‘শখ’। খুব ছোট্ট একটা শব্দ, তাই না? হুম, ঠিক তাই! কিন্তু কখনো কি অনুভব করে দেখেছো, এই দুই অক্ষরের শব্দটার গভীরতাটা কতটুকু? শখ এমনই একটা জিনিস, যা দিয়ে মানুষের ব্যক্তিত্ব কেমন তা বোঝা যায়।
আমাদের এই যান্ত্রিক জীবনের এক ক্ষুদ্র অংশ হলো শখ। শখ আমাদের যেমন আনন্দ দেয়, তেমনি কাজে শক্তিও যোগায়। এমনকি এগুলো আমাদের জীবনে মোক্ষম প্রভাব বিস্তারও করে!
শখ পূরণ করতে মানুষ অনেক কিছুই করে থাকে। তাই তো বলা হয় যে, ‘শখের তোলা লাখ টাকা’।
ছোট্ট বেলায়, যখন পরীক্ষায় অনুচ্ছেদে আসতো ‘আমার শখ’, তখন আমরা কমবেশি সবাই হয় বই পড়া, নাহয় বাগান করা লিখতাম! শখ এমন একটা জিনিস যা বয়সের সাথে পরিবর্তিত হতে থাকে। অথবা আরো নতুন নতুন শখ যুক্ত হতে থাকে।
একেক জন মানুষের একেক রকম শখ। কেউ বা ডাকটিকেট জমায়, কেউ গান গাইতে ভালোবাসে, কেউ বা শুধু ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতেই আরামবোধ করে! আবার অনেক আজব ধরণের শখও রয়েছে! কেউ প্লেনে দেওয়া প্লাস্টিকের চামচ জমায়, কেউ চিপসের প্যাকেট!
এখন অন্য একটা কথায় আসি। অনেকেই বলে, জন্মের সময় তুমি যতটুকু বুদ্ধি নিয়ে আসো, সেটা নাকি সারাজীবন ততটুকুই থাকে(!) বুদ্ধিমত্তা নাকি চাইলেই বাড়ানো সম্ভব না! আবার অনেকে বলে আমার বুদ্ধিমত্তা যতটুকু, আমার চিন্তার জগতটাও ততটুকুই (আমাকে বোকা পেয়েছে নাকি!)।
এগুলো সবই হলো ডাহা মিথ্যে কথা! ক্লাসের সবচেয়ে ভাল ছাত্রটাকে দেখে আমরা আফসোস করি এই ভেবে, “ইশ, আমিও যদি ওর মতো এত স্মার্ট হতে পারতাম।” কিংবা, “ ওতো ছোটবেলা থেকেই স্মার্ট, আমি মনে হয় না ওর মতো হতে পারবো।” আসল ব্যাপারটা কি জানো? বেশকিছু শখের মাধ্যমে, তুমিও হয়ে যাবে তাদের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি স্মার্ট! তাহলে দেরি কীসের? চলো জেনে আসা যাক সেই ১০টি শখ সম্পর্কে, যা তোমাকে আরো স্মার্ট করে তুলবে!
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
১. সংগীতচর্চা ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো:
গান বা সংগীত হলো একটা সার্বজনীন ভাষা। কেননা এই ভাষা অনুভব করা যায়, এই ভাষার মাধ্যমে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা যায়। তাই তো ‘দেসপাসিতো’ হোক কিংবা ‘ওয়াকা ওয়াকা’ হোক না কেন, গানের ভাষা না বুঝলেও আমরা এই গানের সুরে গলা মেলাতে থাকি। এই গানের তালে নাচতে থাকি। কিন্তু যদি আমরা ভিনদেশি গান শোনার সাথে সাথে সেই গানের প্রতিটা শব্দের মানেও বুঝে যাই? তাহলে কেমন হয়?
এই গানের অর্থ শিখতে যেয়ে আমরা পরিচিত হই নতুন ভাষার সাথে, যা আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে দেয়। অন্য ভাষার ভোকাবুলারি বাড়ে।
অনেক অনেক বছর আগে, কনফুসিয়াস বলেছেন, “সংগীত আমাদের মাঝে এমন এক ভাললাগা সৃষ্টি করে, যা ছাড়া মানব প্রকৃতি পরিপূর্ণ হয় না।” নানান পরীক্ষা করেও দেখা হয়েছে যে গানবাজনা আমাদের মস্তিষ্কে এক ধরণের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সংগীতের মধ্যে এমন এক উদ্দীপক রয়েছে, যা মানুষের আবেগ ও মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমন একটা সুন্দর গান শুনলে আমাদের মন ভাল হয়ে যায়, তেমনি একটু মন খারাপের গান শুনলে আমাদের মনটা ভারী ভারী হয়ে ওঠে।
আর একটা নতুন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে গেলে সেটা ধৈর্য নিয়ে শেখা লাগে, বারবার চেষ্টা করতে হয় বাজানো রপ্ত করার জন্য। কেননা একবারেই কেউ কোনো জিনিস রপ্ত করতে পারে না। ধৈর্য নিয়ে ধীরে ধীরে শিখতে হয়। আর সেই সময় কাজের প্রতি ফোকাসটাও ঠিক থাকে।
২. বেশি বেশি বই পড়ো:
বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের চিন্তা করার জগৎ বিস্তৃত হয়। তাই বলে সবসময় একই ধরণের বই পড়লে ব্যাপারটা উপভোগ্য হবে না। একেক সময় একেক ধরণের বই পড়লে, বই পড়ার সময় একঘেয়েমি ভাবটা আর থাকে না। বরং পড়ার মধ্যে এক অন্যরকম ভালোলাগা তৈরি হয়।
নিয়মিত বই পড়ার ফলে মাথা থেকে দুশ্চিন্তা বেড়িয়ে যায়। একেক ধরণের বইয়ে থাকে একেক ধরণের শিক্ষণীয় বিষয়। যা থেকে আমরা নানান কিছু শিখতে পারি। বই পড়ার ফলে নিজের ভেতর এক ইতিবাচক চিন্তা জাগ্রত হয়। অন্য কাউকে ভালোবাসার আগে নিজেকে ভালোবাসাটা জরুরি! আর সেই ভালোবাসাটা গড়ে ওঠে বই পড়ার মাধ্যমে।
এছাড়াও বই পড়ার ফলে কোনো সমস্যার সমাধান সহজেই পাওয়া যায়, প্রোডাক্টিভিটি বাড়ে এবং নিজ উদ্দেশ্য সহজেই হাসিল করা যায়। বই পড়ার ফলে নেতিবাচক মনোভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি তিন ধরণের বুদ্ধিমত্তা তৈরি হয়- ক্রিস্টালাইজড, ফ্লুইড এবং ইমোশনাল। এগুলো সমস্যা দূর করতে, অন্যের অনুভূতি বুঝতে সাহায্য করে।
তাই তো বলা হয়, “A room without books is like a body without a soul.”
~Marcus Tullius Cicero
আমি দিনে অন্তত আধা ঘণ্টা বই পড়ার জন্য রেখে দিই, যে করেই হোক। আর টানা একই ধরণের বই না পড়ে, আজকে উপন্যাস, কালকে একটা ভাল প্রবন্ধ- এই ভাবে বই পড়ি। যার ফলে কখনো রিডার্স ব্লকে পড়তে হয় না। তোমরাও একটা টার্গেট সেট করে ফেল যে একমাসে কম পক্ষে ১০টি বই পড়বে। ধীরে ধীরে এই বই পড়ার সময়টা বাড়াবে। বাসা থেকে বই কিনতে দেয় না? সমস্যা কোথায়? ইন্টারনেট থেকে নিজের পছন্দের বইয়ের পিডিএফ নামিয়ে নিয়ে পড়া শুরু করো! তবে পড়া কখনো থামিয়ে দিও না।
৩. সময় পেলেই ধ্যানে বসো:
ধ্যান বা মেডিটেশন হলো মনের ব্যায়াম। সুনসান শান্ত কোনো জায়গায় বসে সুনির্দিষ্ট অনুশীলনের মাধ্যমে আত্মতুষ্টি অর্জনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় মেডিটেশন। মেডিটেশনের মাধ্যমে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। মনের কষ্ট দূর হয়ে যায়। আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং আমরা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠি। ধ্যান বা মেডিটেশনের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো নিজের উপর ফোকাস করতে এবং নিজেকে জানতে সহায়তা করে। মেডিটেশনের মাধ্যমে সবধরণের চিন্তা ও মানসিক অবসাদ দূর হয়।
“Yoga is not a religion. It is a science, science of well-being, science of youthfulness, science of integrating body, mind and soul.” – Amit Ray
৪. নিজের ব্রেইনে শান দাও:
আমরা ব্যায়াম করি কেনো? সবাই বলবে ফিট থাকার জন্য। কিন্তু শুধু শরীর ঠিক রাখলেই কি চলবে? নিজের মস্তিষ্কটারও তো খেয়াল রাখতে হবে! নিয়মিত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজের ব্রেইনটাকে একটু খাটাও! নাহলে জং ধরে যাবে যে! চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ফলে মস্তিষ্ক থাকবে চকচকে ছুরির মতো ধারালো। এখন আমাদের প্রশ্ন হলো আমরা আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে শার্প রাখবো? এরজন্য আমরা শব্দজট, সুডোকু, বোর্ড গেম, পাজল, ধাঁধা ইত্যাদি খেলা খেলতে পারি। এগুলো খেলতে গিয়ে প্রচুর মাথা খাটাতে হয়। এতে বুদ্ধির ব্যায়ামটাও হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: ব্যায়াম: শরীরের বন্ধু, মস্তিষ্কের বন্ধু!
৫. নিয়মিত ব্যায়াম করা:
যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করে, তারা কিন্তু সবসময় অন্যদের থেকে সব কাজেই অনেকাংশে এগিয়ে থাকে। তাদের স্ট্যামিনা হয় সাধারণ মানুষদের তুলনায় বেশি। তারা সবসময় থাকে সতেজ এবং প্রাণবন্ত! আর বয়ঃসন্ধিকাল এমন একটা সময়, যেখানে ছেলে-মেয়ে সবারই উচিত শরীরের যত্ন নেওয়া। ব্যায়াম করা মানে এই না যে জিমে যেয়ে ডাম্বল উঠিয়ে সিক্স প্যাক, এইট প্যাক বানাতে হবে!
সকালে উঠে একটু হাঁটা, কোমর ধরে উঠবস করা; এইসব টুকটাক জিনিস প্রতিদিন নিয়ম মেনে করলেই কিন্তু আমরা ফিট থাকবো। এছাড়াও সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো কিন্তু অনেক বড় ব্যায়াম। এগুলো করলে শরীরচর্চার পাশাপাশি খেলাধুলাও হলো। এগুলোর ফলে শরীরের সব পেশি সচল থাকে, রক্তা সঞ্চালন সঠিকভাবে ঘটে। তবে ব্যায়াম করার পাশাপাশি পরিমিত ঘুম এবং ৬-৭ গ্লাস পানি পান করাও উচিত।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Personal Fitness
৬. নতুন ভাষা শেখা:
আমাদের কাছে কেন যেন বিদেশি ভাষা মানেই হলো ইংরেজি। এটা ছাড়া মনে হয় আর কোনো ভাষা নেই৷ তবে সত্যি কথা বলতে তুমি ইংরেজি শিখে যত ভাল চাকরি পাবে, এরচেয়ে ভাল চাকরি হয়তো মান্দারিন বা কোরিয়ান ভাষা শিখে পেতে পারো। বাংলা- ইংরেজি, এতে তো আমরা সবাই পারদর্শী, এর পাশাপাশি স্প্যানিশ, কোরিয়ান বা জাপানিজ ভাষাটা রপ্ত করে নিলে কিন্তু মন্দ হয় না। কোথাও কোর্স করে, কিংবা অনলাইনেই চাইলে খুব সহজেই বিদেশি ভাষা শেখা সম্ভব।
নতুন ভাষা শিখতে গেলে সেই ভাষাটা একদম শুরু থেকে শিখতে হয়। শব্দার্থ, বাক্য গঠন, ব্যাকরণ সব শিখতে হয়, যা আমাদেরকে অন্যদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি স্মার্ট করে তোলে। অনেক পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে, যারা দুইয়ের অধিক ভাষায় পারদর্শী, তারা অন্য মানুষদের চেয়ে ভাল এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়।
৭. ডায়েরি লিখা:
আমরা আমাদের মনের ভাব নানান মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকি। এর মধ্যে একটা হলো ডায়েরি লিখা। ছোটবেলায় নিজেদের ডায়েরি মায়ের হাতে পড়েনি, এমন মানুষ হয়তো খুব কষ্টে পাওয়া যাবে!
ডায়েরির পূর্ণ অর্থ হলো- Diary: Dear I Always Remember You.
কেননা আমরা ডায়েরিতে আমাদের দিনলিপি লিখে থাকি। আজকে আমার সাথে কী কী ঘটলো, কোনো বিষয় সম্পর্কে আমার অনুভূতি, মনের কোনো চাপা কষ্ট- সবকিছু আমাদের এই ডায়েরি বন্ধুটি জানে। আর এই ডায়েরি লিখার মাধ্যমে কী হয় জানো?
আমাদের লিখার হাত ভাল হয়। যেকোনো বিষয়ে আমরা চট করে লিখে ফেলতে পারি। আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা অন্যদের থেকে বেশি হয়। সেই সাথে সৃজনশীলতা তো বৃদ্ধি পায়ই।
৮. ব্যাগ নিয়ে দে-ছুট:
আমরা যারা এই যুগের ছেলেমেয়ে, তারা কেন জানি একটু ঘরকুনো টাইপের। বাসায় থাকলে সারাক্ষণ ফোনের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকি, কোথাও গেলেও ফোন হাতে থাকবেই! কিন্তু এই চার দেয়ালের বাইরেও যে একটা জগৎ আছে, আমরা কেউ কি সেটার খোঁজ রাখি?
তাই সুযোগ পেলেই একটু বেরিয়ে আসো। সেটা হতে পারে পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে। অথবা একান্ত নিজের সাথে। এতে মন খুব ভাল থাকে, সব ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়। আর মন ভাল থাকলে তো কাজও ভালভাবে হয়! তাছাড়া কোনো দেশে ঘুরতে গেলে সেখানকার সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানা যায়। নতুন একটা অভিজ্ঞতা হয়।
৯. রান্না করা:
আমরা অনেকেই ভাবি যে রান্না করা সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই না। তবে রান্না করা কিন্তু খুবই কঠিন আর অ্যাডভেঞ্চারাস কাজ। লবণ দিলাম নাকি, কতটুকু দিলাম, এইটার সাথে এইটা মেশালে টেস্ট কেমন হবে- এরকম নানান এক্সপেরিমেন্ট একমাত্র রান্না করতে যেয়েই করা সম্ভব। আর কে জানে, তুমি হয়তো এইভাবে এক্সপেরিমেন্ট চালাতে চালাতেই একজন বড় শেফ হয়ে উঠবে!
১০. খেলাধুলার সাথে যুক্ত থাকা:
এই খেলা মানে কিন্তু মোবাইল-পিসিতে খেলা না, বাস্তবে মাঠে যেয়ে ঘাম ঝরানো। ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, ভলিবল ইত্যাদি খেলার মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম বের হয়। আর এরই সাথে বেরিয়ে যায় অনেক জীবাণু।
তাই খুব জলদি এই শখগুলোকে নিজের করে নিয়ে হয়ে যাও অন্যদের থেকে অনেক স্মার্ট!
তথ্যসূত্র:
- https://www.lifehack.org/310690/taking-these-10-hobbies-will-make-you-smarter
- https://www.entrepreneur.com/slideshow/306645
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Facebook Ads Mastery by Mark Anupom Mollick
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadiq and Sadman Sadik
- Communication Masterclass Course by Tahsan Khan
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course by Joyeta Banerjee
- SEO Course for Beginners by Md Faruk Khan
- Adobe Illustrator Course by Mohammad Yeasir
- Graphic Designing with Photoshop Course by Sadman Sadik
- Graphic Designing with PowerPoint Course by Anisha Saiyara Taznoor
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course by Sadman Sadik
- Web Design Course by Fahim Murshed
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন