পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
মিডিয়াতে খেলাধুলা আর বিনোদন জগতের তারকাদের খবর যতটা আসে, সত্যিকারের বিজয়ীদের কথা সেভাবে কখনো আসে না। একাত্তরে রক্ত আর অশ্রুর বিনিময়ে জন্ম দেওয়া ছোট্ট এই দেশটির মানুষ বরাবরই সংগ্রামী, লড়াকু, প্রত্যয়ী। পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছেন অজস্র বাংলাদেশী, মেধা আর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন তারা প্রতিনিয়ত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কীর্তিমান বরেণ্য ক’জন বাংলাদেশীর গল্প নিয়েই আমাদের এই আয়োজন।
“এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি”
হুমায়ুন আহমেদ যখন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন, একটি ব্যাপার তাঁকে ভীষণ অবাক করলো। প্রথম সারির হাসপাতালগুলোর বড় বড় দায়িত্বে আছেন যেসব ডাক্তাররা, তাঁরা আমাদের বাংলাদেশেরই মানুষ! শুধু কি হাসপাতাল? এমন অনেকগুলো ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে কৃতিত্বের সাথে কাজ করছে আমাদের দেশের মানুষ তুমি জেনে একদম অবাক হয়ে যাবে!
অস্কারজয়ী প্রথম বাংলাদেশী!
বাংলাদেশ আবার কবে অস্কার জিতলো? কোন চলচ্চিত্রের জন্য জিতলো?! ভাবছো অবাক হয়ে?
বাংলাদেশেরই এক কৃতী সন্তান অস্কার জিতেছেন, তাও একবার নয়, দুই দুইবার চলচ্চিত্রে স্পেশাল ইফেক্টে অবদানের জন্য অস্কার জিতে আসর মাতিয়েছেন, নাম তার নাফিস বিন যাফর।
১৯৭৮ সালে জন্ম নাফিসের, আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী দম্পতির ঘর আলো করে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন মাত্র বিশ বছর বয়সে, তারপর ক্যারিয়ার শুরু করেন প্রোগ্রামার হিসেবে। NASA-র জন্য কাজ করতে গিয়েই প্রোগ্রামিং এর প্রেমে পড়েন তিনি।
“ডিজিটাল ডোমেইন” নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় নাফিস আবিষ্কার করেন “Fluid Simulation” নামের একটি মজার এনিমেশন প্রযুক্তি। এর সাহায্যে ধোঁয়া, আগুন, পানির ঢেউ- এমন জিনিসগুলো গ্রাফিক্সের সাহায্যে একদম বাস্তবের মতো ফুটে উঠবে পর্দায়! নাফিস আর তার সহযোগীদের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তিটি কোন চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে প্রথম জানো?
Pirates of the Caribbean : At Worlds End এর স্পেশাল ইফেক্টে!
অসাধারণ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০০৭ সালে পেয়ে যান অস্কারের ‘সায়েন্টিফিক এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাওয়ার্ড’ নামে বিশেষ এক পুরস্কার, যা তার গোটা ক্যারিয়ারকেই বদলে দেয় রাতারাতি।
এই পুরষ্কার নাফিসকে এনে দেয় স্টিভেন স্পিলবার্গের প্রতিষ্ঠান ‘Dreamworks Animation’ -এ কাজ করার সুযোগ। সিনিয়র প্রোডাকশন ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন একের পর এক বিশ্ব কাঁপানো ছবিতে, যার মধ্যে রয়েছে- Shrek, Kung fu Panda, Puss in Boots, Madagascar, Transformers ইত্যাদি।
২০১৫ সালে আবারও ইতিহাস গড়লেন নাফিস, How to train your dragon ছবিতে একটি স্পেশাল ইফেক্টের বিশেষ গ্রাফিক্স টুল– বুলেটের উপর দুটি বড় স্কেলে ‘Destruction Simulation System’ এ অসামান্য অবদানের জন্য অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস (অস্কার)’ কর্তৃপক্ষ ‘Technical Achievement Award’ বিভাগে বিশেষ অস্কারে ভূষিত করলো নাফিস এবং তার সহযোগী স্টিভেন মার্শালকে।
শৈশবে ঢাকায় বেড়ে ওঠা নাফিস পড়াশোনা করেছেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজে, তার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার কাজীকান্দায়। কীর্তির অঙ্গনে নাফিসের পূর্বসূরীরাও কম যান না। প্রখ্যাত কবি গোলাম মোস্তফার নাতি তিনি, জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি প্রয়াত সৈয়দ মইনুল হোসেন নাফিসের মামা এবং বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার তার চাচা।
বাংলাদেশী “সুপারম্যান”!
গেল বছর “ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস” এ একজন বাংলাদেশী সুপারম্যানও কিন্তু ছিলেন! তবে সেটি পর্দার সামনে নয়, পর্দার পেছনের নায়ক তিনি- নাম ওয়াহিদ ইবনে রেজা।
ছবিতে ওয়াহিদের ভূমিকা ছিল প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে, অস্কারজয়ী প্রতিষ্ঠান মুভিং পিকচার কোম্পানির (এমপিসি) হয়ে।
ওয়াহিদ কেবল সুপারম্যানের কুশীলবই নন, তিনি কাজ করেছেন এমন সব প্রোডাকশনে, শুনলে চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে!
গেম অব থ্রোনস, নাইট অ্যাট দ্য মিউজিয়াম: সিক্রেট অব দ্য টুম্ব, ফিউরিয়াস সেভেন, ফিফটি শেডস অব গ্রের মতো সিনেমার ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট দলে কাজ করেছেন তিনি।

আজকের হলিউড মাতানো ওয়াহিদ কিন্তু অনেক আগে থেকেই দেশীয় অঙ্গনে পরিচিত একটি নাম।
ফিল্ম মেকিং শেখার স্বপ্ন সত্যি করতে পা বাড়ালেন বিদেশ বিভুঁইয়ে
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করেছেন তিনি। আর দশজন যেখানে টিউশন করাতো, তার লক্ষ্য ছিল স্রোতের চেয়ে একটু ভিন্ন- কিংবদন্তীতূল্য স্যাটায়ার ম্যাগাজিন “উন্মাদ”এ কাজ করা! স্টাফ রাইটার হিসেবে সুযোগ পান সেখানে, পরে সহকারী সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন। বুয়েটে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে গড়ে তোলেন “স্বপ্ন” নামে একটি মঞ্চ নাটকের দল।
এভাবেই অভিনয় আর লেখালেখির জগতে জড়িয়ে গেলেন ওয়াহিদ। হুমায়ুন আহমেদের বেশ ক’টি নাটকে কাজ করেন পরপর, দেশজুড়ে পরিচিতি পান “হিমু” চরিত্রে অভিনয় করে। ইঞ্জিনিয়ারিং এর খটোমটো জগত থেকে শিল্পসাহিত্যের এই বর্ণীল সৃজনশীল স্বপ্নজাল দারুণভাবে আকৃষ্ট করলো তাকে, তাই ২০০৬ সালে স্নাতক শেষ করে যোগ দিলেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়।
বন্ধুরা সবাই যখন নয়টা-পাঁচটা অফিস করছে, ওয়াহিদ তখন ব্যস্ত নতুন নাটক আর বিজ্ঞাপনের আইডিয়া খুঁজে বের করতে! পরে গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং বাংলাদেশে পালন করেছেন কপি হেডের দায়িত্ব। লিখলেন প্রচুর নাটক, বিজ্ঞাপন, অভিনয়ও করলেন অনেক। তার আরও একটি পরিচয় আছে। তিনি কবিতা লেখেন, বইও বেরিয়েছে কয়েকটি।
ফিল্ম মেকিং শেখার স্বপ্ন সত্যি করতে পা বাড়ালেন বিদেশ বিভুঁইয়ে। ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে ভর্তি হলেন ব্যাচেলর পড়তে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে তৈরি করে ফেললেন ৮-১০টা শর্ট ফিল্ম। পাশ করার পর ইন্টার্নশিপ খুঁজতে গিয়ে পড়লেন বিপাকে। কেউ নিতে চায়না, নিলেও কাজ করতে হবে বিনা বেতনে। এমন সময় পরিচিত বাংলাদেশীরা পরামর্শ দিলো তিনি দেশে থাকতে যে কাজগুলো করেছিলেন তা রেজ্যুমে-তে উল্লেখ করতে।
রাতারাতি এসে গেল প্রস্তাব, ইন্টার্নশিপের নয়, একদম চাকরির অফার! এভাবেই কাজের মাধ্যমে হলিউডের কঠিন প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় গড়ে তুললেন পরিচিতি, সুযোগ পেলেন মেথড স্টুডিওস নামের আরেক বিখ্যাত ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট কোম্পানিতে। মার্ভেল এন্টারটেইনমেন্টের বিভিন্ন ছবিতে কাজ করছেন তিনি।
ক্যাপ্টেন আমেরিকা, ডক্টর স্ট্রেইঞ্জ আরো বিখ্যাত সব ছবির কুশীলব হিসেবে হলিউড মাতাচ্ছেন ওয়াহিদ, কিন্তু হৃদয়ে ধারণ করে চলেছেন সবসময় একটুকরো বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি উৎসাহ পান যখন দেখেন বাংলাদেশী কেউ ভালো কোন কাজ করে। দেশে এসে বড় আঙ্গিকে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন ওয়াহিদ, বদলে দিতে চান চলচ্চিত্র জগতের খোলনচেল।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন