পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
এখন আমরা যেই সময়ে বাস করি, সেটা এমন এক প্রতিযোগিতার সময় যেখানে টিকে থাকতে হলে আমাদের সবসময়ই কোন না কোন ফলদায়ক কাজের সাথে যুক্ত থাকতে হয়। সেটা হতে পারে নিজের সাফল্যের জন্য নিজের ভেতর থেকে আসা তাড়ার কারণে, অথবা হতে পারে নিছকই বড়দের চাপের কারণে।
যেহেতু আমাদের নানারকম কাজের সাথে সংযুক্ত থাকতে হয় সেহেতু অনেক সময়ই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় যখন কাজের তুলনায় সময় থাকে অপ্রতুল। ফলে কাজের চাপে পড়ে যেতে হয় এবং কোন কাজই ভালোমত করা হয়ে উঠে না। এতে করে পিছিয়ে পড়ার একটা ভালো সম্ভাবনা থাকে।
চাপের মধ্যে কাজ করাটা আসলেই কঠিন। কিন্তু এটা সত্য যে কাজের চাপ বা মানসিক চাপ এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। তাই আমাদের সকলের জানা থাকা প্রয়োজন কীভাবে কাজ করলে আমরা চাপের মধ্যেও আমাদের সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে পারি। এরকম কিছু উপায় নিয়েই তোমাদের জন্য আজ এই লেখাটি।
১। চ্যালেঞ্জ হিসেবে নাও:
কাজের চাপটাকে নেহাতই চাপ বা হুমকি হিসেবে না নিয়ে একটা আনন্দদায়ক চ্যালেঞ্জ হিসেবে নাও। কাজের চাপটাকে হুমকি হিসেবে নিলে এটা তোমার মানসিক শক্তি আর কাজ করার ইচ্ছাকে অনেকটা কমিয়ে দেবে। ফলে দেখা যাবে তুমি যতটুকু ফলাফল পেতে, স্বাভাবিকভাবেই ততটুকু ফলও পাবে না।
অন্যদিকে, যদি তুমি চাপটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নাও তাহলে তোমার মধ্যে হাল ছেড়ে দেয়ার প্রবণতা কম আসবে। তার পরিবর্তে তুমি একটি আলাদা শক্তি পাবে সেই চাপগুলো কাটিয়ে কাজ করার জন্য। আর যদি তুমি চ্যালেঞ্জ ভালোবাসো তাহলে তো কথাই নেই। যে কাজগুলো তোমার কপালে ঘাম নিয়ে মুখ গোমড়া করে করার কথা সেগুলো হাসিমুখে কাজ করেই শেষ করে ফেলতে পারবে।
২। অতীতের অভিজ্ঞতা আর ফলাফলের দিকে তাকাও:
আমরা আমাদের জীবনে অনেক সময়ই চাপের মুখোমুখি হই। তাই আমাদের অতীতে কীভাবে চাপ সামলে এসেছি তা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। একবার সেদিকে তাকিয়ে দেখ কিভাবে তুমি চাপ সামলেছ এবং তার ফলাফল কি এসেছে। যদি এমন হয় যে অতীতে চাপের মাঝে কাজ করেও তুমি ভালো ফল পেয়েছ তাহলে সেটা তোমার জন্য উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করবে।
আর যদি এমন হয় যে আগে চাপের মাঝে কাজ করে ভালো ফল আসেনি তাহলে হতাশ না হয়ে সেটা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে তাকাও। তখন চাপের মধ্যে থেকে কি ভুল করেছ তা খুঁজে নিয়ে সেগুলো সংশোধন করার চেষ্টা কর।
৩। কাজের তালিকা তৈরি কর:
তোমার সামনে কী কী কাজ আছে তার একটি তালিকা তৈরি করে ফেললে আর সেগুলো মনে রাখতে হবে না। যখন প্রয়োজন পড়বে তখন সেই তালিকা বের করে দেখে নিলেই হবে। যেহেতু তোমার কাজগুলো আলাদা করে মনে রাখার প্রয়োজন পড়ছে না সেহেতু চাপটা কম মনে হবে।
তালিকাটি একটু চিন্তা ভাবনা করে তৈরি করবে। যে কাজটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটি শুরুর দিকে রাখবে। অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় কাজটি শেষের দিকে রাখবে। এতে করে দেখা যাবে যে তুমি বুঝতে পারবে কোন কাজটি তোমার আগে করা উচিত।
কাজগুলো ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নেয়ার আরেকটি ভালো দিক আছে। কাজে একঘেয়েমি আসে না।
এছাড়াও এভাবে তালিকা করলে তুমি বুঝতে পারবে কোন কাজটিতে তোমার কতটুকু শক্তি এবং সময় খরচ করতে হবে। সোজা কথায়- কাজগুলোর একটি প্রায়োরিটি লিস্ট তৈরি করে ফেলবে।
৪। নিজের জন্য রুটিন তৈরি কর:
আমাদের সকলেরই দৈনন্দিন রুটিন থাকা প্রয়োজন। চাপের মধ্যে কাজ করার জন্য এটির প্রয়োজনীয়তা আরো অনেক বেশি। কখন কখন তুমি কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ কর, কখন কাজ করলে তোমার Productivity বেশি থাকে, কোন কাজটা কখন করলে ভালো হয় তার উপর ভিত্তি করে একটি রুটিন তৈরি করে ফেললে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করলে চাপ অনেক কমে যাবে।
এরকম রুটিন তৈরি করে নিলে তুমি জানবে প্রতিদিন তোমার কতটুকু কাজ করা উচিত। সেই অনুযায়ী কাজ করে তুমি এগিয়ে যেতে পারবে।
৫। কাজগুলো ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলো:
যখন তোমার হাতে অনেক কাজ থাকবে তখন স্বভাবতই তুমি চাইবে একটি কাজ দ্রুত শেষ করে আরেকটি কাজ ধরতে। তখন প্রতিটি কাজকে কয়েকটি অংশে ভাগ করাটা সময় আর শক্তির অপচয় বলেই মনে হবে।
কিন্তু সত্যি কথাটা এই যে যখন তুমি কোন কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে প্রতিটি অংশের জন্য নির্দিষ্ট সময় ভাগ করে নিয়ে কাজ করবে তখন কাজটি আরো সহজে আর দ্রুতই সম্পন্ন হয়ে যাবে।
কাজগুলো ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নেয়ার আরেকটি ভালো দিক আছে। কাজে একঘেয়েমি আসে না। আর যখন দেখবে একটা একটা করে অংশ ভালোমত শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন তুমি কাজে আরো আনন্দ পাবে। তাই কাজের চাপে পড়লে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে দেখতে পারো।
৬। কী করবে সেদিকে মন দাও:
অনেক চাপে থাকলে সবসময় মনে হয় যে হয়তো কাজটা ভুল হবে বা হয়তো কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে না। এ ধরনের চিন্তা তোমার মানসিক চাপকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এতে করে কাজের অনেক বেশি ক্ষতি হয়। তাই ফলাফল কি হতে পারে তা নিয়ে যত কম পারো ভাবার চেষ্টা করবে।
এর চেয়ে বরং মনযোগ দেবে তুমি কি করছ তার উপর। যা করছ তা সঠিক উপায়ে হচ্ছে কিনা, যতটুকু করছ তার ফল ঠিক আসছে কিনা এগুলোর দিকে নজর দাও। এতে করে তোমার কাজে মন বসবে এবং মানসিক চাপ কমে যাবে।
৭। ভালো লাগার কাজগুলো বাদ দিও না:
অনেক সময় আমরা কাজের চাপে থাকলে কাজ ছাড়া আর কিছু করতে চাই না। মনে মনে ভাবি কাজ শেষ করে তারপর গান শুনব বা খেলতে যাব বা গল্পের বই পড়ব। এটা ঠিক নয়। কাজের মধ্যে এই ভালোলাগার কাজগুলো মানসিক চাপকে কমিয়ে দেয়।
যদি তুমি এই ভালোলাগার কাজগুলো পরে করার জন্য রেখে দাও তাহলে টানা কাজ করতে করতে একঘেয়েমি এসে যাবে। একের পর এক কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাবে তুমি। তাই কাজের চাপ যতই থাকুক না কেন, কিছুটা সময় রেখে দাও তোমার ভালোলাগার কাজগুলোর জন্য।
৮। খাওয়া, ঘুম ভুলে যেয়ো না:
আমাদের উপর বেশি চাপ থাকলে প্রায়ই দেখা যায় আমরা নাওয়া-খাওয়া, ঘুম ভুলে যাই যা একদমই উচিত নয়। এগুলো আমাদের শরীরকে ঠিক রাখে। যদি তুমি ভাব যে আগে কাজ শেষ করে পরে খাবে বা ঘুমুবে তাহলে তোমার শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে।
তাই তোমার উচিত খাওয়া আর ঘুমের সময় কাজ বন্ধ রাখা। এই অভ্যাস তোমাকে কাজের মাঝে একটুখানি বিরতি এনে দেবে। এতে করে একঘেয়েমি কমে যাবে। ফলে তোমার কাজ তোমার কাছে আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে আর তোমার Productivity-ও বেড়ে যাবে।
চাপের মধ্যে থেকে ভালোমত কাজ করতে পারাটা খুব একটা সহজ নয়। কিন্তু চেষ্টা করলে ভালো একটা ফলাফল পেতে পারবে। তাই উপরের উপায়গুলো অনুসরণ করেই দেখ। দেখবে চাপের মধ্যে থেকেও তুমি বেশ ভালোমতই কাজগুলো শেষ করে ফেলতে পারবে।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন