পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!
লামিয়ার অনেকদিনের শখ যে সে রোবোটিক্স নিয়ে পড়াশুনা করবে। কিন্তু যাকেই সে এই কথা বলতে যায়, সেই তার কথা শুনে হেসে ওঠে। কেননা তাদের মতে, কমার্সের ছাত্রী হয়ে কীভাবে সে এই বিষয়ে আগ্রহ দেখায়? চারপাশ থেকে নানান কটু কথা শুনে দমে যায় লামিয়া। একদিন গুগলে Courses about Robotics লিখে সার্চ দিতেই ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে বেশকিছু চমকপ্রদ তথ্য। লামিয়া গুগলে এমনকিছু অনলাইন কোর্সের সন্ধান পায়, যেখানে যে কেউ যে কোনো বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করতে পারবে। শুধু তাই নয়, কোর্স শেষে সার্টিফিকেটেরও ব্যবস্থা রয়েছে!
উপরে লামিয়ার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আমরা অনেকেই নিজেদের সাথে মেলাতে পারি। আমাদের অনেকেরই অনেক সময় সিলেবাসের বাইরের নানান বিষয় শিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু হয়তো কোনো না কোনো কারণে শেখাটা হয়ে ওঠে না। তাই বলে তো ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কোথাও গিয়ে শিখতে না পারলে কী হয়েছে? অনলাইন কোর্স তো রয়েছে!
কী এই অনলাইন কোর্স?
অনলাইন কোর্সকে বলা যায় এক বিরাট মুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কেননা এখানে এমন কোনো বিষয় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যেটা শেখানো হয় না। বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকেরা এখানে ক্লাস নিয়ে থাকেন। সেই সাথে থাকে বিষয় সম্পর্কিত লেকচার নোট, অডিও এবং ভিডিও ক্লিপস, কুইজ, এসাইনমেন্ট ইত্যাদি। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ক্লাসে অংশ নেওয়ার জন্য সেখানে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকা লাগে না, নিজের ট্যাব বা ল্যাপটপ নিয়ে ঘরের এক কোণে বসে-শুয়ে যেভাবে ইচ্ছে ক্লাস করা যায়।
অনলাইন কোর্স অর্থাৎ ক্লাসগুলো করার জন্য সবার প্রথমে একটি স্মার্টফোন বা ট্যাব অথবা কম্পিউটার প্রয়োজন। সেই সাথে ইন্টারনেট সংযোগ, নোটখাতা, কলমও গুছিয়ে একত্র করতে হবে। ব্যস্, এবার নিজের ডিভাইস আর খাতা–কলম নিয়ে যেকোনো এক জায়গায় বসে শুরু করে দাও কোর্স!
গুগলে Online Course লিখে সার্চ দিলে কয়েক শতাধিক সাইটের নাম চলে আসবে, তবে এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. Coursera: আমেরিকাসহ বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা এখানে অনলাইন ক্লাস নিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, কোর্স শেষে সেইসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোর্সের উপর অফিশিয়াল সার্টিফিকেটও সংগ্রহ করারও ব্যবস্থা রয়েছে। ডেটা সায়েন্স থেকে শুরু করে সাউন্ড এডিটিং; কোন বিষয়ের কোর্স নেই এই সাইটে? এই সাইটে কোর্সের সংখ্যা প্রায় ২০০০। আর এই কোর্সগুলোর বেশিরভাগই করা যায় একদম বিনামূল্যে কিংবা অনেক কম খরচে। শুধু সার্টিফিকেটের জন্য অতিরিক্ত ডলার দিতে হয়।
২. Lynda.com: এই সাইটে কোর্স করতে হলে তাদের ভিডিও টিউটোরিয়াল লাইব্রেরিতে সাবস্ক্রাইব করা লাগবে। এটাকে একধরণের ‘শিক্ষামূলক নেটফ্লিক্স‘ও বলা চলে। বিভিন্ন বিষয়ের উপর এখানে মোট ৮০,০০০-এরও বেশি ভিডিও টিউটোরিয়াল রয়েছে, যার জন্য প্রত্যেক মাসে ২৫ ডলার খরচ করতে হয়।
কোর্স শুরু করার সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, কেন আমি এই কোর্সটি করছি? এই কোর্স করার পেছনে আমার উদ্দেশ্য কী?
৩. Udemy: Udemy-তে কোর্স করার খরচ অন্যান্য সাইটগুলোর তুলনায় একটু বেশি। একেকধরণের কোর্সের জন্য একেকরকম খরচ, আর তা ১০ ডলার থেকে শুরু করে ৫০০ ডলার পর্যন্ত। তবে Udemy-তে সবচেয়ে জনপ্রিয় কোর্স হলো ‘বিজনেস এন্ড টেকনোলোজি’, যার জন্য গুণতে হবে ১০০ ডলার। প্রত্যেকটি বিষয়ের কোর্সের শুরুতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কোর্স সম্পর্কিত রিভিউ দেওয়া থাকে, যা দেখে যে কেউ কোর্স সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে।
৪. Udacity: অন্যান্য অনলাইন সাইটগুলোর মতন হাজার হাজার কোর্স না থাকলেও, ভালো মানের কোর্সের সন্ধান শুধুমাত্র Udacity-তেই পাওয়া যায়। আর এর অধিকাংশই হচ্ছে টেকনোলজি নিয়ে। প্রত্যেক মাসে কোর্সের জন্য টাকা দিতে হয়। তবে কোনো কোর্স মাঝপথে ছেড়ে দিলে সেটার জন্য পুরো টাকা দিতে হবে না। যতটুকু করেছি সেটার টাকা পরিশোধ করলেই চলবে।
এছাড়াও Codecademy, edX, Khan Academy, Bloc, Iversity, Skillshare-এর মতন অনেক সাইটেও বিনামূল্যে এবং প্রায় বিনামূল্যে নানান বিষয়ের উপর কোর্স করা যায়। তবে অনলাইন কোর্স দেখে একদম গা এলিয়ে ক্লাস করলে হবে না, স্কুল–কলেজে আমরা যেভাবে মনোযোগ সহকারে ক্লাস করি, এখানেও সেভাবেই করতে হবে।
অনলাইন কোর্স করতে হলে বেশকিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন:
• পড়ার স্থান নির্ণয়:
যেহেতু অনলাইন কোর্সের জন্য ইন্টারনেটের সংযোগ প্রয়োজন, সেহেতু এমন এক জায়গায় বসতে হবে যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ বেশ ভালো এবং দ্রুত পাওয়া যায়। অনলাইন কোর্সের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা। কেননা এখানে তো বকুনি দেওয়ার মতন কেউ নেই! তাই ঘরের এমন এক জায়গায় বসতে হবে, যেখানে নিজের মনোযোগ অন্যদিকে যাবে না। চাইলে লাইব্রেরিতে বসেও ক্লাস করা যায়।
• রুটিন তৈরি করা:
আজ ক্লাস করলাম, আবার কাল করলাম না– এমনটা করা চলবে না। সপ্তাহের প্রত্যেকদিন অন্তত এক ঘণ্টা করে হলেও ক্লাস করা উচিত। তাই প্রত্যেকদিন শেখার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিতে হবে। যেমন: শুক্র, শনি ও রবিবার আমি দুপুর ২ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ক্লাস করবো। অনলাইন কোর্সে অনেক সময় কুইজ, টেস্ট ও এসাইনমেন্টেও দেওয়া হয়। তাই সেগুলোও যাতে সময়মত করা হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
শুধু রুটিন তৈরি করে রাখলেই হবে না, কোর্সটিকে আমলে নিতে হবে। হতে পারে এতে জিপিএর ব্যবস্থা নেই, বেশি খরচ পড়বে না এবং সশরীরে ক্লাসে উপস্থিতও থাকা লাগে না; কিন্তু তবুও এই কোর্সকে অন্যান্য ক্লাসগুলোর মতই গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
• নোট করা:
কম্পিউটার বা ফোনে লেকচারের স্ক্রিনশট নিয়ে সেখান থেকে পড়া বেশ ঝামেলার। এর চেয়ে ভাল হয় লেকচারগুলো যদি শিট আকারে প্রিন্ট করে নেওয়া হয়। সেই সাথে কোর্স শিডিউল এবং সিলেবাসও প্রিন্ট করে নেওয়া উচিত। এতে করে হারিয়ে ফেলার কিংবা ভুল যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
তাছাড়া অডিও এবং ভিডিও ক্লিপগুলো ডাউনলোড করে গুরুত্বপূর্ণ কথা ও তথ্যগুলো নোট খাতায় টুকে নেওয়া উচিত। পরবর্তীতে পড়ার সময় পড়া বুঝতে সুবিধা হয়। একইসাথে নোট করার সময় খাতার উপরে সেইদিনের তারিখ এবং বার বসানোর কথা ভুললে চলবে না।
• টেস্ট এবং কুইজ:
লেকচারের ভেতর থেকেই টেস্ট এবং কুইজের প্রশ্ন হয়। তাই সেগুলো ভালভাবে পড়তে হবে। এখানে খারাপ করলে জিপিএ ৫ মিস হয়ে যাবে না!
• প্রশিক্ষককে প্রশ্ন করা:
অনলাইন কোর্স দেখে প্রশিক্ষকের সাথে যে যোগাযোগ করা যাবে না, এমনটি নয়। কোর্সে কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে বা কোনো বিষয় নিয়ে জানতে হলে প্রশিক্ষককে মেইল করা যেতে পারে। তবে এর আগে দেখে নিতে হবে যে তুমি যেই প্রশ্নটা করতে চাচ্ছো, সেটি প্রশ্নব্যাংকে দেওয়া আছে কিনা। দেওয়া থাকলে সেখান থেকেই উত্তর বের করা সম্ভব।
কোর্স শুরু করার সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, কেন আমি এই কোর্সটি করছি? এই কোর্স করার পেছনে আমার উদ্দেশ্য কী? কোর্স সম্পূর্ণ করতে অনেক সময় একঘেয়েমি লাগে, কারণ এটি সম্পূর্ণ ভার্চুয়ালি করা হচ্ছে। তাই যখনই বিরক্তবোধ করবে, তখনই নিজেকে কোর্সটি করার পেছনের উদ্দেশ্য বারবার মনে করাতে হবে। নিজেকে বোঝাতে হবে যে মাঝপথে এসে হাল ছাড়লে চলবে না।
তাহলে এখন নতুন কিছু শিখতে হলে আসলেই কোনো বাধা নেই। কে কী বলছে, তাতে কিচ্ছু এসে যায় না। নিজের ইচ্ছেশক্তিটাই আসল। তাই ঝটপট নিজের স্মার্টফোনটি নিয়ে নিজের পছন্দের একটি বিষয়ের উপর কোর্স শুরু করে দাও! আর হ্যাঁ, অনলাইনে কোর্স করে কী শিখলে, তা জানাতে ভুলো না কিন্তু!
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে মনিরা আক্তার লাবনী
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন