পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবার শুনে নাও।
আমার তখন এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। জীবনের প্রথম বড়সড় পাবলিক পরীক্ষা। মনের মধ্যে স্বভাবতই অনেক টেনশন, কী হবে না হবে কিছুই বুঝতে পারছি না। পরীক্ষা খারাপ হবে কি না সেটা আবার আরেক টেনশন। মোটামুটি বাজে অবস্থা।
এর উপরে আরো দুই ধরণের মানুষের জ্বালাতনে মরে যাই যাই অবস্থা। যে আত্মীয়দের কস্মিনকালেও আশেপাশে দেখি নি আমিসহ আমাদের বাসার কেউ, সেই মানুষগুলো সমানে ফোন দিয়ে পরীক্ষার খোঁজখবর নিচ্ছে, কথাবার্তা বলছে। চরম বিরক্তিকর বিষয়।
তার উপরে আমার কিছু ন্যাকা বন্ধু প্রায়ই ফোন দিয়ে বলছে, “দোস্ত আমি কিচ্ছু পারি না, ফেইল করবো, কী যে হবে!” অথচ আমি নিশ্চিত সে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস চোখ বন্ধ করে পেয়ে যাবে। বিশ্রি অবস্থা।
যাইহোক, প্রথম পরীক্ষার দিন। আমার সাথে আমার প্রথম পরীক্ষায় এসেছেন আমার মা। তাঁর সাথে আমার কথোপকথন-
মা: আয়মান, বাবা পেন্সিল নিয়েছিস?
আমি: *ক্ষীণ কণ্ঠে* হ্যাঁ, মা।
মা: আয়মান, বাবা ইরেজার নিয়েছিস?
আমি: *আরো ক্ষীণ কন্ঠে* হ্যাঁ, মা।
মা: আয়মান, বাবা পেন্সিল শার্প করে নিয়েছিস তো?
আমি: *শোনা যায় না এমন গলায়* হ্যাঁ, মা।
এবার মা ব্রহ্মাস্ত্র ছাড়লেন। বলে বসলেন, “বাবা পেন্সিল বেশি শার্প করিস নাই তো?”
আমি মোটামুটি যারপরনাই হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিলাম। আর কিছুই বললাম না। মা এবার শুরু করলেন তাঁর ভোঁতা পেন্সিলের কারসাজি। তিনি বললেন, “বাবা ও এম আর শিটের জন্যে তুই ভোঁতা পেন্সিল নিয়ে যা। দ্রুত গোল্লা ভরাট করতে পারবি”। আমি চিন্তা করে দেখলাম, ভালোই তো আইডিয়া!
যেই বলা সেই কাজ। মা শুরু করে দিলেন তাঁর কাজ। শব-এ-বরাতে যেমন রুটি আর হালুয়া বানায় না? সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে মুহূর্তেই আমার দুটো পেন্সিল ভোঁতা হয়ে গেল।
এখানেই শেষ না গল্পের। পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখি, ও এম আর শিটে পেন্সিল দিয়ে ভরাট করা যায় না, শুধুমাত্র বলপয়েন্ট পেন লাগে। মনে হলো, আম্মুর ভোঁতা করা পেন্সিলগুলো যেন আমার দিকে তাকিয়ে হাহা করে হাসছে, আর বিদ্রুপ করছে আমার মন্দ ভাগ্যকে!
যাইহোক, পরেরদিন পরীক্ষা দিতে গেছি। হলের কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম আমার এক পরিচিত বন্ধু ওদের গাড়ি থেকে নামছে। ওদের আবার বিশাল নোয়াহ মাইক্রো, ভাবটাই আলাদা!
আমি ওকে দেখেই স্বভাবস্বরূপ চিৎকার করে ডাক দিয়ে একটা দৌড় দিলাম। মাঝপথে গিয়ে খেয়াল করলাম, বন্ধুর মুখ থমথমে। বুঝলাম কোন একটা সমস্যা হয়েছে। ওদিকে আর না গিয়ে দেখতে থাকলাম কী হয়। যা দেখলাম সেটা অতীব আশ্চর্য।
মাইক্রো থেকে এক এক করে ছেলেটার মা, বাবা, নানী, নানা, দাদী, চাচা এবং সম্পূর্ণ অচেনা একটা মানুষ নামলেন। আর কিছু সময় পরে দেখলাম সদ্যজাত একটা বাচ্চাও বের হলো গাড়ি থেকে, সাথে তার বিরক্ত মা। সবমিলিয়ে বিশাল অবস্থা। আমি বুঝলাম, বন্ধুর হতাশার কারণটা কি!
এই ঘটনার পর থেকে আমি কোন পরীক্ষায় আর বাবা-মা বা আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে যাই না। চেষ্টা করি একাই চলে যাবার। অনেক শান্তি, আসলেই!
পরীক্ষার কথাই যখন আসলো, তখন পরীক্ষার একটা অসাধারণ টেকনিকের কথাই শোনাই তোমাদেরকে। তোমরা যখন হাসো, তখন তোমাদের একটা হরমোন কাজ করে। হরমোনের নাম হচ্ছে ডোপামিন। তো এই ডোপামিন যখন কাজ করতে শুরু করে, তখনই তুমি হাসো।
পরীক্ষার বিষয়টা খুব মজাদার ছিল একটা সময়ে, এখন কেমন যান্ত্রিক হয়ে গেছে সবকিছু
তোমার এই হাসিটা কিন্তু হয়ে উঠতে পারে অন্যের নার্ভাসনেসের কারণ!
ধরো, তোমার বন্ধু যদি তোমাকে এসে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “দোস্ত, পড়া কদ্দুর?” সে তোমার কাছ থেকে আশা করবে একটা নেতিবাচক উত্তর, যে তুমি বলবে কিচ্ছু পড়ো নাই, তাতে তাঁর একটা মানসিক প্রশান্তি আসবে।
তুমি যদি তাকে উলটো হেসে বলো, “দোস্ত সব পড়েছি, সব পারি”- তাহলে কিন্তু সে নার্ভাস হয়ে যাবে! সে যদি তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়, তার উপরে এই কৌশল প্রয়োগ করতেই পারো, তাই নয় কি?
পরীক্ষার বিষয়টা খুব মজাদার ছিল একটা সময়ে, এখন কেমন যান্ত্রিক হয়ে গেছে সবকিছু। আমার এখনো মনে পড়ে, একটা সময় পরীক্ষা হতো উৎসবের মতো। সেই দিনগুলোকে খুব মিস করি এখন, বড় হয়ে গিয়েছি বলেই মনে হয়!
লেখাটি লিখতে সহায়তা করেছে অভিক রেহমান
এই লেখাটি নেয়া হয়েছে লেখকের ‘নেভার স্টপ লার্নিং‘ বইটি থেকে। পুরো বইটি কিনতে চাইলে ঘুরে এসো এই লিংক থেকে!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন