মুক্তির মন্দির সোপানতলে
কতো প্রাণ হলো বলিদান
লেখা আছে অশ্রুজলে।
মুক্তি কখনো সহজে আসে না। বাঙ্গালির মুক্তিসংগ্রামে সাফল্যও সহজে আসে নি। ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর হাজারো আহাজারির বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। অকুতোভয় যে বীরেরা নিঃশেষে প্রাণ দান করেছেন, অক্ষয় সেই বীরদের ক’জনের গল্প বলি। কল্পনার জগতের নায়ক-মহানায়কদের থেকে তাঁদের কাহিনীও কম অবিশ্বাস্য নয়।
৮ এপ্রিল, ১৯৭১
মেশিনগান আর মুক্তির কাব্য
বুড়িঘাটের বাংকারগুলোয় অপেক্ষা করছে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল ইউনিটের একটি কোম্পানি। লক্ষ্য তাদের একটিই, যে করেই হোক পাকবাহিনীকে ওই রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি জলপথ দিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। ওরা এই জলপথ দিয়ে প্রবেশ করলে সর্বনাশ হয়ে যাবে, তাই মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলেছে প্রতিরক্ষা ব্যুহ। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিলো বিশাল এক সৈন্যবহর নিয়ে আসছে পাকিরা। সাতটা স্পিডবোট, দুটো লঞ্চ। দলপতির মনে তখন শঙ্কা, এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে কিভাবে করবেন প্রতিরোধ? খানিক বাদে তার আশঙ্কাই সত্যি হলো।
পাকি সৈন্যবাহিনীর মর্টার আর অন্য ভারি অস্ত্রের সামনে একেবারে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়লো মুক্তিবাহিনীরা। পিছু হটতে লাগলো তাঁরা। একজন বাদে। তিনি একজন ল্যান্স নায়েক। মেশিনগান চালাতে দারুণ পারদর্শী তিনি। পিছু না হটে তিনি তার মেশিনগান নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। নিখুঁত নিশানায় একে একে ডুবিয়ে দিলেন পাকবাহিনীর সাতটি স্পিডবোটই! ততক্ষণে নিরাপদে দূরত্বে সরে গিয়েছে তাঁর সহযোদ্ধারা। কিন্তু একটু পরেই দূরে থাকা লঞ্চগুলো থেকে শুরু হলো তুমুল গুলিবর্ষণ। মর্টারের একটা গোলা এসে পড়লো তাঁর ওপরে। লুটিয়ে পড়লেন তিনি, থেমে গেলো তার মেশিনগান।
মহান এ যোদ্ধার নাম মুন্সি আব্দুর রউফ। সেদিন তাঁর সাহসিকতা আর হার না মানা মানসিকতার জন্যেই পুরো একটি কোম্পানি রক্ষা পেয়েছিলো। রাঙ্গামাটির নানিয়ার চরে তাঁর সমাধি। মহান এ আত্মত্যাগ আর অকুতোভয় এ কাজের জন্যে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেন।
১৭ এপ্রিল, ১৯৭১
একজন হেক্টরের ইতিকথা
হাবিলদার মুনির দরুইনে পৌছেই মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে এগিয়ে আসছে শক্তিশালী পাকবাহিনী, লক্ষ্য তাদের চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। মেজর শাফায়াত জামিলের নির্দেশে তিনি দরুইনে এসেছেন, কিন্তু এই বিশাল পাকবাহিনীর বিপক্ষে সামান্য ক’জন মুক্তিসেনা নিয়ে কি করবেন তিনি? এমন সময় দুই নম্বর প্লাটুনের এক সিপাহীর আবির্ভাব। যুদ্ধের সময় তাকে ল্যান্স নায়েকে প্রোমোশন দেয়া হয়েছে, ব্যাপারটায় সে বেশ আনন্দিত। হাবিলদার মুনিরের কাছ থেকে গুলি নিয়ে নিজের পরিখায় চলে গেল সে, নাম তাঁর মোস্তফা কামাল।
সময় তখন বেলা এগারোটা। মুষলধারে শুরু হলো বৃষ্টি। তার সাথে সাথে শুরু হলো শত্রুপক্ষের তুমুল গোলাবর্ষণ। চারদিক থেকে গোলাগুলিতে হতবাক হয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধারা। বারোটার দিকে পশ্চিম দিক থেকেও আক্রমণ শুরু হলে একদম কোণঠাসা হয়ে পড়ে তারা। পিছু হটবার উপায় ছিলো না তাঁদের। বেশ কয়েকজন শহীদ হন সেখানেই। তখনই এগিয়ে আসেন মোস্তফা কামাল। ঘুরে দাঁড়িয়ে তার এলএমজি নিয়ে শুরু করেন গুলি চালানো। এতে থমকে দাঁড়ায় পাকবাহিনী। তাদের গতি কমে আসে, এই সুযোগে নিরাপদ অবস্থানে চলে যেতে থাকে মোস্তফা কামালের সঙ্গীরা। তিনি কিন্তু থামেন নি। তার ৭০ গজের মধ্যে শত্রুপক্ষ চলে এলেও তিনি চালিয়ে যান গুলি, তাতে তার সঙ্গীদের পিছু ধাওয়া করতে সাহস পায় নি পাকবাহিনী। একসময় গুলি শেষ হয়ে যায় এলএমজির। গ্রীক পুরাণে ট্রয়ের রাজপুত্র হেক্টরের মতোই লড়াই করে মৃত্যু হয় তাঁর।
সেদিন মোস্তফা কামাল অন্যদের সাথে পিছু হটতে গেলে হয়তো চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আসলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো। হয় নি এই মানুষটির সাহসিকতার জন্যে, যার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করেন।
২০ আগস্ট, ১৯৭১
একালের মেঘনাদ
করাচির মৌরিপুর এয়ার বেসে তখন বাঙ্গালি পাইলটদের প্লেন চালানো নিষেধ। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ সদা শঙ্কায় থাকে, এই বুঝি কোন পাইলট প্লেন নিয়ে পালিয়ে গেলো পূর্ব পাকিস্তানে! এদিকে বাঙ্গালি অফিসার মতিউর রহমান সুযোগ খুঁজছেন বাংলাদেশে যাবার। ঘরে তাঁর স্ত্রী-কন্যা। তাঁদের বিদায় জানিয়ে আগস্টের বিশ তারিখে তিনি গাড়ি ড্রাইভ করে চলে যান মৌরিপুর ঘাঁটিতে। তাঁরই ছাত্র রশীদ মিনহাজ তখন সবে একটা ফাইটার প্লেনে উঠেছে। তাঁর সিগনালেই রশীদ প্লেনের দরজা খুলে দেয়, তিনি ককপিটে প্রবেশ করে সুকৌশলে মিনহাজকে অজ্ঞান করে প্লেনের দখল নিয়ে নেন। লক্ষ্য তাঁর সেই প্লেন নিয়েই যুদ্ধে যাবার! কিন্তু বিধিবাম! মিনহাজ কন্ট্রোল অফিসে জানাতে সক্ষম হয় আগেই, আর কিছুক্ষণ বাদেই চারটি ফাইটার প্লেন ধাওয়া করতে শুরু করে মতিউরের প্লেনটিকে। এর মধ্যে চেতনা ফিরে আসে মিনহাজের, তুমুল ধ্বস্তাধ্বস্তি চলে ককপিটেই। একসময় মিনহাজ ইজেক্ট সুইচ চাপলে প্লেন থেকে নিচে পড়ে যান মতিউর। প্যারাসুট না থাকায় মৃত্যু হয় তাঁর। ওদিকে প্লেনটিও আধ মাইল দূরে বিধ্বস্ত হয়, ভারতের বর্ডার থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা এলাকায়। মুক্তিযুদ্ধের বাকি সময়টুকুতে তাঁর স্ত্রী-কন্যাকে আটকে রাখে পাকিরা। অনেক অত্যাচার সয়ে যুদ্ধের পর দেশে ফিরে আসেন তাঁরা।
দেশের টানে সুদূর পাকিস্তান থেকে যুদ্ধে যোগ দিতে চেয়েছিলেন মতিউর। রামায়ণের সেই মেঘনাদের মতো আকাশকে জয় করেছিলেন তিনি। প্রিয় স্ত্রী মিলিকে রেখে, প্রিয় মেয়েকে রেখে মতিউর দেশমাতৃকার ডাকে সাড়া দিতে যেতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশে। তাঁর এই প্রবল দেশপ্রেমকে সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেন।
থেমে যায় মেশিনগান। মহা উল্লাসে এগিয়ে ফাঁড়ি দখল করে ফেলে মুক্তিবাহিনী
৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
আমাদের লিওনিডাস
গোয়ালহাটি গ্রামে স্ট্যান্ডিং পেট্রোল হিসেবে যে পাঁচজন মুক্তিসেনাকে পাঠানো হয়েছিলো, তাঁদের কোন ধারণাই ছিলো না সাধারণ এই পেট্রোলিং ডিউটি কি হয়ে উঠতে পারে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পাকিদের হঠাৎ আক্রমণের কোন জবাবই তাঁদের কাছে ছিলো না। তিনদিন থেকে আক্রমণ করে পাকবাহিনী ধরাশায়ী করে ফেলে তাঁদের। পিছু হটতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় নান্নু মিয়া। তাকে বাঁচাতে কাঁধে তুলে নেন পেট্রোলের অধিনায়ক নূর মোহাম্মদ শেখ। কিন্তু একটু পরেই মর্টারের প্রচণ্ড গোলা এসে লাগে তাঁর ডান কাঁধে। তবুও হাল ছাড়েন না তিনি। সহযোদ্ধ্বা মোস্তফা কামালকে আদেশ করেন নান্নু মিয়াসহ অন্যদের নিয়ে পিছু হটতে। নিজের এলএমজি তাকে দিয়ে, মোস্তফার রাইফেল নিয়ে তিনি শত্রুপক্ষের নজর নিজের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করেন।
একদিকে আহত, অর্ধমৃত নূর আর তাঁর একটি রাইফেল, অন্যদিকে সশস্ত্র পাকবাহিনী, সঙ্গে তাঁদের অত্যাধুনিক অস্ত্র। এই অসম লড়াইয়ে বিজয়ী হয় পাকিরাই। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অদম্য নূর মোহাম্মদ লড়াই চালিয়ে যান। সাংঘাতিক ক্ষতি হয় পাকিদের। বেশকিছু সৈন্য মারা যায়, প্রচুর আহত হয়। প্রতিহিংসায় তাঁরা অর্ধমৃত নূর মোহাম্মদের চোখ উপড়ে ফেলে পাশের একটা ঝোপে ফেলে রেখে যায়। প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈন্যরা পরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে।
স্পার্টান বীর লিওনিডাসের মতো লড়াই করে, শত্রুকে মেরে তবেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের অসামান্য এ আত্মত্যাগের জন্যে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করেন।
২৮ অক্টোবর, ১৯৭১
মেশিনগান, গ্রেনেড আর এক অকুতোভয় কিশোরের গল্প
ধলই সীমান্তে পাকবাহিনীর ফাঁড়িটা দখল করতে পারলে মুক্তিবাহিনীর বিশাল একটা সুবিধা হবে। সেজন্যে অক্টোবরের শেষ থেকেই ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট খুব চেষ্টা করে যাচ্ছিলো সেটি দখলের। কিন্তু সমস্যা ছিলো একটা মেশিনগান। ফাঁড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম বরাবর বসানো সেই মেশিনগানটার ক্রমাগত গোলাবর্ষণে ফাঁড়িতে প্রবেশ করাই অসম্ভব হচ্ছিলো। তাই মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন ওই মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড আক্রমণ করার। কিন্তু কে ছুঁড়বে গ্রেনেড? এটি সাংঘাতিক বিপদজনক একটি কাজ জেনেও আগ্রহী হয় তরুণ তুর্কি হামিদুর রহমান। আঠারো বছরের এই ছেলেটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ি খালের মধ্য দিয়ে বুকে হেঁটে এগিয়ে যায় গ্রেনেড মারতে। সফলভাবে দুটো গ্রেনেড ছোঁড়াও হয়, কিন্তু ঠিক তখনই গুলিবিদ্ধ্ব হয় হামিদুর রহমান।
সে অবস্থাতেই মেশিনগান পোস্টে ঝাপিয়ে পড়েন হামিদুর রহমান। অর্ধমৃত শরীরেই হাতাহাতি করেন পোস্টের দুজন পাকি সৈন্যদের সাথে। থেমে যায় মেশিনগান। মহা উল্লাসে এগিয়ে ফাঁড়ি দখল করে ফেলে মুক্তিবাহিনী। মেশিনগান পোস্টে তখন নিথর নীরবতা। নীরব হয়ে গিয়েছেন হামিদুর রহমানও। সবাই যখন জয়োল্লাসে মত্ত, হামিদুর তখন নিঃশেষে প্রাণদান করে চলেছেন কোন এক অজানা গন্তব্যে!
হামিদুর রহমানের সমাধি ছিলো ভারতের ত্রিপুরা জেলার হাতিমেরছড়া গ্রামে। ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি দেশে ফেরত আনার। ফিরিয়ে আনবার পর একই বছরের ১১ ডিসেম্বর তাঁর দেহাবশেষ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
ব্যাংক জবস কোর্স
১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১
গানবোট ও হার না মানার গান
এপ্রিল মাসে যখন পাকিস্তান ঘাটি থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিলেন মোহাম্মদ রুহুল আমিন, চোখেমুখে তখন ছিলো দেশমাতৃকাকে বাঁচানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষা। যুদ্ধের এক পর্যায়ে যখন নৌবাহিনী গঠিত হয়, তিনি চলে যান কলকাতায়। ভারত সরকারের উপহার দেয়া দুটি গানবোট পদ্মা আর পলাশের একটি- পলাশের ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার হিসেবে ফিরছিলেন তিনি। মংলা বন্দরের পাকিস্তানি নৌ ঘাটি পি.এন.এস. তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যান তাঁরা। বেলা এগারোটার দিকে হঠাৎই গানবোটগুলোর ঠিক উপরে কিছু যুদ্ধ্ববিমানকে উড়তে দেখা যায়। কিন্তু গানবোটগুলোর অধিনায়ক ভারতীয় বিমান মনে করে তাতে আক্রমণ না করার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু কিছু বাদেই বিমানগুলো থেকে বোমাবর্ষণ শুরু হয়। মুহূর্তেই তলিয়ে যায় পদ্মা, আর সেটি দেখে পলাশের ক্যাপ্টেন লে. কমান্ডার রায় চৌধুরি গানবোট ত্যাগ করতে বলেন সবাইকে। কিন্তু রুহুল আমিন তা করেন না। গানবোট রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা করে যান তিনি, কিন্তু একপর্যায়ে গোলার আঘাতে ইঞ্জিনরুম ধ্বংস হয়ে যায় পলাশের। শহীদ হন রুহুল আমিন। রূপসা নদীর তীরেই তাঁকে কবর দেয়া হয়।
হার না মানা এ মানসিকতা আর বীরত্বের জন্যে বাংলাদেশ সরকার ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার রুহুল আমিনকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করেন।
১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
অ্যাকিলিসের শেষ যুদ্ধ
ভোরবেলা। মহানন্দা নদীতে তিন-চারটি দেশি নৌকা। চারদিকে শুনশান নীরবতা। খুব সন্তর্পণে নদী পার হলো মুক্তিবাহিনীর বিশ জনের দলটি। নেতৃত্বে গ্রীক বীর অ্যাকিলিসের মতো দেখতে এক যুবক। মাথায় তাঁর দারুন এক প্ল্যান, যেটি কাজ করলে খুব সহজেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখল করে ফেলা যাবে! উত্তর দিকে থেকে তাঁরা শুরু করবেন শত্রু নিধন, কিন্তু দক্ষিণ দিকের পাকিরা সেটা বুঝতে পারবে না! সবকিছু প্ল্যানমাফিক এগোচ্ছিলো। তাঁরা সাফল্য পাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ চর এলাকায় ছুটে এলো দশ-বারো জন পাকি সেনা। শুরু হল এলোপাথাড়ি গুলি। এদের না থামালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জয় তো দূরের কথা, বেঁচে ফেরাটাই কষ্টকর হয়ে যাবে! অ্যাকিলিস সারল্যমাখা দু’টি চোখে এগিয়ে গেলো অসীম সাহসে, কমে এলো গুলির ধারা। কিন্তু একটু পরে মুক্তিসেনারা আবিষ্কার করলো তাঁদের ক্যাপ্টেনকে। গুলিটা ঠিক কপাল বরাবর লেগেছিলো।
মহান এই ক্যাপ্টেনের নাম মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে আটকা পড়া বাঙ্গালি সেনাদের সংখ্যা নেহাত কম ছিলো না। কিন্তু তাঁদের মধ্যে সেখান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহণ করা সেনার সংখ্যা বেশি নয়। আমাদের ক্যাপ্টেন তাদেরই একজন। দুর্গম গিরি কান্তার মরু পেরিয়ে তিনি জুলাই মাসে পৌঁছাতে পেরেছিলেন ভারতে। অসামান্য বীরত্ব দেখিয়েছেন যুদ্ধে, শুধু বিজয়ের মুহূর্তেই তিনি থাকতে পারেননি। মহান এই বীরকে বাংলাদেশ সরকার বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করেন।
বীরশ্রেষ্ঠরা আমাদের গর্ব। মুক্তির সংগ্রামে তাঁদের মহান আত্মত্যাগের ফসল আজ আমাদের এ স্বাধীনতা। তাঁদের জন্যে শ্রদ্ধায় আমাদের মাথা নত হয়ে আসে। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হই আমরা, বলে উঠি,
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন
এই দেশেতে মরি!
আপনার কমেন্ট লিখুন