অ্যাপোলো-১ এর ভাগ্যটা খারাপই ছিল বটে! উড্ডয়নের আগেই রকেট বিস্ফোরণ! নিহত হলেন গ্রিসম, হোয়াইট এবং চাফে নামের তিন নভোচারী। বারবার ব্যর্থ হতে থাকা নাসার বিজ্ঞানীদের কপালে ভাঁজ। রাশিয়া একদিকে চাঁদে প্রোব পাঠানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছে। কিন্তু থেমে থাকেনি নাসা, থেমে থাকেনি কৌতূহলী মানুষ, দূর্বল হয়নি মানুষের লেগে থাকার প্রবণতা। একের পর এক অ্যাপোলো নভোযান পাঠানোর মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে পদচিহ্নের ইতিহাস গড়েছে ১২ জন যোদ্ধা। জীবনের মায়া যেখানে ছিল খুবই তুচ্ছ!
গোল পৃথিবীর উপর হেঁটে বেড়ানো মানুষ কি কখনো ভেবে দেখেছে রাতের আকাশের উজ্জ্বল রহস্যময় আলোকে একদিন স্পর্শ করে দেখবে? হেঁটে বেড়াবে ভৌতিক পরিবেশে যেখানে থাকে না কোনো প্রাণী, নেই কোনো বাতাস, পানি এবং গাছপালা? চাঁদ নিয়ে কৌতূহলের শেষ ছিল না মানুষের। রহস্যভেদের বহু বছর পার হলেও এখনো মানুষ তার প্রিয়জনের সাথে তাদের ভালোবাসার স্থায়ীত্বের পণ করে এই চাঁদকে সাক্ষী রেখেই। চাঁদ যেনো একাকী মানুষের কাল্পনিক সঙ্গী! মনের অব্যক্ত চাওয়া পাওয়াগুলো যেন চাঁদের কানেই আমরা ফিসফিস করে বলি। রাতের আকাশের এই উজ্জ্বল উপগ্রহ আমাদের অনেক দুঃখ কষ্টের সাক্ষী। মনের চাপা কথাগুলো যেনো চাঁদের মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে পৃথিবীবাসী। সবই কিন্তু কাল্পনিক। যেখানে যুক্তি খুবই অসহায়, নেই কোনো বাঁধাধরা নিয়ম কিংবা পদার্থবিজ্ঞানের মারপ্যাঁচ সূত্র।
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
নীল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন এই দু’টো নামের সাথে অ্যাপোলো মিশন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু আমরা খুব কমই মনে রাখি মাইক কলিন্সের কথা। আবার আমরা অনেকেই ৬টি অ্যাপোলো মিশনের নামও মনে রাখতে পারি না।
অ্যাপোলো ১১, ১২, ১৪, ১৫, ১৬ এবং ১৭ সফলভাবে চাঁদের মাটি স্পর্শ করে। ‘একবার না পারিলে দেখো শতবার’ প্রবাদটির অন্যতম প্রমাণ এই অ্যাপোলো মিশনগুলো । ব্যর্থতা কোনোভাবেই দমাতে পারেনি। মৃত্যুকেও পরোয়া করেননি নভোচারীরা।
সময়টা ১৯৬৯ সাল, ২০শে জুলাই। মাইক কলিন্সের থেকে অনিশ্চিত ফিরে আসার আশ্বাসের মাধ্যমে আলাদা হয়েছেন নীল এবং অলড্রিন। তখনো ঠিক করা হয়নি, কে আগে চাঁদের মাটিতে পা রাখবেন। ৬০০ মিলিয়ন মানুষ নীল গ্রহে বসে টিভিতে সরাসরি উপভোগ করছে ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বাজিকররা বাজিমাত করছে শহরে বন্দরে। কেউবা করছে অট্টহাসি, কেউবা গুণছে ভবিষ্যতবাণী। জ্যোতিষীদের ব্যবসাও তখন তুঙ্গে। অপরদিকে অচেনা পথের অশ্বারোহী দুই যোদ্ধা ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতে যাচ্ছেন। দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুহূর্তে সবারই টান টান উত্তেজনা। ১ সেকেন্ডের হিসেবের গড়মিলেই চাঁদে সমাধি হয়ে যাবে দুজনের। ঠিক তখনই-
Neil : Houston, Tranquility base here.
Aldrin : Contact lights on.
Neil : The Eagle has landed!
Houston (Mission Control) : Roger, Tranquility. We copy you on the ground. You got a bunch of guys about to turn blue. Thanks a lot!
অতঃপর সজোরে হাততালি। নাসার অ্যাপোলো মনিটরিং সেন্টার থেকে সবাই খুশিতে ফেটে পড়লো। আমেরিকার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়। শুধু আমেরিকা কেন, পুরো মানব ইতিহাসের জন্য সেটি ছিলো গৌরবের এক মুহূর্ত। প্রথম মনুষ্যবাহী কোনো যান চাঁদের মাটিতে পা রাখলো তাও ৫ম বারের মতো চেষ্টায়। মানব ইতিহাসের সেই যুগান্তকারী অর্জনকে কি আমরা ভুলে গিয়েছি? নাকি অ্যাপোলো মিশন মানেই সেটি শুধু নীল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন এবং মাইক কলিন্স এই তিনজনের নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ?
আরও পড়ুন: রোবটিক্স -এ হাতেখড়ি: রোবট তৈরির গাইডলাইন
তাহলে চলো জেনে নেই আমাদের না জানা কিছু তথ্য।
১. ‘অ্যাপোলো’ নামকরণের কারণ :
আচ্ছা আমাদের মনে কি কখনো প্রশ্ন আসেনি যে চন্দ্রাভিযানের এই নভোযানের নাম এবং পুরো প্রকল্পের নাম ‘অ্যাপোলো’ কেন রাখা হলো?
স্পেস ফ্লাইট ডেভেলপমেন্টের পরিচালক অ্যাবি সিলভারস্টাইন, “অ্যাপোলো” নামের নাম প্রস্তাব করেছিলেন কারণ প্রাচীন গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীতে এটি আকর্ষণীয় কণ্ঠস্বর এবং পৌরাণিক দেবতা ও হিরোদের জন্য মনুষ্যপুত্রের মহাকাশযান প্রকল্পগুলোর নামকরণের উদাহরণ দিয়ে বুধের সাথে সেট করা হয়েছিল।
২. অ্যাপোলো ১১-ই কি প্রথম সফল চন্দ্রাভিযান?
না! অ্যাপোলো ৮ হচ্ছে প্রথম মনুষ্যবাহী নভোযান যা চাঁদের উদ্দ্যেশ্যে পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করে ১৯৬৮ সালের ২১শে ডিসেম্বর এবং পৃথিবীতে ফিরে আসে ১৯৬৮ সালের ২৭শে ডিসেম্বর। তবে অ্যাপোলো ৮ এর নভোচারীরা চাঁদের মাটিতে পা রাখেনি। আসলে এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিলো পরবর্তী অ্যাপোলো মিশনের জন্য চাঁদের সম্ভাব্য সুবিধাজনক ল্যান্ডিং সাইট নির্দিষ্ট করা এবং পৃথিবীতে ছবি পাঠানো। চাঁদকে ১০ বার প্রদক্ষিণ করার সময় এই মিশনের লুনার মডিউল পাইলট উইলিয়াম অ্যান্ডার্স একটি অসাধারণ দৃশ্যের সাক্ষী হলেন ২৪শে ডিসেম্বর। সর্বপ্রথম চাঁদ থেকে পৃথিবীর উদয়! বেশ আবেগাপ্লুত হয়েই বলেছিলেন, ‘’কতোই না সুন্দর আমাদের এই পৃথিবী, চাঁদের চেয়েও উজ্জ্বল’’।
৩. কত বড় রকেট! :
নীলরা চড়েছিলেন অ্যাপোলো ১১-এর ঘাড়ে, আর অ্যাপোলো ১১ চড়েছিলো Saturn V নামক রকেটের ঘাড়ে। সাড়ে ৬ মিলিয়ন পাউন্ডের এই দানবাকৃতির রকেটটি ছিল প্রায় ৩১৬ ফুট লম্বা যা কিনা ৩০৫.১ ফুট আকৃতির স্ট্যাচু অব লিবার্টির চেয়েও বড়!
৪. বেচারা নীল, অলড্রিন এবং মাইক! :
চাঁদে মানুষ সফলভাবে অবতরণ করতে পারবে এই বিশ্বাস তখনকার মানুষের মধ্যে খুব কমই ছিল। অথবা চাঁদে পা রেখে পৃথিবীতে ফিরে আসার মত অসাধ্য কাজকে তখন অনেকেই বিশ্বাস করতে চায়নি। এমনকি মিশনের আগে পৃথিবীতে নীল আর্মস্ট্রং, অলড্রিন এবং মাইক, এই তিনজন মিলে একটি সিদ্ধান্ত নেন। সেটি হচ্ছে পোস্টাল কাভারে তাঁরা সিগনেচার করে সেই সিগনেচার বিক্রি করার জন্য রেখে যাবেন যাতে তাদের পরিবার হাসিমুখে সাধ্যমত বাকি জীবন পার করতে পারেন। কারণ সেই সময় কোনো ইনস্যুরেন্স কোম্পানিই এই তিন নভোচারীর লাইফ ইনস্যুরেন্স করতে সম্মত ছিল না। এমনকি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন অ্যাপোলো উৎক্ষেপনের আগেই নভোচারীদের মৃত্যুর শোকবার্তা লিখে রেখেছিলেন যেন সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জনগণকে অবহিত করতে পারেন। সেখানের প্রথম কথাটিই ছিলো :
‘’Fate has ordained that the men who went to the moon to explore in peace will stay on the moon to rest in peace’’
তাহলে বুঝতেই পারছি আমরা যে সবাই কতটুকু অনিশ্চিত ছিলো এই চন্দ্রাভিযানের সফল সমাপ্তি নিয়ে! কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে সেই কাগজটি ছিঁড়ে ফেলে দিতেই হয়েছিল।
৫. একটু বেশিই দ্রুতগামী! :
অ্যাপোলো ১১ যখন চাঁদের কক্ষপথে চলে আসে তখন মাইক থেকে নীল এবং অলড্রিন আলাদা হয়ে যান । কিন্তু সেই সময়ের পর থেকে একটি বিপত্তি দেখা দেয় । চাঁদের যেই সারফেসে তাঁদের অবতরণের কথা ছিল, সেই জায়গাটি পার হয়ে যায় ৪ সেকেন্ড আগেই এবং এতটুকু সময়ের মধ্যেই তারা নির্দিষ্ট ল্যান্ডিং সাইট থেকে আরও ৪ মাইল দূরে অবতরণ করে। যার নাম হয় ‘সী অব ট্র্যানক্যুয়িলিটি’।
৬. তোমার ক্যালকুলেটর যখন অ্যাপোলো ১১ এর চেয়ে শক্তিশালী:
আচ্ছা 4KB সাইজের একটি RAM দিয়ে কম্পিউটারে কি করতে পারবে তুমি? কিছুই না! কম্পিউটারই থাকবে অচল। কিন্তু অ্যাপোলো ১১ লুনার মডিউলের যে কম্পিউটারটি ছিল, অর্থাৎ যেটিই ছিলো মূল কন্ট্রোলার, সেই কম্পিউটারের RAM ছিল মাত্র ৪ কিলোবাইট। প্রসেসর ছিল মাত্র ২ মেগাহার্জ গতিসম্পন্ন। যা একটি আধুনিক সাদামাটা ক্যালকুলেটরের চেয়েও কম শক্তিসম্পন্ন।
বিশ্বাস হচ্ছে না? হ্যাঁ, তৎকালীন সময়ের কথা বিবেচনা করে এটিই তোমাকে বিশ্বাস করে নিতে হবে।
৭. ভুল তো হতেই পারে! :
আমরা সবাই সেই নীল আর্মস্ট্রংয়ের করা বিখ্যাত উক্তিটি সম্পর্কে জানি ‘’That’s one small step for man,One giant leap for mankind’’। কিন্তু নীল এখানে একটু ব্যাকরণ ভুল করে ফেলেছিলেন। ‘’for man’’ এ একটি ‘a’ বাদ পরে যায়। এইজন্য পরে অবশ্য নীল সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন কারণ ঐ মুহূর্তে নীলের হার্টবিট ছিলো ১১০ বিট/মিনিট। হয়তোবা মিশন কন্ট্রোলে কোনো গোলযোগের কারণে তার ‘a’ শব্দটি শোনা যায়নি। কিন্তু নীল তার এই ভুলকে মোটেও মেনে নিতে পারেননি।
আরো পড়ুন: Motion Graphics vs. Animation: তফাতগুলো জেনে নেই
৮. দরজা লাগালেই বিপদ! :
নীল এবং অলড্রিন দুজনকেই মিশন কন্ট্রোল (Houston during mission) বারবার সতর্ক করে দিয়েছিল যেনো তারা ভুলেও বাইরে থেকে লুনার মডিউল তথা অ্যাপোলো ১১ এর দরজাটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে না দেন। কারণ অ্যাপোলো ১১ এর বাইরে থেকে কোনো হ্যান্ডেল ছিল না। একবার যদি তারা দরজাটি সম্পূর্ণ লাগিয়ে দিতেন তবে তাদেরকে চাঁদের মাটিতেই থেকে যেতে হতো। আসলে বাইরে থেকে বাড়তি হ্যান্ডেল না লাগানোর কারণ ছিল, হিসেব করা মোট ভরের চেয়ে ঐটুকু হ্যান্ডেলের বাড়তি ভর লুনার মডিউলকে সফল অবতরণে বাধা দিতে পারে।
৯. একদিকে জয়, অন্যদিকে পরাজয়! :
তৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়ন কিন্তু আগেই তাদের মানববিহীন যান ‘লুনা ১৫’ পাঠিয়েছিল চাঁদে কিন্তু সেই যানটির ভাগ্য খারাপই বলা চলে। নীল এবং অলড্রিন যখন চাঁদের মাটিতে পাথর সংগ্রহ এবং ছবি তোলায় ব্যস্ত ঠিক তখনই ৭৪০ মাইল দূরে ‘লুনা ১৫’ বিধ্বস্ত হয় যার কম্পন টের পেয়েছিলেন সেই দুই নভোচারী।
১০. নীলের দাদিমা :
নীলের দাদিমা নীলকে সাবধান করে দিয়েছিলেন যেন আশপাশ ভালোভাবে তাকিয়ে তারপর চাঁদের মাটিতে নামে। নীল তার দাদিমাকে আশ্বস্ত করেই পৃথিবী ত্যাগ করেছিলেন।
১১. প্রতিবেশীর ঘরে প্রথম বাক্য :
চাঁদের মাটিতে মানুষ হিসেবে প্রথম কথা কি ছিল জানো?
‘’The Eagle has landed’’। বক্তা ছিলেন নীল নিজেই। তবে অলড্রিনের ‘Contact light on’ কথাটি মাটি স্পর্শ করার পূর্বে নাকি মাটি স্পর্শ করার পর সেটি এখনও সমাধানহীন।
১২. কলম যখন রক্ষক! :
সবশেষে যখন পৃথিবীর উদ্দেশ্যে ফিরে যাওয়ার জন্য নীল এবং অলড্রিন তাদের অ্যাপোলো নভোযানে উঠলেন, তখন অলড্রিন বাঁধিয়ে ফেললেন এক ভয়ংকর বিপত্তি। ইঞ্জিনের সুইচটি অন করার সময় ভেঙেই ফেললেন। আর চালু হচ্ছিলো না। বেশ চিন্তায় পরে গেলো মিশন কন্ট্রোলের সবাই। অপরদিকে চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণরত মাইক তখন বেশ ভয় পেয়ে গেলেন যে পৃথিবীতে মনে হয় তাকে একাই ফিরতে হবে। নীল এবং অলড্রিন এই সমাধানের উপায় নাসার হাতে ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলেন। কিন্তু নাসার পক্ষ থেকেও কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। আর তখনই অলড্রিন ‘Enough is enough’ বলে তার কাঁধের পাশের পকেট থেকে একটি কলম বের করে ইঞ্জিনের ভাঙা সুইচের জায়গায় প্রতিস্থাপন করলেন। আশ্চর্যজনকভাবে সেটি কাজ করলো এবং ইঞ্জিনও চালু হলো।
১৩. নীল যখন আমার মতো :
অ্যাপোলো ১১ মিশনের যতগুলো ছবি তোমরা দেখতে পাও তার বেশিরভাগই কিন্তু অলড্রিনের। কারণ নীল অন্যের ছবি তুলতেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।
১৪. কীসের বার্তা দিয়েছিল নাসা?
প্রথম অ্যাপোলো মিশনে চাঁদের মাটিতে একটি স্মৃতিসংবলিত মেডেল রেখে আসা হয় যা ছিলো প্রথম মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের স্মরণে। এছাড়া চাঁদে পৃথিবী থেকে আসা প্রাণী হিসেবে মানুষের পা রাখার বার্তা স্বরুপ একটি প্লেট রেখে আসা হয় যেখানে লিখা ছিল-
‘’Here men from the planet Earth first set foot upon the moon, July 1969 AD. We came in peace for all mankind’’। তবে এরকম বার্তা ফেলে আসার কারণ হিসেবে বোঝাই যায় যে পরবর্তী কোনো কালে ভীনগ্রহের প্রাণীরা যেনো তা দেখতে পারে এবং পাঠোদ্ধার করে মানুষ আসার কথা জানতে পারে।
১৫. পতাকার মন্দ কপাল! :
আচ্ছা সেই আমেরিকার পতাকার কী হাল হয়েছিল জানো? লুনার মডিউল যখন চাঁদের মাটি ছাড়ার উদ্দেশ্যে সজোরে উর্ধ্বগামী হচ্ছিল, ঠিক তখনই থ্রাস্টারের প্রবল বেগে পতাকাটিকে দূরে ছিটকে যেতে দেখেছিলেন অলড্রিন।
১৬. এত ডলার পেলেন অলড্রিন! :
পৃথিবীতে ফিরে এসে অলড্রিন চাঁদে যাওয়ার জন্য পারিশ্রমিক দাবি করেন নাসার কাছে। নাসা দায়মুক্ত হয়েছিল অবশ্য অলড্রিনকে ৩৩ ডলার পারিশ্রমিক প্রদান করে!
১৭. হয়ে যাক একটুখানি মজা!
অ্যাপোলো ১২ এর নভোচারী Pete Conrad কিন্তু নীলের চেয়ে উচ্চতায় বেশ কম ছিলেন। তাই চাঁদে পা রাখার সময় বেশ মজা করেই বলেছিলেন ‘’Whoopie! Man, that may have been a small one for Neil, but that’s a long one for me’’
১৮. সবচেয়ে দূরের পথ :
অ্যাপোলো ১৩ নভোযানটি চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ১৯৭০ সালের ১৫ই এপ্রিল। তবে মনে রেখো অ্যাপোলো ১৩-ই একমাত্র প্রথম মনুষ্যবাহী কোনো নভোযান যা পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের পথ ভ্রমণ করেছে। যা প্রায় ২,৪৮,৬৫৫ মাইল। অন্যান্য অ্যাপোলো নভোযানের চেয়ে এটিই চাঁদের সবচেয়ে দূরের পথ অতিক্রম করার রেকর্ড করে। যদিও অক্সিজেন ট্যাংক বিষ্ফোরণের কারণে তাদেরকে দ্রুত পৃথিবীর দিকে রওনা দিতে হয়।
১৯. গ্যালিলিও যদি বেঁচে থাকতেন! :
অ্যাপোলো ১৫ এর মিশন পরিচালক David Scott চাঁদে যাওয়ার সময় সাথে করে একটি কবুতরের পালক এবং হাতুরী নিয়ে গিয়েছিলেন এবং মুনওয়াকের শেষ পর্যায়ে তিনি গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্রটি প্রমাণ করে দেখেন যে গ্যালিলিও সঠিক ছিলেন কিনা।
তবে পরীক্ষায় গ্যালিলিও পাশ করেছিলেন!
২০. চাঁদের মাটিতে প্রথম বিজ্ঞানী :
সকল চন্দ্রাভিযানের মধ্যে যতজন চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিলেন তাঁদের মধ্যে একমাত্র বিজ্ঞানী ছিলেন ১৯৭২ সালের ৭ই ডিসেম্বর সর্বশেষ মিশন অ্যাপোলো ১৭ এর ক্রু Harrison Schmitt। তিনি ছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ। তিনিই সর্বপ্রথম চাঁদে কমলা রঙের মাটি আবিষ্কার করেন।
২১. বিশ্বাসের প্রয়োজনে :
সকল অ্যাপোলো মিশনেই নভোচারীরা তাঁদের ল্যান্ডিং সাইটে ‘লেজার বীম’ স্থাপন করে এসেছিলেন যাতে করে চাঁদে অবতরণ নিয়ে কেউ সন্দেহ প্রকাশ করলে পৃথিবী থেকে চাঁদের ঐ নির্দিষ্ট জায়গায় লেজার ধরলে তা প্রতিফলিত হয়।
২২. বিলিয়ন ডলারের অ্যাপোলো মিশন :
‘’Apollo Project’’ নামে পরিচিত পুরো অ্যাপোলো মিশনের জন্য বেশ বড় একটি বাজেট ছিল আমেরিকা সরকারের। ১৯৬১-১৯৭২ সাল পর্যন্ত সব অ্যাপোলো মিশনের সর্বমোট খরচ ছিল প্রায় ২৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমান ১০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমমূল্য। রাশিয়ার সাথে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে আমেরিকা সরকার তখন বিন্দুমাত্রও কার্পণ্য করে নি!
#নভোচারীদের বর্তমান অবস্থা :
চাঁদে পদচিহ্ন আঁকা ১১ জন নভোচারী এবং ১ জন বিজ্ঞানীর মধ্যে অ্যাপোলো ১১ মিশনের এডউইন অলড্রিন, অ্যাপোলো ১২ মিশনের অ্যালান বীন, অ্যাপোলো ১৫ মিশনের ড্যাভিড স্কট, অ্যাপোলো ১৬ মিশনের জন ইয়ং এবং চার্লস ডিউক এখনো জীবিত আছেন । সেই সাথে প্রতিটি মিশনেই চাঁদের অরবিটে প্রদক্ষিণরত মাদারশিপের কমান্ডার মাইক কলিন্স (অ্যাপোলো ১১), ডিক গর্ডন (অ্যাপোলো ১২), অ্যাল ওর্ডেন (অ্যাপোলো ১৫) এবং ক্যান ম্যাটিংলি (অ্যাপোলো ১৬)সহ সবাই বেঁচে আছেন। সর্বপ্রথম চাঁদের মাটিতে পা রাখা নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং পরলোকগমন করেন ২০১২ সালের ২৫শে আগস্ট এবং সর্বশেষ চাঁদের মাটিতে পা রাখা নভোচারী।
অ্যান্ড্রু সেরনানের মৃত্যু হয় ২০১৭ সালের ১৬ই জানুয়ারী। দুইজনেরই বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
#আবার কবে যাবে মানুষ চাঁদে?
চলতি বছরের সর্বশেষ ২৪শে এপ্রিল নাসার ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে আবারও নভোচারী চাঁদের পৃষ্ঠে পা রাখতে যাচ্ছে ‘অরিয়ন’ নামক স্পেসশিপের মাধ্যমে। ভবিষ্যতে মঙ্গলে বসতি গড়ার অংশ হিসেবে এই চন্দ্রাভিযান হবে একটি প্রস্তুতি পর্ব যেখানে মঙ্গলের পরিবেশে টিকে থাকার একটি সাময়িক মহড়া সম্পন্ন হবে। মহাকাশ আর রহস্যপ্রেমীদের জন্য এটি খুবই তৃপ্তিদায়ক একটি খবর।
রূপকথার বিভিন্ন গল্পে চাঁদ দিয়ে সবসময় সবকিছুর সৌন্দর্য্যকে তুলনা করা হতো। চাঁদ ছিল মানুষের কাছে এক রহস্যের আঁধার । অনেক গল্প অনেক মিথ ছিল চাঁদকে নিয়ে। মানুষ সেই রহস্যের সমাধান করে এসেছে। অসাধ্যকে জয় করে এসেছে। আমাদের মধ্যে কে না চায় মহাশূন্যে ভেসে বেড়াতে? নীল গ্রহটাকে মন ভরে দেখতে? নভোচারীদের সবাই-ই ছিলেন অধ্যবসায়ের পূজারী। জীবনকে অনেক বড় করে দেখতেন তারা, যেখানে সম্ভাবনার বিশালতায় জীবনের অর্থকে খুঁজে বের করতে পেরেছেন। ভয়কে দিয়েছেন অনির্দিষ্ট সময়ের ছুটি, সাহসকে করেছেন ব্রত। চন্দ্রজয় করতে না পারলেও আমরা কিন্তু এমন অনেক কিছুই করতে পারি যা চাঁদের উজ্জ্বলতার চেয়েও কম নয়। আবার আমাদের মাঝেই লুকিয়ে আছে অনেক ভবিষ্যৎ নভোচারী। প্রয়োজন শুধু অধ্যবসায়। চন্দ্রজয় আমাদেরকে মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এনে দিয়েছে। অসাধ্যকে বুড়ো আঙুল দেখানোর সাহস জুগিয়েছে।
এমন এক গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে যদি আমরা অল্পই জ্ঞান রাখি তাহলে মানুষ হিসেবে সেই ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অংশীদার হবো কী করে?
[দেখে নিতে পারো নাসার ডকুমেন্টারি https://youtu.be/GNJpoP642wc ]
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
আপনার কমেন্ট লিখুন