একটা বড় সাদা কাগজ নাও। একটা বলপয়েন্ট কলম নিয়ে কাগজের ঠিক মাঝখানটায় একটা গোল ডট দাও। এবার চোখের সামনে মেলে ধরো কাগজটা। কী দেখতে পাচ্ছো? চোখের সামনে বারবার ওই কালো ডটটাই পড়ছে না? যেদিক থেকেই তাকাও, কালো ডট তোমার চোখ থেকে কিন্তু সরছেই না!
এর কারণ কী, জানো? এর কারণ হলো ফোকাস। বিশাল সাদা কাগজে যখনই কালো একটা ডট আঁকা হলো, তোমার ফোকাস তখন ঠিক সে জায়গাটিতেই পড়লো। আর এজন্যেই চাইলেও আর মাথা থেকে সেই কালো ডটটাকে সরানো যায় না!
আমাদের জীবনে আমরা এমন অনেক কিছুই করি, যেগুলোর কারণে আমাদের সময় নষ্ট হয় ঠিকই, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। কোন ভ্যালু যোগ হয় না এসব কাজ করে, তবুও নিজের বিনোদন বলো বা পারিপার্শ্বিকের কারণে বলো- কাজগুলো করেই থাকি আমরা। আজ তাই এরকম কিছু কাজ নিয়ে কথা বলবো, যেগুলোয় ঠিক জায়গাটায় ফোকাস করতে পারলে নিজের অনেক বেশি উন্নতি করতে পারবে!
ফেসবুক:
ফেসবুককে বলা যায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশ। সকল বয়সের, সকল মানসিকতার সবার ফোনেই এখন ফেসবুক- তাই এই সামাজিক মাধ্যমটি থেকে বের হয়ে আসার কোন উপায় নেই বললেই হয়! সমস্যা হলো, প্রতিদিন ফেসবুক তোমার জীবন থেকে বেশ অনেকটা সময় কেড়ে নিচ্ছে অকারণেই!
হ্যাঁ, এই লেখাটা হয়তো তুমি ফেসবুকেই পড়ছো। এটা তোমার কাজে দেবে, কিন্তু অযথা চ্যাটিং করা কিংবা অকারণে মানুষের পোস্টে কমেন্ট করে যে সময়টা নষ্ট হচ্ছে, সেটার কী হবে? এই সমস্যার সমাধান করতেও দরকার ফোকাস।
অবাক লাগছে? ভাবছো, ফোকাস করে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে? আসলে ঠিক জায়গায় ফোকাস করতে পারলে ফেসবুক থেকেই অনেক উন্নতি করে নিতে পারো নিজের। ফেসবুকে দেখবে অনেক শিক্ষামূলক পেজ রয়েছে, যেখান থেকে শেখা যায় অনেক কিছুই! ফেসবুক যে ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে আছে, সেই কমিউনিকেশন নিয়েই না হয় শিখে নিলে নিজের মতো করে! অযথা চ্যাটিংয়ে ফোকাস না করে ঠিক এই শেখার জায়গায় ফোকাস করো, ফেসবুক তোমাকে শেখাবে অনেক কিছুই!
ইউটিউব:
খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা আরেকটা সাইট হচ্ছে ইউটিউব। ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে, কিন্তু তবুও ভিডিও দেখার এই সাইটটিতে প্রতিদিন একবারও প্রবেশ করে না এমন মানুষের সংখ্যা হাতেগোনা। তরুণ প্রজন্ম দিনে এক ঘণ্টা নিশ্চিত করেই ব্যয় করে ইউটিউবের পেছনে। এই সময়টাতে ঠিক দিকে ফোকাস করলে কিন্তু ইউটিউবকেও নিজের কাজে লাগানো যায়!
ইউটিউবে কিন্তু শুধু ফানি বাংলা ভিডিওই নেই। এখানে শেখার মতো অনেক কিছুই আছে, আছে জানার অনেক কিছু। তুমি তোমার ইউটিউবের সময়টা যদি ফোকাস করো এই শেখার দিকে, তাহলেই কিন্তু সেটা অনেক কাজে লেগে যায়! না হয় কমিউনিকেশন টিপস নিয়ে কিছু ভিডিও দেখলে, সেসবে ফোকাস করলে। তাহলে কিন্তু তোমার এক ঘণ্টা অনেক কাজে লেগে গেল!
টেলিভিশন:
টেলিভিশন বা টিভি দেখে দিনের একটা সময় ব্যয় করে না, এমন মানুষ পাওয়া বেশ কঠিন। হ্যাঁ, ফেসবুক-ইউটিউবের যুগে টিভির জনপ্রিয়তা কিছু কমেছে, কিন্তু প্রজন্মের টিভি দেখা কমেনি। দিনের একটা বড় সময় টিভির সামনে কাটালে নিশ্চিত করেই সময় নষ্ট হয়, আর তাই এই সময় নষ্ট হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে টিভির প্রোগ্রামের দিকে ফোকাস করতে পারো।
বিনোদনও হলো, সাথে শেখাও
টিভিতে সংবাদ পাঠক পাঠিকারা বলতে গেলে সবথেকে শুদ্ধ করে বাংলা আর ইংরেজি পড়েন। তুমি তাঁদের বাচনভঙ্গি দেখে সেভাবে কথা বলা শিখতে পারো। টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠান দেখে রান্নাটা না হয় একটু শিখে নিলে! ইংরেজি সিনেমা দেখে ইংরেজি উচ্চারণের দক্ষতাও বাড়িয়ে নিতে পারো। দরকার শুধু বিনোদনের পাশাপাশি এই শেখার দিকটায় ফোকাস করা।
ট্রাফিক জ্যাম:
সূর্য যেদিক দিয়েই উঠুক, দিনের শেষে রাত আসুক বা না আসুক, ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম থাকবেই- এ যেন এক অমোঘ সত্য। আর এই সত্যকে মেনে নিয়ে জ্যামে বসে বিরক্ত না হয়ে আর জ্যামের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার না করে সময়টা কাজে লাগানোর দিকে ফোকাস করলে কিন্তু অনেক কাজে লাগে সেটা!
এক কাজ করতে পারো। আগের রাতেই ফোনে ইউটিউবে পডকাস্ট সেভ করে রাখতে পারো। ডাউনলোড করে নিতে পারো অডিওবুক। সত্যিকারের বই পড়ার সময় না থাক, অডিওবুক কানে একটা হেডফোন লাগিয়েই শুনে নিতে পারো! তাতে সময়ও বাঁচল, বই পড়াটাও হলো!
আমাদের জীবনে সময় নষ্ট করে এমন বিষয়ের কমতি নেই। কিন্তু সবকিছুর মধ্যে থেকে যদি আমরা শেখার বিষয়গুলো বের করে আনতে পারি, সেখানেই ফোকাস করি, তাহলে কিন্তু এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে গেলো। বিনোদনও হলো, সাথে শেখাও!
এই লেখাটি লিখতে সহায়তা করেছে অভিক রেহমান
এই লেখাটি নেয়া হয়েছে লেখকের ‘নেভার স্টপ লার্নিং‘ বইটি থেকে। পুরো বইটি কিনতে চাইলে ঘুরে এসো এই লিংক থেকে!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন