বাইবেলে সুন্দর একটি কথা আছে যে, He who liveth, he who beliveth, shall never die. অর্থাৎ যে বিশ্বাস করে সে-ই বেঁচে থাকে। এই বিশ্বাস এবং কাজের মধ্যে যে ডুবে যেতে পেরেছে তাকে কোন দুঃখ, মালিন্য স্পর্শ করতে পারে না। কাজের নিজস্ব আনন্দ রয়েছে। কাজের মধ্যে ডুবে যেতে হলে স্বপ্নের প্রয়োজন।
আমরা অনেকেই মনে করি স্বপ্ন মানেই একটি নিছক কল্পনামাত্র। কিন্তু আসলে তা নয়; স্বপ্ন মানেই বাস্তব, স্বপ্ন মানেই গন্তব্য। আমি কোথায় যেতে চাই তার নাম স্বপ্ন। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হতে পারে।
বাস্তব স্বপ্ন ও চেষ্টা কখনোই ব্যর্থ হয় না। যদি স্বপ্নকে বিশ্বাসে রূপান্তরিত করতে পারা যায় তাহলে তা অর্জনও করা যায়। বিশাল এই পৃথিবীতে দূর মহাকাশের নক্ষত্র থেকে আলো এসে পড়ে। আমরা সবাই এই পৃথিবীর প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছি মাত্র কিছু সময়ের জন্য যে সময়টা খুব বেশীও নয় আবার খুব কমও নয়। এই সময়কে নিজের ইচ্ছে মতো সাজিয়ে নিতে দরকার সুপরিকল্পিত স্বপ্নের। আমরা সবাই সাফল্য চাই। সকলে জীবনে সেরা জিনিস চাই।
কেউই সাদামাটা জীবন চাই না, হামাগুড়ি দিয়ে চলতে চাই না।
কেউই দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হতে চায় না। ছোট ছোট ভাবনা, ছোট ছোট স্বপ্ন আর ছোট ছোট কাজের সমষ্টিই জীবন। প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি স্বপ্ন প্রভাবিত করে জীবনকে।
স্বপ্ন সাধারণত দুই রকমের হয়। যার একটি হলো স্বাভাবিক স্বপ্ন, যা আমরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি, এই স্বপ্নের কোন মানেই থাকে না।
আরেক ধরনের স্বপ্ন আছে, যা স্বপ্ন বা মনছবি অথবা আমরা বলতে পারি জীবন ছবি। আর এটা হলো বড় হওয়ার স্বপ্ন, জীবনে একটা কিছু করার স্বপ্ন। এই স্বপ্নই আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন:- লেখক, ব্যবসায়ী, গায়ক, নায়ক, শিক্ষক ইত্যাদি হওয়ার স্বপ্ন।
পক্ষান্তরে ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্ন অনেকে মনেও রাখেন না।
আত্মোপলব্ধি
মানুষ তার আশার সমান সুন্দর ও বিশ্বাসের সমান বড় হতে পারে। প্রত্যেকের হৃদয়ে একজন মানুষ বসবাস করে। সে কথা বলে, আত্মনিমগ্ন হয়ে কান পাতলে সে ভেতরের মানুষটির কথা শোনা যায়। সে যা বলে ঠিক সে অনুযায়ী কাজ করলেই জীবনে সফল হওয়া যায়, বড় কিছু করা যায়। কারণ সেখানে আমি বা আপনি সম্পূর্ণ একা। জীবনে আপনি কী করতে চান এটা আপনার পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র আপনাকে নির্ধারণ করে দিতে চাইবে। কিন্তু এসব কিছুর বাহিরে আপনার ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছা থাকতে পারে কিংবা আপনিও পারিপার্শ্বিকের নির্ধারণ করা লক্ষ্যের অনুসারী হতে পারেন। তবে তার আগে একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন; উপলব্ধি করুন। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে একটা উত্তর আসবেই। সেই পথটা অনুসরণ করুন। কখনো বিফল হবেন না।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
বিশ্বাস
বাইবেলে বলা হয়েছে, বিশ্বাস পাহাড়কেও টলাতে পারে। বিশ্বাস একটি অদ্ভূত শক্তি, এটা কোন ম্যাজিক বা অলৌকিক বিষয় নয়।
“আমি দৃঢ় নিশ্চিত-আমি পারবো। ”
এই একটি কথা খুব অদ্ভুতভাবে আপনার মনোবল বাড়াবে। বাস্তব স্বপ্ন ও চেষ্টা কখনোই ব্যর্থ হয় না। রাইট ভাতৃদ্বয় স্বপ্ন দেখতেন এমন এক যন্ত্র বানাবেন যাতে করে আকাশে ওড়া সম্ভব। তারা তৈরী করলেন প্লেন। সভ্যতার চেহারাই পরিবর্তন হয়ে গেল তাদের এই আবিষ্কারের ফলে। মার্কনি স্বপ্ন দেখতেন, স্রষ্টার শক্তিকে জয় করে কাজে লাগাবেন। তিনি যে ভুল স্বপ্ন দেখেননি তার প্রমাণ বেতার ও টেলিভিশন আবিস্কার। উল্লেখ্য যে, মার্কনি যখন দাবি করলেন, তিনি তারের সাহায্য ছাড়াই বাতাসের মধ্য দিয়ে সংবাদ প্রেরণের পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন, তখন তার বন্ধুরা তাকে মনস্তাত্ত্বিক হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন মাত্র তিন মাস স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। অতিমাত্রায় অপদার্থের অপবাদ নিয়ে স্কুল থেকে বহিস্কৃত হওয়া হেলেন কেলার মাত্র ১৯ মাস বয়সে শ্রবণশক্তি, বাকশক্তি আর দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন। বিশ্বাস আর স্বপ্নের সংমিশ্রণে হয়ে ওঠেন মহিয়সী এবং তার জীবন বিরাট এক সত্যের প্রমাণ- বাস্তবে পরাজয় স্বীকার না করলে কেউ পরাজিত হয় না। মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড় হতে পারে যদি সে যা আশা করে, তা বিশ্বাসে রূপান্তরিত করতে পারে।
ধৈর্য্য
বাস্তব কখনো কখ্নো কল্পনার চেয়েও অবিশ্বাস্য হয়। কেউ যদি বলে আমি পঁচিশ বছর বয়সে অর্ধ পৃথিবীর সম্রার্ট হবো- কথাটা গাঁজাখুরি বলে উরিয়ে দিবে অনেকে, কিন্তু আলেকজান্ডার তা হয়েছিলেন। সংবাদ পাঠক পদের জন্য এক আবেদন প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। কারণ তার কণ্ঠস্বর যর্থাথ ছিল না। তিনিই আজকের অমিতাভ বচ্চন! একজন স্কুল শিক্ষক, ছাত্র অংকে মনযোগী না হওয়ায় এবং ছোট্ট অংক করতে না পারায় তাকে শিক্ষক বলেছিলেন, “তুমি জীবনে কিছুই হতে পারবে না।” সেই বালক বড় হয়ে হয়েছিলেন মস্তবড় বিজ্ঞানী। তার নাম আলবার্ট আইনস্টান।
উপরের উদাহরণগুলোর সারমর্ম হচ্ছে: যিনি কখনো পরাজিত হলেও লক্ষ্যহীন হন না, তিনিই প্রকৃত বিজয়ী।
মানুষের মস্তিষ্ক এক অসাধারণ বায়ো-কম্পিউটার। এই কম্পিউটারে যে মানুষ যে রকম প্রোগ্রাম করবেন, তিনি সেরকম ফল পাবেন। যিনি হতাশ হয়ে নিজেকে বলবেন, তার দ্বারা কিছুই হবে না, তিনি জীবনে ব্যর্থ হবেন। আর যিনি হাজারো প্রতিকূলতার মাঝেও বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখবেন, তিনি ঠিকই তা করে ফেলবেন। বিশ্বাস বা প্রোগ্রামিং হয়ে গেলে বায়ো কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে বিজয়ের মালা পরিয়ে দিবে আপনাকে। সাফল্যের জন্য যা কিছু করতে হয়, মন শরীরকে দিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে করিয়ে নেবে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
ঘরে বসে Spoken English
স্বপ্ন
সৃষ্টিকর্তার কাছে সব মানুষ সমান। তাই তিনি সবাইকে বড় হওয়ার জন্য, জীবনে বড় কিছু অর্জন করার জন্য সামর্থ্য দেন। যারা তাঁর স্বপ্নটা দেখা মাত্র চিনতে পারেন এবং স্বপ্ন পূরণের জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তা করেন, তাদের জীবনেই স্বপ্ন পূরণ হয়।
জর্জ ফোরম্যান ১৯৯৪ সালে ২০ বছর পর মুষ্টিযুদ্ধের খেতাবী লড়াইয়ে জয়ী হয়ে প্রমাণ করেছিলেন স্বপ্নের নিকট আত্মসমর্পণের কোন বয়স সীমা নেই, যদি সমর্পণ করা যায় তা হলে জয় সুনিশ্চিত। ১৯৭৪ সালে মোহাম্মদ আলীর হাতে নক আউট হওয়ার ২০ বছর পর ১৯৯৪ সালে ৪৫ বছর বয়সে ২৬ বছরের মাইকেল মুরারকে পরাজিত করে বক্সিং এর খেতাবী লড়াই জেতার মত অসম্ভবকে তিনি সম্ভব করেছিলেন, তার স্বপ্নের জোড়েই। জেতার পর সংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন কিভাবে সম্ভব করলেন এই অসম্ভব কাজটি? তিনি বলেছিনে “স্বপ্ন দেখে। ২০ বছর ধরে বিজয়ের এই স্বপ্ন- ই তো আমি সব সময় দেখেছি। বয়স বাড়লেই মানুষ তার স্বপ্ন বিসর্জন দেয় না। আপনি মনে প্রাণে যা চান তা পাবেনই।”
আরো পড়ুন: জীবনের লক্ষ্য ঠিক রাখার দুই হাতিয়ার: Monitoring & Controlling
লক্ষ্য নির্ধারণ
লক্ষ্য অর্থ অভীষ্ট বা উদ্দেশ্য। লক্ষ্য শুধুই অলীক স্বপ্ন নয়- এটা এমন স্বপ্ন যা বাস্তবায়িত করা হয়। লক্ষ্য ‘যদি আমি পারতাম’ এর আবছা অস্পষ্ট ধারণার চেয়ে অনেক বড়। লক্ষ্য অর্থ ‘যার জন্য আমি তৎপর হয়ে কাজ করি’। লক্ষ্য স্থির না হলে কিছুই করা সম্ভব নয়। প্রথম পদক্ষেপটি পর্যন্ত নেয়া অসম্ভব!
মানুষও হোঁচট খেতে খেতে এগোয় বটে তবে যদি তার কোন গন্তব্য জানা না থাকে তাহলে সে কোথাও পৌঁছাতে পারে না। জীবনের জন্য যেমন অক্সিজেন প্রয়োজন, তেমনি জীবনে বড় হওয়ার জন্য প্রয়োজন স্বপ্নের। স্বপ্ন ছাড়া কেউই হঠাৎ সফল হয় না। অক্সিজেন যেমন বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন তেমনি আপনি কোথায় পৌঁছতে চান সে সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। শুরু করার আগে কোথায় যাবেন তা স্থির থাকা দরকার।
পারিপার্শ্বিকতা
ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে আপনাকে এই ধারণাটি সহায়তা দিতে পারে। তা হলো- নিজের ভবিষ্যতকে ৩টি ভাগে ভাগ করা। যেমন:- (১) কর্মক্ষেত্র (২) পারিবারিক (৩) সামাজিক।
এভাবে জীবনটাকে ভাগ করতে পারেন। আবার চাইলে আরো বেশি ভাগে ভাগ করতে পারেন। জীবনের কাছ থেকে কি পেতে চান? কিভাবে নিজেকে সন্তুষ্ট করা যায় তা জানতে পারবেন এবং আপনার স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় হবে। জীবনের ৩টি বিভাগই একে অপরের সাথে যুক্ত। প্রত্যেকটি বিভাগকে যে বিভাগটি সবচেয়ে বেশি প্রভাহিত করে তা-ই হলো আপনার কাজ।
শীর্ষস্থান শুধু্মাত্র একজনের জন্য
রাজার সিংহাসনে রাজা একাই বসেন। একই সিংহাসনে একসাথে দুইজন বসতে পারেন না। দুই হাজার মাইল হিমালয় পর্বতমালায় হয়তো কোটি কোটি লোকের জায়গা হতে পারে। কিন্তু শৃঙ্গের সর্বোচ্চ শিখরে দুইজন লোক এক সাথে আরোহণ করতে পারে না। একজনকে আগে উঠতে হয়। তারপর পরের জনকে। এজন্য তেনজিং এবং হিলারি এক সাথে শিখরে আরোহণ করতে পারেননি। তেনজিং আগে উঠার কারণে সর্বপ্রথম এভারেষ্ট শৃঙ্গ আরোহণকারী হিসেবে এক নম্বারে তেনজিং এর নাম চলে এসেছে।
বাইবেলে আছে, টপ অব দ্যা হিলে যেতে হয় একা। আসলেই তাই। যে মানুষ প্রতিকুলতা এড়িয়ে একাকী চলতে শুরু করে সে-ই পথ পেয়ে যায়, সে-ই এগিয়ে যায়। তার কথাই ইতিহাসে লেখা থাকে।
পরিশেষে বলতে চাই, যে স্বপ্নের জন্য আপনি মরতেও রাজি এমন স্বপ্ন দেখুন। স্বপ্ন না থাকলে আপনি কখনও উন্নতি করতে পারবেন না, কারণ স্বপ্নই জীবনের জ্বালানী। নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখুন এবং তা পূরণের প্রতিজ্ঞা করুন। সমস্ত ঝুঁকি গ্রহণ করুন সাহসের সাথে।
আপনি কোথায় আছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আসলে আপনি কোথায় যেতে চান সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
তাই বিজ্ঞানী আইনস্টান বলেছেন, “জ্ঞানের চেয়েও কল্পনা (স্বপ্ন) অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন