বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনটা অন্য সব সময়ের থেকে আলাদা। নতুন নতুন বন্ধু-বান্ধবীর দেখা, আড্ডা, নিজের ক্যারিয়ার গড়ার ভাবনা থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছুর শুরুটা হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতার শুরুটাও এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই হয়। এগুলো আবার স্কুল কলেজের মতো নয়, এসবের কোন কোনটায় সাফল্য বদলে দিতে পারে ক্যারিয়ারের গতিপথ!
বিভিন্ন বিজনেস কম্পিটিশন রয়েছে, যেগুলোয় সাফল্য পেলে নামকরা সব প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন হওয়া যায়, অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ মেলে। সাথে থাকে বড় অংকের প্রাইজমানি, আর হয় অভিজ্ঞতা।
এছাড়াও MUN বা Debate এর মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে একদিকে যেমন নিজের Public Speaking skill বাড়তে থাকে আবার অন্যদিকে নিজের একটা পরিচিতিও হয়, যা ক্যারিয়ারে অনেক কাজে লাগে।
যে কম্পিটিশনই হোক না কেন, এগুলোর জন্যে খুব দরকারি কিছু জ্ঞান মাথায় রাখতে হয়। যেকোন কম্পিটিশন, যেখানে কথা বলা বা Public Speaking এর বিষয়টি রয়েছে – সেখানেই এই বেসিক বিষয়গুলো জানা খুব বেশি দরকারি হয়ে পড়ে।
যেকোনো প্রতিযোগিতায় জিততে হলে যা প্রয়োজনঃ
১। সবসময় গল্প দিয়ে শুরু করো:
ছোটবেলায় তোমরা সবাই একটা বিষয় নিশ্চয়ই খেয়াল করেছ! ধরো স্কুলের টিচার খুব আগ্রহ করে অনেক বড় কোন টপিক পড়াচ্ছেন। বিষয় নিয়ে তাঁর আগ্রহের শেষ নেই, কিন্তু পড়াচ্ছেন একঘেয়ে ভাবে, তাঁর পড়ানোতে তোমাদের কোন আগ্রহ আসছে না। কিছুদিন পর তুমি খেয়াল করলে যে ওই টপিকের কিছুই আর তোমার মনে নেই ।
কারণটা কি জানো?
কারণটা হলো তুমি তাঁর পড়ানোয় মোটেও আগ্রহ পাওনি, তাই সেই টপিকটা সেই ক্লাসের পরেই ভুলে গিয়েছো। মজার ব্যাপারটা হলো, এই একই টপিক যদি তোমার টিচার একটু মজা করে, একটু গল্প বলে পড়াতেন, তাহলে গল্পের সাথে সাথে কিন্তু তোমার টপিকটাও মনে থাকবে, কোনক্রমে ভুলে গেলেও গল্পটা তোমার মনে থাকবেই!
তুমি যখন কোন প্রতিযোগিতায় প্রেজেন্টেশন দিতে যাও, অথবা কথা বলতে শুরু করো, এখানে মনে করবে এই টিপসটির কথা। মনে রাখবে, তোমার সেই টিচারের মতো করে প্রেজেন্টেশন দিতে গেলে সেখানে উপস্থিত বিচারকের অবস্থাও হবে সেই তোমার মতো, তারা দ্রুতই আগ্রহ হারাবেন।
কিন্তু এর জায়গায় যদি একটু কায়দা করে তুমি গল্প দিয়ে শুরু করো, তাহলে বিচারকদের আগ্রহ পাবে তুমি, আর তাতেই প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সম্ভাবনা অনেকগুণে বেড়ে যাবে!
২। ভুল থেকেই শিক্ষা নাও:
তুমি প্রথম কোন কম্পিটিশনে অংশ নিচ্ছো। প্রথমবারেই একেবারে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসবে, সে সম্ভাবনা খুব বেশি নেই। প্রথমবার নয় শুধু, শুরুর দিকে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হওয়াটাই তাই স্বাভাবিক। অনেককেই দেখেছি এই প্রথম দিককার ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিতে।
তোমরা মোটেও সেটি করবে না। ইংরেজিতে একটি কথা আছে –
“Every master was once a terrible disaster.”
অর্থাৎ যে কেউ তার কাজে পারদর্শী হয়ে থাকলেও, শুরুর দিকে তাদের প্রায় সবাই ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছেন। বিখ্যাত লেখিকা জে কে রাউলিং এর বিশ্বজোড়া জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা Harry Potter series এ প্রথমে কোন প্রকাশকই নিতে চান নি। তিনি ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু চেষ্টা থামান নি। একটা সময় যখন হ্যারি পটার প্রকাশিত হলো, বাকিটা ইতিহাস। এখন তিনি বিশ্বের সফলতম লেখকদের একজন।
সফল ব্যক্তিরা সারাজীবনই সফল ছিলেন না। ব্যর্থতার নাগপাশে বদ্ধ থাকতে হয়েছে তাদের অনেককেই। কিন্তু তারা বিজয়ী, কারণ ব্যর্থতাকে জয় করে সাফল্যের পথ চিনে নিয়েছেন তারা। তুমিও তাই প্রথম দিককার ভুলগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে ভুল থেকে শিক্ষা নাও। সাফল্য আসবেই!
৩। আত্মবিশ্বাসী হও:
তোমার মেধার কমতি নেই। তোমার মাথায় আইডিয়া গিজগিজ করে। তুমি খুব করে চাও কোন একটা কম্পিটিশন জিততে। কিন্তু কোন একটা কারণে হচ্ছে না। কথা বলার ওই পোডিয়ামে যাও তুমি অনেক আশা আর উত্তেজনা নিয়ে, কিন্তু কথা বলতে গেলেই সমস্যা।
এমন যদি হয় তোমার অবস্থা, তাহলে তুমি আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছো। যেকোন প্রতিযোগিতা জিততে হলে এই আত্মবিশ্বাসের খুব বেশি প্রয়োজন। তোমার জ্ঞান বুদ্ধি সবই থাকতে পারে, কিন্তু আত্মবিশ্বাস না থাকলে এসব প্রতিযোগিতায় সাফল্যের দেখা খুব একটা পাবে না তুমি।
সফল ব্যক্তিরা সারাজীবনই সফল ছিলেন না
ধরো তুমি একটা কম্পিটিশনে গেলে। একটা বিজনেস কম্পিটিশন। সেখানে তুমি অনেক ইনফরমেশন, অনেক কৌশল নিয়ে গেলে। কিন্তু আসল কথা বলার সময়, প্রেজেন্ট করার সময় আর ভালোভাবে বলতে পারলে না। কথা জড়িয়ে গেল। আটকে গেল তোমার বিজয়ের সম্ভাবনা।
অন্যদিকে তোমার বন্ধুটির প্রস্তুতি তোমার মত নয়। কিন্তু সে আত্মবিশ্বাসের শক্তিতে বলীয়ান। তার প্রেজেন্টেশনে হয়তো তোমার মত তথ্যের ভান্ডার নেই, কিন্তু আত্মবিশ্বাস আছে। তোমার বন্ধুটিরই কিন্তু বিজয়ী হবার সম্ভাবনা বেশি হবে!
তাই আত্মবিশ্বাসী হতেই হবে। একবার ভাবো তো, তোমার অমিত প্রতিভা, মেধা আর প্রস্তুতির সাথে যদি যুক্ত হয় আত্মবিশ্বাস – অসাধারণ কিছু করে ফেলতে পারবে তুমি! তাই আজ থেকেই প্রস্তুত হও আত্মবিশ্বাসী হতে, সারা জীবন সেটি তোমার কাজে দেবে!
আশা করা যায় এই তিনটি টিপস মাথায় রাখলে পরের যেকোন প্রতিযোগিতায় তোমাকে আমরা দেখতে পাবো বিজয়ী হিসেবে। বিজয়ীর বেশে ঘরে ফিরে তুমি বলবে, পরিশ্রম আর কৌশলই আমাকে সাফল্য এনে দিয়েছে!
এই লেখাটি লিখতে সহায়তা করেছে অভিক রেহমান
এই লেখাটি নেয়া হয়েছে লেখকের ‘নেভার স্টপ লার্নিং‘ বইটি থেকে। পুরো বইটি কিনতে চাইলে ঘুরে এসো এই লিংক থেকে!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন