসবশত করে আসছি আমরা। বাংলায় কথা বলছো? তা অভ্যাস হয়ে গেছে তাই। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যাচ্ছো? তাও অভ্যাসের দাস হয়েই। এখানেই বিদ্যমান সূক্ষ্ম একটি সাফল্যের চাবিকাঠি। সকল বিষয় সম্বন্ধে সতর্ক হয়ে, তুমি কি আজ থেকেই অল্প অল্প করে চেষ্টা করে দেখতে পারো না, দিনের রুটিনে শখের কাজটির জন্য সময় বের করা যায় কি না? প্রতিদিন এটির পুনরাবৃত্তি করে কি এটিকে একটি নিত্যদিনের অভ্যাস বানিয়ে ফেলতে পারো না? চেষ্টা করলে অবশ্যই পারবে। শখের কাজটি শুধু শখ হিসেবে গণ্য না করে, এমন একটি পন্থা হিসেবে নাও, যা হতে ভবিষ্যতেও অনেক ধরণের উপকার পাওয়া যাবে।
ছকে বাঁধা জীবন:
শুনতে তেতো লাগলেও, তুমি যদি নিজের জীবনটি একটি ধরাবাঁধা ছক বা রুটিনের মধ্যে ফেলতে পারো, তাতে করে সারাদিনের কাজগুলো যে কি পরিমাণ শৃঙ্খলাপরায়ণ ও পরিকল্পনামাফিক করা সম্ভব হয়, তা একদিন চেষ্টা করলেই বুঝতে পারবে। শুরুতেই প্রতি ঘণ্টায় সম্ভব না হলেও, এক বেলা টার্গেট রেখে আগানো বেশ সহজতর হবে।
আমেরিকার কালজয়ী বিজ্ঞানী, লেখক ও রাজনীতিবিদ বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন কিন্তু একদিনে তার নিষ্ঠা ও শ্রমের পরিচয় দেননি। তার দৈনন্দিন জীবন এতটাই সময়ে বাঁধা ও রুটিনমাফিক ছিল যে, দিনের ২৪ ঘণ্টার সম্পূর্ণ ও প্রকৃষ্ট ব্যবহার করতেন তিনি। আর তাই সকল দরকারি কাজ শেষ করার পরও, নিজের জন্য সময় বের করতে পারতেন- যে সময়টায় তিনি শুধু গান শুনে, অথবা গল্পগুজব করে সময় কাটাবেন। তাঁর জীবন থেকে তাই অন্য কিছু না পারলেও, এই একটি শিক্ষা আমাদের সকলেরই গ্রহণ করা কাম্য যে, তাঁর মত একজন সর্বদা-ব্যস্ত ব্যক্তি যদি নিয়মিত নিজের জন্য সময় বের করে শখের কাজটি করতে পারেন- তবে আমরা কেন পারব না?
বদলে ফেলো দৃষ্টিভঙ্গি:
এটা কমবেশি সকল শিক্ষার্থীরই সম্মুখীন হতে হয় যে একনাগাড়ে পড়তে পড়তে মাথায় আর পড়া ধরে না। এমন অবস্থা থেকে রেহাই পেতে আমরা সকলেই মোটামুটি চোখ বন্ধ করে একটি সাধারণ উপায় অবলম্বন করি- হাতের কাছের ফোনটি নিয়ে ফেসবুক অথবা ইন্সটাগ্রাম অথবা অযাচিত যত ধরণের অ্যাপ এর ভেতর রয়েছে, প্রত্যেকটাতে একবার ঢুঁ মেরে আসি। তা কেউ ১০ মিনিটের জন্য, আবার কেউ ৩০ মিনিট।
এই কাজটা যে আমরা সবসময় নেহায়েত চেক করার ইচ্ছে থেকে করি, তা কিন্তু না। অনেকেই হয়ত ‘Brain Freeze’ কাটাতে অথবা একটা স্বল্প বিরতি নেবার জন্য করে থাকো। এই পাঠ্যবিরতিটিই কিন্তু তুমি একটি ভিন্ন আঙ্গিকে নেওয়া শুরু করতে পারো। ১০ মিনিট টিভি না দেখে, অথবা ফোনে না কাটিয়ে, পারলে বারান্দায় গিয়ে সামনের গাছের একটি ছবি এঁকে আসো, নাহয় একটু ফুটবল খেলে আসো, কিংবা কিছুক্ষণ রেওয়াজ করে আসো। শখগুলোকে পুনরায় জাগিয়ে তুলে, এই সহশিক্ষাগুলোই হোক না তোমার বিনোদন ও মনোরঞ্জনের মাধ্যম!
ডানা মেলো তোমার স্বপ্নের:
এলেন জনসন সারলিফ বলেছিলেন- “If Your Dreams Don’t Scare You, They Are Not Big Enough.” কথাটি আজও প্রতিফলিত আমাদের সকল আশা, আকাঙ্ক্ষা ও চাওয়া-পাওয়া ঘিরে। স্বপ্ন যদি আকাশচুম্বীই না হল, তবে তা স্বপ্ন কিসের? স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির ৫টা কি ৮টা কোর্সের সীমানা পেরিয়ে স্বপ্ন দেখ আরও কিছু করার, বড় কিছু করার, ও বিশেষ করে পড়ালেখার বাইরে নিজের জন্য কিছু করার। ছাত্রজীবনের অদম্য শক্তি, মেধা, multitasking করার ক্ষমতা- সবকিছুই আছে তোমার। কেন পারবেনা তুমি হতে এ যুগের লতা মুঙ্গেশকর বা “The Next Shakib Al Hasan”?
সহশিক্ষা বা co-curricular activities বিষয়টা এমন একটা মাধ্যম যা থেকে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধা বা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, ছবি আঁকা, খেলাধুলা, বিতর্ক বা যাই তুমি করো না কেন, তাতে পারিবারিক পরিবেশের সায় ও সহযোগিতা থাকার পাশাপাশি, তোমার সর্বোচ্চ চেষ্টা, আগ্রহ ও উদ্দীপনা থাকা বাঞ্ছনীয়।
তোমার জীবনের গল্পটি যেন কোন সেবন্তি বা কাজলের গল্পের মত অপূর্ণ না থেকে যায়, সে লক্ষ্যে তোমার নিজেকেই শিক্ষা ও সহশিক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে শিখতে হবে। কেননা আজকের সহশিক্ষাই তো আগামীর শিক্ষা। এ দু’য়ের যেকোনো একটাতে ছাড় দেয়া মানে মেধার অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। আর এই তুমুল প্রতিযোগিতামূলক সমাজে পড়াশোনার পাশাপাশি সবকিছুর চর্চা চালিয়ে যাওয়া অপরিহার্য। যেখানে সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার খোলা- সেখানে তুমি প্রস্তুত তো?
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতিতে আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- ঢাবি-ক কোশ্চেন সলভ কোর্স
- ভার্সিটি A Unit + গুচ্ছ এডমিশন কোর্স
- ভার্সিটি B Unit + গুচ্ছ এডমিশন কোর্স
- ভার্সিটি C Unit + গুচ্ছ এডমিশন কোর্স
আপনার কমেন্ট লিখুন