৯ জুন, ১৯৭১।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা।
তৎকালীন হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের সামনে পাকিস্তানী নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া পাহারা। হোটেলে আছেন দেশ বিদেশের সব নামী-দামী সাংবাদিক আর বিশ্বব্যাংকের প্রভাবশালী সব প্রতিনিধি।
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর একটাই লক্ষ্য- বাংলাদেশের বিশেষ করে ঢাকার যুদ্ধকবলিত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সম্পর্কে বাইরের বিশ্ব যাতে বেশি কিছু জানতে না পারে সেই ব্যাপারটি যেমন করেই হোক নিশ্চিত করা।
[tmsad_ad type=”video”]
ছবিঃ Prothom Alo ( হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ১৯৭১)
বিধিবামঃ
৯ জুন, ১৯৭১।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা।
এবার ১৭ জন তরুণের রোমহর্ষক কাহিনী।
পকেটে ১৬০ রুপি, ১২ টি গ্রেনেড আর বুকভরা অনবদ্য সাহস আর দেশপ্রেম নিয়ে একটা মাস্টারপ্ল্যান করে ফেললেন তাঁরা।
অপারেশন হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালঃ
অপারেশনের দলনেতা হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক।
এফডিসির ক্যামেরাম্যান বাদল ঈগলের মতো চারপাশের অবস্থা দেখছেন আর গাড়ি চালাচ্ছেন। কারণ গাড়িটা ধরা পড়লেই সব শেষ! তাঁর পাশের সীটে পিস্তল নিয়ে বসে আছেন কাম্রুল হক স্বপন (বীর বিক্রম)। দুজনে মিলে চারপাশের অবস্থার চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন।
আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন ( বীর প্রতীক) , মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ( বীর বিক্রম) এবং হাবিবুল আলম (বীর প্রতীক) পিছনের সীটে বসেছেন। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে আছে ৩ টি করে গ্রেনেড। পেছনের সীটে বসে তাঁরা গ্রেনেড ছোঁড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গাড়ি ইতোমধ্যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বাসভবন পেরিয়ে পাকিস্তানী হানাদারদের চোখ এড়িয়ে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের সামনে দিয়ে যাচ্ছে। কাম্রুল হক স্বপনের শার্টের নিচে পিস্তল, আর জিয়াউদ্দিন, মায়া এবং হাবিবুল আলম গ্রেনেড হাতে মাত্র তিন চার ফুট দূরে দাঁড়িয়ে!
আর এক মুহূর্ত দেরি করলেন না তাঁরা। জিয়াউদ্দিনের ছোঁড়া প্রথম গ্রেনেডের শব্দে কেঁপে উঠলো হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের চারপাশ। এরপরে এলোপাথাড়ি গ্রেনেড ছুঁড়লেন মায়া এবং হাবিবুল আলম। একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সুকৌশলে পালিয়ে গেলেন তাঁরা। পুরো ব্যাপারটি অনেকটা “এলাম, দেখলাম, জয় করলাম” এর মতো হয়ে গেলো।
অপারেশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল- ঢাকা এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি যে মোটেও স্বাভাবিক নয় সেটি বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া। সেই উদ্দেশ্য টা বেশ ভালোভাবেই সফল হোল।
ঘটনার আকস্মিকতায় স্বৈরাচারী পাকিস্তান আরও একবার প্রমাণ পেল, বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখা যাবে
না !
দিজ অল আর ক্র্যাক পিপল!
পুরো অপারেশনের প্ল্যানটি সাজিয়েছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের কমান্ডার খালেদ মোশাররফ। ঢাকার পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক নয় সেটি ইন্টার কন্টিনেন্টালে অবস্থানরত অতিথিদের বোঝাতে শহরের আশেপাশে গোলাগুলি এবং কিছু গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে- এই ছিল খালেদ মোশাররফের সাজানো মূল প্ল্যান।
কিন্তু সন্ধ্যায় বিবিসিতে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে গ্রেনেড হামলার খবর শুনে কমান্ডার খালেদ মোশাররফের কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন। বললেন,
“দিজ অল আর ক্র্যাক পিপল! বললাম ঢাকার বাইরে বিস্ফোরণ ঘটাতে আর ওরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এসেছে!”
ক্র্যাক পিপলরা এই অপারেশনে অনেকগুলো পাকিস্তানী হানাদারকে ধরাশয়ী করে। এতো কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতরে এই ব্যাপারটি অচিন্তনীয় ছিল।
খালেদ মোশাররফ এই রক্তগরম “হিটম্যানদের” নাম দিলেন “ক্র্যাক”।
আর এই দুর্ধর্ষ সব ক্র্যাক পিপলের এই দলটির নাম হয়ে গেলো “ক্র্যাক প্লাটুন” !
ক্র্যাক প্লাটুনঃ Hit and Run!
ক্র্যাক প্লাটুন ছিল একটি স্বতন্ত্র গেরিলা দল। ১৯৭১ সালে ১১ টি সেক্টরের মধ্যে ক্র্যাক প্লাটুন দুই নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল। পুরো দলটি গঠনে প্রধান দায়িত্ব পালন করেন ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) এবং এটিএম হায়দার (বীরউত্তম)।
ভারতের আসামে পুরো গেরিলা দলটির ট্রেনিং হয় এবং মেশিনগান , এসএমজি সহ মোটামুটি সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে তাঁরা পারদর্শী হয়ে উঠেন। তাঁদের নিখুঁতভাবে গ্রেনেড নিক্ষেপের দক্ষতা পাকিস্তানী বাহিনীর ত্রাসের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গ্রেনেড নিক্ষেপের পরে তাঁদের আত্মগোপনের কৌশল অসাধারণ পারদর্শিতার প্রমাণ দেয়। তাঁদের মূলমন্ত্র ছিল -“Hit and Run”
পুরো ট্রেনিংয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল দলটিকে আরবান গেরিলা ওয়ারফেয়ারের জন্য নিখুঁতভাবে গড়ে তোলা যার কাজ হবে পাঁচ ছয় জনের একটি গ্রুপ তৈরি করে হঠাৎ আক্রমণের মাধ্যমে শত্রুপক্ষকে কোণঠাসা করে দেয়া আর আক্রমণ শেষে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে আত্মগোপন করা।
ক্র্যাক পিপল!
ছবিঃ Amar Bangladesh
ক্র্যাক প্লাটুনের ক্র্যাক পিপলঃ
ক্র্যাক প্লাটুনে মোট কতজন সদস্য ছিলেন সেটি খুঁজে বের করা অনেক কঠিন কাজ। কেননা বিভিন্ন সময়ে ক্র্যাক প্লাটুনে অনেক যোদ্ধাই যোগ দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের জুন মাসে প্রশিক্ষণ শেষে যারা গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন-
- মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া
- জিয়াউদ্দিন আলী আহমেদ
- গাজী গোলাম দস্তগীর
- শ্যামল
- ফতেহ আলী চৌধুরী
- আবু সায়ীদ খান
- তারেক এম আর চৌধুরী
- শাহাদাৎ চৌধুরী
- আব্দুস সামাদ
- জব্বার
এছাড়াও পরবর্তী সময়ে ক্র্যাক প্লাটুন আরও বেশ কিছু ক্র্যাক পিপল খুঁজে পায় যাদের মধ্যে ছিলেন শফি ইমাম রুমি, সুরকার আলতাফ মাহমুদ, বেহালাবাদক হাফিজ, বদিউল আলম বদি, মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ, মোহাম্মদ আবু বকর, লিনু বিল্লাহ, আব্দুল্লাহ-হেল-বাকী, সেকান্দার হায়াৎ, কমলাপুরের কুলিদের সরদার কুলুরশিদ এবং পপ সম্রাট আজম খান, আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েল সহ আরও অনেকেই ।
ছবিঃ Newsinside24.com (রুমি)
ছবিঃ This Is Crack Platoon (বদি)
ছবিঃ swapno71.. (সবার ছোট বকর) ছবিঃbn.wikipedia.org (জুয়েল)
ছবিঃTheReport24.com(আলতাফ মাহমুদ)
ছবিঃ swapno71.. (আজাদ)
ছবিঃ prohori (ক্র্যাক প্লাটুন)
ছবিঃ জন্মযুদ্ধ ৭১ ( ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা)
১১ অগাস্ট ১৯৭১ঃ আবারো হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল !
৯ জুন হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে হামলার পর দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী। নিরাপত্তার চাদর আরও জোরদার করা হয়।
ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম টার্গেট হোল এই হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল কেননা এখানে বিশ্বের বড় বড় সব আমলাদের আসা যাওয়া হয়। তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই ছিল ক্র্যাক প্লাটুনের মূল কাজ।
এতো কড়া নিরাপত্তা ভেদ করে কিভাবে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে প্রবেশ করা যায় সেটির প্ল্যান করতে থাকে ক্র্যাক প্লাটুন। গেরিলা যোদ্ধা আব্দুস সামাদের সাইনবোর্ডের ব্যবসা ছিল। তিনি খবর পান যে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের ভিতরে অফিস স্থানান্তরের জন্য কাজ হবে।
পেয়ে গেলেন সুযোগ! অন্য কেউই যাতে কাজটি নিতে না পারে সেজন্য তিনি সবচেয়ে কম পারিশ্রমিক চেয়ে বসলেন! আর কাজটি পাওয়ার পরে কাজের অজুহাতে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের অনেকটা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ফেললেন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই- অতর্কিত আক্রমন সফল হতেই হবে।
আব্দুস সামাদের কাজ শেষ হওয়ার কথা ১১ই অগাস্ট। আর এই ১১ই অগাস্টই পাক বাহিনী আরেকবার কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়।
গোলাম দস্তগীর গাজী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আব্দুস সামাদ আর আবু বকর- এই চারজন গাড়ি পার্কিং স্পটে রাখলেন। হোটেলে কাজ করার সুবাদে তাঁদের কেউ সন্দেহই করেনি! আব্দুস সামাদ আর আবু বকর ব্রিফকেসে করে টাইম বোমা নিয়ে রওনা দিলেন পুরুষদের টয়লেটে আর মায়া এবং দস্তগীর গাজী স্টেনগান হাতে গাড়িতে রেডি থাকলেন।
আব্দুস সামাদ আর আবু বকর দুজনে মিলে কমোডের পেছনে সেট করলেন টাইম বোমা। ভিতর দিক থেকে দরজা বন্ধ করে তাঁরা টয়লেটে উপরের ফাঁকা জায়গা দিয়ে বেরিয়ে এলেন। উদ্দেশ্য একটাই- ৩০ মিনিটের মধ্যে এই ব্যাপারটা কেউই যাতে না জানতে পারে! এরপরে যথারীতি গাড়িতে করে নিখুঁত ভাবে “গায়েব” হয়ে গেলেন তাঁরা।
৩০ মিনিট পরে সেদিন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের হোটেল লাউঞ্জ সহ গোটা বিশ্বের নিউজ মিডিয়া কেঁপে উঠলো। এমন অতর্কিত অচিন্তনীয় গেরিলা অ্যাটাক ভিত নড়িয়ে দিলো পাক হানাদার বাহিনীর।
ব্যাপারটি হলিউডের অ্যাকশন ফিল্মগুলোর চেয়ে কোন অংশে কি কম মনে হোল?
এমন অন্তত ৮২ টি রিয়েল লাইফ অ্যাকশন মুভির জন্ম দিয়েছে এই বিচ্ছুবাহিনী খ্যাত “ক্র্যাক প্লাটুন”।
অপারেশন ফার্মগেট চেকপয়েন্টঃ
৭ই অগাস্ট , ১৯৭১।
রাত তখন আটটা।
জুয়েল, আলম, পুলু স্বপন, আব্দুস সামাদ, বদি আর অপারেশনের দলনেতা বদিউজ্জামান।
তাঁরা ঠিক করলেন- আব্দুস সামাদ গাড়ি চালাবেন, সবার হাতে থাকবে স্টেনগান আর কেবলমাত্র আলমের হাতে থাকবে একটা চায়নিজ এলএমজি। জুয়েল আর পুলুর কাছে থাকবে ফসফরাস গ্রেনেড আর হ্যান্ডগ্রেনেড ৩৬। আব্দুস সামাদের নিরাপত্তার জন্য হাতে নিবেন একটি রিভলবার।
পরিকল্পনা মোতাবেক অপারেশনের জন্য নির্ধারিত এক মিনিট পেরিয়ে গেলো।
এমন দুর্ধর্ষ আক্রমণে নিহত হয় পাঁচজন পাকিস্তানী মিলিটারি আর আহত হয় ছয়জন রাজাকার।
পুরো ঢাকার বাতাসে এই খবর মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে যায়!
ছবিঃ Prohori.com
আরও কিছু অপারেশনের নামঃ
অধিকাংশ ঝটিকা আক্রমণে ক্র্যাক প্লাটুনের কোনো পূর্ব পরিকল্পনা থাকতো না। বড় অপারেশনগুলোর আগে প্ল্যান করে নিতো ক্র্যাক প্লাটুন। ক্র্যাক প্লাটুনের মোট ৮২ টি অপারেশনের মধ্যে যেগুলো অন্যতম ছিল সেগুলো হচ্ছেঃ
- অপারেশন যাত্রাবাড়ী পাওয়ার স্টেশন ।
- অপারেশন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন ।
- অপারেশন সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন।
- অপারেশন উলন পাওয়ার স্টেশন।
- অপারেশন ফ্লায়িং ফ্ল্যাগস।
- অ্যাটাক অন দ্যা মুভ ।
- অপারেশন দাউদ পেট্রোল পাম্প।
- অপারেশন গ্যানিজ পেট্রোল পাম্প ।
- অপারেশন এলিফ্যান্ট রোড পাওয়ার স্টেশন।
- ডেসটিনেশন আননোন।
পাকিস্তানের জন্ম ১৪ অগাস্ট। আর এই ১৪ অগাস্ট সারা ঢাকার আকাশে গ্যাস বেলুনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্ষিপ্ত পাক হানাদার বাহিনী জ্ঞান বুদ্ধি হারিয়ে পতাকা লক্ষ করে গুলি ছোঁড়া শুরু করে।এই অসাধারণ আইডিয়াটি কিন্তু এই ক্র্যাক পিপলের!
ক্র্যাক প্লাটুনঃ শেষের শুরু
১১ই অগাস্ট হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দ্বিতীয়বার হামলার পরে দিশেহারা পাকবাহিনী হামলাকারীদেরকে খুঁজে বের করতে চিরুনি অভিযান চালাতে লাগলো। অগাস্টের শেষ সপ্তাহে একের পর এক গেরিলা যোদ্ধা ধরা পড়তে থাকেন। ২৯শে অগাস্ট ধরা পড়েন আব্দুস সামাদ, তাঁর পরপরই ধরা ধরা পড়েন জুয়েল এবং বদি । পরের দিন ভোরবেলায় ধরা পড়েন সুরকার আলতাফ মাহমুদ, কনিষ্ঠ আবু বকর, আজাদ, রুমি এবং বেহালাবাদক হাফিজ। নাখাল পাড়া ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এমপি হোস্টেলের একটি কামরায় তাঁদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। অত্যাচারের মাত্রা সইতে না পেরে ৩১ অগাস্ট মারা যান হাফিজ। কেবলমাত্র মনু নামের একজন গেরিলাযোদ্ধা পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হন।
বদিউল আলমকে তিনি মৃত্যুর আগে অকুতোভয়ী কণ্ঠে বলতে শুনেছেন-
“আমি কিছুই বলব না, যা ইচ্ছা করতে পারো। You can go to hell.”
৩১ শে অগাস্টের পরে তাঁদের কাউকে আর দেখা যায় নি। হয়তোবা চিরকালের জন্য আত্মগোপন করে আছেন বাংলার এই বিচ্ছুর দল।
অগাস্টের শেষের দিকে ক্র্যাক প্লাটুন অভিজ্ঞ সদস্যদের হারিয়ে দুর্বল হয়ে পরলেও সেপ্টেম্বর মাসেই ফিরে আসে ক্র্যাক প্লাটুন। ক্র্যাক প্লাটুনের অকস্মাৎ আক্রমণে পাক হানাদার বারবার ধরাশয়ী হয় এবং এর ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে পাকিস্তানীরা তাঁদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে। যার ফলে আমাদের বিজয় আরও তরান্বিত হয়।
ক্র্যাক প্লাটুনের দুঃসাহসিক সব অভিযানের গল্প জানতে হলে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের “একাত্তরের দিনগুলি” বইটি পড়তে পারেন। ছেলে শাফী ইমাম রুমী আর তাঁর গেরিলা সহযোদ্ধাদের গল্পগুলো জাহানারা ইমামের লেখায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
আরও আছে এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত “ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধ ১৯৭১” , আজাদ এবং তাঁর মাকে কেন্দ্র করে লেখা আনিসুল হকের “মা”, কিংবা মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল আলম বীর প্রতীকের লেখা “ব্রেভ অব হার্ট” বইটি। বইগুলোতে একাত্তরের গেরিলা বাহিনীর গুরুত্ব অবং বীরত্বগাঁথা আত্মত্যাগ সাবলীল ভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
অন্যতম গেরিলাযোদ্ধা বদিউল আলম বদিকে কেন্দ্র করে কথা সাহিত্যিক হুমায়ন আহমেদের “ আগুনের পরশমণি” ছায়াছবিটি ১৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করে। আরও আছে গেরিলা যুদ্ধের সত্যি কাহিনী অবলম্বনে ছায়াছবি “ দীপ নেভার আগে”।
ছবিঃ বাংলা মুভি ডেটাবেজ (আগুনের পরশমণি)
ছবিঃ Youtube ( দীপ নেভার আগে)
ছবিঃ prohori.com ( একাত্তরের দিনগুলি)
ক্র্যাক প্লাটুন বাংলাদেশের উত্থানের টাইমলাইনে ক্ষণজন্মা একটি অধ্যায়। এই অধ্যায়ে আছে পাক-হানাদারদের বার বার হেরে যাওয়া আর বাংলাদেশের বার বার জিতে যাওয়ার গল্প।
অবস্কিউর ব্যান্ডের ক্র্যাক প্লাটুন গানটির কয়েকটা লাইন দিয়েই শেষ করি-
জুয়েল হাফিজ আজাদ বকর বদী
কোন একদিন আসতো ফিরে যদি
আরও কেউ কেউ শফী ইমাম রুমি
ওষ্ঠে আজান স্বাধীন জন্মভূমি
মনের গভীরে স্বাধীন মাতৃভুমি
স্বপ্ন ছুঁয়ে আলতাফ আছো তুমি
স্বার্থের নয় সাজানোর আজ পালা
হাতে তুলে নাও শহীদের কথামালা
এমন ক্রেজি “ক্র্যাক পিপল” যদি প্রত্যেকটি প্রজন্মে জন্ম নেয়, তবে বাংলা মায়ের আর কোনো ভয় নেই!
ছবিঃ flickr
সূত্রঃ
আপনার কমেন্ট লিখুন