পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!
গোয়েন্দা গল্পের প্রতি ঝোঁক আমাদের সবারই কম-বেশি আছে। থাকারই কথা। একটা অজানা জিনিস, যেটা জানার জন্য সবাই দিনরাত এক করে ফেলছে, একজন এসে ভীষণ নাটকীয়ভাবে সেটার সমাধান করে দিয়ে যাবে- আর আমরা তাঁর বুদ্ধিমত্তায় অবাক হয়ে বাহবা আর হাততালি দেবো- এর চেয়ে ভালো ব্যাপার আর কীইবা হতে পারে? কাহিনীর শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা থাকবে, দরকার পড়লে বেশ মারপিটের একটা ব্যাপার থাকবে, ধাঁধাঁ থাকবে, দাবা খেলার মত চাল থাকবে– তবেই না বই পড়ে মজা।
বাংলা সাহিত্যে এমন ইন্টারেস্টিং গোয়েন্দা চরিত্র কিন্তু অনেক আছে। আমরা তাঁদের সাথে সবাই কম-বেশি পরিচিত। নিচে তোমার জন্যে একটি চেকলিস্ট দেয়া হলো, পড়ে বের করে ফেলো দেখি কার কার সাথে তোমার পরিচয় আছে!
১। ফেলুদা, সত্যজিৎ রায়
একে দিয়েই যে লিস্টটা শুরু হবে তা কি আর বলে দিতে হয়?
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এবং সম্ভবত সবচে’ বেশি বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র আমাদের প্রদোষ চন্দ্র মিত্তির ওরফে ফেলুদা। সত্যজিতের এই বিখ্যাত চরিত্রের প্রথম গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে সন্দেশ পত্রিকায়। এরপর ১৯৯৭ পর্যন্ত এই সিরিজের মোট ৩৫টি সম্পূর্ণ এবং চারটি অসম্পূর্ণ গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। বিশের কোঠার শেষের দিকে বয়স এবং ছয় ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার মার্শাল আর্ট পারদর্শী ফেলুদার সার্বক্ষণিক সঙ্গী তাঁর খুড়তুতো ভাই তোপসে এবং লেখক বন্ধু লালমোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ু।
ফেলুদার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দক্ষতা এবং গোয়েন্দাগিরিতে অসামান্য পারদর্শিতা আমাদেরকে তার গল্পের শেষ পর্যন্ত পড়ে যেতে বাধ্য করে।
ফেলু মিত্তিরের কাহিনীগুলো নিয়ে সত্যজিৎ এবং তাঁর পুত্র সন্দ্বীপ রায় বেশ কিছু চলচ্চিত্রও তৈরি করেছেন।
২। ব্যোমকেশ বক্সী, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
এই বিখ্যাত গোয়েন্দাটি নিজেকে গোয়েন্দার চেয়ে ‘সত্যান্বেষী’ বলতেই পছন্দ করেন বেশি। তাঁর বর্ণনায় লেখক বলেছেন, “তাহার বয়স বোধ করি তেইশ-চব্বিশ হইবে, দেখিলে শিক্ষিত ভদ্রলোক বলিয়া মনে হয়। গায়ের রঙ ফরসা, বেশ সুশ্রী সুগঠিত চেহারা-মুখে চোখে বুদ্ধির একটা ছাপ আছে।”
শরদিন্দু ব্যোমকেশকে নিয়ে দুইটি গল্প লেখার পর তাকে নিয়ে সিরিজ লিখবেন বলে মনস্থ করেন। তাই ‘সত্যান্বেষী’ গল্প লিখে তিনি ব্যোমকেশকে চরিত্র হিসেবে পাঠকের সামনে উপস্থিত করেন।
ব্যোমকেশ সিরিজের বেশিরভাগ গল্পই ব্যোমকেশের বন্ধু, রুমমেট ও সহযোগী অজিতের জবানিতে লেখা। ‘অর্থমনর্থম’ গল্পে একটি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সুকুমার বাবুর বোন সত্যবতীর সাথে ব্যোমকেশের পরিচয় হয়, পরবর্তীতে তা প্রেম এবং পরিণয়
পর্যন্ত গড়ায়।
ব্যোমকেশকে নিয়ে বানানো সিরিজ এবং চলচ্চিত্রের সংখ্যাও অনেক।
ফুল সিলেবাস কোর্সে যা যা থাকছে:
৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৪
৩। কাকাবাবু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
আমাদের এই প্রিয় গোয়েন্দাটি অন্যান্যদের মত যুবাবয়েসী অরুণপ্রাতের তরুণদলের অংশ নন। মধ্যবয়েসি অবসরপ্রাপ্ত রাজা রায় চৌধুরি ওরফে কাকাবাবুর নিত্যসঙ্গী ক্রাচ, আফগানিস্তানে এক বন্ধুকে বাঁচাবার চেষ্টায় পঙ্গু হন।
আর রহস্য উন্মোচনে তাঁর সঙ্গী ভাইপো সুনন্দ রায় চৌধুরি ওরফে সন্তু এবং কখনো কখনো সন্তুর বন্ধু জোজো।
কাকাবাবুর গল্পের অ্যাডভেঞ্চারগুলি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এবং দেশে বিদেশে গিয়ে হয়। তাই কাকাবাবুর প্রিয় একটি কাজ যে
ম্যাপ দেখা, তাতে অবাক হবার কিছু নেই।
“এই কয়েকটি চরিত্র ছাড়াও বাংলা সাহিত্যে রয়েছে আরও অনেক সুন্দরভাবে কাহিনীর বুনটে গড়ে তোলা গোয়েন্দা চরিত্র।”
প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কাকাবাবুকে নিয়ে ৩৬টি উপন্যাস ও ৬টি গল্প লিখেছেন।
অনুপম রায়ের একটা গানও আছে কাকাবাবুকে নিয়ে, শুনেছো নিশ্চয়ই?
আরো পড়ুন: চার্চিল ক্লাব: স্কুল পালানো কিশোর গোয়েন্দা
৪। শবর দাশগুপ্ত, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তা এই চরিত্রটি আমার অন্যতম ব্যক্তিগত ফেভারিট।
শবরের গল্পগুলো বেশিরভাগই মূলত কথোপকথন–নির্ভর। মাঝেমধ্যে তাঁর গল্পে সহকারী হিসেবে ‘নন্দ’ চরিত্রটি থাকে। লালবাজারের গোয়েন্দা শবর রহস্য উন্মোচন করেন তাঁর পুলিশি ট্রেনিং এর সাহায্য নিয়ে। তাঁর তদন্ত ও জেরার মুখে টিকতে পারে না কেউই।
ব্যক্তিগত জীবনে শবর অবিবাহিত, মদ্যপান কিংবা ধূমপান করেন না এবং বাইরে থেকে তাঁকে অনেকটাই আবেগহীন মনে হয়, যদিও তিনি বেশ সংবেদনশীল মানুষ।
দুইটি চলচ্চিত্র এরই মধ্যে নির্মাণ হয়েছে শবর চরিত্রটি নিয়ে এবং ২০১৮ সালে আসছে আরেকটি।
৫। মিসির আলি, হুমায়ূন আহমেদ
প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলি চরিত্রটি ঠিক যেন টানটান অ্যাড্রেনালিন রাশে ভরা অ্যাডভেঞ্চার গোয়েন্দা চরিত্র না, বরং অনেকটাই যুক্তিনির্ভর, ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে উন্মোচন করা রহস্যের গল্প।
যুক্তিনির্ভর এবং বিজ্ঞানমনস্ক দাড়িওয়ালা কাঁচাপাকা চুলের এই প্রায়–বৃদ্ধ মানুষটির সাহস এবং উদ্যম দেখবার মত। তিনি বিশ্বাস করেন সবকিছুই যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা যায়, অতিপ্রাকৃতিক বা রহস্য বলতে কিছু নেই।
এই জনপ্রিয় চরিত্রটিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পর্দায় বেশ কয়েকবার দেখা গেছে এবং অধিকাংশ নাটকে তাঁর চরিত্রায়ন করেছেন আবুল হায়াত।
এই কয়েকটি চরিত্র ছাড়াও বাংলা সাহিত্যে রয়েছে আরও অনেক সুন্দরভাবে কাহিনীর বুনটে গড়ে তোলা গোয়েন্দা চরিত্র। যেমন হেমেন্দ্রকুমারের ‘জয়ন্ত’, সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘মিতিন মাসী’, সমরেশ মজুমদারের ‘অর্জুন’, নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘কিরীটি রায়’, বুদ্ধদেব বসুর ‘ঋজুদা’ কিংবা হাল আমলের মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের ‘জেফরি বেগ’। আমাদের মত রহস্যপ্রিয় হাজারো বাঙালির পড়ার অভ্যাসটা ধরে রাখতে সেই শুরু থেকেই উৎসাহ দিয়ে আসছে এই অসাধারণ চরিত্রগুলি, এই অসম্ভব তৃপ্তিদায়ক গল্পগুলি।
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে মেহের আফরোজ শাওলী।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন