১. প্রশ্ন: তোমরা কি জানো, কোন জায়গায় ব্যথা পেলে কেন আমরা সেখানে হাত বুলাতে শুরু করি?
–
আমরা যখন ব্যথা পাই, তখন এই অনুভূতিটা আমাদের শরীরে অবস্থিত বিভিন্ন নার্ভের ভেতর দিয়ে ব্রেনে যায়। আমরা যখন সেই ব্যথা পাওয়া জায়গাটিতে হাত বুলাতে শুরু করি, সেই জায়গায় অবস্থিত নিউরনগুলো তখন হাত বুলানোর অনুভূতি সৃষ্টির ফলে কিছু সময় ব্যথা পাওয়ার অনুভূতি ও কিছু সময় হাত বুলানোর অনুভূতি ব্রেনে পাঠিয়ে দেয়। যেহেতু ব্যথার অনুভূতিটা হাত বুলানোর অনুভূতির সাথে ভাগাভাগি হয়ে যায় তাই ব্যাথা অনেকটা কমে যায়। আর সেজন্যই মূলত ব্যথা পাওয়ার সাথে সাথে আমরা সেখানে হাত বুলাতে শুরু করি।
২. প্রশ্ন: শীতকালে আমরা চারপাশে তাকালেই দেখি বেশিরভাগ গাছের-ই পাতা নেই অর্থাৎ পাতাগুলো ঝরে পড়ে। শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যায় কেন?
–
এটা জানার জন্য আমাদের প্রথমে জানতে হবে পাতার কাজ নিয়ে। গাছে পাতা থাকার উপকারিতা কী? সবুজ পাতায় রয়েছে ক্লোরোফিল। এই কারণে পাতায় গাছের খাবার তৈরি হয় এবং এই খাবার গাছের সারা শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখে। এ ছাড়াও গাছের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করে এই পাতা। আর গাছকে ঘামতে সাহায্য করে। গাছ মাটি থেকে যতখানি পানি উত্তোলন করে ততখানি পানি তার শরীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহৃত হয় না।
অতিরিক্ত পানিটুকু বাষ্পাকারে ছেড়ে দেয়া হয় পাতা থেকে। শীতকাল এলেও পাতা থেকে এই পানি ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয় না। গাছে যতবেশি পাতা থাকবে তত বেশি পানি হারিয়ে যাবে গাছের শরীর থেকে। ফলে গাছে পানির ঘাটতি দেখা দেবার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে নিজের স্বার্থেই পাতাগুলোকে ঝরিয়ে ফেলে গাছ এবং শীতকালের স্বল্প পরিমাণ পানিটুকু নিজের মাঝে বাঁচিয়ে রাখে।
৩. প্রশ্ন: মশার কামড় খাওয়ার পরে খেয়াল করেছো সেই জায়গাটি লাল হয়ে ফুলে যায়, এটা কেন হয় জানো কি?
–
মশা যখন আমাদের শরীর থেকে রক্ত চুষে নেয়, তখন আমাদের শরীরে তার কিছু লালারস রয়ে যায়। পরবর্তীতে যার ফলে কিছু অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। যেমন- মশা যেখানে কামড় দেয় সেখানে চুলকাতে শুরু করে। আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা (Immune systern) আমাদের সেই চুলকানি থেকে রক্ষা করতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং কিছু রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরন করে। যেটা মশার কামড় দেওয়া জায়গায় ফুলে যাওয়ার জন্য দায়ী।
৪. প্রশ্ন: এমন কি কিছু রয়েছে যা খেলে আমাদের মন ভাল হয়ে যায়?
কলা এমন একটা ফল যেটার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি ভিটামিন রয়েছে। এটার মধ্যে ট্রিপটোফেন (Tryptophan) নামে একটা প্রোটিন রয়েছে। এই ট্রিপটোফেন প্রোটিন আনন্দের বা মন ভাল হওয়ার হরমোন সেরোটোনিন এর নিঃসরণে উদ্দীপনা জোগায়। সেরোটোনিন নিঃসরণের জন্য মাত্র ১টা কলাই যথেষ্ট। এটা সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে মনকে শান্ত ও উৎফুল্ল করে তোলে। এছাড়াও কলা মানসিক অশান্তি দূর করে।
৫. প্রশ্ন: আচ্ছা জিরাফের গলা এত লম্বা হয় কেন বলতো?
জীব তার প্রয়োজন বা চাহিদা মেটানোর জন্য তার বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন বা বিবর্তন নিয়ে আসে। প্রকৃতিবিজ্ঞানী ল্যামার্কের মতে, জিরাফ যখন গাছের উচুতে যে পাতা রয়েছে সেগুলো খেতে যেত তখন তার গলাকে প্রসারিত করতে হত। এভাবে বিবর্তনের ফলে জিরাফের পরবর্তী প্রজন্মের গলা লম্বা হতে থাকে।
৬. প্রশ্ন: একটা ডিমের ভেতরে কী করে একটা বাচ্চা পাখি শ্বাস নেয় বলোতো?
একটি মা পাখি ডিম পাড়ার পরে ডিমটা অনেক গরম থাকে। ঠাণ্ডা হওয়ার পরে ডিমের ভেতরের সব উপাদান কিছুটা সংকুচিত হয়ে যায়। ডিমের খোলসের ভেতরে যে দুটো মেমব্রেন বা পর্দা রয়েছে তারা কিছটা দূরে সরে গিয়ে সেখানে একটি ছোটো বায়ু থলি বা পকেট তৈরি করে। বাচ্চা পাখিটা বড় হতে থাকলে এই বায়ু থলি থেকেই অক্সিজেন নেয় এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড ছেড়ে দেয়। ডিমের খোলোসের উপরে রয়েছে অসংখ্য অণুবীক্ষণিক ছিদ্র। এই ছিদ্রের ভেতর দিয়ে কার্বন-ডাই অক্সাইড বাইরে বের হয়ে যায়, আর অক্সিজেন ভেতরে প্রবেশ করে। এভাবেই বাচ্চা পাখিটা খোলোসের ভেতরে শ্বাস নেয়।
৭. প্রশ্ন: হাঁস পানি থেকে উঠার পরে খেয়াল করেছো তাদের শরীর পানিতে ভেজে না । কেনো এটা হয় বলতো ?
তোমরা কি জানো হাঁস ও এ ধরনের অন্যান্য পাখিদের লেজের কাছে এক ধরনের থলী থাকে। যে থলীতে তারা নিজেরাই এক ধরনের তেল তৈরি করে জমা রাখে। হাঁসকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, একটু পর পর এই থলী থেকে তেল নিয়ে তার পালকে ও গায়ে লাগায়। সে কারণেই যখন সে পানিতে নামে, এই তেলের কারণে তার পালক পানিতে ভেজে না।
৮. প্রশ্ন: আচ্ছা তুমি খেয়াল করেছো বেশিরভাগ রাতে ফোটা ফুলগুলো সাদা হয়, এটা কেন হয় বলতো?
– ফুলের বিভিন্ন রং, আকার, গন্ধ এর উদ্দেশ্য হল পরাগায়ন। উজ্জল রঙের মধ্যেই সাদাটাই রাতের বেলায় বেশি দৃশ্যমান। দৃশ্যমান হওয়ার কারণে রাতের বেলায় পোকা মাকড়দের চোখে সহজেই ধরা পড়ে এবং পরাগায়নের মাধ্যম সহজ হয়ে যায়। তাই বেশিরভাগ রাতে ফোটা ফুলগুলো সাদা হয়।
৯. প্রশ্ন: ঠাণ্ডা রক্তবিশিষ্ট প্রাণী বলতে কী বোঝায় বলতো? সরীসৃপগুলো ঠাণ্ডা রক্তবিশিষ্ট হয় কেন জানো কি?
–
ঠাণ্ডা রক্তবিশিষ্ট প্রাণী সেগুলো, যার কিনা পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে সাথে শরীরের তাপমাত্রা উঠা নামা করে বা পরিবর্তিত হয়। সরীসৃপগুলো থার্মোরেগুলেশনের (Thermoregulation) মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। থার্মোরেগুলেশনের মাধ্যমে সরীসৃপগুলো এক পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশে গিয়ে তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। যখন তার মনে হয় গরম কোন পরিবেশ দরকার তখন সে গরম পরিবেশে এবং যখন মনে হয় ঠান্ডা পরিবেশ দরকার তখন ঠান্ডা পরিবেশে চলে যায়। এভাবেই থার্মোরেগুলেশনের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। আর এই থার্মোরেগুলেশনের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করার জন্য তাদের ঠাণ্ডা রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী বলা হয়।
১০. প্রশ্ন: আচ্ছা তোমার গলার স্বরের সাথে অন্য কারো গলার স্বরের মিল নেই কেনো বলতো?
গলার স্বর তৈরির জন্য শরীরের অনেকগুলো অংশ অংশগ্রহণ করে। যেমন: ফুসফুস, ভোকাল কর্ড, গলা জিহ্বা, ঠোট, দাঁত ইত্যাদি। প্রতিটি মানুষের মধ্যে শরীরের এই অংশগুলোর অবস্থান ও আকৃতি একেক রকম। এছাড়াও প্রত্যেকে একেক কম্পাঙ্কে কথা বলে, যেটার উপরও গলার স্বরের ভিন্নতা নির্ভর করে। এছাড়াও সময়ের সাথে সাথে গলার স্বরের সাথে সম্পৃক্ত এই অংশগুলোর পরিবর্তনের কারণেও গলার স্বরের ভিন্নতা দেখা যায়।
১১. প্রশ্ন: তুমি, আমি, আমরা সবাই ঘেমে যাই কেন বলতো?
–
আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করার জন্যই মূলত আমরা ঘেমে যাই। আমাদের শরীরে দুটো ঘামের গ্রন্থি রয়েছে। একটি একক্রাইন, অন্যটি এপোক্রাইন । আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরের স্নায়ুতন্ত্র এই এপোক্রাইন গ্রন্থিকে ঘাম নিঃসরণে উদ্দীপনা জোগায়। ঘাম পানি, সোডিয়াম ও অন্যান্য পদার্থ দ্বারা তৈরি, যা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
১২. প্রশ্ন: তুমি যখন নাক চেপে কথা বলতে থাক, তখন কেন তোমার গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যায় বলতো?
–
নাক এবং সাইনাস স্বরের অনুরণন প্রকোষ্ঠ(Resonance chamber) হিসেবে কাজ করে। কিছু কিছু বর্ণ আছে যেগুলো উচ্চারন করতে নাকের ভেতর দিয়ে বাতাসের প্রবাহের প্রয়োজন হয়। তুমি যখন নাক চেপে কথা বলতে থাক তখন, নাক দিয়ে বাতাসের প্রবাহ কমে যায় এবং তার ফলে রোসোনেন্সও কমে যায়। এজন্য তুমি যখন কথা বলার সময় নাক বন্ধ করো তখন গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যায়।
১৩. প্রশ্ন: আচ্ছা মশার কামড়ে কি এইডস হতে পারে, তোমার কী মনে হয়?
মশার কামড়ে কখনই এইডস হতে পারে না। কারণ এইডস হওয়ার জন্য দায়ী, HIV ভাইরাস । মশা, ছারপোকা বা এরকম রক্ত চোষা প্রাণী ভেতর অনুলিপি তৈরি করতে পারে না। HIV ভাইরাস এসবের ভেতর অনুলিপি তৈরি করতে পারে না কারণ এসব প্রাণীর কোষের উপরিতলে T4 অ্যান্টিজেনের অভাব রয়েছে। এছাড়াও মশার ভেতরে এই ভাইরাস খুব কম সময় টিকে থাকতে পারে। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, কোন পোকা মাকড়ের দ্বারা HIV সংক্রমণ কখনই সম্ভব না।
১৪. প্রশ্ন: আমরা হাতে মেহেদি পাতা বেটে লাগানোর পরে লাল রঙ হয়ে যায় তাই না? মেহেদি পাতা থেকে লাল রঙ হয় কেন বলোতো ?
মেহেদী পাতায় রয়েছে লসোন (Lawsone) নামক রঞ্জক পদার্থ। লসোনকে Hennotannic Acid নামেও ডাকা হয়। পাতায় এ হেনোট্যানিক এসিড বা লসোনের উপস্থিতির কারণে মেহেদী পাতা থেকে লাল রং হয়। মেহেদী পাতার মন্ডে এসিড আছে এমন কিছু মেশানো হলে লসোন অনুগুলো পাতা থেকে বেশী পরিমাণে বেরিয়ে আসে। সে কারণ, মেহেদী পাতার মন্ডে লেবুর রস, কমলার রস, ভিনেগার বা কোল্ড ড্রিংক মেশানো হলে ত্বকে ভালো রং পাওয়া যায়।
১৫. প্রশ্ন: আচ্ছা তুমি কি জানো আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ রয়েছে যারা দুধ হজম করতে পারে না । কেন দুধকে হজম করতে পারেনা বলতো ?
পৃথিবীতে প্রায় অনেক মানুষই রয়েছে যারা দুগ্ধজাত খাবার হজম করতে পারে না। যেটাকে বলা হয় ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স (Lactose Intolerance)। যেসব মানুষের মধ্যে এই Lactose Intolerance রয়েছে তাদের দুধের মধ্যে থাকা সুগারকে হজম করতে খুব কষ্ট হয়ে যায়। এর কারণ হল তাদের ক্ষুদ্রান্ত্র পর্যাপ্ত ল্যাকটোজ এনজাইম তৈরি করতে পারে না; যে এনজাইম কিনা ল্যাকটোজকে হজম করার জন্য দরকার হয়।
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন