পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!
আপনি খুব ভাল গান করেন, কিন্তু মানুষের সামনে গাইতে গেলেই কেন যেন গলার সুরটা আর বের হয় না। ভয় লেগে যায়! সকালেই খুব ভালভাবে প্রেজেন্টেশনের প্রস্তুতি নিলেন, কিন্তু সবার সামনে গিয়েই হাত-পা কাঁপছে, সব ভুলে যাচ্ছেন। আপনি চেষ্টা করেন, আপনার ভেতর প্রতিভা আছে, আপনার প্রস্তুতিও সবসময় ভাল থাকে।
তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যাটা বাস করে আপনার ভেতরে। একে আমরা ‘ভীতি’ বলি। ছোট ছোট জিনিস থেকে শুরু করে অনেক সময় বড়সড় ইন্টারভিউও নষ্ট হয়ে যেতে পারে শুধুমাত্র ভয়ের জন্য।
আজকে সব নষ্টের মূল এই ভয়কে জয় কী করে করা যায় তারই কিছু উপায় জানবো।
১। কোন সময় ভয়টা সবচেয়ে বেশি হয় তা লক্ষ্য করুন
আপনি প্রথমবারের মত প্রেজেন্টেশন দিতে গেলে কিংবা প্রথমবারের মত পানিতে নামলে ভয় পাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। প্রত্যেক মানুষই ভয় পায়। কিন্তু ভয়টা কখন আর স্বাভাবিক থাকছে না সেদিকে খেয়াল করতে হবে। ভয় পেলে কি আপনার প্যানিক এ্যাটাক শুরু হয়ে যায়? আপনি কি ভয় পেলে কোনো জায়গায় যাওয়া থেকে কিংবা কোনো একটা কাজ করা থেকে বিরত থাকছেন? ভয় পেলে আপনি আর স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে পারছেন না?
এসবের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে আপনার বুঝে নিতে হবে যে, আপনার ভয়টা আর স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই। যেমনটা প্রথমে বললাম, প্রথম প্রথম সব কিছুতেই একটু ভয় লেগে থাকে। কিন্তু এই ভয়টা যদি ৬ মাসের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয় তাহলে তা আর স্বাভাবিক নয়।
২। ভয় পাওয়ার লক্ষণগুলো জানুন
ভয় একেকজনের একেক রকমের হয়।
যেমন কেউ কেউ ভয় পায় পাব্লিক স্পিকিং এ কিংবা হাত তুলে প্রশ্ন করতে/উত্তর দিতে আবার অনেকে ভয় পায় ইঞ্জেকশনে। একেকজনের ভয় যেমন একেকরকম তেমনি একেক জনের ভয় পাওয়ার লক্ষণও একেক রকম। ভয় পেলে আপনার মাঝে কী কী পরিবর্তন আসছে, তা জেনে রাখুন।
সাধারণত কেউ ভয় পেলে তার মাঝে যে পরিবর্তনগুলো আসে, তা হচ্ছে, হৃদস্পন্দন দ্রুততর হওয়া, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, ঘামতে থাকা, মাথা ঘুরানো, দুশ্চিন্তা হওয়া, যেই কাজটা করতে গিয়ে ভয় পাচ্ছেন তাকে অনেক বড় বোঝা মনে হওয়া, পালিয়ে যেতে ইচ্ছা হওয়া, নিজেকে অসহায় মনে হওয়া ইত্যাদি।
৩। ভয়ের পেছনে কোন কারণ আছে কিনা জানুন
অনেক সময় কোনো খারাপ ঘটনা থেকেও ভয়ের সূত্রপাত হয়। সেক্ষেত্রে, সাধারণ অবস্থায় ভয়কে দূর করতে যেই উপায় অবলম্বন করতে হবে, তার থেকে ভিন্নপন্থা অবলম্বন করতে হয়।
৪। ভয়টা কি জেনেটিক কারণে হচ্ছে কিনা তাও জানুন
ভয় একটা পুরোপুরি মানসিক ব্যপার আর অনেক সময় মানসিক সমস্যা জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। হয়তো আপনার পরিবারের কেউ নতুন জিনিসকে বরণ করে নিতে ভয় পায় এবং এ ব্যাপারটা আপনার মাঝেও তার থেকেই এসেছে। তাই কোনোকিছুতে ভয় পেলে আগেই দেখে নিন যে পরিবারের আরো কেউ সেই একই জিনিসের প্রতি ভীত কিনা।
৫। ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার
আপনি স্টেজে কিছু বলতে যাবেন। তখনই ভয় একেবারে জেঁকে ধরল আর আপনি বুঝলেন যে আপনি ভয় পাচ্ছেন। আপনি এও বুঝতে পারলেন যে এই
সময় ভয় পাওয়াটা একদম ঠিক নয়। তাই আপনি আরো ঘাবড়ে গেলেন। এর চেয়ে বরং ভয় পাওয়া খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, এটা ভেবে ভয়টাকে উড়িয়ে দিন।
৬। আপনি কীসে ভয় পাচ্ছেন তা নির্ণয় করুন
একটা প্রেজেন্টেশনের উদাহরণ দিয়েই বলি, প্রেজেন্টেশনের সময় আপনি বিভিন্ন জিনিসকে ভয় পেতে পারেন। যেমন ধরুন, সামনে বসে থাকা দর্শকদের, পরিচিত মুখগুলোকে, যারা আপনার উপর অনেক আস্থা রাখে তাদের, বিচারককে, মাইক্রোফোনকে, পেছনে স্লাইডকে, ইংরেজিতে কথা বলাকে কিংবা পুরো অবস্থাটাকেই।
এখন আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে যে, আপনি ভয়টা আসলে পাচ্ছেন কীসে। আপনি যত বেশি বুঝবেন আপনার ভয়টা কীসে, ততই একে দূর করতে পারবেন সহজে।
৭। ভয়কে স্বীকার করুন
আমি ভয় পাই না বলে ভয় থেকে পালিয়ে না বেড়িয়ে বরং স্বীকার করুন যে আপনিও আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মত ভয় পান এবং ভয় পাওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যপার।
৮। ভয়ের জন্য আপনি কী হারাচ্ছেন তা ভাবুন
সেমিস্টার শেষে ভাইভা দিতে আপনি খুব ভয় পান। এ জন্য আপনি ভাইভা দেয়াই ছেড়ে দিয়েছেন। এতে করে প্রত্যেক সেমিস্টার আপনার অনেকখানি নম্বর কমে যাচ্ছে। এভাবে আপনার ভয়গুলোর জন্য আপনি কী কী হারাচ্ছেন তা নিয়ে চিন্তা করুন। চিন্তা করুন যে, এই নম্বরটা পেলে আপনার গ্রেড কত বেড়ে যেত। আপনি ট্রেনে উঠতে ভয় পান দেখে বন্ধুদের সাথে ট্রিপে যান না। ট্রিপে গেলে কত মজা হবে সেটা চিন্তা করুন দেখুন। দেখবেন ভয়ও ভয় পেয়ে গেছে।
৯। ভুল বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসুন
ক্লাসে কোনো একটা কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন কারণ আপনি বিশ্বাস করেন যে, আপনি কিছু বললেই সবাই হাসাহাসি করবে। এসব বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসুন কারণ এসব বিশ্বাসই আপনার ভয়ের মূল উৎস।
১০। ভয়ের সম্মুখীন হোন বারবার
আপনি যেই জিনিসটাকে ভয় পান, বারবার সেই জিনিসটাই করুন। বারবার করুন আর দেখুন, কেন আপনি ভয় পাচ্ছেন, আসলেই কি এতে ভয় পাওয়ার কিছু রয়েছে? থাকলে, তাকে জয় করা কি যায় না?
১১। ভয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করুন
ভয়েরও একটা আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে। ভয় আপনাকে কাজ করার জন্য উদ্যত করতে পারে। আপনি যে জিনিসটাকে ভয় পান, নিজেকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে সেই জিনিসটাই করুন। যেহেতু আপনি ভয় পাচ্ছেন, ব্যাপারটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জটাকেই জিতে আসুন।
১২। রিলেক্স্যাশন মেথড ব্যবহার করুন
চোখ বন্ধ করে ভাল কিছু চিন্তা করা, জোরে জোরে শ্বাস নেয়া, গান শোনা, যে জিনিস আপনাকে শান্ত করে, তাই করুন ভয়কে দূর করতে।
I’ve learned that fear limits you and your vision. It serves as blinders to what may be just a few steps down the road for you. The journey is valuable, but believing in your talents, your abilities, and your self-worth can empower you to walk down an even brighter path. Transforming fear into freedom – how great is that?
– Soledad O’Brien
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে ফাবিহা বুশরা
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন