মেজাজ পরিবর্তন মানুষের খুবই সহজাত প্রভৃতি। কিন্তু নিতান্ত কোনো কারণ ছাড়াই এই কি স্বাভাবিক? অবশ্যই না। এটি শুধুমাত্র অস্বাভাবিক নয়, রোগও বটে। আর এই রোগের নাম বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার। বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার’ বা দ্বিমুখী আচরণ বৈকল্য একটি গুরুতর আবেগঘটিত মানসিক রোগ।
বাইপোলার সম্পর্কে পড়ে তোমাদের কি কারো কথা মনে পড়ছে? হ্যা পড়তে পারে। আমাদের আশেপাশে এরকম অনেক মানুষ আছেন যারা বাইপোলার ডিস-অর্ডারে আক্রান্ত। এমনকি হয়তো তারা নিজেরাই জানেন না তাদের সমস্যাটা কোথায়। তাদের পরিবার আর আত্মীয়স্বজনও হয়তো বুঝতে পারেনা তার অবস্থা কতটা শোচনীয়।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
বাইপোলার ডিস-অর্ডারের কেন হয় :
এই রোগের সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
সাধারণত পরিবেশগত ও জিনগত কারণগুলি এক্ষেত্রে বেশি প্রভাব ফেলে।
দেখা গেছে যে সাধারণত কৈশোরেই এই রোগ নিঃশব্দে থাবা বসায়। অসুখ সম্পর্কে না জানার জন্য ব্যক্তি অনেক দেরি করে চিকিৎসা করাতে আসেন।
অনুমান করা হয় যে জেনেটিক সমস্যা, হরমোনের ঘাটতি, চূড়ান্ত মানসিক ধাক্কা, মাদকাসক্তি, অবহেলা, একাকীত্ব,শৈশবের কোনো মানসিক আঘাত ইত্যাদির কারণে এই রোগ হতে পারে। বাইপোলারের পাশাপাশি সিজোফ্রেনিয়ার মত অসুখও হবার সম্ভাবনা থাকে।
মুড সুইং ভার্সেস বাইপোলার :
মুড সুইং আরেক নাম বাইপোলার ডিস্অর্ডার।
মুড সুইং বা মেজাজ পরিবর্তন হল রোজকার জীবনে ঘটা নানা ঘটনার কারণে মেজাজ বিগড়ে যাওয়া, মন খারাপ লাগা, রেগে যাওয়া, খিটখিটে ভাব বা কোন ব্যাপারে উৎসাহিত বোধ না করা। এই ধরনের মেজাজ পরিবর্তন স্থায়ী নয়। কিন্তু বাইপোলার ডিস্অর্ডারের সঙ্গে যুক্ত মুড সুইং একেবারেই আলাদা ধরনের যা চরম পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনধারা এবং কার্যক্ষমতা কে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে।
আরো পড়ুন: Depression: ঘুরে দাঁড়াও নতুন উদ্যমে!
বাইপোলারের উপসর্গ কি?
বাইপোলারে আক্রান্ত ব্যক্তি হয় অতি মাত্রায় উৎফুল্ল অথবা অতি মাত্রায় দুঃখী হন।
অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসের ক্ষেত্রে:
১. অস্থির আচার আচরণ করেন। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন যার ফলে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনেন।
২. নিজেকে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী মনে করতে থাকেন।
৩. অস্বাভাবিক সুখী বোধ করেন।
৪. বেহিসাবিভাবে চলতে শুরু করেন যেমন অতিরিক্ত অর্থ খরচ, হুটহাট অর্থদান, অস্বাভাবিক ব্যবযায়ে লগ্নি, বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো ইত্যাদি।
৫. নিজের সম্পর্কে অবাস্তব ও ভিত্তিহীন কল্পনা করতে থাকেন। নিজেকে সুপেরিয়র কেউ ভাবতে থাকেন।
৬. যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায়।
৭. মস্তিষ্কের মধ্যে সর্বদা অনিয়ন্ত্রিত চিন্তা চলতে থাকা।
৮. আকাশকুসুম চিন্তাভাবনা এবং অনর্গল অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা।
১০. বাস্তব এবং কল্পনার মধ্যে ফারাক না করতে পারা।
(Source: Very Well Mind)
অতিরিক্ত ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে :
১. মানসিক ভাবে চূড়ান্ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়া।
২. হতাশায় ডুবে যাওয়া।
৩. কোনো কাজে আগ্রহ খুঁজে না পাওয়া।
৪. একবার কোনও কাজ করে ফেললে তাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
৫. সমাজকে এড়িয়ে চলা একা থাকতে শুরু করা।
৬. মনঃসংযোগে অসুবিধা।
৭. ঘুম না হওয়া।
৮ . সবসময় ক্লান্তিতে ডুবে থাকা।
৯. খাবারে অনীহা।
১০. আত্মহত্যার প্রবণতা।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার এর সুনির্দিষ্ট লক্ষণ বলা মুশকিল, তবে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হলেই সম্ভব প্রাথমিক পর্যায়ে এটি শনাক্ত করা। এ বিষয় টি এতটাই গুরুতর যে এর ভয়াবহতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কিছু সিনেমা নিয়ে নির্মিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমা হলো, The Hours (film), Mad World (film), Mr. Jones (1993 film), Aarohanam (2012 film), Boy Interrupted(film) Filth(film), The Dark Horse (2014 film), The Flying Scotsman (2006 film) ইত্যাদি। সিনেমা হয়ত বাস্তবতার সাথে কখনো মিলবে না। তবে এই সিনেমাগুলোর মাধ্যমে ধারনা পেতে পারেন ঠিক কতটা গুরুতর হতে পারে বাইপোলার ডিসঅর্ডার।
বাইপোলার এবং সৃজনশীলতা :
সাইকোলজিস্ট জে ফিলিপ রাশটন পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, সৃষ্টিশীলতার সাথে বুদ্ধি ও বিভিন্ন মুড ডিজঅর্ডারের সম্পর্ক আছে। সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, ইউনিপোলার ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ৩ লাখ মানুষ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর পরিচালিত এ জরিপে দেখা গেছে, যারা সিজোফ্রেনিয়া অথবা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের শিকার, তাদের মধ্যে সৃজনশীলতা বেশি। এমনকি তাদের ভাইবোনদের মধ্যেও সৃজনশীল কাজ করার প্রবণতা বেশি থাকে। তবে যারা ইউনিপোলার ডিপ্রেশনে আক্রান্ত, তাদের মধ্যে এরকম কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায় নি।
তার মানে কি ক্রিয়েটিভিটি ও বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক রোগের মধ্যে সত্যি সত্যি কোনো সম্পর্ক আছে?
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাইকোলজিস্ট পরিচালিত অনেকগুলো গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফল এমমটাই সমর্থন করে। অর্থাৎ নানারকম মানসিক রোগের সাথে ক্রিয়েটিভ কাজকর্মের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে বাইপোলার ডিজঅর্ডারের সাথে এই সম্পর্ক আরো নিবিড়। গবেষকদের মতে মানব শরীরে এমন কিছু জিন আছে যা সৃজনশীলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। যে মানুষের দেহে এই ধরণের জিন বেশি, তারা তুলনামূলক বেশি ক্রিয়েটিভ হন এবং তারাই বাইপোলারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে থাকেন। তবে অনেক সময় শরীরে এই ধরণের জিন কোনো মানুষের দেহে উপস্থিত থাকার স্বত্ত্বেও তার মধ্যে সৃজনশীল কাজ করার প্রবণতা দেখা যায়না । এবং তার মধ্যে কোনো রকম মানসিক অসুস্থতাও দেখা যায় না। কিন্তু এই মানুষটিই যদি কোনো সৃজনশীল কাজে জড়িত থাকেন , তাহলে তার মধ্যে ম্যানিক ডিপ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণ মানুষটির চেয়ে দ্বিগুণ বেশি হতো।
“বিভিন্ন জিন যেগুলো সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিজঅর্ডার-এর জন্যে দায়ী, সেগুলোই মানুষের ক্রিয়েটিভিটির উৎস” এমনটাই ইঙ্গিত দেয় এই গবেষণার ফলাফল।
তবে এরকম মনে করার কোনো কারণ নেই যে, সিজোফ্রেনিয়া কিংবা বাইপোলার ডিজঅর্ডার সৃজনশীল মানুষের জন্যে উপকারী। সাধারণ মানুষদের চিন্তা ভাবনার সাথে সৃষ্টিশীল মানুষদের তাদের চিন্তা ভাবনার ক্ষেত্রে এবং ধরণে অনেক পার্থক্য থাকে । সৃষ্টিশীল মানুষজন অনেক বেশি অনুভূতিপ্রবণ হয়ে থাকেন। বাস্তবতা এবং তাদের চিন্তাধারায় থাকে বিস্তর ফারাক। তাদের নিজেদের বাস্তবতা বাস্তবের চেয়ে অনেক ভিন্ন হলেও, আশেপাশের বাস্তবতা থাকে আগের মতোই। বাস্তবতা আর কল্পনার জগতের মিল খুঁজতে খুঁজতে এই সমস্যা আরো তীব্রতর হয়ে উঠে।
চিকিৎসা :
সঠিক সময়ে রোগটি শনাক্ত করার পর মনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ধৈর্য সহকারে ওষুধ সেবন করলে বাইপোলার ডিসঅর্ডার আক্রান্তব্যক্তি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। কখনো কখনো হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করার প্রয়োজন হতে পারে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে সম্পদ বিনষ্ট, মাদকাসক্তি, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মনোনিবেশ, আত্মহত্যা বা অপরকে হত্যার মতো যেকোনো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে এরা।
বাইপোলার মুড ডিস অর্ডার আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে আচরণে সচেতন থাকে। তাদের আঘাত করে বা কষ্ট দেয় এমন কোনো কথা অথবা কাজ করা যাবেনা। তাদের সঙ্গে তর্কে জড়ানো একেবারেই উচিত হবেনা। ভালোবাসা ও সহানুভূতি দিয়ে তাদের পাশে থাকলে ধীরে ধীরে হয়তো তারা এই রোগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
তথ্যসূত্রঃ
1.https://www.webmd.com/bipolar-disorder/guide/bipolar-1-disorder
2. https://www.nimh.nih.gov/health/topics/bipolar-disorder/index.shtml
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন