পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!
সময়টা আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগে, স্থান প্রাচীন চীন। তৎকালীন চীনের অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য ‘উ’-এর অধিপতি ছিলেন সম্রাট হেলু। তিনি তাঁর অভিজ্ঞ ও দার্শনিক প্রধান সেনাপতি সান জুকে নির্দেশ দেন যুদ্ধজয়ের কৌশল নিয়ে একটি বই লিখতে। যাতে সম্রাটের পরবর্তী প্রজন্মও যুদ্ধের ময়দানে জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারে।
এই আড়াই হাজার বছরে পৃথিবীর চেহারা আমূল বদলে গেছে। সেই তীর ধনুকের যুদ্ধও টিকে নেই, টিকে নেই সম্রাট হেলুর সাম্রাজ্যও। এমন হয়ত একটা জিনিসও পাওয়া যাবে না, যার পরিবর্তন এই বিশাল সময়ে হয়নি।
কিন্তু, টিকে রয়েছে সান জু’র “Art of War”। এখনও মানুষের সর্বাধিক পঠিত বইগুলো মধ্যে এটি একটি। তার কারণটি হল – যুদ্ধের ধরণ ও মাধ্যম বদলে গেলেও সান জু’র দর্শন আজও কার্যকর। শুধু যুদ্ধক্ষেত্র নয়, কর্পোরেট জগত থেকে শুরু করে খেলাধুলা, নেতৃত্ব, ব্যবসাসহ জীবনের যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায় এই হাজার বছর পুরোনো শিক্ষাগুলো।
ঘুরে আসুন: রিচার্ড থ্যালারঃ এক অনন্য নোবেল বিজয়ী
৭,০০০ শব্দের বইটি থেকে বাছাই করা ৭টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়েই আজকের এই আয়োজন, যা তোমাকে জয়ী করবে জীবনের যুদ্ধে।
১। নিজেকে জানো ও শত্রুকে জানো:
একজন দক্ষ সেনাপতি শুধুমাত্র শত্রুর দুর্বলতা ও শক্তিমাত্রা সম্পর্কেই জানে না, সে নিজের দুর্বলতা ও শক্তিমাত্রা সম্পর্কেও সমান ভাবে অবহিত। তোমাকেও একইভাবে নিজের ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যাপারে জানতে হবে।
এর দু’টো কারণ রয়েছে।
প্রথমত, নিজের পরিধি না জানলে কখনোই তা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, নিজের শক্তির জায়গাটা জানলেই তুমি বুঝতে পারবে, কোন পথে পা বাড়ালে তুমি সফল হবে।
২। কোন যুদ্ধে তুমি লড়বে তা বাছাই করো:
বর্তমান যুগে যেকোনো কিছু অর্জন করতেই আমাদের সংগ্রাম করতে হয়, প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। কোন মানুষ সব সংগ্রামেই জয়ী হবে- এ ধারণাটা এখন অবাস্তব। তাই, তোমাকেই নির্ধারণ করে নিতে হবে, কোন যুদ্ধে তুমি তোমার শক্তি ব্যয় করবে।
সব কাজের কাজী হতে গেলে বা সব নৌকায় পা দিতে গেলে, অধিকাংশ সময় কিছুই অর্জন হয় না। তাই, লক্ষ্য সব সময় স্থির রাখতে হবে এবং যেকোনো একটি দক্ষতায় নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
ইংরেজিতে বৃদ্ধি করো দক্ষতা!
দেখে নাও ইংরেজির অতি পরিচিত ভুলগুলো নিয়ে বানানো ভিডিওর ২য় পর্ব।
এই গ্রামারকে সহজভাবে শিখতে ও নিজেকে যাচাই করতে আজই ঘুরে এসো ১০ মিনিট স্কুলের এই এক্সক্লুসিভ প্লে-লিস্টটি থেকে!
৩। পরিবর্তন মানেই সুযোগ:
সান জু’র মতে যুদ্ধের ফলাফলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক পরিবর্তন। পরিবর্তনের সাথে যেই পক্ষ সবচেয়ে বেশি নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তারাই জয়ী হয়।
জীবনের যেকোনো পরিবর্তনকেই তাই ইতিবাচকভাবে নিতে হবে এবং সেই পরিস্থিতিকে নিজের পক্ষে কাজে লাগাতে হবে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও আমরা তাই দেখতে পাই, যেসকল প্রতিষ্ঠান পুরোনোকে আঁকড়ে ধরে না রেখে নতুনকে স্বাগত জানায় তারাই টিকে থাকে।
এজন্য যখন স্ন্যাপচ্যাট–ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দ্বীতা শুরু হয়, তখন স্ন্যাপচ্যাটের সিইও ইভেন স্পাইগেল তাঁর টিমকে “Art of War” উপহার দেন, যাতে তাঁরা অভিনব ব্যবসায়িক কৌশল বের করতে পারেন।
৪। দীর্ঘায়িত লড়াই থেকে কেউই লাভবান হয় না:
সে যুদ্ধ যত দ্রুত শেষ হয়, সে যুদ্ধের ফলাফল হয় ততোই ভালো। তাই, যে পদক্ষেপ নেবে তা যেন দ্রুত কার্যকর হয়। কালক্ষেপণ অনেক সময় সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকেই ভেস্তে দিতে পারে।
যদি তোমার মাথায় কোনো আইডিয়া আসে যেটা নিয়ে তুমি আসলেই কাজ করতে চাও, তাহলে কখনো আগামীকাল বা “সঠিক সময়”-এর জন্য অপেক্ষা করবে না। কারণ, এই আগামীকাল ও সঠিক সময় কখনোই আসবে না। তাই, সাথে সাথেই লেগে পড়ো কাজে।
৫। অদেখাকে দেখো, অপ্রথাগত পথকে আপন কর:
এখানে সান জু আমাদের যা শিক্ষা দেন, সেটি হল – অনেক সময় তোমার মনে হবে, তোমার কাছে পর্যাপ্ত উপাদান নেই। কিন্তু, তোমার কাছে যা রয়েছে তা ব্যবহার করেই অনেক অভিনব সমাধান বের করা সম্ভব। এজন্য কখনো নতুন ও অপ্রথাগত কিছু চেষ্টা করতে পিছিয়ে যেও না।
৬। সময়জ্ঞান অত্যাবশ্যক:
সময়জ্ঞান অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। কোন কাজের সাফল্য শুধু প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করে না, সেই প্রচেষ্টা সঠিক সময়েও হতে হয়। তাই, জানতে হবে – কখন কোন পদক্ষেপটি নিতে হবে।
তাছাড়া, এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় অতি দ্রুত। তাই, সময়মত সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা অনেক বেশি জরুরি।
ঘুরে আসুন: Elon Musk-এর জীবন থেকে Productivity বাড়ানোর ৫ কৌশল
৭। নিজের ওপর বিশ্বাস :
এটি খুব সম্ভবত সান জু‘র সবচেয়ে বিখ্যাত উক্তি। জীবনের যেকোনো যুদ্ধে সবার আগে যে জিনিসটি প্রয়োজন, সেটি হল– নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা। ইতিহাসে আমরা হাজার হাজার যুদ্ধ দেখতে পাবো যেখানে তীব্র প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও এই বিশ্বাসের জোরেই মানুষ জয়ী হয়েছে। সুতরাং, তুমিও পারবে।
সবসময় মনে রাখবে, যতক্ষণ একজন মানুষ তার নিজের কাছে হেরে না যায়, তাকে আসলে কেউ হারাতে পারে না। তাই, সর্বদা রাখতে হবে নিজ সামর্থ্যে বিশ্বাস।
“The Art of War” আমাদের শিক্ষা দেয় – যুদ্ধে জয়ের জন্য শক্তির চেয়ে বেশি যা প্রয়োজন, তা হল – প্রজ্ঞা ও সচেতনতা। সেটা যে যুদ্ধই হোক না কেন। আশা করি, এই শিক্ষাগুলোকে বুকে নিয়ে জয়ের নিশান উড়িয়ে জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে তোমরা। যেমনটা সান জু বলেছেন – “Victorious warriors win first and then go to war.”
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: [email protected]