বাংলা অঞ্চলের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। বাংলার প্রাচীন জনপদ ছিল অনেক অংশে বিভক্ত। সেসব অঞ্চল স্বাধীনভাবে চলতো। শশাঙ্ক, পাল ও সেন রাজারা গৌড়কে কেন্দ্র করে সমগ্র জনপদকে একত্র করার চেষ্টা করলেও, আদতে তা সম্ভব হয় নি। অথচ যে বঙ্গ অঞ্চল অনার্য বলে ছিল ঘৃণিত ও সবদিক দিয়ে পেছানো, সেই বঙ্গের নামেই পাঠান আমলে বাংলার সকল জনপদকে একত্র করা সম্ভব হলো। এরপর আকবরের আমলে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত হলো সুবা বাংলা। যদিও আকবরের আমলের বাংলা বর্তমান থেকে বড় ছিল। কিন্তু সে অঞ্চলই আজকের এই বাংলা।
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
এই বাংলা অঞ্চল প্রাচীন আমলে নানা রাজনৈতিক শাসকদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। কীভাবে প্রাচীন জনপদ থেকে একত্রিত হয়ে বাংলা অঞ্চল গঠিত হলো কিংবা কীভাবেই-বা এই অঞ্চল বিভিন্ন শাসকদের দ্বারা শাসিত হলো, এ সব বিষয় নিয়েই এ লেখাটি। বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা ও চাকরির পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান অংশে এ টপিকগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে চলুন, মূল আলোচনায় প্রবেশ করি।
বাংলার প্রাচীন জনপদ
প্রাচীনকালে এই বাংলা অঞ্চল বর্তমানের মতো এরকম বৃহৎ অঞ্চল ছিল না। প্রাচীন বাংলা অঞ্চল অনেকগুলো ছোট ছোট জনপদ নিয়ে গঠিত হয়েছিল। এই অংশে আলোচনা করব বাংলার সেসব প্রাচীন জনপদ নিয়ে। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলো হলো:
- বরেন্দ্র
- পুন্ড্র
- গৌড়
- রাঢ়
- বঙ্গ
- কামরূপ
- হরিকেল
- সমতট
- চন্দ্রদ্বীপ
এখন চলুন, বিস্তারিতভাবে এসব জনপদ নিয়ে জেনে নেয়া যাওয়া যাক।
বরেন্দ্র
বরেন্দ্র অঞ্চল হলো পুণ্ড্রবর্ধনের কেন্দ্রস্থল। এটি বর্তমানের বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী ও পাবনা (সম্ভবত) অঞ্চল জুরে বিস্তৃত ছিল। মধ্যযুগের মুসলিম ঐতিহাসিকেরা বরেন্দ্র অঞ্চলকে বরিন্দ নামে অবিহিত করতেন। পাল রাজারা একে তাদের পিতৃভূমি হিসেবে অভিহিত করতেন। সেন রাজাদের শিলালিপিতে বরেন্দ্র অঞ্চলের বর্ণনা পাওয়া যায়।
পুণ্ড্র
বাংলা অঞ্চলে পুণ্ড্র জনপদ হচ্ছে সর্বাধিক প্রাচীনতম জনপদ। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের দিকে এই অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায়। তখন এ অঞ্চলের পুন্দনগলের উল্লেখ পাওয়া যায়। এ পুন্দনগল ছিল সে সময়কার পুণ্ড্রের রাজধানী যা বর্তমান সময়ে বগুড়ার মহাস্থানগড়। এ জনপদের সমৃদ্ধি বাড়ার ফলে এটি পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকের দিকে পুণ্ড্রবর্ধনে রূপান্তর হয়। তখন এ অঞ্চলের অন্তর্গত ছিল: বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা।
ধারণা করা হয় যে, রাজমহল-গঙ্গা-ভাগীরথী থেকে শুরু করে করতোয়া পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের পুরোটাই পুণ্ড্রবর্ধনের অঙ্গীভূত ছিল। পরবর্তীতে এ অঞ্চলের সীমানা আরও বৃদ্ধি পায়।
গৌড়
গৌড় জনপদও অনেক প্রাচীন একটি জনপদ। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে এই অঞ্চলে উৎপন্ন অনেক শিল্প ও কৃষিজাত পণ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর থেকে ধারণা করা যায় যে, গৌড় অঞ্চল কৃষি ও শিল্পে বেশ অগ্রগতি করেছিল। এ অঞ্চলের ইতিহাসের খোঁজ তৃতীয় থেকে চতুর্থ শতকে এর নাগরিকদের উপাদান থেকে পাওয়া যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে মুর্শিদাবাদের বীরভূম অঞ্চলই গৌড় অঞ্চল ছিল। এরপর এটি সম্প্রসারিত হয় মালদহ ও বর্ধমানের সংযুক্তির পর।
সপ্তম শতকে শশাঙ্ক রাজার শাসনামলে মুর্শিদাবাদ জেলার রাঙামাটি অঞ্চলটি ছিল এ জনপদের রাজধানী। বর্তমান সময়ে আমরা যে অংশকে পশ্চিমবঙ্গ ধরি অর্থাৎ মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান- এ অঞ্চলগুলো মিলিয়েই ছিল গৌড়ের রাজ্য। তবে, ইতিহাসে গৌড় বলতে কখনও কখনও সমগ্র বাংলাদেশকেও বোঝানো হতো।
রাঢ়
রাঢ় নামক জনপদের সন্ধান পাওয়া যায় আচারাঙ্গ সুত্র নামের এক প্রাচীন জৈন পুথিতে। এ জনপদের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মহাবীর তার কয়েকজন অনুসারীকে সাথে নিয়ে এ জনপদে আসেন। তাদের আগমনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্ম প্রচার। তখন এ জনপদে রাস্তাঘাট তেমন উন্নত ছিল না। এ অঞ্চলের লোকজন ছিল নিষ্ঠুর প্রকৃতির। তারা সেসব জৈন ধর্ম প্রচারকদের প্রতি কুকুর লেলিয়ে দেয়। রাঢ় অঞ্চলের দুটি বিভাগ ছিল। সেগুলো হলো:
- বজ্রভূমি
- সুন্ধভূমি
এ অঞ্চলের রাজধানী ছিল কোটীবর্ষ।
বঙ্গ
বঙ্গ খুবই প্রাচীন জনপদের একটি। অনেক পুরনো দুটি পুথিতে বঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে বঙ্গ অঞ্চলকে মগধ ও কলিঙ্গ জনপদের পাশের জনপদ বলে অভিহিত করা হয়েছিল। পাশাপাশি, মহাভারত থেকে জানা যায় যে, বঙ্গ অঞ্চলটি পুণ্ড্র, তাম্রলিপি ও সুন্ধ জনপদের আশেপাশে ছিল। পরবর্তীতে নানান নথি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, গঙ্গা-ভাগীরথীর তীরেই বঙ্গের অবস্থান ছিল।
একাদশ শতকের দিকে বঙ্গের দুটি বিভাগ ছিল বলে ধারণা করা হয়। বিভাগ দুটির একটি হলো বঙ্গের উত্তরাঞ্চল নিয়ে গঠিত এবং অন্যটি বঙ্গের দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে গঠিত। আবার, কেশবসেন ও বিস্বরূপসেনের আমলেও বঙ্গের দুটি বিভাগ ছিল। সেগুলো হলো:
- বিক্রমপুর
- নাব্যমণ্ডল
বিক্রমপুর অঞ্চল বর্তমান সময়কার বিক্রমপুর পরগনা, যা কিনা মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত এবং সাথে ছিল ইদিলপুর পরগনার কিছু অংশ। অন্যদিকে, বাখরগঞ্জ জেলা এবং আরও পূর্বাঞ্চলের সমুদ্র পর্যন্ত অংশ নিয়ে ছিল নাব্যমণ্ডল।
কামরূপ
কামরূপ বাংলার প্রাচীন জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আসামের বৃহত্তর গোয়ালপাড়া জেলা, বৃহত্তর কামরূপ জেলা নিয়ে গঠিত। কালিকাপুরাণ থেকে জানা যায়, এটির অবস্থান করতোয়া নদীর পূর্বে এবং এ অঞ্চলটি পূর্বদিকে দিক্কারবাসিনী দ্বারা ঘেরা ছিল, যা বর্তমান দিকরাই নদী নামে পরিচিত।
চতুর্থ শতকে সমুদ্র গুপ্তের একাহাবাদ স্তম্ভলিপিতে কামরূপের নামের খোঁজ পাওয়া যায়। জানা যায়, এক সময় কামরূপ অঞ্চলে বর্তমান ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা, ভুটান, রংপুর ও কুচবিহারের কিছু অঞ্চল যুক্ত ছিল।
হরিকেল
হরিকেল হলো বাংলা অঞ্চলের পূর্ব সীমানার একটি জনপদ। এ অঞ্চলটি তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপ বা বাখরগঞ্জ অঞ্চলের সংলগ্ন ছিল। জানা যায় যে, সপ্তম-অষ্টম শতক থেকে দশম-একাদশ শতক পর্যন্ত হরিকেল ছিল একটি স্বতন্ত্র রাজ্য। কিন্তু একটা সময় ত্রৈলোক্যচন্দ্র চন্দ্রদ্বীপ দখল করে। চন্দ্রদ্বীপ দখলের পর হরিকেল বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
সমতট
সমতটের উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীন আমলের পুথি থেকে। চতুর্থ ও ষষ্ঠ শতকের পুথিতে সমতট নামের একটি জনপদের খোঁজ পাওয়া যায়। তখনকার সময়ে ত্রিপুরা অঞ্চল পুরোটাই সমতটের অঙ্গীভূত ছিল। জানা যায়, এ অঞ্চলের সীমানা চব্বিশ পরগনা থেকে ত্রিপুরা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
চন্দ্রদ্বীপ
চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এটি ছিল মধ্যযুগের একটি নামকরা অঞ্চল। আইন-ই-আকবরী গ্রন্থের মাধ্যমে জানা যায়, গ্রন্থে উল্লিখিত বাকলা পরগনার বাকলা-ই, যা কিনা বর্তমানে বাখরগঞ্জ নামে পরিচিত, হলো সেই চন্দ্রদ্বীপ অঞ্চল।
রাজনৈতিক অবস্থা
এ অংশে আলোচনা করবো, প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা। প্রাচীন বাংলায় বেশ কয়েকটি স্বাধীন রাজ্য বা সাম্রাজ্যের খোঁজ পাওয়া যায়। সেসব রাজ্য তাদের ক্ষমতা ও অঞ্চল বৃদ্ধির স্বার্থে দখল করতে থাকে বাংলার বিভিন্ন অংশ। এরকম কিছু সাম্রাজ্য হলো:
- মৌর্য সাম্রাজ্য
- গুপ্ত সাম্রাজ্য
- পাল সাম্রাজ্য
- সেন সাম্রাজ্য
এখন চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নিই, এসব অঞ্চলের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে।
মৌর্য সাম্রাজ্য
খ্রিস্টপূর্ব ৩২১ সালের দিকে মৌর্য সাম্রাজ্যের সূচনার কথা জানা যায়। মূলত মগধ রাজ্যের কর্তৃত্ব নেয়ার মাধ্যমেই সূত্রপাত ঘটে মৌর্য সাম্রাজ্যের। ঐতিহাসিকদের মতে, ভারতের গয়া ও পাটনা কেন্দ্রিক এ সাম্রাজ্য থাকলেও এর বিস্তার বাংলাদেশ পর্যন্ত ছিল। মৌর্য সম্রাট অশোকের শাসনামলে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ২৬৯ থেকে ২৩২ সাল পর্যন্ত উত্তর বাংলার অনেক বড় একটি অংশ মৌর্য সাম্রাজ্যের হাতে চলে আসে বলে জানা যায়।
তবে, এ ধারণা উড়িয়ে দেবার মতো নয়। কেননা, এর পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে। মহাস্থানগড়ের নিকটবর্তী স্থানে প্রাপ্ত একটি শিলালিপির ভাষ্য হতে বাংলাদেশের মৌর্য শাসনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, এ শিলালিপিতে তৎকালীন শাসক অশোকের উল্লেখ পাওয়া যায় না। কিন্তু এই শিলালিপির ভাষ্য বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে ধারণা করা যায়।
আবার, অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, স্বাধীনতাপ্রিয় বাংলার মানুষ মৌর্য সাম্রাজ্যের কাছে অধীনতা স্বীকার করে নি। এক্ষেত্রে তারা প্রমাণ হিসেবে গঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা গঙ্গারিডি শহরের কথা উল্লেখ করে। যদিও এ বিষয় নিয়ে নানান মত প্রচলিত রয়েছে।
গুপ্ত সাম্রাজ্য
গুপ্ত সাম্রাজ্য প্রায় চতুর্থ শতকের দিকের একটি সাম্রাজ্য। এটি প্রথমে উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুর দিকের শাসকগণ তেমন জনপ্রিয়তা না পেলেও সম্রাট প্রথম চন্দ্রগুপ্ত বেশ বিখ্যাত শাসক হয়ে ওঠেন। ওনার শাসনামল ছিল খ্রিস্টীয় ৩২০ থেকে ৩৪০ অব্দ তথা ৪০ বছর। প্রথম চন্দ্রগুপ্তের শাসনামল থেকেই গুপ্ত সাম্রাজ্যের অত্যাধিক অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়।
প্রথম চন্দ্রগুপ্ত, সমুদ্রগুপ্ত, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য, প্রথম কুমারগুপ্ত মহেন্দ্রাদিত্য, স্কন্ধগুপ্ত বিক্রমাদিত্য প্রমুখ ছিলেন এ সাম্রাজ্যের জনপ্রিয় সম্রাট। এদের পর এ সাম্রাজ্য দুর্বল হতে শুরু করে। তারপর এ সাম্রাজ্যে হুনদের আক্রমণ হয় এবং সমাপ্তি ঘটে গুপ্ত সাম্রাজ্যের।
প্রাচীন সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে গুপ্ত সাম্রাজ্যের লিপিতাত্বিক সূত্রই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। সুসুনিয়া গিরিলিপি, সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তি, প্রথম কুমারগুপ্তের বৈগ্রাম, ধনাইদহ, দামোদরপুর, সুলতানপুর ও জগদীশপুর তাম্রশাসন, বুধগুপ্তের দামোদরপুর তাম্রশাসন ও পাহাড়পুর তাম্রশাসন, বৈন্যগুপ্তের গুনাইঘর তাম্রশাসন এর পাশাপাশি প্রাপ্ত গুপ্ত মুদ্রাগুলো থেকেও এ সময়ের ইতিহাস বেশ ভালোভাবেই চিত্রায়িত করা যায়।
পাল সাম্রাজ্য
হুন আক্রমণে গুপ্ত সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ার পর বাংলার সভ্যতার ইতিহাসে একটি মারাত্মক বিশৃঙ্খলার মুখে পড়ে। ইতিহাসে একে মাৎস্যন্যায় নামে অভিহিত করে। পাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল এই অরাজকতার অবসান ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন পাল রাজবংশ। তবে, গোপালের উত্থান ও পাল রাজবংশ প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে সরাসরি তেমন কেনো তথ্য পাওয়া যায় না। এ সময়ের ইতিহাস রচনার জন্য বিভিন্ন লিপি ও তাম্রশাসনের সহায়তা নেওয়া হয়। অনেক ইতিহাসবিদের ধারণা, ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গোপাল জনগণের রাজা নির্বাচিত হয়েছিলেন।
গোপাল ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে এ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর ক্ষমতায় আসেন গোপালের পুত্র ধর্মপাল এবং তিনি বাংলাকে উত্তর ভারতের শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করেন। তাই ধর্মপালকে পাল বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা বলা হয়। ৭৮১ থেকে ৮২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এ অঞ্চল শাসন করেন।
দেবপালের মৃত্যুর পর পাল রাজবংশ একদম দুর্বল হয়ে পরে। ফলে এর কিছু অংশ কম্বোজরাজ রাজ্যপালের অধীনে চলে যায়। ১০৭৫ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহী কৈবর্ত সম্প্রদায়ের সাথে সামন্তবর্গ একাত্মতা ঘোষণা করেন। তাঁরা উচ্চ-পদস্থ রাজকর্মচারী দিব্যের নেতৃত্বে অত্যাচারী পালরাজা দ্বিতীয় মহীপালকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। বাংলার ইতিহাসে এই প্রতিরোধ কৈবর্ত বিদ্রোহ নামে পরিচিত। তবে, পাল রাজত্ব পরবর্তীতে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় মহীপালের ভাই রামপাল।
সেন সাম্রাজ্য
বাংলার ইতিহাসের একটি বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ শাসনকাল হচ্ছে সেন শাসনামল। সেন সাম্রাজ্যের সূচনা হয় এগার শতকের শেষ দিকে আনুমানিক ১০৯৭ খ্রিস্টাব্দে এবং এ সেন সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ছিল ১২০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। সেন রাজাদের আগমন ঘটেছিল দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্য থেকে। এ রাজবংশ বেশ ছোট ছিল।
সেন সাম্রাজ্যের সূচনা ঘটে সম্রাট বিজয় সেনের হাত ধরে। তিনি পাল রাজাদের দুর্বলতা ও চন্দ্র রাজাদের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে গৌড় ও বঙ্গ জনপদে নিজের রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। পাল শাসনের অন্তিমকালে রামপালের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিয়ে বিজয় সেন দক্ষিণপূর্ববঙ্গের বর্মদের পরাজিত করেন। সেন রাজবংশের শাসনকালীন রাজারা হলেন: বিজয় সেন, বল্লাল সেন ও লক্ষণ সেন।
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেন বেশ ভালোভাবেই রাজ্য পরিচালনা করতে সক্ষম হন এবং বিভিন্ন যুদ্ধেও বরারই জয়ী হন। কিন্তু ১১৯৬ সালের দিকে সুন্দরবনের ডোম্মনপাল স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। লক্ষণ সেন তাকে দমন করতে পারেননি। এরপরপরই দিল্লি সালতানাতের বিখ্যাত সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি ১২০৪ সালে মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী সেনা নিয়ে নদীয়ার রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বাংলা জয় করেন। ফলে, তার বিরাট পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ইতি টানতে হয় সেন রাজবংশীয় সাম্রাজ্যের। এরপর বখতিয়ার খলজির হাত ধরেই বাংলায় মুসলিম শাসনের সূত্রপাত ঘটে।
৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৪
ফুল সিলেবাস কোর্সে যা যা থাকছে:
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর
এ লেখা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন যা প্রায়শই বিভিন্ন পরীক্ষায় এসে থাকে সেগুলো দেয়া হলো:
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম সাম্রাজ্য কোনটি?
মৌর্য সাম্রাজ্য
মাৎস্যন্যায় কী?
হুন আক্রমণে শক্তিশালী গুপ্ত সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ার পর বাংলার সভ্যতার ইতিহাসে একটি মারাত্মক বিশৃঙ্খলার মুখে পড়ে। ইতিহাসে একে মাৎস্যন্যায় নামে অভিহিত করে।
পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
গোপাল
পাল বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কে?
ধর্মপাল
কৈবর্ত বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন?
দিব্য
কৈবর্ত বিদ্রোহ কী?
১০৭৫ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহী কৈবর্ত সম্প্রদায়ের সাথে সামন্তবর্গ একাত্মতা ঘোষণা করেন। তাঁরা উচ্চ-পদস্থ রাজকর্মচারী দিব্যের নেতৃত্বে অত্যাচারী পালরাজা দ্বিতীয় মহীপালকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। বাংলার ইতিহাসে এই প্রতিরোধ কৈবর্ত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
বিক্রমশীলা মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন কে?
ধর্মপাল
লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে কে?
ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি
শেষ কথা
এ লেখায় সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল তথা জনপদ ও সাম্রাজ্য নিয়ে। এসব ইতিহাসই আমাদের বাংলা অঞ্চলকে সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখে এবং ধীরে ধীরে বাংলা অঞ্চল বর্তমান সময়ের অবস্থায় এসে পৌঁছে। তাই এ ইতিহাস জানা আমাদের জন্য যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা বলাই বাহুল্য।
সুত্র তালিকা:
- বাঙালির ইতিহাস, নীহাররঞ্জন রায়
- বাঙালির ইতিহাস, সুভাষ মুখোপাধ্যায়
- বাংলা দেশের ইতিহাস, শ্রী রমেশচন্দ্র মজুমদার
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- ঘরে বসে Spoken English Course (by Munzereen Shahid)
- Microsoft Word Course (by Sadman Sadik)
- Microsoft Excel Course (by Abtahi Iptesam)
- Microsoft PowerPoint Course (by Sadman Sadik)
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle Course
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course (by Tahsan Khan)
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন