আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার রক্তদান কর্মসূচি চলছে। আমার এক বন্ধুকে ধরেবেঁধে রাজি করলাম রক্ত দিতে। বন্ধু ক্যাম্পে গেল, ডোনারদের জন্য বরাদ্দ কোল্ড ড্রিংক পান করল। আমি একটু ঘুরে এসে দেখি বন্ধু হাওয়া। হই হই রই রই, বন্ধু আমার গেল কই – খোঁজ নিয়ে দেখি বেচারা ভয়ে ক্যাম্প থেকে পগার পার!
রক্তদান সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই এক ধরনের ভীতি আছে। কেউ শরীরে সুঁই ফোটাতে ভয় পায়, কারও স্বাস্থ্যঝুঁকির। এই ভয়ের কারণে অনেকে শারীরিকভাবে রক্তদানে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও রক্তদান থেকে বিরত থাকে, অথচ আমাদের দেশেই প্রতি মূহূর্তে অসংখ্য মানুষের জরুরী রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে।
সুঁই ফোটানোর ভয়টা আসলে খুবই অমূলক একটা ভয়। ব্লাড ট্রান্সফিউশন প্রায় ব্যথাহীন একটি প্রক্রিয়া। এ ব্যাপারে বেশি কিছু না বলে শুধু বলব, কখনও রক্ত না দিয়ে থাকলে একবার দিয়েই দেখুন – কী তুচ্ছ একটা ব্যাপার ! একজন নিয়মিত রক্তদানকারী হিসেবে এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত করতে পারি।
এবারে আসি স্বাস্থ্যঝুঁকির পয়েন্টে। রক্তদানের মাধ্যমে কোনপ্রকার সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। রক্ত নেয়ার সময় প্রতিবার নতুন সুঁই ব্যবহার করা হয়, যা সম্পূর্ণভাবে স্টেরাইল এবং ঝুঁকিমুক্ত। এছাড়া যার রক্ত প্রয়োজন সে যে রোগেই আক্রান্ত হোক না কেন, আপনার তার সংস্পর্শে আসার কোন প্রয়োজনই নেই। ফলে রোগ সংক্রমন থেকে আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদ।
রক্তদান করলে আপনি দুর্বল হয়ে পড়বেন – এ কথাটিও ঠিক নয়। হাল্কা খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে এবং সামান্য বিশ্রাম নিয়ে রক্তদান করার কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনি আপনার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন।
একবার রক্তদানে সাধারণত ডোনারের শরীর থেকে ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে যে প্লাজমা থাকে তা রক্তদানের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আবার পুনরুৎপাদিত হয়, লোহিত রক্তকণিকা হয় ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Graphic Designing with Photoshop
অনেকে বলতে পারেন, রক্তের প্রয়োজন হলে তো পেশাদার রক্তদাতার নিকট থেকেই কিনে নেয়া যায়। এই ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, পেশাদার রক্তদাতাদের মধ্যে কেউ কেউ নেশাদ্রব্য কেনার অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে রক্ত বিক্রি করে। তাদের জীবনযাপন পদ্ধতির জন্য পেশাদার রক্তদাতাদের নিকট থেকে রক্ত কেনা নিরাপদ নয়, এর ফলে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
গুরুগম্ভীর কথাবার্তার মধ্যে একটা হালকা রসিকতা হোক। পৃথিবীর সবচেয়ে পেসিমিস্টিক (হতাশাবাদী) মানুষদের রক্তের গ্রুপ কী? উত্তর – বি নেগেটিভ!
সিরিয়াস কথায় ফিরে আসি। স্বেচ্ছায় রক্তদান করা কতটুকু প্রয়োজন সেটা অনুধাবন করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে যেকোন সরকারী হাসপাতালের রক্ত সরবরাহ বিভাগে গিয়ে ঘুরে আসা। অনেক রোগীর আত্বীয়স্বজন রক্তের অভাবে দিনের পর দিন ঘুরঘুর করছে – এর কাছে ওর কাছে ধর্ণা দিছে। এর সুযোগে কিছু দালালশ্রেণির লোক অস্বাভাবিক মূল্যে রক্ত বিক্রি করছে গ্রহীতার এটেন্ডেন্টদের কাছে।
রক্তদানের মাধ্যমে আপনি যে কেবল অপরের উপকার করছেন তা নয়, আপনি নিজেও উপকৃত হচ্ছেন
নিয়মিত রক্তদান কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী! আসুন দেখে নেই রক্তদানের কিছু উপকারী দিক –
১। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
২। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
৩। ক্যালোরি বার্ন করে।
৪। কোলস্টেরল লেভেল কমাতে সাহায্য করে।
সুতরাং রক্তদানের মাধ্যমে আপনি যে কেবল অপরের উপকার করছেন তা নয়, আপনি নিজেও উপকৃত হচ্ছেন!
১৬ থেকে ৫৪ বছর বয়সী, ৫০ কেজি (পুরুষ), ৪৫ কেজি (নারী) বা তদূর্দ্ধ ওজনের সংক্রামক রোগমুক্ত এবং স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের যে কেউ নির্ভয়ে রক্ত দিতে পারবেন। কোন মেডিকেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভালো।
আমাদের শরীরে নিতান্ত অবহেলায় যে রক্ত প্রতিনিয়ত নষ্ট এবং সৃষ্টি হচ্ছে, সেই রক্তই একজনের প্রাণ রক্ষা করতে পারে। আসুন, নিজে নিয়মিত রক্ত দেই এবং অন্যকে রক্ত দিতে উৎসাহিত করি।
ছোটবেলায় সুপারহিরো হওয়ার স্বপ্ন কে না দেখত? সুপারহিরো হওয়ার জন্য কিন্তু সুপারন্যাচারাল পাওয়ারের প্রয়োজন নেই, একটু সদিচ্ছা থাকলে আমরা নিজেরাই এক একজন সুপারহিরো হতে পারি। কীভাবে?
রক্ত দিন, জীবন বাঁচান !
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- Microsoft Word Course by Sadman Sadik
- Microsoft Excel Premium Course
- Microsoft PowerPoint Course by Sadman Sadik
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন