ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘চারিত্রপূজা’ গ্রন্থে লিখেছিলেন,
বিশ্বকর্মা যেখানে চারকোটি বাঙালি নির্মাণ করিতেছিলেন, সেখানে হঠাৎ দুই-একজন মানুষ গড়িয়া বসেন কেন, তাহা বলা কঠিন।
বাংলা ও বাঙালির আত্মপরিচয় নির্মান, বাংলা ভাষার গাঁথুনিকে আরো মজবুতকরণ, নারীশিক্ষা ও বিধবাবিবাহ নিয়ে যে কজন মানুষ কাজ করেছেন, সমাজকে আরো বেশি সুন্দর করতে ব্যয় করে গিয়েছেন নিজেদের প্রজ্ঞা ও মননকে, তাদের মধ্যে অন্যতম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ক্ষণজন্মা এই মানুষটিকে নিয়ে আজকের এই লেখা।
এই লেখায় আমি আলোচনা করার চেষ্টা করবো বিদ্যাসাগরের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও কাজ নিয়ে। আলোচিত হবে বাংলা ভাষা রক্ষার্থে তার অবদান, নারী শিক্ষার প্রবর্তনে তার ভূমিকা ও বিধবাবিবাহ আইন পাশ ও সে সম্পর্কিত তার সংগ্রাম নিয়ে। একদম শেষে যুক্ত করে দেয়া হবে একটি সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি, যা তার কর্মমুখর জীবনের একটি চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরবে।
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: জন্ম ও শৈশব
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর, বাংলা ১২২৭ সনের ১২ই আশ্বিন মঙ্গলবার, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের (তৎকালীন হুগলী) বীরসিংহ গ্রামে দরিদ্র এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। তার পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতা ভগবতী দেবী। তার ঠাকুরদা রামজয় জন্মের পর তাকে এঁড়েবাছুড় বলে অভিহিত করেছিলেন। অবশ্যই তা ঠাট্টা করে। তবে পরবর্তী জীবনে ঈশ্বরচন্দ্রের জেদি ও একগুঁয়ে মনোভাব পিতা ঠাকুরদাসের কাছে তার এঁড়েবাছুর নামটিকে সংগত করে তুলেছিলো বলে বিদ্যাসাগর তার লেখায় উল্ল্যেখ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তার অভ্যাস ছিলো যা বলা হবে তার উলটো কাজটা করা! যদি বলা হয় আজ স্নান করতে হবে, তবে তিনি জেদ ধরতেন স্নান করবেন না বলে। আর যদি বলা হতো আজ স্নান করা যাবে না, তাহলে সবকিছু নিয়ে পুকুরঘাটে চলে যেতেন স্নানের জন্য। এমন নানা ঘটনায় কেটেছে এই মনীষীর শৈশবকাল।
শিক্ষাজীবন
৫ বছর বয়সে তাকে কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের পাঠশালায় ভর্তি করে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে, ৯ বছর বয়সে তিনি কলকাতার গভর্ণমেন্ট সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। এই সময়টা তার বেশ কষ্টে কেটেছে। কলকাতায় পিতা ও ভাই সহ থাকতেন তিনি, তাদের জন্য রান্না করবার দায়িত্ব ছিলো তার ওপর। মাঝে মাঝে পিতা ও ভাই ঘুমিয়ে পড়লে ঘরে বাতি জ্বালিয়ে পড়া সম্ভব হতো না, তাই বইপত্র নিয়ে চলে যেতেন রাস্তায়, গ্যাসবাতির আলোয় চলতো পড়াশোনা। পড়াশোনায় যে তিনি অসম্ভব রকমের ভালো ছিলেন তা বলাই বাহুল্য। প্রতি শ্রেণীতেই ভালো ফলাফল করবার কারণে পেতেন বৃত্তি, যা তার পিতার মাসিক আয়ের চেয়েও বেশি। বারো বছর পাঁচ মাস পড়াশোনার পর ঈশ্বরচন্দ্র ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি নিয়ে, ১৮৪১ সালের ৪ ডিসেম্বর সংস্কৃত কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন।
পেশাগত জীবন
বিদ্যাসাগরের পেশাগত জীবন ছিলো বর্ণাঢ্য। ১৮৪১ সালে বিদ্যাসাগর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সেরেস্তাদার (প্রধান পন্ডিত) পদে যোগদান করেন। ১৮৪৬ সালে সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদক পদে যোগদান করলেও, পরে ১৮৪৯ সালে পুনরায় তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হেড রাইটার ও কোষাধ্যক্ষ পদে যোগ দেন। তবে পরের বছরই তিনি সংস্কৃত কলেজে সাহিত্য শ্রেণির অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং পরে একই কলেজের অধ্যক্ষ হন। ১৮৫৫ সালে তাকে দক্ষিণ বাংলা স্কুলের সহকারী পরিদর্শক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। পরের বছর তিনি বিশেষ পরিদর্শকের পদ লাভ করেন।
বাংলা শিক্ষা প্রচলন ও যতিচিহ্ন প্রবর্তন
মিনিটস অন এডুকেশন নামে একটি রিপোর্টে উইলিয়াম বেন্টিং নামের এক ইংরেজ সাহেব লিখেছিলেন,
ভারতবাসী জনসাধারণের মধ্যে পাশ্চাত্য সাহিত্য ও বিজ্ঞানের প্রসারই ব্রিটিশ রাজের মহৎ উদ্দেশ্য হওয়া উচিত এবং শিক্ষা বাবদ সকল মঞ্জুরী অর্থ শুধু ইংরেজি শিক্ষার জন্য ব্যয় করিলেই ভালো হয়।
স্পষ্টতই তার এই রিপোর্টে বাংলা তথা ভারতবর্ষে সে সময়ে প্রচলিত ভাষাগুলোকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। বিদ্যাসাগর তাই এই রিপোর্টের ঘোর বিরোধী ছিলেন। বাংলায় ছোটলাট হিসেবে ফ্রেডরিখ হ্যালিডে নিযুক্ত হলে তার সাথে বিদ্যাসাগরের সখ্যতা গড়ে ওঠে। হ্যালিডেও বাংলা ভাষার শিক্ষার পক্ষে ছিলেন, দুজনের চেষ্টায় শিক্ষা পরিষদের পরিবর্তে ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশনের প্রবর্তন ঘটে। এখান থেকেই বিদ্যাসাগরকে দক্ষিণ বাংলার বিদ্যালয়গুলোর সহকারী পরিদর্শক পদে বহাল করা হয়। তার প্রচেষ্টায় বাংলাভাষার স্কুল নির্মানের জায়গা খোঁজা শুরু হলো। বিদ্যাগর দেখলেন যে সকল শিক্ষকরা বাংলা ভাষায় পড়াচ্ছেন, তাদের নিজেদেরও ট্রেনিং-এর প্রয়োজন। তাই তার উদ্দ্যোগে হিন্দু কলেজের সাথে যুক্ত ‘পাঠশালা’-কে এই কাজের জন্য বেছে নেয়া হয়।
বিদ্যসাগর যে কেবল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেই বসে ছিলেন এমনটা কিন্তু নয়। বর্তমানে আমরা বাংলা লেখার সময়ে যে যতিচিহ্ন ব্যবহার করি, সেটিও তার প্রবর্তন করা। ইংরেজি যতি চিহ্নের আদলে তিনি বাংলা যতি চিহ্নের প্রবর্তন করলেন ঠিকই, কিন্তু সেখানেও বাঙালী সংস্কৃতির ছাপ রাখতে ভুল করলেন না। তিনি ফুলস্টপের (.) পরিবর্তে দাঁড়ি চিহ্ন (।) ব্যবহার করেন, যা আমরা প্রাচীন যুগের চর্যাপদ কিংবা মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য প্রভৃতিতে দেখতে পাই।
আরো পড়ুন: হৃদয়ে অনুপ্রেরণা যোগাবে যে ৪০টি উক্তি
নারীশিক্ষা
নারী শিক্ষা প্রসারেও বিদ্যাসাগরের অবদান অনস্বীকার্য। ৭ই মে ১৮৪৯ সাকে কলকাতায় ড্রিঙ্কওয়াটার বীটন (বেথুন নামে যিনি পরিচিত) একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। প্রথমে এর নাম হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় ও বীটন নারী বিদ্যালয় করা হয়। তার মৃত্যুর পর সিসিল বীডন এই স্কুলের দায়িত্ব লাভ করেন, বিদ্যাসাগরকে এই স্কুলের সম্পাদক করার পক্ষে জোর দিয়ে তিনি সরকার বরাবর চিঠি পাঠান,
কমিটি সম্পাদক নিয়োগে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মাকেই উপযুক্ত ব্যক্তি বলিয়া মনে করিতে পারেন। তাঁহার সামাজিক সম্মান ও স্কুলের সম্পাদক হিসেবে পূর্ব্বপরিশ্রম তাঁহার যোগ্যতা সপ্রমাণ করে।
বিদ্যাসাগর জানতেন বাঙালী সর্বদাই ধর্মভীরু, সেদিক থেকে নারীদের শিক্ষার আওতায় আনতে তাকে বেগ পেতে হবে। তাই তিনি নারীদের স্কুল থেকে আনা নেওয়ার গাড়িতে মনুসংহিতা থেকে একটি শ্লোক লিখে দেন, ‘কন্যাপ্যেবং পালনীয়া শিক্ষণীয়াতিযত্নতঃ‘। বিদ্যাসাগর নিজ উদ্দ্যোগে প্রথমে বর্ধমান জেলার জৈ গ্রামে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৫৮ সালের মধ্যে প্রায় ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় তার হাত দিয়ে স্থাপিত হয় এবং নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শক্ত হাতে সেগুলো চালিয়ে নিয়ে যান। এই সময়ে সবগুলো বিদ্যালয় মিলিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিলো প্রায় ১৩০০, আর তাদের মোট মাসিক খরচ ছিলো ৮৪৫ টাকা।
বিধবাবিবাহ প্রচলন
রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা নির্মূলের প্রধান পুরুষ, তারই পথ ধরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আরো একটি অসংগতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন, আর তা হলো বিধবা বিবাহে বাধা। ছোটবেলায় একবার এক কন্যা শিশুকে বিধবা হতে দেখে আর তার কথা শুনে কেঁদে উঠেছিলো বিদ্যাসাগরের প্রাণ। তাই জীবনের একটা পর্যায়ে উপনিত হয়ে তিনি বাংলার বিধবাদের জন্য কাজ শুরু করেন। প্রথমে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রবন্ধাকারে, এবং পরে ১৮৫৫ সালে বই আকারে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ ‘বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কি না’-তে বিদ্যাসাগর লেখেন,
দুর্ভাগ্যক্রমে বাল্যকালে যাহারা বিধবা হইয়া থাকে, তাহারা যাবজ্জীবন যে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে তাহা যাহাদের কন্যা, ভগিনী, পুত্রবধূ প্রভৃতি অল্পবয়সে বিধবা হইয়াছেন, তাঁহারা বিলক্ষণ অনুভব করিতেছেন…বিধবাবিবাহের প্রথা প্রচলিত হইলে অসহ্য বৈধব্য যন্ত্রণা, ব্যভিচার দোষ ও ভ্রুণহত্যা পাপের নিবারণ ও তিনকুলের কলঙ্ক নিরাকরণ হইতে পারে।
পাশাপাশি তিনি বিধবাবিবাহের পক্ষে শাস্ত্র ঘেঁটে, পরাশর সংহিতা থেকে শ্লোক প্রমান হিসেবে হাজির করেন,
নষ্টে মৃতে প্রব্রজিতে ক্লীবে চ পতিতে পতৌ।
পঞ্চস্বাপৎসু নারীণাং পতিরণ্য বিধীয়তে।।
এর অর্থ, স্বামী যদি নিরুদ্দেশ হয়, মারা যায়, প্রব্রজ্যা অবলম্বন করে, তাহলে নারীর অন্য পতি গ্রহণ করা বিধেয়। বিদ্যাসাগর প্রায় ১,০০০ সাক্ষর গ্রহণ করে সরকারের কাছে বিধবাবিবাহ আইন পাশ করার আবেদন জানান, কিন্তু এর বিরোধীতা করে সাক্ষর জমা পড়ে প্রায় ৩০,০০০। তারপরেও, ইংরেজ সরকার নানা দিক বিচার বিবেচনা করে ১৮৬৬ সালের ২৬শে জুলাই বিধবাবিবাহ আইন পাশ করে। সে বছরই শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন বিধবা কালীমতি দেবীকে বিয়ে করে ইতিহাসের সাক্ষী হন। বিদ্যাসাগরের পুত্র নারায়ণচন্দ্র তার পিতার অনুগামী ছিলেন। তিনিও পরবর্তী সময়ে স্বেচ্ছায় শম্ভুচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বিধবা কন্যা ভবসুন্দরীকে বিয়ে করেন।
গ্রন্থমালা
রচিত ও সংকলিত | প্রবন্ধ | বেনামী রচনা | সম্পাদিত |
|
|
|
|
কয়েকটি মজার গল্প
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে সমাজে বেশ কিছু মজার ও শিক্ষামূলক গল্প ছড়িয়ে আছে। এই অংশে এমন কয়েকটি গল্প সম্পর্কে জানবো।
আমিই বিদ্যাসাগর
একবার কিছু লোক বিদ্যাসাগরের সাথে দেখা করতে তার বড়িতে এলেন। তারা বিদ্যাসাগরকে চিনতেন না, তাই বাড়ির সামনে বাগানে কাজ করতে দেখেও বিদ্যাসাগরকে তারা জিজ্ঞেস করলেন, ঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা বাড়ি আছেন?
বিদ্যাসাগর বললেন, আছেন, কিন্তু কিছুটা ব্যস্ত। আপনারা বসুন, উনি কাজ শেষ করে আসবেন। লোকগুলো তাকে বললো তামাক সাজিয়ে দিতে। ঈশ্বরচন্দ্র নিজ হাতে তাদের তামাক সাজিয়ে দিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর হাতের কাজ শেষ করে এসে বললেন, কি বলবেন বলুন। আমিই ঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা। তামাক হাতে লোকগুলো এই ঘটনায় কতটা হকচকয়িয়ে গিয়েছিলো তা নিশ্চই বোঝা যাচ্ছে?
মাইলস্টোন
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একবার তার বাবার সাথে কলকাতায় যাচ্ছেন। পথে ইংরেজ সরকারের বসানো মাইলস্টোন, সেখানে ইংরেজিতে কলকাতার দূরত্ব লেখা। বিদ্যাগরের মন কৌতুহলি হয়ে উঠলো ওখানে কি লেখা তা জানার জন্যে। পিতা তাকে শিখিয়ে দিলেন, এটা হলো ওয়ান, এটা টু। এভাবে শিখতে শিখতে কিছুদূর যাওয়ার পর একটা মাইলস্টোন দেখে বিদ্যাসাগর বললেন, এটা নাইন, মানে নয়। আর কিছুটা এগিয়ে বললেন, এটা এইট। পিতা ভাবলেন হয়তো ছেলে ক্রম অনুসারে নাম্বারগুলো বলে যাচ্ছে। তাই ছয় নাম্বার মাইলস্টোন দেখানোর পর কথায় তাকে ভুলিয়ে পাঁচ নম্বর মাইলস্টোনটা দেখালেন না। চার নাম্বার মাইলস্টোন দেখে বিদ্যাসাগর বলে উঠলেন, এখানে কোন একটা ভুল হয়েছে, ছয়ের পর পাঁচ হবে, এখানে তো চার লেখা। পিতা বুঝলেন, ছেলে তার ক্রম অনুসারে বলছে না, জেনে বুঝে আর শিখেই সংখ্যাগুলো বলছে। স্নেহে আর ভালোবাসায় পিতার মন আর্দ্র হয়ে ওঠে।
পয়সার গরম
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তখন সংস্কৃত কলেজে পড়ান। শীতের সকালে একদিন তাকে খদ্দরের চাদর আর খড়ম পড়ে ক্লাস নিতে দেখে এক ইংরেজ সাহেব ঠাট্টা করলেন, কি হে বিদ্যাসাগর, বিদ্যার ভারে শীত লাগেনা বুঝি? ঈশ্বরচন্দ্র সাথে সাথে পকেট থেকে একটা পয়সা বের করে দেখিয়ে বললেন, এই যে! পয়সার গরমে আর ঠান্ডা লাগে না!
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
সরকারি চাকরি প্রস্তুতি বেসিক কোর্স
জীবনাবসান
বিদ্যাসাগর শেষ জীবনে এসে স্বেচ্ছানির্বাসন নিয়েছিলেন কার্মাটারে সাঁওতাল পল্লীতে। দয়ার সাগর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এখানে এসেও সাঁওতালদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে লাগলেন সবকিছু। তাদের জন্য খাদ্য, বাচ্চাদের জন্য আয়না, চিরুণি- এমন সকল কিছুর আবদার বিদ্যাসাগর মেটাতেন অকাতরে। তাদের জন্য খুলেছিলেন স্কুল। ধীরে ধীরে শরীর ভেঙে আসছিলো তার। অভিমানে ফেলে আসা বন্ধু-আত্মীয়দের বিয়োগব্যাথা তাকে করে তুলেছিলো আরো দূর্বল। অতঃপর একদিন, ১৮৯১ সালের ২৯শে জুলাই, ৭০ বছর বয়সে এই শ্রেষ্ঠ মনীষী মৃত্যুবরণ করেন। তার স্মরণে ঐ বছরই ২৭শে আগস্ট ছোট লাট চার্লস এলিয়টের সভাপতিত্বে কলকাতার টাউনহলে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকেই সংস্কৃত কলেজে তার একটি প্রস্তরমূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।
শেষকথা
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে লিখেছিলেন,
বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
দীন যে, দীনের বন্ধু!- উজ্জ্বল জগতে
হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে!
বিদ্যাসাগর কেবল বিদ্যার সাগর ছিলেন না, ছিলেন দয়ারও সাগর। ছোটবেলায় কোন এক খেলার সাথীকে অল্পবয়সে বিধবা হতে দেখে কেঁদে ওঠা মন তাকে সারাজীবন পীড়া দিয়েছে নারী জাতির উদ্ধারে কিছু করবার জন্যে। করেছেনও। সমাজ সংস্কারের বাধা এড়িয়ে, যুক্তি দিয়ে এনেছেন মুক্তি, করেছেন বিধবাবিবাহ আইন পাশ। বাংলা ভাষাও তার কাছে ঋণী, যতিচিহ্নের প্রবর্তন বাংলা গদ্য তথা বাংলা ভাষাকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। আজীবন কেবল দুহাত ভরে দিয়ে যাওয়া এই মানুষটির আদর্শ ও দর্শন ছড়িয়ে যাবে সমাজের সকল প্রান্তে, স্বার্থপরতা ত্যাগ করে মানুষ এগিয়ে যাবে মানুষের জন্যে, এমনটাই প্রত্যাশা।
সংক্ষিপ্ত ঘটনাপঞ্জী
সাল | উল্ল্যেখযোগ্য ঘটনা |
১৮২০ |
|
১৮২৯ |
|
১৮৪১ |
|
১৮৪৯ |
|
১৮৫১ |
|
১৮৫৫ |
|
১৮৫৬ |
|
১৮৭১ |
|
১৮৯৯ |
|
১৮৯১ |
|
তথ্যসূত্র
১. ছোটদের বিদ্যাসাগর, আনিসুল হক
২. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শ্রী ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
৩. চারিত্রপূজা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৪. বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ, প্রথম খন্ড, বিনয় ঘোষ
৫. বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ, তৃতীয় খন্ড, বিনয় ঘোষ
৬. বিস্যাসাগর, চন্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
৭. বিধবাবিবাহ আন্দোলন ও বিদ্যাসাগরের সংস্কার প্রচেষ্টা, শেখর শীল
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Course by Abtahi Iptesam
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- ঘরে বসে Spoken English Course (by Munzereen Shahid)
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন