পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
মিডিয়াতে খেলাধুলা আর বিনোদন জগতের তারকাদের খবর যতটা আসে, সত্যিকারের বিজয়ীদের কথা সেভাবে কখনো আসে না। একাত্তরে রক্ত আর অশ্রুর বিনিময়ে জন্ম দেওয়া ছোট্ট এই দেশটির মানুষ বরাবরই সংগ্রামী, লড়াকু, প্রত্যয়ী। পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছেন অজস্র বাংলাদেশী, মেধা আর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন তারা প্রতিনিয়ত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কীর্তিমান বরেণ্য কজন বাংলাদেশীর গল্প নিয়েই আমাদের এই আয়োজন।
স্ন্যাপচ্যাট মিলিওনিয়ার
পৃথিবীর প্রায় সব বড় বড় টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত। সেখানে কাজের সুযোগ পায় সারা পৃথিবী থেকে বাছাই করা অসম্ভব মেধাবী কিছু মানুষ। সেই সিলিকন ভ্যালি কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশের এক গুণী সন্তান- ইমরান খান।
বিলিয়ন ডলার কোম্পানি স্ন্যাপচ্যাট- এর Chief Strategy Officer আমাদের ইমরান খান। ছোট্ট একটি স্টার্টআপ থেকে মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের দৈত্যাকার এক কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে স্ন্যাপচ্যাট, মাত্র দুই বছর সেখানে কাজ করে ১৪৫ মিলিয়ন ডলারের মালিক ইমরান, কিভাবে সম্ভব হলো তার এই ধূমকেতুর মতো উত্থান?

ইমরান খান কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশে। উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে, গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন আমেরিকার ডেনভার ডেনিয়েলস কলেজ অফ বিজনেস থেকে।
টেলিকম অ্যানালিস্ট হিসেবে প্রথমে কাজ শুরু করেন ইমরান। এরপর জেপি মরগান চেজ এন্ড কো কোম্পানিতে কয়েক বছর কাজ করেন তিনি। একদম সাধারণ পর্যায় থেকে অসাধারণ কাজের নমুনা দেখিয়ে হেড অফ রিসার্চে উন্নীত হন। তিনি জেপি মর্গানের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী ম্যানেজিং ডিরেক্টরও বটে, মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি এ পদে আসীন হন।
ব্যাকরণ বুঝে নাও সহজ উপায়ে!
কিন্তু রিসার্চ এনালিস্ট থেকে এবার ইমরান পেশা বদলে হলেন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার। সাধারণত এমন ঝুঁকি নিয়ে সফল হওয়ার হার খুব কম, কিন্তু ইমরানের চমৎকার ম্যানেজমেন্ট স্কিল, উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা, হার না মানা মনোভাব তাকে এগিয়ে দিল অন্যদের চেয়ে।
শুধু তাই নয়, ইমরানকে আলাদা করেছে যে দক্ষতা, মানুষের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার অসামান্য গুণ, সেটি তাকে এনে দিল বিলিয়ন ডলারের চীনা কোম্পানি আলিবাবা-তে কাজ করার সুযোগ। আলিবাবার ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ এসেছে তারই তত্ত্বাবধানে।
রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া এই উদ্যমী গুণী মানুষটির উপর সিলিকন ভ্যালীর সবারই নজর পড়লো, কিন্তু ইমরান যোগ দিলেন নবীন কোম্পানী স্ন্যাপচ্যাটে। সেখানে তার বিচক্ষণতা ও কাজের উদ্যম এতটাই অগ্রসর করেছে কোম্পানীকে যে, শুধুমাত্র বোনাস হিসেবেই বছরে ৫ মিলিয়ন ডলার পান ইমরান খান। স্ন্যাপচ্যাটের ৭ মিলিয়ন শেয়ারের মালিক তিনি, বাজারমূল্য যার ১৪৫ মিলিয়ন ডলার, প্রতিদিন এই মূল্য বেড়েই চলেছে!
ইমরান খান সারা পৃথিবীর কাছে একজন আদর্শ- কিভাবে একদম সাধারণ পর্যায় থেকে উঠে এসে উদ্যম, বুদ্ধিমত্তা, ম্যানেজমেন্ট স্কিল আর হাল না ছাড়া মনোভাব একটি মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে।
বিশ্বজুড়ে পাঠশালা যার
বিশ্বজুড়ে একটি পাঠশালা রয়েছে একজন বাংলাদেশী মানুষের, একদম খোকাবাবু থেকে শুরু করে বিল গেটস পর্যন্ত সেই পাঠশালার ছাত্র! সেই শিক্ষককে সবাই একনামে চিনে- সালমান খান তার নাম, সাল খান নামেই বেশি পরিচিত।
মাত্র তেত্রিশ বছর বয়সে এক কিংবদন্তীর নায়কে পরিনত হয়ে গিয়েছেন তিনি। পড়ান গণিত থেকে শুরু করে রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, অর্থনীতি সবই। ইতিহাস, বিবর্তন, জেনেটিক্স, অর্থনীতি কোনটাই বাদ পড়েনি, এমনকি ফরাসী বিপ্লবের উপরেও ভিডিও রয়েছে তার। বিশেষ করে গণিত ও বিজ্ঞানের উপর ৬৫০০ এর বেশি ভিডিও রয়েছে তার। মার্কিন পত্রিকা টাইম এর জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির বার্ষিক তালিকার একটি উল্লেখযোগ্য নাম আমাদের এই সাল খান।
কিভাবে শুরু খান সাহেবের এই বিশ্বজয়ের? ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশী বাবার ঘরে জন্ম তার, মা কলকাতার। সাল খানের দাদাবাড়ি বরিশাল। MIT ও Harvard থেকে গণিত, তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল, ব্যাবসা প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রী করেছেন। তারপর এমবিএ করেন হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে।
পড়াশোনা শেষে ওয়াল স্ট্রীটে কাজ করেছেন তিনি। এসময় খানের ছোট্ট কাজিন নাদিয়া, অনেক দূরে লুইজিয়ানায় বাড়ি যার, অঙ্কে সে ভীষণ দুর্বল। খান ভাবলেন কিভাবে ওকে সাহায্য করা যায় অঙ্কের ভয় দূর করতে? শুরু করলেন সহজ সহজ ভিডিও টিউটোরিয়াল বানানো।
যখন ছড়িয়ে গেল তার এই মজার টিউটোরিয়ালগুলোর কথা, চারদিক থেকে আসতে লাগলো অনুরোধ নতুন নতুন টপিকের উপর। খান বুঝলেন সময় হয়েছে ব্যাপারটিতে আরো গুরুত্ব দেওয়ার। ২০০৬ সালে ইউটিউবে খান একাডেমী নামে চ্যানেল খুলেন তিনি, যার স্লোগান হচ্ছে “providing a high quality education to anyone, anywhere”
সারাজীবনে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষকে আমি সাহায্য করতে পেরেছি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে- এরচেয়ে চমৎকার অনুভূতি আর কি হতে পারে?
গোটা পৃথিবীর মানুষের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য ওয়াল স্ত্রীটের লাভজনক চাকুরীর ছেড়ে, করপোরেট জগতের হাতছানিকে উপেক্ষা করে এই তরুণ মন জয় করে নিলেন কোটি কোটি মানুষের। ২০১০ সালে গুগল “প্রজেক্ট টেন টু দ্য হান্ড্রেড”-এ খান একাডেমীকে বিজয়ী ঘোষণা করে ও ২ মিলিয়ন ডলার দেয় যাতে খান একাডেমী আরো বেশি কোর্স তৈরি করে ও সারাবিশ্বে জনপ্রিয় ভাষায় সবগুলি টিউটোরিয়ালকে অনুবাদ করে।
মানুষকে সবচেয়ে অবাক করে যে বিষয়টি, তা হচ্ছে এত বিচিত্র সব বিষয়ের উপর এত অসামান্য দখল কিভাবে থাকে একটি মানুষের? তারচেয়েও অবাক করে যেটি, বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রলোভন দূরে ঠেলে দিয়ে কেন খান সাহেব তার সব টিউটোরিয়াল বিনামূল্যে শেখার সুযোগ দিয়ে চলেছেন?
সাল খান এর উত্তরে বলেন, বুড়ো বয়সে যখন মৃত্যুশয্যায় থাকবো, সারাজীবনে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষকে আমি সাহায্য করতে পেরেছি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে- এরচেয়ে চমৎকার অনুভূতি আর কি হতে পারে?
সত্যিই, জ্ঞানের যে আলোকবর্তিকা তিনি জ্বালিয়ে দিয়েছেন, মুক্তশিক্ষার সে বিপ্লব ছড়িয়ে গেছে দেশে দেশে, অনুপ্রাণিত করেছে কোটি মানুষকে জ্ঞানের চর্চায় উদ্বুদ্ধ হতে।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com