Gif: Jone&co-Adobe Portfolio
“প্র্যাকটিস মেকস অ্যা ম্যান পারফেক্ট” কিংবা “গাইতে গাইতে গায়েন” এই প্রবাদগুলো একদম আক্ষরিক অর্থেই সত্যি। একেবারে পারফেক্ট না হলেও প্র্যাকটিসের মাধ্যমে যে কোনো বিষয়ে বেশ ভালো ভাবে দক্ষ হওয়া সম্ভব। আর আমার মনে এই প্র্যাকটিসের ব্যাপারটি মিউজিকের ক্ষেত্রে একটু বেশিই “রেস্পন্সিভ”।
কণ্ঠস্বর কিংবা বাদ্যযন্ত্র- যেই দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা হোক না কেন , আপনি যদি এই দুইটিতে দক্ষ হয়ে উঠতে চান তাহলে প্র্যাকটিসের অন্য কোনো বিকল্প নেই। মিউজিকের বেসিক ব্যপারগুলো সহজে শিখতে পারলেও “টেকিং ইট টু দ্যা নেক্সট লেভেল” ব্যপারটির জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমানে প্র্যাকটিস। আমেরিকান কম্পোজার ফিলিপ গ্লাস খুব সহজ করেই ব্যাপারটি বুঝিয়েছেন।
ছবিঃ Pinterest
“আমি তো প্রচুর প্র্যাকটিস করছি, এরপরেও ভালো গাইতে পারছি না কেন?”
“প্র্যাকটিস করতে করতে হাত তো ব্যাথা হয়ে গেলো, গীটার/ পিয়ানো পিসটা ভালোভাবে তুলতেই পারলাম না”।
এমন উদাহরণ প্রায় সব মিউজিশিয়ানদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
আসলে প্রত্যেকটা ডিসিপ্লিনে প্র্যাকটিসের কিছু নিয়ম কানুন আছে। আপনি ২৪ ঘণ্টা প্র্যাকটিস করলেই যে যশস্বী হয়ে যাবেন, ব্যাপারটি মোটেও এই রকম নয়। প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম কানুন আপনাকে মেনে চলতে হবে। না খেয়ে থাকলেই ডায়েট হয় না, আবার ২৪ ঘণ্টা কোনো প্ল্যান কিংবা টার্গেট ছাড়া প্র্যাকটিস করলেই সেটি প্র্যাকটিস হয় না, নিজের উপর প্রহসন হয়!
তাহলে মিউজিকের ক্ষেত্রে প্র্যাকটিসের নিয়ম কানুন কিংবা ট্রিকসগুলো কি হতে পারে?
নিজের উপর প্রহসন ঠেকাতে মিউজিক প্র্যাকটিস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে আমি কিছু টিপস খুঁজে বের করেছি। টিপসগুলো আপনার “মিজিশিয়ান” জীবনে অনেক কাজে লাগতে পারে। চলুন শুরু করা যাক।
Gif: Pinterest
প্রত্যেকদিন প্র্যাকটিস করুনঃ
মিউজিশিয়ান কিংবা ভোকাল- যাই বলি না কেন, বেসিক থেকে নেক্সট লেভেলে যেতে হলে আপনাকে প্রত্যেকদিন প্র্যাকটিস করতে হবে। হোক সেটা ৫ মিনিট কি ৫ ঘণ্টা।
“কিন্তু প্রত্যেকদিন কেন প্র্যাকটিস করতে হবে?”
এর পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটি শুনলেই আশা করি আপনি সন্তুষ্ট হবেন।
লং টার্ম মেমরি বলে একটি ব্যাপার আছে। আমাদের ব্রেইন কেবল সেই বিষয়টিকে খুব ভালো ভাবে মনে রাখে যেই বিষয়টিকে আপনি তার সামনে প্রতিদিন তুলে ধরবেন। সোজা কথায়, যেই কাজের রিপিটেশন হবে, সেই কাজ আমাদের ব্রেইন খুব ভালোভাবে মনে রাখবে। ধরুন, আপনি একজন পিয়ানিস্ট। আপনি যদি প্রতদিন প্র্যাকটিস না করে থাকেন তাহলে আপনি খুব একটা ভালো পারফর্মেন্স উপহার দিতে পারবেন না কেননা প্রতিদিন প্র্যাকটিস না করায় পিয়ানোর ব্যাপারে আপনার কোনো লং টার্ম মেমরি নেই বা রিপিটেশনের অভাবে আপনার ব্রেইন ভালো পারফর্ম করতে পারছে না। আর এই লং টার্ম মেমরি গড়ে তোলার জন্য দরকার রিপিটেশন, অর্থাৎ প্রতিদিন প্র্যাকটিস।
মিউজিশিয়ানদের লার্নিং কার্ভ হচ্ছে রোলার কোস্টার রাইডের মতো। আর আপনি প্রতিদিন প্র্যাকটিস না করলে সেই লার্নিং কার্ভে গ্যাপ পড়বে। আর আপনিও পরবেন পিছিয়ে।
আচ্ছা আরও সহজ করে দিচ্ছি। আপনি যেই দিনগুলোতে খাওয়া দাওয়া করবেন , কেবলমাত্র সেই দিন গুলোতেই প্র্যাকটিস করবেন। আশা করি এবার ব্যাপারটি অনেক সহজ হয়ে গেলো!
ছবিঃ twitter
আজকে প্র্যাকটিস হয়েছেতো?
অন্তত ৫ মিনিট প্র্যাকটিস দিয়েই আপনার প্রতিদিনকার প্র্যাকটিস যাত্রা শুরু করে দিন এখন থেকেই।
প্রতিদিনের প্র্যাকটিসের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবেঃ
GIF: Giphy
প্রতিদিন প্র্যাকটিস করছেন সেটি খুবই ভালো লক্ষণ। কিন্তু প্রতিদিনকার প্র্যাকটিসের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকছে কি ? না থাকলে কিন্তু সমস্যা!
জেনে নাও লিডারশীপ এর খুঁটিনাটি!
নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ব্যাপারে আপনার তিনটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
- প্রতিদিন প্র্যাকটিসের আগে আপনাকে বেশ ভালোভাবে জানতে হবে যে আজকের প্র্যাকটিসের মাধ্যমে আপনি কোন অংশটিতে দক্ষ হতে যাচ্ছেন।
- প্র্যাকটিস সেশনের আগে আপনার আজকের প্র্যাকটিসের গোল লিখে ফেলুন।
- আর কতক্ষণ প্র্যাকটিস করতে যাচ্ছেন সেই ব্যাপারেও পরিস্কার ধারনা রাখুন।
এবারে কিছু সতর্কীকরণ ! আপনি আকাশ কুসুম লক্ষ্য ঠিক করে প্র্যাকটিসে করতে বসলে লক্ষ্য পূরণতো হবেই না, উল্টো হতাশায় ডুবে যেয়ে প্র্যাকটিসটাই বন্ধ করে দিতে পারেন। কাজেই আপনাকে
প্র্যাক্টিক্যাল গোল ঠিক করতে হবে। যেমন ধরুন আপনি কোনো গানের সুর বেহালায় তুলতে যাচ্ছেন। আজকে গানের প্রথম ১৫ সেকেন্ড বেহালায় তুলে ফেলবেন- এই রকম ছোট কিন্তু ইফেক্টিভ গোল ঠিক করুন। তাহলে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে আর প্রতিদিনের প্র্যাকটিস সেশনগুলো যথার্থ হয়ে উঠবে।
বেসিকের ব্যাপারটিও প্রতিদিন মাথায় রাখতে হবেঃ
GIF: Pinterest
নতুন গানের সুর শিখতে কিংবা তুলতে সবারই অনেক বেশি ভালো লাগে।
কিন্তু গ্রেট মিউজিশিয়ান আর একজন সাধারণ মিউজিশিয়ানের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে- গ্রেট মিউজিশিয়ান তার প্রতিদিনের প্র্যাকটিস সেশনে একদম শুরুতে শেখা বেসিকের পুনরাবৃত্তির জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখেন। মিউজিকের বেসিক ধারনা যেমন- ইন্টোনেশন, রিদম, টোন, ডায়নামিক্স, ফ্রেসিং, এই বিষয়গুলো প্রতিদিন প্র্যাকটিসের মাধ্যমে এক সাধারণ মিউজিশিয়ান হয়ে উঠতে পারেন সেরাদের একজন।
কিভাবে প্রতিদিন বেসিক ব্যাপারগুলো প্র্যাকটিস করবেন তার একটি রুটিন তৈরি করে ফেলুন। সব কথার শেষ কথা হচ্ছে ভিত্তি মজবুত না হলে বাইরের জাঁকজমক দিয়ে বেশিক্ষণ টিকে থাকা যায় না।
এবারে কঠিন দিকগুলোতে ফোকাস করুনঃ
GIF: WiffleGif
মিউজিশিয়ানদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কঠিন বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া। যত কঠিনই হোক না কেন প্রতিদিন প্র্যাকটিসের মাধ্যমে খুব সহজেই তা আয়ত্তে আনা সম্ভব। এই জন্য যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে কঠিন কোনো পিয়ানো, গীটার, ভায়োলিন কিংবা ভোকাল অথবা যে কোনো ইন্সট্রুমেন্টাল পিস তোলার জন্য প্র্যাকটিস সেশনে সবচেয়ে বেশি সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। কঠিন বিষয়গুলো প্র্যাকটিস করতে থাকলে মিউজিকের ভাষায় আপনি আরও বেশি “টাইট” বাজাতে সক্ষম হবেন সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আপনার ভয়ের বিষয়টিই আপনার আত্মবিশ্বাসের কারণ হয়ে উঠতে থাকবে।
ইম্প্রুভমেন্ট ট্র্যাক করুনঃ
GIF: Gfycat
আমার মনে হয় মিউজিশিয়ান হয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর মধ্যে অন্যতম ধাপ হচ্ছে আপনি কতটুকু ইম্প্রুভ করেছেন সেটি বুঝতে পারা। এর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে -আপনার শর্টটার্ম গোল কিংবা লংটার্ম গোল সবকিছু গুছিয়ে লিখে রাখা। এর ফলে ইমপ্রুভমেন্ট ট্র্যাক করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। আপনি কত তাড়াতাড়ি কিংবা ধীরে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছেন সেই ব্যপারটি আপনার লেখা প্ল্যান থেকে সহজেই বুঝতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতেও অসুবিধা হবে না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ইম্প্রুভমেন্ট ট্র্যাকিং এর প্রসেস আপনাকে মোটিভেটেড রাখতে অনেক সাহায্য করবে।
প্র্যাকটিস হবে স্লোঃ
GIF: Giphy.com
মাসেল মেমরি মিউজিকের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ধরুন আপনি পিয়ানো পিস তোলার সময় যদি তাড়াহুড়ো করে প্র্যাকটিস করেন তবে সেটি সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই হবে না । আরও ভালোভাবে বললে আপনার মাসেল মেমরি ঠিকঠাক মতো গঠিত হবে না।
মাসেল মেমরি হচ্ছে সহজ কথায় আপনার হাতের মুভমেন্ট কিংবা আঙ্গুলের মুভমেন্ট । আপনি যখন স্লো প্র্যাকটিস করবেন তখন আঙ্গুলের মাসেল আঙ্গুলের মুভমেন্টগুলোকে ভালোভাবে মনে রাখতে পারবে। আর মাসেল মেমরি ভালোভাবে বিল্ড আপ হলে আপনি দ্রুত বাজাতেও সক্ষম হবেন।
GIF:Giphy
মেট্রোনোম “অবশ্যই” ব্যবহার করুনঃ
GIF:Giphy
আপনি যত ভালো মিউজিশিয়ানই হন না কেন, আপনি যদি তালকানা হন তাহলে পুরো ব্যাপারটাই একটি ব্যর্থ প্রয়াস হয়ে যাবে। তালের ধারনা বা বীট সেন্স- যাই বলি না কেন মিউজিসিয়ানদের জন্য এটি অনেক বেশি অনিবার্য একটি বিষয়। তাই আপনি যতটাই আত্মবিশ্বাসী হন না কেন, প্রতিদিন মেট্রোনোম দিয়ে প্র্যাকটিসের অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে আপ্ন আর বীট সেন্স আরও অনেক বেশি শার্প হয়ে উঠবে।
ইন্সট্রুমেন্ট ছাড়াই হবে প্র্যাকটিসঃ
GIF:Giphy
কল্পনার মাধ্যমেও কিন্তু প্র্যাকটিসে করা যায়। এই অভ্যাসটি আয়ত্তে আনতে পারলে মিউজিক নিয়ে আপনার কল্পনা শক্তি হবে আরও প্রখর। যেই গানটি তুলতে চাচ্ছেন সেটি কল্পনা শক্তি দিয়ে বাজানোর চেষ্টা করুন। মনের মধ্যে সেটিকে শোনার চেষ্টা করুন। এভাবে ভিজুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে আপনার দক্ষতা বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে।
GIF:Giphy
পজিটিভ মাইন্ড সেটআপঃ
মিউজিক কিংবা যে কোনো ক্ষেত্রেই পজিটিভ মাইন্ড সেট আপ খবি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পজিটিভ মাইন্ড সেট আপ গড়ে তোলার জন্য নিজের সফলতার মনছবি কল্পনা করুন। ক্রিটিসিজম আসবেই কিন্তু সেগুলোকে নিজের বিরুদ্ধে নিয়ে হতাশ না হয়ে বরং নিজেকে গড়ে তোলার কাজে লাগানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ। দুনিয়ার কোনো মিউজিক্যাল পিসই অসম্ভব কিছু নয়, বারবার চেষ্টা আর পজিটিভ মনোভাব থাকলে সেটি অনায়াসেই জয় করা সম্ভব।
প্রতিদিন প্র্যাকটিসের সময় উপরের কয়েকটি টিপস মাথায় রাখলে আমাদের মিউজিক্ যাত্রার অনেক কিছুই আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। স্মার্ট প্র্যাকটিস, পজিটিভ মাইন্ড সেট আপ আর ভিজুয়ালাইজ করতে পারার ক্ষমতা আপনাকে এই যাত্রায় অনেক বেশি সাহায্য করবে।
আপনার প্র্যাকটিস লিস্টে এই ব্যপারগুলো যদি থেকে থাকে তাহলে আপনাকে স্যালুট।
আর যদি না থেকে থাকে তাহলে বলবো এক্ষুনি একটি প্ল্যান তৈরি করে নেমে পরুন।
আর একটি ব্যাপার সব সময় মাথায় রাখার চেষ্টা করবেন।
ছবিঃ Gym Quotes
আপনার মিউজিক্যাল জার্নি সফল হোক।
তথ্যসূত্রঃ
THE TOP TEN PRACTICE TIPS OF ALL TIME by David Motto.
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন