সাম্যের গান গাই –
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
কবিতার ছন্দে সাম্যের গান গাওয়া এই মানুষটি আর কেউ নয়, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় এই বাঙালি কবি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ। কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাগুলো একদিকে যেমন প্রাণচঞ্চল, অন্যদিকে তার বিদ্রোহী চেতনার স্বাক্ষর। শুধু তাই নয়, তার সংগ্রামী কর্মজীবনের গল্প মানবজীবনে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা জোগায়।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে, বিসিএস ও অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার বাংলা সাহিত্য অংশে প্রায়ই কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী ও সাহিত্যকর্ম থেকে প্রশ্ন আসে। তাই এই ব্লগে থাকছে কাজী নজরুল ইসলাম কবিতার তালিকাসহ, তার অন্যান্য সাহিত্যকর্মের নাম এবং বৈচিত্র্যময় কর্মজীবন সম্পর্কে বিস্তারিত। এছাড়াও কাজী নজরুল ইসলাম কে কবে বাংলাদেশে আনা হয়? -এর মতো এমন সব গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর পাবেন ব্লগটি শেষ পর্যন্ত পড়ে।
কাজী নজরুল ইসলাম কে ছিলেন?
১৮৯৯ সালের ২৪ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুলের জন্মের পূর্বে তার একাধিক ভাইবোন মারা যায়। এরপর বাবা-মায়ের ৬ষ্ঠ সন্তান হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম।
১৯০৮ সালে যখন কাজী নজরুলের বয়স মাত্র নয় বছর, তখন তার পিতার মৃত্যু হয়। পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তার পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হয়, কারণ মাত্র দশ বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজে নামতে হয় তাকে। জীবনের প্রথম প্রহরে সীমাহীন দুঃখের সম্মুখীন হওয়ার, তার ডাক নাম ছিলো ‘দুখু মিয়া’। তখন হয়তো কেউ ভাবতেই পারেনি, একদিন এই দুখু মিয়াই হবেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী
নাম | কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) |
জন্ম তারিখ | ইংরেজি: ২৪শে মে, ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দ বাংলা: ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ |
জন্মস্থান | পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে |
বাবা ও মায়ের নাম | বাবা: কাজী ফকির আহমেদ মা: জাহেদা খাতুন |
ডাক নাম | দুখু মিয়া |
উপাধি / অন্য নাম | জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি |
পেশা | কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার ও সম্পাদক |
সম্পাদিত পত্রিকা | নবযুগ, ধূমকেতু, লাঙ্গল |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | চল্ চল্ চল্, বিদ্রোহী, নজরুলগীতি, অগ্নিবীণা, বাঁধন হারা, ধূমকেতু, বিষের বাঁশি, সাম্যবাদী প্রভৃতি |
পুরস্কার | জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯৪৫), পদ্মভূষণ (১৯৬০), একুশে পদক (১৯৭৬), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৭) |
মৃত্যু | তারিখ: ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুস্থান: ঢাকা, বাংলাদেশ বয়স: ৭৭ বছর মৃত্যুর কারণ: পিক্স ডিজিজ |
কর্মজীবন: দুখু মিয়া থেকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হয়ে উঠা
দুখু মিয়া থেকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হয়ে উঠার পথ খুব একটা সহজ ছিলো না। কারণ বাবার মৃত্যুর পর, মাত্র ১০ বছর বয়স থেকে সংসারের হাল ধরার জন্য কাজ করতে শুরু হয় তাকে। বাবার জায়গায় পালোয়ান মাজারের সেবক ও মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করা থেকে শুরু করে, জীবিকার তাগিদে একটা সময় রুটির দোকানেও কাজ করেছিলেন কবি নজরুল।
লেটোর দলে প্রবেশ
১৯০৯ থেকে ১৯১০, এই দু’বছর জীবন-জীবিকার সংগ্রামে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিলেন নজরুল। ঠিক সেই সময়ই লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি যোগ দেন লেটো দলে এবং লেটোদলে গান ও নাটক রচনা করে সামান্য অর্থোপার্জন করতেও শুরু করেন।
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
প্রসাদপুরের বাংলোতে বাবুর্চির কাজ
পরবর্তীতে কবিগানের আসরে যোগ দেন নজরুল, সেই সাথে পালাগান লিখতেও শুরু করেন। নিজের লিখা সুরে ঢাকঢোল বাজিয়ে গানও গাইতেন। এমনই এক শীতের রাতে কবিগানের আসরে বর্ধমান জেলার অণ্ডালের ব্রাঞ্চলাইনের একজন বাঙালি ক্রিশ্চান গার্ড সাহেব তাকে গান গাইতে শুনে মুগ্ধ হন এবং তার প্রসাদপুরের বাংলোতে বাবুর্চির কাজ দেন। তবে, কিছু দিনের মধ্যেই এক হাঙ্গামার কারণে গার্ড সাহেবের দেওয়া বাবুর্চির কাজ ছেড়ে দেন নজরুল।
রুটির দোকানে কাজ
অতঃপর ১৯১৩ সালে, নজরুল আসানসোলে চলে আসেন এবং সেখানকার ওয়াহেদের চা-রুটির দোকানে রুটি বানানোর কাজ শুরু করেন। সেই রুটির দোকানে কাজ করে খাওয়া-দাওয়া ছাড়া মাসে মাত্র ৫ টাকা মাইনে পেতেন। রাতে যে সামান্য সময়ের জন্য ছুটি পেতেন, সেই সময়টা বই পড়ে পার করে দিতেন।
সেনাবাহিনীতে যোগদান
১৯১৭ সালে বাঙালি পলটনের হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন নজরুল। ১৯১৭ থেকে ১৯২০ পর্যন্ত দীর্ঘ আড়াই বছর সামরিক বাহিনীতে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের হয়ে কাজ করেন, এমন কি ১ম মহাযুদ্ধেও অংশ করেন তিনি। এ সময় কাজী নজরুল সাধারণ সৈনিক হতে ব্যাটেলিয়ন কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত পদন্নতি পান। তবে ১৯২০ সালে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর তিনি সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন।
বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির সাথে কাজ
কলকাতায় ফিরে ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস শুরু করেন নজরুল । এই সময় থেকেই তার সাহিত্য জীবনের মূল কাজগুলো শুরু হয়।
নবযুগ পত্রিকায় কাজ
১৯২০ সালে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কলিকাতা থেকে নবযুগ নামক একটি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক ছিলেন কবি নজরুল। এই পত্রিকার মাধ্যমেই তিনি নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করেন।
ধুমকেতু পত্রিকায় লিখে জেলের জীবন
১৯২১ সালে নজরুল লেখেন কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’ আর এর এক বছর পর ১৯২২ সালে তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় অর্ধসাপ্তাহিক পত্রিকা ধূমকেতু। তবে, ধুমকেতু পত্রিকায় তৎকালীন ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে লেখার অপরাধে ১৩ মাস জেলে থাকতে হয়েছিল তাকে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
সরকারি চাকরি প্রস্তুতি বেসিক কোর্স
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম
কাজী নজরুল ছিলেন একাধারে একজন কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার ও সম্পাদক। শুধু কবিতা ও সঙ্গীতই না, গল্প-উপন্যাস, নাটকসহ সাহিত্য ও শিল্পের সব শাখায় তার আগমন ছিলো ধূমকেতুর মতো। চলুন এক নজরে জেনে নেই কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মের নামের তালিকা –
কবিতা |
|
কবিতা সংকলন |
|
উপন্যাস |
|
নাটক |
|
প্রবন্ধ |
|
গল্পগ্রন্থ |
|
কবিতা ও গান |
|
সঙ্গীত গ্রন্থাবলী |
|
বিবিধ: অনুবাদ ও সম্পাদনা |
|
কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মের যতো প্রথম
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা প্রথম কোন পত্রিকায় লেখেন? অথবা কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ কোনটি? এ ধরনের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য চলুন জেনে নেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মের যতো প্রথম –
প্রথম প্রকাশিত লেখা
কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত লেখা (গল্প) ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ ১৯১৯ সালে মাসিক সওগাত পত্রিকার ১৩২৬ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ।
প্রথম কবিতা
‘মুক্তি’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের প্রকাশিত প্রথম কবিতা। এই কবিতাটি মুসলিম সাহিত্য পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
প্রথম কাব্যগ্রন্থ
‘অগ্নিবীণা’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা আছে।
প্রথম উপন্যাস
‘বাঁধন হারা’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত রচিত প্রথম উপন্যাস। করাচিতে থাকাকালীন তিনি ‘বাঁধন হারা’ উপন্যাস রচনা শুরু করেন।
প্রথম গল্পগ্রন্থ
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম গল্পগ্রন্থ ১৯২২ সালে প্রকাশিত ‘ব্যাথার দান’ গ্রন্থটি।
প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ
কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ হলো ১৯২২ সালে প্রকাশিত ‘যুগবাণী’।
প্রথম নাট্যগ্রন্থ
‘ঝিলিমিলি’ কাজী নজরুল ইসলাম রচিত প্রথম নাট্যগ্রন্থ। এটি ১৯৩০ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এতে ঝিলিমিলি, সেতুবন্ধ ও শিল্পী নামে তিনটি ছোট নাটক রয়েছে।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম মনে রাখার কৌশল
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা হোক কিংবা চাকরির পরীক্ষা, প্রত্যেকটি পরীক্ষার বাংলা সাহিত্য অংশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্ম থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসে। কিন্তু কিভাবে মনে রাখবো এত্তো সব সাহিত্যকর্মের নাম? তা নিয়ে পরীক্ষার্থীরা অনেক চিন্তার ভোগেন! কিছু সহজ ছন্দ শিখে নিলে আপনিও মনে রাখতে পারবেন কবি কাজী নজরুল ইসলামের গূরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্মের নাম।
কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ
নতুন সন্ধ্যায় সওগাত ও সঞ্চিতা মরুভূমিতে হাটছিলো। হঠাৎ চক্রবাক ঝড় তাদের চিত্তহীন করে দেয়। প্রলয় শিখা ঝড়ে সিন্ধু ফুলে ফেপে চারপাশের সবকিছু ভেঙে জিঞ্জির করে দেয়।
- নতুন = নতুন চাঁদ
- সওগাত = শেষ সওগাত
- সঞ্চিতা
- চক্রবাক
- চিত্তহীন = চিত্তনামা
- প্রলয়শিখা
- সিন্ধু = সিন্ধু-হিন্দোল
- ফুলে-ফেপে=ফনিমণসা
- সবকিছু = সর্বহারা
- ভেঙে = ভাঙার গান
- জিঞ্জির
কাজী নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ
দুর্দিনের যাত্রী রুদ্রমন্ডল রাজবন্দীর জবানবন্দীতে ধুমকেতুর মতো যুগবাণী দিয়েছে।
- দুর্দিনের যাত্রী
- রুদ্রমন্ডল
- রাজবন্দীর জবানবন্দী
- ধুমকেতু
- যুগবাণী
কাজী নজরুল ইসলামের নাটক
আলেয়া ঝিলিমিলি রঙের শাড়ি পড়ে মধুমালাকে নিয়ে পুতুলের বিয়েতে গেল
- আলেয়া
- ঝিলিমিলি
- মধুমালা
- পুতুলের বিয়ে
কাজী নজরুল ইসলাম এর উপন্যাস
কুহেলিকা মৃত্যুক্ষুধায় বাঁধনহারা হয়ে গেলো।
- কুহেলিকা
- মৃত্যুক্ষুধা
- বাঁধনহারা
কাজী নজরুল ইসলামের নিষিদ্ধ গ্রন্থ
BJP VC
- B = বিষের বাঁশী
- J = যুগবাণী
- P = প্রলয় শিখা
- V = ভাঙ্গার গান
- C = চন্দ্রবিন্দু
কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি
কাজী নজরুল ইসলামের এর উক্তিগুলো তার বৈচিত্রময় অনুপ্রেরণামূলক, অন্যদিকে তার সাম্যাবাদী চেতনার স্বাক্ষর। কাজী নজরুল ইসলামের এর উক্তিগুলোর মধ্যে মূল্যবান কিছু উক্তি তুলে ধরা হলো –
বিদ্রোহ ও প্রতিবাদ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি
- “বল বীর-বল উন্নত মম শির! শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির।” – ‘বিদ্রোহী’ কবিতা
- “কারার ঐ লৌহকপাট, ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট, রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।” – ‘ ভাঙ্গার গান’ কাব্যগ্রন্থ
- “ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?” – ‘সর্বহারা’ কাব্যের ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতা
- “আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস, আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণিশ।” – ‘বিদ্রোহী’ কবিতা
- “মহা – বিদ্রোহী রণক্লান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
আমি সেই দিন হব শান্ত।
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।”– ‘বিদ্রোহী’ কবিতা
মানবতা, ধর্ম ও সমাজ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি
- “মানুষেরই মাঝে স্বৰ্গনরক মানুষেতে সুরাসুর।” – ‘সাম্যবাদী’ কবিতা
- “অসুন্দর পৃথিবীকে সুন্দর করতে; সর্বনির্যাতন থেকে মুক্ত করতেই মানুষের জন্ম।”
- “হিন্দু না ওরা মুসলিম এই জিজ্ঞাসে কোন জন হে, কাণ্ডারি বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র” – ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতা
- “গাহি সাম্যের গান –
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই , নহে মহীয়ান।”– ‘মানুষ’ কবিতা - “গাহি সাম্যের গান
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম ক্রিশ্চান।
গাহি সাম্যের গান।” – ‘সাম্যবাদী’ কবিতা
বসন্ত নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি
- “বসন্ত মুখর আজি দক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনেবনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি।”
- “আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী;
চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি।”
- “বসন্ত এলো এলো এলোরে
পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে
মুহু মুহু কুহু কুহু তানে
মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে
ভ্রমর গুঞ্জে গুঞ্জে গুনগুন গানে।”
নারী নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি
- “নর-ভাবে আমি বড় নারী ঘেঁষা! নারী ভাবে, নারী বিদ্বেষী!” – ‘সর্বহারা’ কাব্যের ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতা
- “কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারী; প্রেরনা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষী নারী।” – ‘নারী’ কবিতা
- “সর্বসহা কন্যা মোর! সর্বহারা মাতা!
শূন্য নাহি রহে কভূ মাতা ও বিধাতা!” – ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থের ‘মা’ কবিতা
- “বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।” ‘নারী’ কবিতা
দুঃখ ও বিরহ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি
- “কপালে সুখ লেখা না থাকলে সে কপাল পাথরে ঠুকেও লাভ নেই। এতে কপাল যথেষ্টই ফোলে, কিন্তু ভাগ্য একটুও ফোলে না।”
- “এই নীরব নিশীথ রাতে
শুধু জল আসে আঁখিপাতে!”– ‘ব্যথা নিশীথ’ কবিতা
- হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে ক’রেছ মহান!
তুমি মরে দানিয়াছ খ্রিষ্টের সম্মান।” – ‘দারিদ্র্য’ কবিতা
বাংলাদেশে আগমন ও প্রয়াণ: কাজী নজরুল ইসলাম কে কবে বাংলাদেশে আনা হয়?
১৯৪২ সালে অকস্মাৎ বাকরুদ্ধ হয়ে যান কবি কাজী নজরুল ইসলাম, তারপর বেড়ে চলে তার জিহ্বার আড়ষ্টতা। কলকাতায় নিয়ে কবিকে চিকিৎসার কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও, তার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয় না।
তারপর পেরিয়ে যায় বেশ কয়েক বছর, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পায় বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ উদ্যোগে, ১৯৭২ সালে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে পরিবারসহ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় কবি নজরুলকে।
১৯৭৬ সালে নজরুলকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের সরকারি আদেশ জারী করা হয়। একই বছরে ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সাম্যবাদের ফেরিওয়ালা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
তথ্যসূত্র:
- কাজী নজরুল ইসলাম | উইকিপিডিয়া
- কাজী নজরুলের সাহিত্যকর্ম | একুশে টেলিভিশন
- ‘ধূমকেতু’ ও নজরুল | মাসুদুজ্জামান | প্রথম আলো
- দুখু মিয়া থেকে জাতীয় কবি নজরুল | পরিবার ডটনেট.
- নজরুল গীতিমালা’র সংগ্রহশালা | Bangla Font Help
- কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত বাণী ও উক্তিসমূহ | প্রেরণাজীবন
- নজরুলকে ঢাকায় আনার ইতিহাস | বাশার খান | Bangla Tribune Online Media
চাকরি প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- GK for Govt. Jobs
- English for Govt. Jobs
- বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স, বিসিএস প্রিলি মডেল টেস্ট
- সরকারি চাকরি প্রস্তুতি বেসিক কোর্স, সরকারি চাকরি পরীক্ষা মডেল টেস্ট
- ব্যাংক জবস কোর্স, ব্যাংক জবস প্রশ্ন সমাধান + মডেল টেস্ট কোর্স
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন