মাইক্রোসফট এক্সেলের নাম শোনেন নি এখনকার সময়ে এমন মানুষ পাওয়া বেশ দুষ্কর। সাধারণ হিসাব নিকাশের কাজ থেকে শুরু করে শিডিউল মেইনটেইন করা, কী করা যায় না এক্সেল দিয়ে! বেশিরভাগ মানুষ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য এক্সেলের খুব সাধারণ ফিচারগুলোর মাধ্যমে কাজ করে থাকে। কিন্তু এক্সেলে এমন অসাধারণ সব টুল ও ফিচার রয়েছে যা দিয়ে অনেক সহজে ডেটা এনালাইসিস থেকে শুরু করে অনেক জটিল জটিল কাজও করে ফেলা যায়। আর তাই একাডেমিক থেকে কর্মক্ষেত্র, সব জায়গাতেই এম এস এক্সেল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল হিসেবে বিবেচিত হয়।
ডেটা এনালাইসিসের জন্য তো বটেই অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কাজের জন্যও এখন এক্সেলের কাজ ও শেখার নিয়ম জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। একাডেমিক থেকে শুরু করে কর্পোরেট সেক্টর, সবক্ষেত্রেই এক্সেলের দক্ষতা আপনাকে এগিয়ে রাখবে। আপনি যদি এখনও মাইক্রোসফট এক্সেলের কাজ শিখে না থাকেন তবে ঘরে বসেই করে ফেলতে পারেন টেন মিনিট স্কুলের মাইক্রোসফট এক্সেলের বাংলা টিউটোরিয়াল কোর্সটি। এখানে মাইক্রোসফট এক্সেলের বেসিক থেকে এডভান্সড সবকিছু অনেক সহজ উপায়ে শেখানো হয়েছে।
মাইক্রোসফট এক্সেলের ব্যবহার
এক্সেলের দুনিয়ায় নতুন হলে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এক্সেল দিয়ে কী কী কাজ করা যায়? এক্সেল দিয়ে আসলে কী করা যায় না! এক্সেলের ব্যবহারগুলোর কয়েকটিতে একটু চোখ বুলিয়ে আসা যাক:
১। ডেটা এন্ট্রি
২। ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট
৩। একাউন্টিং
৪। অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ
৫। চার্ট ও গ্রাফ তৈরি
৬। প্রোগ্রামিং
৭। সময় ও টাস্ক ম্যানেজমেন্ট
৮। রিপোর্টিং
৯। ক্যালেন্ডার ও শিডিউল ম্যানেজমেন্ট
১০। ডেটা অর্গানাইজ করতে হয় এমন প্রায় সব কাজ!

ডেটা এনালাইসিস কী?
সহজ ভাষায় ডেটা এনালাইসিস হল ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়া। ডেটা এনালাইসিসের বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে ডেটার মান বা ভ্যালু বের করা হয়।
অন্যভাবে বলা যায়, ডেটা এনালাইসিস হল ‘র ডেটা (Raw Data)’ কে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহারযোগ্য ও অর্থপূর্ণ ডেটায় রূপান্তর করা। ডেটা এনালাইসিসের পর চার্ট, টেবিল, গ্রাফ প্রভৃতির মাধ্যমে ডেটাকে উপস্থাপন করা হয়। এতে ডেটা সংশ্লিষ্ট যে কোনো কাজে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়।
পারফর্ম্যান্স, গ্রাহকের আচরণ থেকে শুরু করে বাজারের অবস্থা বিশ্লেষণ; একটি সফল ব্যাবসার মূলে থাকে ডেটা এনালাইসিস।
ডেটা এনালাইসিসে এক্সেল
ডাটা অ্যানালাইসিসের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় মাইক্রোসফট এক্সেল। আর এক্সেলের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ হল ডেটা এনালাইসিস। ডেটা এনালাইসিসের জন্য এম এস এক্সেলের রয়েছে অসংখ্য অসাধারণ ও শক্তিশালী টুলস। ডেটা বিভিন্নভাবে সংগ্রহ (Collect) করে ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুসারে তা রূপান্তর করা যায়। এক্সেলের স্প্রেডশীটে ডেটা আপডেট করে এক্সেল কমান্ড, ফিচার ও টুল যেমন: সূত্র, ফাংশন, পিভট টেবিল, কন্ডিশনাল ফর্ম্যাটিং, চার্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে ডেটা এনালাইসিস করা যায়।
ফিচারগুলো ব্যবহার করে ডেটাকে একত্রিত করা বা বড় ধরনের ডেটাসেট থেকে প্রয়োজনীয় অংশটুকুতে ফোকাস করা সহজ হয়। তাছাড়া, সর্ট (Sort), ফিল্টার (Filter) এর মত ফিচারগুলো ব্যবহার করে সিস্টেমেটিকভাবে টেবিল তৈরি করা বা সাজানো যায়, যার মাধ্যমে সহজেই প্রয়োজনীয় ডেটা পাওয়া যায়।
ডেটা এনালাইসিসের পর্যায়
ডেটা এনালাইসিস কোনো একক প্রক্রিয়া নয়। নিচের পর্যায়ক্রমিক ধাপ অনুযায়ী ডেটা এনালিসিস করা হয়ে থাকে:
১। প্রয়োজনীয় ডেটা নির্দিষ্টকরণ
২। ডেটা সংগ্রহ
৩। ডেটা প্রসেসিং
৪। ডেটা ক্লিনিং
৫। ডেটা এনালাইসিস
৬। ডেটা কম্যুনিকেশন
ডেটা এনালাইসিসে প্রয়োজনীয় কিছু ফিচার ও ফাংশন
ডেটা এনালাইসিসের জন্য এক্সেলে প্রায় ৪০০+ ফাংশন রয়েছে। এর মধ্যে এক্সেলে বহুল ব্যবহৃত ও ডেটা এনালাইসিসের জন্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি টুল ও এক্সেলের সূত্র সমূহ নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল:
1. Pivot Table
ডেটা এনালাইসিসের জন্য এক্সেলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী টুলটি হল Pivot Table। এই টেবিলে ডেটা ইনপুট দিয়ে বিপুল পরিমাণ ডেটাকে সংক্ষিপ্ত করা যায়। পিভট টেবিল ব্যবহার করে সংখ্যাবাচক ডেটাকে গড়, যোগফল প্রভৃতি উপায়ে সংক্ষিপ্ত করে বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করা যায়।
এটি বড় বড় ডেটাসেটকে পর্যবেক্ষণ করে তা থেকে মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া ডেটাসেটের প্যাটার্ন বুঝতে ও নির্দিষ্ট কোনো তথ্য খুঁজে পেতেও পিভট টেবিল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও Pivot charts ও slicer ব্যবহার করে ড্যাশবোর্ড তৈরি করা এবং ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজ করা যায়।

2. Analysis Toolpak
এক্সেলের ডেটা এনালাইসিস টুলগুলোর মধ্যে আরেক গুরুত্বপূর্ণ টুল এটি। প্রকৌশল, পরিসংখ্যান বা অর্থনৈতিক বড় বড় জটিল হিসাব মুহুর্তেই করে দেয়ার মাধ্যমে আপনার শ্রম ও সময় দুটিই বাঁচিয়ে দিতে পারে এটি। মূলত ডেটা সরবরাহ করে, নির্দিষ্ট প্যারামিটার সেট করে দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গণনার কাজ করে দেয় এই টুল।
3. CONCATENATE
ডেটা এনালিসিসের সবচেয়ে সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনগুলোর একটি হল এই CONCATENATE। একাধিক সেলের টেক্সট, সংখ্যা, তারিখ ইত্যাদি ডেটা একত্রিত করে একটি সেলে রূপান্তর করে এই ফাংশনটি। API endpoints, জাভা কোয়েরি (Java queries) ইত্যাদি তৈরির জন্য ফাংশনটি চমৎকার!
সূত্র: =CONCATENATE(যে সেলগুলো একত্রিত করতে চান সেগুলো নির্বাচন করুন)

Image Source: Excel with Business
4. COUNTA
COUNTA এর মাধ্যমে কোনো সেল ফাঁকা আছে কিনা তা শনাক্ত করা যায়। একজন ডেটা বিশ্লেষককে, প্রতিদিন অসংখ্য অসম্পূর্ণ ডেটাসেট নিয়ে কাজ করতে হয়। COUNTA ডেটা পুনর্বিন্যাস না করেই ডেটাসেটের যে কোনো ফাঁকা সেল শনাক্ত করে দিতে পারে ।
সূত্র: = COUNTA (value1, [value2], …)

Image Source: Excel with Business
5. NETWORKDAYS
এক্সেলের ডেট/ টাইম ফাংশন হল NETWORKDAYS । প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী এই ফাংশনটি। কোনো প্রজেক্ট পরিচালনা বা প্রতিষ্ঠানে কর্মদিবসের হিসাব রাখা যায় এর মাধ্যমে।
সূত্র: = NETWORKDAYS (start_date, end_date, [holidays])

Image Source: Excel with Business
6. COUNTIFS
নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়ার ওপর ভিত্তি করে কোনো ডেটাসেটের সংখ্যা সবচেয়ে সহজে গণনা করা যায় COUNTIFS দিয়ে। COUNTIFS এর মজার ব্যাপারটি হল, আপনি আপনার ইচ্ছা মতো ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করে দিতে পারবেন, এক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।
সূত্র: =COUNTIFS(RANGE,CRITERIA)

Image Source: Excel with Business
7. VLOOKUP
VLOOKUP হল দুটি ডেটাসেটকে একত্রিত করার জন্য এক্সেলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফাংশন। মনে করুন, একটি টেবিলে কর্মচারীর নম্বর এবং আরেকটি টেবিলে কর্মচারীর নাম রয়েছে। আপনি যদি সেগুলোকে একত্রিত করতে চান, আপনাকে VLOOKUP ফাংশনটি ব্যবহার করতে হবে।
সূত্র: =VLOOKUP(LOOKUP_VALUE,TABLE_ARRAY,COL_INDEX_NUM, [RANGE_LOOKUP])

Image Source: Excel with Business
ডেটা এনালাইসিসের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কীবোর্ড শর্টকাট
১। ফিল্টার সংযুক্ত বা রিমুভ করতে: Alt + A + T or Alt + D+ F +F
২। শীট স্থানান্তরের জন্য: Ctrl + Pg Up/Pg Dn
৩। ডেটা বাছাই (সর্ট) করতে: Alt + A + S + S
৪। সম্পূর্ণ কলাম সিলেক্ট করতে: Ctrl + Spacebar
৫। সম্পূর্ণ রো সিলেক্ট করতে: Shift + Spacebar
৬। কলাম/রো এর পূর্ণ সেল (Non-empty Cell) পর্যন্ত সিলেক্ট করতে: Ctrl + Shift + Down/Right
৭। কলাম হাইড করতে: Ctrl + 0
৮। কলাম আনহাইড করতে: Ctrl + Shift + ) or Alt + O + C + U
৯। রো হাইড করতে: Ctrl + 9
১০। রো আনহাইড করতে: Ctrl + Shift + (
১১। ওপরের রো ফ্রিজ করতে: Alt + W + F + R
তবে আর দেরি কেন? এক্সেলের জগতে আপনাকে স্বাগতম!
রেফারেন্স:
A Comprehensive Guide on Microsoft Excel for Data Analysis । Analytics Vidhya
15 Excel Data Analysis Functions You Need to Know | ExcelwithBusiness
Excel Data Analysis & How to Gain Deeper Insights | MonkeyLearn
A Comprehensive Guide on Advanced Microsoft Excel for Data Analysis | Analytics Vidhya
আপনার কমেন্ট লিখুন