বিতর্ক হোক আর প্রেজেন্টেশন – সবখানেই বক্তাদের অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় শ্রোতাদের মনোযোগ ধরে রাখা। অনেক ক্ষেত্রেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা হারিয়ে যায় শ্রোতারা বোরড হয়ে যাওয়ার কারণে। তোমার বিতর্কে জেতার সুযোগ হোক আর গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন – সবার মনোযোগ ধরে রাখতে না পারলে জিনিসটা বানচাল হয়ে যেতে পারে সহজেই। তাই আজ জেনে নাও কী কী উপায়ে ধরে রাখা যায় মানুষের মনোযোগ।
১। তোমার শ্রোতাদের বলে দাও তাঁরা কী কী জানতে বা শিখতে পারে এই বক্তব্য থেকে
অনেকের কাছেই বক্তৃতা মানেই বোরিং জিনিস। কিন্তু সেই মানুষগুলোই যদি জানে, যে তাঁরা কিছু শিখতে পারবে, কিছু জানতে পারবে, মোটকথা এই বক্তব্য থেকে তাঁরা কিছু লাভজনক জিনিস পেতে পারবে, তাহলেই কিন্তু তাদের কাছে বোরিং জিনিসটা হয়ে যেতে পারে আগ্রহের বিষয়। কে না চায় নতুন কিছু জানতে আর শিখতে? তাই নিজের বক্তব্য শুরু হবার সাথে সাথে নিজের শ্রোতাদের জানিয়ে নাও তাঁরা কী কী জিনিস শিখতে পারে তোমার বক্তব্য থেকে। এর পরেই দেখবে, তোমার শ্রোতারা তোমার বক্তব্য খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছে। প্রথম দিকে বক্তব্য একটু বোরিং হলেও সেটা পুষিয়ে যাবে তোমার এই স্ট্র্যাটেজিতে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
ঘরে বসে Spoken English
২। যতটা সময় দেয়া আছে তা পার হয়ে যেয়ো না কোনোভাবেই
বক্তৃতার সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিসটা কী আমাদের কাছে? নিশ্চয়ই কোনো মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে বকবক করে যাওয়াটা? রাজনৈতিক নেতারা বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচাররা যখন ৫ মিনিটের কথা বলে আধ ঘণ্টা ধরে কথা বলতে থাকেন – তখন কার না মেজাজ খারাপ হয়?
বক্তব্যে মানুষের মনোযোগ ধরে রাখার অন্যতম উপায় হলো কম সময় ধরে কথা বলা। যদি তোমার হাতে সময় থাকে ৩০ মিনিট, চেষ্টা করো ২০ বা ২৫ মিনিট কথা বলে বাকি সময়টা মানুষের সাথে বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব চালানোর। কোনোভাবেই নিজের বক্তব্য ৩০ মিনিটের বেশি নিয়ে যেও না – যত বাড়তে থাকবে, ততই শ্রোতারা বিরক্ত হতে থাকবে আর তোমার আগের কনটেন্ট ভুলে যেতে থাকবে। শ্রোতারাও খুশি হবে কম সময়ের বক্তব্য শুনে, আর কম সময়ের বক্তব্যে তাদের মাথায় কন্টেন্ট ঢুকবেও ভালো ভাবে।
৩। নৈঃশব্দ্যকে ঠিকভাবে ব্যবহার করো
বক্তব্যে কথা বলবার অংশটি যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হলো নৈঃশব্দ্য। সঠিকভাবে সাইলেন্সকে ব্যবহার করা গেলে তা হতে পারে মনোযোগ ধরে রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রগুলোর একটি। গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট ডেলিভার করে একটু সময় চুপ থাকো। শ্রোতাদের সময় দাও জিনিসটা বুঝতে, অপেক্ষা করো তাদের প্রতিক্রিয়ার জন্যে। হয়তো বোনাস হিসেবে পেয়ে যেতে পারো কিছু হাততালিও!
সাইলেন্সকে ব্যবহার করার অন্যতম আরেকটা দিক হলো সঠিক সময়ে থামতে জানা। সঠিক সময়ে থামতে জানলেই কেবল সাইলেন্সকে ব্যবহার করা সম্ভব। ভুল সময়ে pause দিলে কেবল একটা জিনিসই হবে – মানুষ বিরক্ত হবে। আর এটা শ্রোতাদের মন মানসিকতা বোঝার একটা অন্যতম উপায়।
৪। কী ওয়ার্ডগুলোতে গুরুত্ব দাও
যেকোন বক্তব্যেই কিছু কী ওয়ার্ড থাকে। যেমন তুমি যদি প্রেজেন্টেশন দিতে যাও, তখন প্রেজেন্টেশনের টপিক এবং তার শব্দগুলো হবে কী ওয়ার্ড। আবার যদি বিতর্কের ক্ষেত্র ধরি, তাহলে কী ওয়ার্ড হবে তোমার আর্গুমেন্টের পয়েন্টগুলো। যেখানেই বক্তব্য হোক না কেন, তোমার কাজ হবে নিজের কী ওয়ার্ডগুলোকে আগে চিহ্নিত করা। এরপর নিজের বক্তব্যে তুমি কী ওয়ার্ড ব্যবহার করবে নিজের পয়েন্টগুলিকে দ্রুত শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দিতে।
এতে করে শ্রোতারা বুঝে যাবে বক্তব্যের কোন পয়েন্টটিতে ফোকাস করা দরকার। আর সঠিক জায়গায় শ্রোতারা মনোযোগ দিলে তোমার বক্তব্যও হয়ে দাঁড়াবে অনেক জোরালো।
৫। নিজের বক্তব্যে কিছু কৌতুক বা রস রাখতে ভুলো না
যত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই তুমি কথা বলো না কেন, তোমার বক্তব্য যদি নীরস হয় তাহলে কোনো শ্রোতারই সেটা ভালো লাগবে না। তাই রসবোধ ব্যবহার করতে হবে তোমার জায়গা বুঝে। বক্তব্যের মাঝখানে দুয়েকটা কৌতুক অথবা ৭/৮ মিনিট বাদে একটা গল্প যদি তুমি শোনাতে পারো, শ্রোতারা মজা পেয়ে আরো মনোযোগ দেবে। শ্রোতারা যদি তোমার রসবোধ শুনে হাসে, তাহলে তাঁরা তোমার বক্তব্যের সাথে সংযোগ বোধ করবে বেশি। আর শ্রোতাদের সংযোগ বোধ করানো, তাদেরকে নিজের টপিকের সাথে রিলেটেড করানোই তো যেকোনো বক্তব্যের লক্ষ্য!
আরও পড়ুন: জীববিজ্ঞান হোক পানির মতন সহজ!
একটা জিনিস লক্ষণীয় – বেশি রসবোধ ঢোকাতে গিয়ে নিজের বক্তব্যকে খেলো করে ফেলো না। আর কোনোভাবেই – কোনোভাবেই অশ্লীল বা অসংলগ্ন কৌতুক বলতে যেয়ো না।
৬। বারবার দ্বিতীয় পুরুষ ব্যবহার কোরো
বক্তব্যে শ্রোতাদেরকে ধরে রাখার অন্যতম উপায় হলো শ্রোতাদের এটা বোঝানো – যে পুরো বক্তব্যটিই তাদের জন্যে। তাই বার বার তোমাদের, তুমি, তোমরা ইত্যাদি ব্যবহার করতে ভুলো না। এতে করে শ্রোতারা তোমার বক্তব্যকে নিজের সাথে ভালোভাবে রিলেট করতে পারবে – আর নিজের কারণেই তোমার বক্তব্যে মনোযোগ দেবে।
যেকোন ব্যাপারে বক্তব্য দেবার ব্যাপারে সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে, ব্যাপারটা যেন তোমার নিজের আগ্রহের জায়গা থেকে হয়। নিজে যদি নিজের বক্তব্যে ইনভলভড না থাকো, তাহলে কোনো কৌশলই তোমার বক্তব্যকে ইন্টারেস্টিং করবে না। তাই নিজের আগ্রহ না থাকলে কোনো বক্তব্য অ্যাভয়েড করাটাই ভালো।
সবার বক্তব্যগুলো হোক আকর্ষণীয়!
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
আপনার কমেন্ট লিখুন