আড়াই হাজার বছর আগে সক্রেটিস সাফল্যের যে সূত্র শিখিয়ে গিয়েছিলেন তা আজও বিশ্বজুড়ে মানুষকে প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে। খুব সহজ কিন্তু দারুণ তাৎপর্যপূর্ণ এই শিক্ষাটি জেনে নাও ছোট্ট একটি গল্পের মাধ্যমে।
সক্রেটিসের প্রজ্ঞার খ্যাতি তখন জগতজোড়া। একবার বহুদূর পাড়ি দিয়ে এক তরুণ এলো সক্রেটিসের কাছে। ক্লান্তিতে দু’চোখ বুজে এসেছে তার। সক্রেটিস সহানুভূতির সাথে জিজ্ঞেস করলেন, “বলো কীভাবে সাহায্য করতে পারি তোমায়?”
তরুণ আকুতি জানালো, “আমার জীবনে যেই লক্ষ্যগুলো আছে, আমার কাছে তার চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নেই। এই স্বপ্নগুলো পূরণ না হলে জীবনের অর্থ বলে কিছু রইবে না আমার কাছে। কিন্তু কীভাবে স্বপ্ন পূরণ করবো, কীভাবে সাফল্যের দেখা পাবো- যদি একটি উপায় বাতলে দিতেন!”
সক্রেটিস মুচকি হেসে বললেন, “আগামীকাল ভোরে নদীর পারে আমার সাথে দেখা করতে এসো।”
যেই কথা সেই কাজ। পরদিন তরুণ সময়মত চলে এলো নদীর পারে। সক্রেটিস সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। তাকে দেখে বললেন, “আমাকে অনুসরণ করো।”
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
বিসিএস প্রিলি লাইভ কোর্স
তরুণ অবাক হয়ে দেখলো সক্রেটিস পানিতে নেমে যাচ্ছেন, সে আর প্রশ্ন না বাড়িয়ে তাঁকে অনুসরণ করে নদীতে পা বাড়ালো। হাঁটতে হাঁটতে দুজন হাঁটু পানিতে নেমে এসেছেন। হঠাৎ সক্রেটিস কোন কথা না বলে অতর্কিতে তরুণের মাথা দু’হাতে পানির নিচে চেপে ধরলেন! তরুণ তো হতভম্ব! না পারে নিজেকে ছাড়াতে, না পারে শ্বাস নিতে। যতোই চেষ্টা করে মাথা উপরে তোলার, সক্রেটিস ততোই শক্ত হাতে তার মাথা পানির নিচে ঠেসে ধরেন! শ্বাস নিতে না পেরে নীল হয়ে আসতে থাকে তরুণের মুখ। মরিয়া হয়ে হাত-পা ছুঁড়তে থাকে, থরথর করে কাঁপছে শরীর। এতক্ষণে মুঠি আলগা করলেন সক্রেটিস, ছেড়ে দিলেন মাথা। সটান করে মাথা পানির উপরে তুলে হাপরের মতো শ্বাস নিতে থাকে তরুণ। কিছুক্ষণ পর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এলে খুব শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন সক্রেটিস,
“যতোক্ষণ পানির নিচে ছিলে, সবচেয়ে আকুলভাবে কী চাইছিলে তুমি?”
“বাতাস!”
“সফল হতে চাইলে তোমাকে ঠিক এইভাবেই চাইতে হবে সাফল্য, যেভাবে তুমি ঐ মুহূর্তে বাতাস চাইছিলে!”
তরুণকে আর কিছু বলতে হলো না। আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো তার মুখ, করমর্দন করে অনেকবার সক্রেটিসকে ধন্যবাদ জানালো সে, তারপর পথ ধরলো বাড়ি ফেরার। সক্রেটিসের সাথে আর দেখা হয়নি তার, কিন্তু তাঁর গল্প ঠিকই কানে এসেছে তার, সেকালের নামকরা এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হয়েছিল সেদিনের তরুণ পরিণত বয়সে।
তরুণটির সাফল্যের পেছনে এই ঘটনাটি এত বড় ভূমিকা রাখার অন্যতম প্রধান একটি কারণ- তখন মানুষের জীবন ছিল সহজ-সরল। এখন যেমন ফেসবুক খুললেই একশ জনের একশ রকম গল্প নিউজফীডে ভেসে আসে, তখন জীবনে distraction ছিল কম। কোন কথা-উপদেশ অনেক গুরুত্বের সাথে নিতো মানুষ। সক্রেটিসের এই একটি উপদেশ তাই সযত্নে বুকে লালন করে গেছে তরুণ, কাজে লাগিয়েছে জীবনে। এখন চারপাশে এতো এতো distraction যে কোনকিছুই হৃদয়ঙ্গম হতে চায় না।
আরো পড়ুন: Motion Graphics vs. Animation: তফাতগুলো জেনে নেই
তবু আমাদের চারপাশেই কিছু মানুষ আছে যারা ঠিক গল্পের তরুণের মতো করেই সাফল্যের দেখা চেয়েছে। অনেকে হয়তো কনর ম্যাকগ্রেগরের কথা জেনে থাকবে। মিক্সড মার্শাল আর্টিস্ট হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়তা তাঁর। কনর ইউএফসি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তাঁর সাফল্যের রহস্য জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তখন তিনি একটি কথা বলেছিলেন সেটি ইতিহাসের পাতায়
ঠাঁই করে নিয়েছে-
“There’s no talent here, this is hard work, this is obsession. Talent does not exist, we are all equals as human beings. You could be anyone if you put in the time. You will reach the top, and that’s that. I am not talented, I am obsessed.”
কনর ম্যাকগ্রেগরের জীবনের গল্প কেউ যদি পড়ে থাকে তার বুঝতে এতোটুকু বিলম্ব হবে না কথাগুলো কতোটা সত্য! তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাতদিন জিমে পড়ে থাকতেন ব্যায়াম আর প্রশিক্ষণের পেছনে। তাঁদের সংসার চলতো বেকার ভাতার উপরে। কঠিন দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়েও তাঁর স্ত্রী কখনো অনুযোগ করেননি কনরের কাছে। তাঁদের দুজনেরই দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো- একদিন কনর বিশ্বজয় করবেন! কনরের খাওয়া-দাওয়া এবং দৈনন্দিন রুটিন সবকিছু তাঁর স্ত্রী দেখভাল করতেন। সারাদিন জিম থেকে ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহে যখন কনর বাড়ি ফিরতেন, তাঁর স্ত্রী সবসময় বলতেন, “কনর! বিজয় তোমার হবেই!”
এবং এই একটি কথা, একটু প্রেরণা কনরের সাফল্যের ক্ষুধা বাড়িয়ে দিতো অনেকখানি। খাওয়া-দাওয়া, গল্পগুজব সবকিছুতেই তাঁর বিজয়ী হওয়ার গল্প চলে আসতো। এমনকি ঘুমের ভেতরও স্বপ্ন দেখতেন ইউএফসি হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি! প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে যখন লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রেরণা কাজ করে- তাঁকে আটকাবে সাধ্য কার?!
সুতরাং জীবন থেকে distraction-গুলো প্লিজ সরিয়ে ফেলো। যে সময়টা ফেসবুক-ইউটিউবে অযথা কেটে যায় (এই মাধ্যমগুলোকে দারুণভাবে কাজে লাগানো যায়, কিন্তু দুঃখজনকভাবে ৯৫% মানুষ গঠনমূলক কিছু করে না সোশাল মিডিয়ায়), সেই সময়টাতে ঠিক তোমার বয়সী আরেকটি মানুষ কাজ করে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে তোমার চেয়ে একটু একটু করে। দিনের শেষে যখন উপলব্ধি হয়, “ইস! সময়টাকে কাজে লাগালে কতোকিছু করে ফেলতে পারতাম!” সেই দুঃখের কোন তুলনা হয় না। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক দুঃখটির নাম ‘regret’ বা পরিতাপ। তাই সক্রেটিসের শিক্ষাটি সবসময় মাথায় থাকুক, অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাক আমাদের। হয়তো আগামীকাল থেকেই নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার যাত্রা হবে শুরু। মাথায় থাকবে কেবল একটি কথা- সাফল্যের দুটি নয়, তিনটি নয়, একটি মাত্র উপায়। সেটি হচ্ছে লেগে থাকা, কামড়ে ধরে থাকা, ঝুলে থাকা।
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে তাহমিনা ইসলাম তামিমা
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Study Smart Course by Seeam Shahid Noor
আপনার কমেন্ট লিখুন