নীল আর্মস্ট্রং নাকি এডউইন অলড্রিন? কে পা রাখবেন চাঁদের পৃষ্ঠে? তা আগে থেকে ঠিক করা না থাকলেও যেহেতু স্পেসক্রাফটির দরজার সাথেই নীল বসেছিলেন এবং ১৭ টনের (চাঁদে তা ৩ টনে নেমে যায়) ছোট এই নভোযানে নীলকে ডিঙিয়ে অলড্রিনের পক্ষে নামা সম্ভব ছিল না, সুতরাং নীল আর্মস্ট্রংই সর্বপ্রথম
চাঁদের মাটিতে পা রাখার গৌরব অর্জন করলেন। কিন্তু কন্সপিরেসী থিওরীস্টরা সেখানেও আরেক বিপত্তি বাঁধিয়ে বসেন। প্রশ্ন তোলেন কিছু উদ্ভট বিষয় নিয়ে। আজকের পর্বে এমন কিছুরই সমাধান এবং যুক্তিখন্ডন করে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি।
প্রথম পর্বে আপনারা জেনেছেন ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট পার করে কীভাবে চাঁদের মাটিতে গর্ত সৃষ্টি ছাড়াই অ্যাপোলো
ঈগলটি অবতরণ করলো। প্রথম দুটি কন্সপিরেসী থিওরীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী স্থাপনের পর এখন বেশ কিছু অভিযোগের সমাধান করতে হবে। তাহলে শুরু করা যাক!
জাদুঘরে রাখা স্পেসস্যুটের জুতার সাথে পায়ের ছাপের কোনো মিল নেই।
নীল বেচারা বেঁচে থাকলে এখনই মরে যেতেন। যাই হোক অভিযোগটির ভিত্তিতে আমরা প্রথমে ছবিটি দেখে নিই:
অবাক তো! এখন কী হবে?
কিছুই হবে না, চলুন এখন আরেকটি ছবি দেখে নিই:
সমাধান হয়ে গেলো? এটিই নভোচারীদের বাইরের বুট যা মুনওয়াকের সময় ব্যবহৃত হয়েছিল। আর প্রথম ছবিটি ছিল ভেতরের বুট যা স্পেসস্যুটেরই অংশ। সুতরাং এটি নিয়ে আমরা কথা না বাড়িয়ে আসল কন্সপিরেসী থিওরীর দিকে এগোতে থাকি।
নভোচারীদের পায়ের ছাপ থেকে গেলো কিন্তু লুনার মডিউলের কোনো ছাপ নেই কেন?
কন্সপিরেসী থিওরী সমর্থকরা প্রায়ই লুনার মডিউল কিংবা অ্যাপোলো নভোযানের ওজনকে 16/17/18 টন (নভোযানগুলোর ওজন বিভিন্ন মিশনে বিভিন্নরকম) হিসেবে উদ্ধৃত করে। আসলে এই নভোযানটির পৃথিবীতে ওজন ছিল 17 টন যা সম্পূর্ণভাবে জ্বালানীসহ অবস্থায় পরিমাপ করা হয় এবং 9 টন ওজনের ডিসেন্ট রকেট ইঞ্জিনসহ হিসেব করা হয়েছে। কিন্তু যখন চাঁদের পৃষ্ঠে নামার সময় হলো, তখন মাধ্যাকর্ষণজনিত কারণে ওজন মাত্র প্রায় 2700 পাউন্ডে নেমে গিয়েছিল। চারটি 37 ইঞ্চি ব্যাসের ফুটপ্যাডস, চন্দ্রপৃষ্ঠে ওজন প্রয়োগ করেছিল প্রতি বর্গ ফুটে প্রায় 90 পাউন্ড।
আবার চাঁদে নীল আর্মস্ট্রংয়ের সম্পূর্ণ ওজন ছিল প্রায় 58 পাউন্ড এবং তার বুট প্রায় এক বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে আচ্ছাদিত ছিল, যা প্রতি বর্গফুটে লোড প্রদান করে 58 পাউন্ড, তাই না? আর্মস্ট্রং তাঁর নিজের ভাষায় বলেছিলেন “লুনার মডিউলটির ফুটপ্যাডগুলো কেবল প্রায় 1 বা 2 ইঞ্চি পর্যন্ত অবনমিত ছিল”। অন্যদিকে, মহাকাশচারীদের পদচিহ্নগুলি কেবল এক ইঞ্চিরও একটি ভগ্নাংশ পর্যন্ত অবনমিত ছিল বা গভীর ছিল।
এখন কথা হচ্ছে আপনাকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি। আপনি ধরুন চাঁদে পা রাখলেন, তার মানে আপনার পদচিহ্ন অবশ্যই থাকবে মাটিতে, তাই না? কিন্তু যেখানে পা রাখলেন সেখান থেকে যদি পা-ই না সরিয়ে নিন তবে কি করে নিজের পদচিহ্ন দেখবেন?
নভোযানটি যখন চাঁদ ছেড়ে গিয়েছিল, তখন তার ফুটপ্যাড সম্বলিত নিচের অংশটি চাঁদেই রয়ে যায়। তাহলে কীভাবে আপনি ফুটপ্যাডের ফুটপ্রিন্ট দেখতে পারবেন? নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন:
ছবিটি চাঁদ ছেড়ে যাবার সময় দূরে রাখা ক্যামেরার মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়। অ্যাপোলো-১১ সহ সব অ্যাপোলো নভোযানকেই দুটি প্রধান অংশে ভাগ করা হয়, অ্যাসেন্ট স্টেজ বা উড্ডয়ন স্টেজ এবং ডিসেন্ট স্টেজ বা অবতরণ স্টেজ। নভোচারীরা থাকে অ্যাসেন্ট স্টেজে। চাঁদ ছেড়ে যাবার সময় ডিসেন্ট স্টেজকে রেখেই চলে যায় এবং ফুটপ্যাডস তো ডিসেন্ট স্টেজেরই অংশ, তাই না? তাহলে ঐ অংশটি না সরলে তার ফুটপ্রিন্ট নিয়ে মানুষের ফুটপ্রিন্টের সাথে তুলনা বড়ই বোকামি!
সুতরাং ডিসেন্ট স্টেজের ফুটপ্রিন্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলারই কোনো অবকাশ নেই, আর যদি থাকেও তবে মাটিতে আপনার পায়ের অসংখ্য খাঁজকাটাযুক্ত বুট যতটুকু স্পষ্টভাবে ছাপকে ফুটিয়ে তুলবে, একটি সমতল গোল ফুটপ্যাডের ক্ষেত্রে তা কি সম্ভব?
যাই হোক চলে যাই পরের অভিযোগে। তবে এই অভিযোগটি বেশ মজার এবং কন্সপিরেসী থিওরীস্টদের প্রথম পছন্দের অভিযোগ ছিল এটা। চলুন শুরু করি:
চাঁদে বাতাস নেই তাহলে পতাকা উড়ছে কিভাবে?
চাঁদে পতাকা ‘উড়ছে’ কিনা সেটা আগে দেখতে হবে। যদি প্রমাণ হয় ‘উড়ছে না’ তবে আমি এই কন্সপিরেসী থিওরীরও সমাধান ঘোষণা করে দ্রুত পরের অভিযোগে চলে যাবো। ছবিটি লক্ষ্য করি:
পতাকার স্ট্যান্ডটি লক্ষ্য করুন। এটি একটি উল্টা ‘L’ আকৃতির স্ট্যান্ড যা পতাকাটিকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে, যদি ‘I’ আকৃতির স্ট্যান্ডে পতাকা ঝুলানো হতে তবে তা বাতাসের অনুপস্থিতির কারণে তা নুইয়ে পড়তো। তাই উপরে একটি অতিরিক্ত স্ট্যান্ড সেট করা হয়। এখন আমরা নিচের ভিডিওটি লক্ষ্য করি: https://youtu.be/ymwE1sNm82Y
এখানে নীল এবং অলড্রিন ব্যাগ থেকে পতাকা বের করে তা মাটিতে গেঁথে দিচ্ছেন, হাতের নড়চড়ার ফলে কি পতাকাটি একটুও কাঁপবে না? লক্ষ্য করে দেখুন ভাঁজ কিন্তু একটু বদলায়নি। অলড্রিনের স্যালুটের আগে এবং পরে পতাকার ভাঁজ একই আছে। এই ভিডিওটিতে পরিপূর্ণ উত্তর না পেলে অ্যাপোলো ১৫ মিশনের এই ভিডিও দেখে একদম নিশ্চিত হতে পারেন: https://youtu.be/ymwE1sNm82Y
পতাকা উড়ছে? যতটুকু মুভমেন্ট দেখতে পাচ্ছেন তা সম্পূর্ণই হাতের নড়াচড়ায় সৃষ্ট কাঁপুনি। আর এটা যদি হয় পতাকা উড়ছে তাহলে আমারও এখন উড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।
তাহলে পতাকা ‘উড়ছে’ তা আপনার বিচারবুদ্ধি দ্বারাই মিথ্যা প্রমাণে যথেষ্ট এখন। তাহলে এই কন্সপিরেসী থিওরীরও সমাপ্তি ঘটলো। চলুন যাই পরের অভিযোগে।
চাঁদের আকাশে কোনো তারা দেখা যাচ্ছে না কেন? চাঁদের বায়ুমণ্ডলহীন রাতের আকাশ তো পরিষ্কার তারায় পূর্ণ থাকার কথা।
প্রথমেই বলে নিই যে নভোচারীরা চাঁদে গিয়েছিল কখন? ‘দিনের বেলায়’। সুতরাং তারা কীভাবে দেখা যাবে? যাই হোক, আমি এই অভিযোগের উত্তর মাত্র দুই লাইনে শেষ করছি না। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাচ্ছি। তবে চাঁদের আকাশ কেমন তা একটু লক্ষ্য করি।
আমরা জানি, চাঁদে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। যেহেতু বায়ুমণ্ডল নেই সেহেতু আকাশে কোনো দিগন্তরেখা দেখা অসম্ভব। আবার বায়ুমণ্ডল নেই বিধায় পৃথিবীর আকাশের মতো নীল আলোও প্রতিফলিত হয়ে ‘নীল আকাশ’ হওয়ার সুযোগ নেই। অর্থাৎ চাঁদের আকাশ সর্বদাই কালো। হোক সেটি দিনের বেলা কিংবা রাতের বেলা। তবুও যেহেতু আকাশ অন্ধকার সেহেতু তারা দেখতে পাওয়াও সম্ভব কিন্তু তবুও কেন কোনো তারা দেখা যাচ্ছে না?
একটি বিষয় জানতে ভুল করবেন না, চন্দ্রপৃষ্ঠে দিনের বেলায় যতটুকু সূর্যালোক পতিত হয়, ঠিক ততটুকুই আমাদের বাসভূমি তথা পৃথিবীর পৃষ্ঠে পতিত হয়। তবে চন্দ্রপৃষ্ঠ, পৃথিবীপৃষ্ঠের চেয়ে আরও বেশি উজ্জ্বলরূপে আমাদের চোখকে মুগ্ধ করে তার কারণ আমি আগেই বলেছি যে চাঁদে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই তাই সরাসরি সূর্যের আলো চন্দ্রপৃষ্ঠকে আলোকিত করে। চাঁদের এবং চাঁদের পাথরগুলোর ছবি সঠিক ফোকাসে তোলা ছিল নভোচারীদের প্রথম কাজ। অর্থাৎ তাদের ক্যামেরা সেটিংস এমনভাবেই সেট করা ছিল যেন চন্দ্রপৃষ্ঠের সর্বাধিক পরিষ্কার ত্রুটিমুক্ত ছবি পাওয়া যায়। ফলস্বরূপ, পেছনের আকাশের মিটমিট করা তারাগুলো ক্যামেরাতে ধরা পড়েনি। আপনি পৃথিবীতে বসেই নিজের ক্যামেরা দিয়ে তার প্রমাণ করতে পারবেন।
আপনি সরাসরি সূর্যালোকে আপনার বন্ধুর একটি ছবি তুলুন, সেক্ষেত্রে দু’টি উপায়ে আপনার ক্যামেরা সেটিংস-এ সামঞ্জস্য আনতে হবে।
১. আপনি অ্যাপারচার সংকুচিত করবেন, যা লেন্সের ‘আলো সংগ্রহাক অঞ্চলকে ছোট করে ফেলবে বা কমিয়ে ফেলবে যাতে করে খুব বেশি আলো সহজেই এড়াতে পারে এবং ভালো ছবি তুলতে পারে। আমাদের চোখের কথাই ভাবুন, অধিক আলো আমাদের চোখে পড়লে চোখের পিউপিল ছোট হয়ে যায়, তাই না? ঠিক ক্যামেরার ক্ষেত্রেও একইরকম।
২. আপনি শাটার স্পীড বাড়িয়ে ছবি তুলবেন। এটি ক্যামেরা সেন্সরে কেবল সংক্ষিপ্ত মুহূর্তের জন্য হালকা আলো প্রবেশ করাবে। যদি আপনি রাতের বেলায় ঐ বন্ধুর ছবি তুলতে চান, তাহলে আপনাকে শাটার স্পীড কমিয়ে তুলতে হবে এবং অ্যাপারচারকে প্রশস্ত করতে হবে যাতে আপনি একটি ভাল শট পাবার জন্য লেন্সে পর্যাপ্ত আলোর প্রবেশ নিশ্চিত করতে পারেন।
এখন আসা যাক রাতের বেলায় আপনার বন্ধুর উজ্জ্বল ছবি তুলতে গেলে কী হবে? সেক্ষেত্রে আপনি কোন বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে ছবি তুলবেন তার উপর নির্ভর করতে হবে।
যদি আপনি আকাশের তারাকে আপনার তোলা ছবিতে অন্তর্ভুক্ত করতে চান, তবে আপনার বন্ধুকে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষন না পর্যন্ত আকাশের দিকের Blur এড়ানো যায়। সেক্ষেত্রে শাটার স্পীড হবে ধীরগতির এবং অ্যাপারচার হবে প্রশস্ত যেন যথেষ্ট পরিমাণ আলো লেন্সে প্রবেশ করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার বন্ধুর ছবিটি হবে অস্পষ্ট কিন্তু আকাশের তারার উপস্থিতি টের পাওয়া যেত সহজেই।
আবার যদি আপনি অ্যাপারচার ছোট এবং শাটার দ্রুত গতিতে রেখে ছবি তুলেন তবে আপনার বন্ধুর একটি তীক্ষ্ম, সুশৃঙ্খল উজ্জ্বল ছবি আসবে, তবে আকাশ অন্ধকার বা একদম কালো দেখাবে কারণ এটি থেকে লেন্সের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ আলো সরবরাহ করবে না। যার ফলে মিটমিট করা তারার উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যাবে না।
আর ঠিক এইভাবেই নভোচারীদের ক্যামেরা সেট করা ছিল। আকাশের তারা তোলার মাধ্যমে চন্দ্রাভিযানের সত্যতা প্রমাণের কোনো দরকার ছিল না নভোচারীদের। তাদের প্রয়োজন ছিল স্পষ্ট চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি। আর এটার মানেই কি আকাশে তারা নেই? সব পৃথিবীতে শ্যুটিং করা হয়েছে?
উত্তর হয়তো পেয়ে গিয়েছেন।
তবুও এই ভিডিওটি দেখার মাধ্যমে আরো নিশ্চিত হতে পারবেন: https://youtu.be/3ksUQfEzMoM
ওহ আচ্ছা অ্যাপোলো ১৬ থেকে আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি ছবি তোলা হয়েছিল যেখানে তারার উজ্জ্বল উপস্থিতি দৃষ্টি গোচর হয়। দেখে নিন ছবিটি:

ছবিটিতে আমাদের পৃথিবীর চেহারা কেমন হয়েছে দেখেছেন? তারার উপস্থিতি ক্যামেরাতে আনতে গিয়ে দূরের পৃথিবীর এই অবস্থা। তবে চাঁদ থেকে আকাশের তারার উপস্থিতি ছবিতে আনতে গেলে চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি কেমন হতো?
আরও একটি ছবি লক্ষ্য করুন:

এক্সপোজার বাড়নোর ফলে পরিষ্কার ছায়াপথসহ তারার উপস্থিতি দেখতে পাচ্ছেন এখানে। যা সম্পূর্ণই ক্যামেরার খেলা। আবার আরেকটি ছবি দেখুন যা ISS থেকেই ধারণ করা কিন্তু এক্সপোজার ম্যানেজম্যান্টের কারণে কোনো তারা দেখা যাচ্ছে না।

এখানে এক্সপোজার কমিয়ে স্ট্যাশনের সামনের ও পৃথিবীর স্পষ্ট ছবি তোলার জন্য আকাশের তারা কালো হয়ে মিশে গিয়েছে।
কিন্তু জ্যাক ফিশ্চারের টুইটের মাধ্যমে ক্যামেরাবন্দি করা একটি অসাধারণ মুহূর্ত শেয়ার করেছিলেন পৃথিবীবাসীর সাথে। দেখে নিন:
কী? এখন তো একদম পরিষ্কার বিষয়টি?
তাহলে হয়ে গেলো আকাশের তারার অনুপস্থিতি নিয়ে কন্সপিরেসী থিওরীর সমাধান?
পরের অভিযোগটি ছিল:
ক্যামেরা ছাড়াই অ্যালান বীনের ছবি কে তুললো?
ঘটনাটি অ্যাপোলো ১২ মিশনের সময়। দুই নভোচারী Alan Bean এবং Pete Conrad ছবি তুলছিলেন একটু ভিন্ন উপায়ে। সেখানেই কন্সপিরেসী থিওরীস্টরা ‘মানুষ চাঁদে গেলে এটা হতো না’ সম্বলিত প্রশ্ন ছুঁড়তে থাকে। ছবিটি লক্ষ্য করি:

ছবিটিতে দেখা যায় যে অ্যালানের বুকে একটি ক্যামেরা সেট করা এবং হেলমেটের মধ্যে কনরাডের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে যেখানে কনরাডের হাতে কোনো ক্যামেরা নেই।
তাহলে ছবি কে তুললো? আসলে প্রতিটি নভোচারীর স্পেসস্যুটের একেবারে সামনের অংশেও ক্যামেরা সেট করা ছিল যা দিয়েই কনরাড তার বন্ধু অ্যালানের ছবিটি তুলেছেন। জুম করলেই দেখতে পাবেন কনরাড তার হাত দিয়ে বুকে সেট করা ক্যামেরাটি ধরে শট নিচ্ছেন।
যদিও এটা খুবই সংক্ষিপ্ত এবং সহজেই সমাধান করা যায় এমন এক কন্সপিরেসী থিওরী ছিল তবুও এখনও এটি নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করে যাচ্ছে।
তাহলে কে ছবি তুললো প্রশ্নের উত্তর হয়তো পেয়ে গিয়েছেন। সুতরাং পরের অভিযোগের যুক্তিখণ্ডন করে আজকের পর্ব শেষ করি।
পরের অভিযোগ ছিল…
চাঁদের মত প্রতিকূল পরিবেশে নভোচারীরা কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে?
এটি একটি বিন্দু থেকে সত্য। তবে এখানে এই অভিযোগের সমাধান করতে হলে নভোচারীদের ব্যবহার করা স্পেসস্যুট, চাঁদের পরিবেশ, তাপমাত্রার বিকিরণ ইত্যাদি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকলেই বিষয়টি সমাধান করা সহজ হয়ে যাবে। চলুন শুরু করা যাক।
চাঁদে দিন ও রাতের বেলায় অর্থাৎ একটি পূর্ণ চন্দ্রদিনের সময় তাপমাত্রা +200 থেকে -200 ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত (+392 থেকে -328 ডিগ্রি ফারেনহাইট) বক্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই মহাকাশচারীরা কীভাবে এই প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে তা ভাবা স্বাভাবিক। তিনটি উপায়ে তাপ স্থানান্তর হতে পারে এবং এরমধ্যে দু’টি চাঁদে হওয়া সম্ভব। প্রথমটি হল বিকিরণ যা সরাসরি সূর্য থেকে এবং পৃষ্ঠের উপর সূর্যের প্রতিফলন থেকে। নভোচারীদের স্পেসস্যুটগুলি প্রায় 90% আলোর প্রতিফলনকে প্রতিফলিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল, তাই খুব কম তাপ নভোচারীদের দেহে স্থানান্তরিত হয়।
সূর্য থেকে প্রাপ্ত তাপ শক্তি ‘ইনফ্রারেড রে’ বা অবলোহিত রশ্মি রূপে মহাশূন্যে ফিরে যায়। এছাড়াও সূর্যের উদীয়মান শক্তির বেশিরভাগই প্রতিফলিত হতে পারে। স্পেসস্যুটের রঙ সাদা ছিল কারণ এই রঙটি অধিকাংশ বিকিরণকে প্রতিফলিত করে, যার ফলে শোষিত তাপের পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব।
স্পেসস্যুটটি একটি কুলিং সিস্টেমের মধ্য দিয়ে সজ্জিত ছিল যাকে সহনীয় মাত্রায় ব্যবহার করার মাধ্যম হিসেবে জলের প্রবাহ ব্যবহার করা হয়। ভেতরে থাকা একটি ভ্যাকুয়ামের মধ্য চাপের ফলে সৃষ্ট স্প্রে করা জল নভোচারীর মুভমেন্টের কারণে খুব দ্রুত প্রবাহিত হয় এবং এর ফলে বাইরে থেকে পাওয়া অসহনীয় তাপ সহজেই স্পেসস্যুটে গিয়ে শীতল হয়ে যায়। স্পেসস্যুটের পেছনে পাম্পিং ব্যবস্থা ছিল যা ভেতরের বরফ গলা তাপ বাইরে ছেড়ে দিত এবং বাইরের অধিক তাপ ভেতরে চাপের মাধ্যমে বরফ গলিয়ে ঠান্ডা পরিবেশ সৃষ্টি করতো।
এখন আপনিই বলুন? নভোচারীদের মিলিয়ন ডলারের স্পেসস্যুটগুলো কি এই তাপমাত্রা মোকাবেলা না করেই নভোচারীর গায়ে জায়গা করেছিল?
তাহলে তাপমাত্রা নিয়েও এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হলো।
আজকের পর্ব এখানেই শেষ! Sea of Tranquility-তে পায়ের ছাপ, রকেটের স্ফুলিঙ্গ, পতাকা ওড়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ থেকে আপনি মুক্ত। পরের পর্বের আগ পর্যন্ত আপনি চাঁদের মাটিতে ইচ্ছে মত ঘুরে বেড়ান আর ছবি তুলুন! তবে পরের পর্বে ছবি নিয়েই অনেক অভিযোগের যুক্তি খণ্ডন করতে হবে।
ধন্যবাদ!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন