যদি খুব গুরুগম্ভীর একটা ভাব নিয়ে ইমোজির সংজ্ঞা দিতে চাই, তবে বলতে হবে “ইমোজি হলো মানুষের অনুভূতি আর মুখভঙ্গির আদলে গড়া এক ধরনের ডিজিটাল আইকন।” কী হলো? আচ্ছা ঠিক আছে এমন খটমট করে না বলে যদি সহজ করেই বলি তাহলে বলা যায়, “ইমোজি হলো এক ধরনের ডিজিটাল ভাষা যে ভাষার কারণে একটা সাধারণ টেক্সটে ইমোশন জুড়ে যায়।” টাইপ করা মেসেজে যেহেতু কণ্ঠ শোনা যায় না তাই অনেক সময় সেই মেসেজ যে দিচ্ছে আর যে পড়ছে তাদের মাঝে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে যেতেই পারে। কিন্তু একটা ইমোজি এই সমস্যাটাকে নিমিষেই সমাধান করে ফেলে!
ভাষা হল মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম, আর ইমোজি নিজেই এমন একটি ভাষা যার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করাটা আরও সহজ হয়ে গিয়েছে!
ইমোজি শব্দটি এলো কোথা থেকে?
তুমি খুব সরল মনে সহজ ভাবে ভেবে নিতেই পারো ‘ইমোজি’ শব্দটি এসেছে ‘ইমোশন’ থেকে। কেনই বা না! ইমোজিতে তো কেবল ইমোশনেরই ছড়াছড়ি! কিন্তু ইমোজি আর ইমোশন শব্দ দুটির মিল থাকাটা স্রেফ একটা কাকতালীয় ব্যাপার। আসলে ইমোজি এসেছে সেই সুদূর জাপান থেকে। জাপানিজে ই(e) বলতে বোঝায় ছবি আর মোজি(moji) অর্থ হল অক্ষর। আর অক্ষর কখন লাগে বলতো? ভাষাকে লিখতে। তাহলে এবার সহজ ভাবে ভেবে ফেলো ইমোজির মানে!
প্রথম ইমোজির ইতিকথা:
সিজেতাকা কুরিতা নামের এক ব্যক্তি ১৯৯৯ সালে প্রথম ইমোজি তৈরি করেন। কুরিতা তখন কাজ করতেন জাপানের মোবাইল ইন্টারনেট অপারেটর ডোকোমোতে। ডোকোমোর একটি প্রজেক্ট এর জন্য কুরিতার ইচ্ছে ছিল এমন কিছু একটা ডিজাইন করার, যা একই সাথে হবে সহজ আর ইনফরমেটিভ।
আর সেই সময় ইমোটিকন বেশ আগে থেকেই জনপ্রিয় ছিল। বিশেষ করে 🙂 , 🙁 , 8-D এই সব ইমোটিকন হরহামেশাই মানুষ ব্যবহার করত তখন। আর এই ইমোটিকন থেকে তার মাথায় চলে এল আইডিয়া! তিনি ভাবলেন মেঘলা আবহাওয়া না লিখে, একটা মেঘলা আকাশের আইকন থাকলে তো দারুণ হয়! আর এই আইকন যদি সেল ফোনের কীবোর্ডে সেট করে ফেলা যায় তাহলে তো কথাই নেই! এই ধারণাটা থেকে কুরিতা ১২/১২ পিক্সেল এর গ্রিড দিয়ে ইমেজের একটি সেট তৈরি করে ফেলেন আই মোড ইন্টারফেসের মাধ্যমে।
আর তার এই ইমেজ সেটে ছিল প্রায় ১৭৬টি ইমোজি। কুরিতার তৈরি করা এই ১৭৬টি ইমোজি বর্তমানে নিউ ইয়র্কের “মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট”-এ সংরক্ষিত আছে। যাই হোক, ডোকোমোর এই ইমোজি যে কতটা জনপ্রিয়তা পায় তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?
ইমোজি ও ইউনিকোড:
ডোকোমোর ইমোজির জনপ্রিয়তা যখন জাপান পেরিয়ে পুরো বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ল, তখন একটা পর্যায়ে এই ইমোজির ব্যবহারে কোন নির্দিষ্টতা থাকছিল না। ভাষায় পরিণত হওয়া এই ইমোজিগুলোকে বাগে আনতে ২০০৭ সালে গুগলের সফটওয়্যার ইন্টারন্যাশনালাইজেশন টিম কাজে লেগে পড়ে। আর তখন তারা যায় ইউনিকোড কনসর্টিয়াম (UNICODE CONSORTIUM, এটা জাতিসংঘের মত একটি অলাভজনক সংঘ, কম্পিউটারের টেক্সট এর স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার কাজটি করে থাকে) এর কাছে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
ইউনিকোড দায়িত্ব নেয়ার আগে প্রায় কয়েকশ রকম এনকোডিং সিস্টেম ছিল। একেক কম্পিউটারে একেক রকম এনকোডিং সিস্টেম থাকার কারণে সার্ভার এই আইকনগুলোকে ঠিকভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে পারত না। ইউনিকোড এই ল্যাঙ্গুয়েজের কোডটাকে স্ট্যান্ডার্ড করার জন্য কাজ শুরু করে দিল। তারপর ২০১০ সালে ইউনিকোড ৬৬৫টি নতুন ইমোজিকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ঘোষণা করল।
ইমোজি কিবোর্ড:
২০১১ সালে অ্যাপল কোম্পানি অফিসিয়ালভাবে ইমোজি কীবোর্ড ফিচারটি যোগ করে তাদের IOS-এ (মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম)। দুই বছরের মধ্যেই অ্যান্ড্রয়েডেও এই ইমোজি কীবোর্ড চলে আসে। এই ইমোজি কীবোর্ডের মাধ্যমে কোন রকম চিহ্ন ছাড়াই সরাসরি বসিয়ে দেওয়া যায় টেক্সটে। অ্যাপলের পর গুগলের জিবোর্ড(G board) কিবোর্ডেও এই ফিচারটি যুক্ত করা হয়।
আর বর্তমানে ডেস্কটপ /ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনের ইমোজি কীবোর্ডটি এতটাই আপডেট করা হয়েছে যে, এত এত ইমোজির ভিড়ে জলদি জলদি ঠিক ইমোজিটা খুজে পাওয়ার জন্য সার্চ অপশন যেমন যোগ করা হয়েছে, তেমনি ব্যাপারটাকে আরও সহজ করে ফেলার জন্য ইমোজি কীবোর্ডে “ইমোজি রিকগনাইজার”এর ফিচারটিও যোগ করা হয়েছে। অর্থাৎ তুমি যদি এখন একটা স্মাইলি (?) ইমোজি দিতে চাও তাহলে কিবোর্ডের ইমোজি লাইব্রেরীতে না গিয়ে একেবারে 🙂 টাইপ করলেই ইমোজি কিবোর্ড বুঝতে পারবে তুমি স্মাইলি ইমোজি চাও!
ইমোজি পরিচিতি:
ভাবছো কোন ইমোজি কী বুঝায় সেটা তো আমরা কম বেশি সবাই জানি! তবে কিছু কিছু ইমোজির মানে কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো ভুল জানি। যেহেতু ইমোজি একটা ভাষা, তাই এর রূপান্তর হবে, বিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক। এ কারণে প্রতিবছরই একবার, ইউনিকোড নতুন করে এডিট করে নতুন নতুন ইমোজি সংযোজন করে স্ট্যান্ডার্ড ইমোজি লিস্টে। এত শত ইমোজির মাঝে মাঝে কোনটা দিয়ে কী বুঝায় তা চলো একবার দেখে নিই!
– হাঁফ ছেড়ে বাঁচা/ ইতস্তত
– বোকামি/ ব্যঙ্গাত্নক/ (Sarcasm)
– সৌভাগ্যবান মনে করা/ খুশি হয়ে কৃতজ্ঞতা/ (Acting like an angel)
– অবিশ্বাস প্রকাশে/ বিরক্ত বা অধৈর্য হয়ে যাওয়া
– কোন অন্যায় করে বা কারো ক্ষতিতে আনন্দ প্রকাশ / দুষ্টুমি/ (Devil Smile)
– বিরক্ত/ অসন্তুষ্টি বোঝানোর ক্ষেত্রে/ (Dissatisfied/ Irritation)
– খাবার দেখে জিভে জল আসা/ ক্ষুধার্ত (কিন্তু এটাকে অনেকেই হয়তো ভেংচি ইমোজির সাথে গুলিয়ে ফেলে)
– এলিয়েন/ কিম্ভুত কিছু একটা
– এই ইমোজিটার একদম ঠিকঠাক মানেটা ইংরেজি একটা বাগধারা দিয়ে বলা যায়, “But that’s none of my business”/ আবার এটা দিয়ে ভাবলেশহীন অনুভূতি বা অপ্রাসঙ্গিক ব্যাপারও বোঝানো হয়ে থাকে
এছাড়াও কী নেই বলোতো এসব ইমোজিতে? বিভিন্ন দেশের পতাকা, বিভিন্ন রকম খাবার, কয়েকশ রকম ফুল, ফল, প্রাণী, বিভিন্ন পেশার মানুষ, ভিন্ন ভিন্ন গায়ের রঙের মানুষ, কত রকম পোশাক! আনুষঙ্গিক আরো কত কিছু! বিভিন্ন রকম খেলা আর আবহাওয়া তো আছেই, এমনকি বাদ পড়েনি বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির নানা রকম উৎসবগুলোও!
আবার একই অনুভূতি প্রকাশের জন্যও কত রকম ইমোজি যে আছে! থাকবে না কেন? যখন যেখানে যেমন, অনুভূতির প্রকাশটাও তো তেমন হওয়া চাই, কী বলো?
ইমোজি ব্যবহারের নিয়ম:
ইমোজি তো আমরা হরহামেশাই ব্যবহার করতে থাকি কিন্তু সব জায়গায় সব সময় ইমোজি ব্যবহার করাটা আসলে ঠিক কতটা যুক্তিসঙ্গত? ইমোজি ব্যবহার করাটাও কিন্তু এক রকম শিষ্টাচারের মধ্যেই পড়ে। বন্ধুদের সাথে টেক্সটে, যেমন তুমি হয়তো ইমোজির বন্যা বইয়ে দাও কিন্তু তোমার শিক্ষককে একটা টেক্সট পাঠালে সেখানে কিন্তু এমন করাটা একদমই ঠিক না। কোন কিছুর অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ইমেইল করতে চাইলে বা অফিশিয়াল যেকোনো মেইলে ইমোজি ব্যবহার না করাটাই ভালো। আবার ক্যাজুয়াল কনভারসেশন, আলোচনামূলক বার্তায় কিংবা বিজনেস কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে ইমোজির ব্যবহারটা পরিমিতভাবে করা উচিত।
বিশ্ব ইমোজি দিবস:
বিশ্ব ইমোজি দিবসও যে আছে সেটা হয়তো তোমাদের অনেকেরই অজানা। এই যে আমরা প্রতি কথায় কথায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট বা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিনই, পোস্টের ক্যাপশনে-কমেন্টে বা টেক্সট এত এত ইমোজি ব্যবহার করছি তার একটা দিবস থাকবে না তা কি হয়? আর এটা ভেবেই হয়তো ইমোজিপিডিয়ার (EMOJIPEDIA, ইমোজি রেফারেন্স ওয়েবসাইট) প্রতিষ্ঠাতা জেরেমি বার্জ একটা ইমোজি দিবস থাকার প্রয়োজন অনুভব করেন। তো যেই ভাবা সেই কাজ! তিনি ১৭ জুলাইকে ইমোজি দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন, আর ২০১৪ সাল থেকে এই দিবসটি পালন করা শুরু হয়।
বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং প্রতিষ্ঠান যেমন পেপসি, কোকাকোলা আবার অ্যাপেল, গুগোল, সনি, ডিজনি এমনকি অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও দিবসটিকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু করে থাকেন। যেমন ২০১৬ সালে গুগল ইমোজি দিবসে এক সেট নতুন ইমোজি প্রকাশ করে। আবার ২০১৬ সালেই ইমোজিপিডিয়া বিশ্বের প্রথম ইমোজি আওয়ার্ড দেয়ার প্রথা চালু করে। ২০১৭ তে লন্ডনের “রয়েল অপেরা হাউস” এই দিনে ২০টি অপেরা এবং ব্যালে নাচের শো করে ইমোজির থিম আর আদলে। আর অ্যাপলও ios-এ নতুন ইমোজিদের স্বাগত জানায় এই দিনে।
২০১৮ সালে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কিম কার্দাশিয়ান ইমোজি দিবস উপলক্ষে ‘kimoji fragnence’ নামের সুগন্ধি বাজারে ছাড়েন। আবার ২০১৭ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের উদ্দেশ্যে দুবাইতে “ Largest gathering of people dressed as emojis”-এর আয়োজন করা হয়। আরো কত ভাবে যে পালন করা হয় এই দিনটি!
ইমোজির কারণে আমাদের যোগাযোগের ব্যাপারটা কত সহজ হয়ে গিয়েছে, তাই না? মজার ব্যাপার হলো আমাদের মাঝে অনেকেই আবার একটু বেশি বেশি ইমোজি ব্যবহার করে থাকি, কেউ কেউ হয়তো কোন একটা নির্দিষ্ট ইমোজি একটু বেশি ব্যবহার করি। তোমারও কি আছে এমন কোন নির্দিষ্ট ইমোজি? এমন কোন ইমোজি আছে যেটার মানে এখনো জানো না বা নতুন করে জেনেছো? কমেন্ট করে কিন্তু চাইলে জানিয়ে দিতে পারো সবই!
ছবি: google.com
তথ্যসূত্র :
১.https://www.wired.com/story/guide-emoji/
২.https://www.thoughtco.com/emoticons-and-emoji-1991412
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন