তোমাদের কি কখনো এমন হয়েছে, খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে মনোযোগ ধরে রাখতে পারছো না? কিংবা পড়তে বসলে দুনিয়ার সব চিন্তা মাথায় ঘোরে? এসবের একমাত্র কারণ Distraction। আমিও ঠিক একই সমস্যায় ভুগেছি। কোন কাজ করতে গেলে কিংবা পড়তে বসলে বারে বারে স্মার্টফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা, ফেসবুকে ঢুঁ মেরে আসা, কিংবা অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে চিন্তা করা এসবই Distraction।
যেই কাজ করা হচ্ছিলো সেটিতো ঠিকমতো হচ্ছেই না, বরং, সময়টাকে শুধু শুধু নষ্ট করা মাত্র। বর্তমানে কম বেশি সবাই এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। জীবনের সব ক্ষেত্রেই মনোযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনোযোগ এবং অধ্যবসায় এই দুটোই নির্ণয় করবে আমরা এই ছোট জীবনে কী অর্জন করতে সক্ষম।
জীবনের সবক্ষেত্রেই, হোক সেটি ব্যক্তিগত জীবন কিংবা চাকুরিজীবন, সাফল্য নির্ভর করে এসবের প্রতি আমাদের মনোযোগ কেমন তার ওপর। মনোযোগ ধরে রাখতে প্রয়োজন Distraction এর পরিমাণ কমানো। আজ দেখে নেবো এমন কিছু টিপস যেগুলো অনুসরণে এই Distraction-গুলো থেকে দূরে থাকা যায়।
১। যতটুকু ব্যস্ত থাকতে চাও তা পরিমাপ করো:
গবেষণায় দেখা গেছে, কে কতটুকু ব্যস্ত থাকতে চাচ্ছে এবং আসলেই সে কতটুকু ব্যস্ত থাকছে এই দুইয়ের মধ্যে মিলে যাওয়াই হচ্ছে সুখী হওয়ার প্রথম চাবিকাঠি। যখন দেখা যায় তুমি একটি নির্দিষ্ট সময়ের উর্ধ্বে কাজ করতে চাওনা কিন্তু জোরপূর্বক তোমাকে করতে হচ্ছে তখনই তুমি অসন্তুষ্ট হবে। কখনো কোন সময় পরিস্থিতিগুলো তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তোমার জীবন তখন মূল্যহীন মনে হবে।
কাজ না করেই অসন্তুষ্ট হওয়া এবং কাজ করে অসন্তুষ্ট হওয়া- এ দুটি কিন্তু ভিন্ন জিনিস। যখন তোমার মনে হবে তুমি কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নও কিংবা মনে হবে যে কর্মব্যস্ততা তোমার ব্যক্তিগত জীবনের আনন্দকে বাধাগ্রস্ত করছে, তখন কিন্তু তুমি যাই করো, কোন কাজেই মনোযোগ আনতে পারবে না।
২। জীবনের Priority খুঁজে বের করো:
ব্যস্ত জীবনকে উপভোগ করতে হলে আগে জানো জীবনের Priority কোনগুলো। জীবনে কিছু অর্জন করতে হলে কঠোর পরিশ্রম আবশ্যক। তবে অবশ্যই দেখতে হবে এই কঠোর পরিশ্রম যেন তোমার মৌলিক চাহিদাকে আনুষঙ্গিক না করে দেয়।
তা না হলে তুমি হতাশ হয়ে পড়বে। এই হতাশায় পড়ার আগে যা তুমি করতে পারো তা হল তোমার নিয়মিত রুটিনকে একটু পরিবর্তন করা। যেখানে তোমার শখের কিংবা পছন্দের কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সেজন্য যদি তোমাকে ঘুম থেকে একটু আগে উঠতে হয় তবে তাই করো। কারণ একদম কিছু না করার চেয়ে অল্প পরিমাণ করাও ভালো। তবেই দেখবে সব কাজেই যেন তুমি মনোযোগ দিতে পারছো।
No one is too busy in this world. We all have 24 hours. It’s all about priorities
৩। রুটিন তৈরি করো:
ঘুমানোর আগে পরের দিনের একটি রুটিন তৈরি করে নেয়া ভালো। খুব বেশি কিছু না, হতে পারে পরের দিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো, কোথাও যাওয়ার থাকলে সেটিও লিখে ফেলো। কিছু বিষয় নির্ধারণ করো ধরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করা না পর্যন্ত ই-মেইল কিংবা ফেসবুক চেক না করা কিংবা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট না করা।
সবসময় রুটিনটিকে অনুসরণ করার চেষ্টা করো। প্রতিদিন শেষে দেখে নিয়ো রুটিন অনুযায়ী কাজ হয়েছে কিনা এবং তার জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করো। দেখবে তোমার নিজেরই ভালো লাগছে যখন দেখছো তুমিই তোমার দিনকে নিয়ন্ত্রণ করছো।
এভাবে অনেক অপ্রয়োজনীয় কাজ কমে আসবে এবং পুরো মনোযোগই সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগানো যাবে।
Routine, in an intelligent man, is a sign of ambition. – W.H Auden
৪। কঠিন কাজটি আগে শেষ করো:
সবসময় কঠিন কাজগুলো আগে করার চেষ্টা করো কারণ সেই কাজগুলোর জন্যই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দরকার পরে। সেই কাজগুলো ফেলে রেখে শুধু শুধুই সময়টা অপচয় করি।
দিনের শুরুতেই সেই কাজগুলো করা যেতে পারে কারণ তখন Distraction এর পরিমাণও কম থাকে এবং খুব সহজেই সেই কাজগুলো সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর রুটিন অনুযায়ী অন্য কাজ গুলো করে ফেলা যায় যেখানে খুব একটা মনোযোগ কিংবা খাটুনির প্রয়োজন হয় না।
৫। কর্মশক্তি যোগাও:
যদি কাজ করতে করতে মনে হয় মনোযোগ অন্য কোথাও চলে গেছে কিংবা আর কর্মশক্তি ধরে রাখতে পারছো না তবে একটু বিরতি নিয়ে নাও। হেঁটে আসো, চা খাও, কারও সাথে কথা বলো কিংবা এমন কিছু করো যা তোমাকে খুশি করে।
দেখবে তুমি আবার কাজে প্রাণশক্তি ফিরে পাচ্ছো এবং মানসিক দৃষ্টি আরও প্রখর হয়ে এসেছে। কাজে বিরক্ত হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। সেই ক্ষেত্রে রুটিনে ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এই দু’টো জিনিস মনকে প্রশান্ত করতে সাহায্য করে।
৬। Distractions গুলো দূরে রাখো:
কোন কাজ করতে গেলে সবসময় তার মূল উদ্দেশ্যের দিকে খেয়াল রাখো। জরুরী পরিস্থিতি ছাড়া কোন কাজের মাঝে অন্য কোন কিছুতে সাড়া না দেয়াই ভালো তাতে অনেক সময় মূল কাজের ব্যাঘাত ঘটে।
নিজেকে বুঝাতে হবে যে কাজ শেষে অনেক সময় পাওয়া যাবে সেসব জিনিসে সাড়া দেয়ার, হতে পারে ই-মেইলের উত্তর কিংবা ফেসবুকে ঘাঁটাঘাঁটি। আরেকটি বড় Distraction হলো আমরা নিজের কাজ নিয়ে অযথাই অতি মাত্রায় চিন্তা করি। যেই কাজটি শেষ হয়ে গিয়েছে সেটি নিয়ে চিন্তা করা সময় নষ্ট মাত্র। এর প্রভাব কিন্তু বর্তমান কাজেও পড়ছে।
ঠিক একই ভাবে আমরা আরেকটি ভুল করি। তা হল, অন্যের কাজকে বিশ্লেষণ করি। যেমন, ধরো কোন কাজ করতে গেলে চিন্তা করি সেই একই কাজ আরেকজন কীভাবে করেছে। তখন কিন্তু মাথায় তার কাজের সাথে মিল রাখার একটি প্রবণতা তৈরি হবে। এভাবে অনেক সময় নিজের চিন্তা ঠিকমতো বিকশিত হতে পারে না।
“Forget past mistakes, forget failures, forget everything except what you’re going to do now , and do it “ – Will Durant
৭। জীবনের লক্ষ্যকে বারে বারে স্মরণ করো:
ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম কাজ হতে পারে নিজের জীবনের প্রধান লক্ষ্যকে স্মরণ করা। সেটি তাহলে সারাদিনের কাজের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। মূল লক্ষ্যই সাহায্য করতে পারে তোমার Distraction গুলোকে দূরে রাখতে।
একটি ভালো উপায় হতে পারে “Goal chart “ তৈরি করা। সকালে উঠে দেখে ফেলো কী কী করা হয়েছে কিংবা কী কী করা খুব জরুরী হয়ে পড়েছে। তাহলেই দেখবে সেই কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে কোন Distraction-ই তোমার বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না। নিজের লক্ষ্যকে আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলো। দেখবে এটিই হবে তোমার সারাদিনের কাজের প্রেরণা।
৮। যেকোনো একটি কাজে গুরুত্ব দাও:
এমন অনেক সময় হয় যে আমরা একটি কাজ করতে বসলে পাশাপাশি অন্য আরেকটি কাজেও হাত দেই, তাড়াতাড়ি সব কাজ শেষ করে ফেলার জন্য। সেই ক্ষেত্রে কিন্তু আসলে কোন কাজই ঠিকমতো শেষ হয় না।
আমরা অবশ্যই চাইব যেন একটি কাজ যেন আমাদের দ্বিতীয় বার করতে না হয়। সুতরাং প্রথমবারই সঠিকভাবে করা ভালো। এমনও অনেক হয়, কাজ করতে বসলে বার বার উঠে যাই কিংবা কোন আর্টিকেল পড়তে শুরু করি। এভাবে কিন্তু মনোযোগও অন্যদিকে চলে যায়।
তাই সবসময় চেষ্টা করবো যেকোনো একটি কাজের দিকে লক্ষ্য রাখার এবং অন্য কাজগুলোকে একটি সময় নির্ধারণ করে দেয়া।
৯। মস্তিষ্ককে শান্ত রাখো:
কোন কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে হলে মস্তিষ্ককে প্রথমে শান্ত রাখতে হবে। আমরা সবসময় খুব ছোট ছোট বিষয়েও অতিমাত্রায় চিন্তা করি। এভাবে মস্তিষ্কে অযথাই চাপ পড়ে। যা হয়ে গিয়েছে কিংবা হতে পারে এসব নিয়ে চিন্তা করে বর্তমানের কাজে ব্যাঘাত ঘটানো একদমই যুক্তিসঙ্গত নয়।
“The measure of success is happiness and peace of mind “ – Bobby Davro
আমরা যখন অনেক ভালো কোন কাজের কথা বলি সেই কজের পেছনে কিন্তু তিনটি মূল বিষয় রয়েছে। তা হলো, মনোযোগ, সাহস এবং অধ্যবসায়। কাজটি শুরু করতে সাহস এর প্রয়োজন কিন্তু তা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মনোযোগের। সুতরাং তুমি যদি তোমার কাজে মনোযোগ আনতে সক্ষম না হও তাহলে জীবনে সাফল্য অর্জন করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন