যেকোনও মূল্যবান কিংবা একান্ত-ব্যক্তিগত ও গোপনীয়, গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো একটা সময় তালাবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হতো আলমারি, সিন্দুক কিংবা ট্রাঙ্ক নামের ভারী ভারী লোহার বাক্সে। ক্ষেত্রবিশেষে মাটির নিচে পুঁতে রাখার কথাও শোনা যায় পুরোনো দিনের লোকজনের কাছ থেকে।
দিন বদলেছে। এখন তথ্য কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস আর ভারী ভারী বাক্সে তালাবদ্ধ করে গোপনীয়তা বজায় রাখার দরকার পড়ে না। এখন ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কিংবা হাতের স্মার্টফোনটাতেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যক্তিগত তথ্য আর ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করে রাখা হয়। আর তালার বদলে ব্যবহৃত হয় পাসওয়ার্ড।
যে পাসওয়ার্ড দিয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্যাবলীর গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে সেটাই বা কতটা শক্তিশালী?
পাসওয়ার্ড নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
পাসওয়ার্ডের সুরক্ষায় যা যা করা অনুচিত-
পাসওয়ার্ডে নিজের নাম কখনই নয়:
পাসওয়ার্ডে কখনও নিজের নাম বা এর কোনও অংশ ব্যবহার করা উচিত নয়। নাম ব্যবহার করা হলে ওই পাসওয়ার্ড অনুমান করে নেওয়াটা অপেক্ষাকৃতভাবে অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
তাই, এই ঝুঁকিটা না নেওয়াই শ্রেয়।
জন্মসালেও রয়েছে ঝুঁকি:
নামের মতো তোমার জন্মসালটাও তোমার পরিচিত অনেকেরই জানা! সার্টিফিকেটে উল্লেখ থাকার কারণে তোমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র কিংবা অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে যেখানে তোমাকে সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়েছে কিংবা জন্মসাল জানাতে হয়েছে, সেখান থেকে অনেক অজ্ঞাত বা অপরিচিত যে কারও পক্ষেই কিন্তু তোমার জন্মসাল খুঁজে বের করাটা তেমন কোনো কঠিন বিষয় নয়!
আর তাই, নামের পাশাপাশি জন্মসালটাকেও পাসওয়ার্ডে রেখো না!
পরিচিত শব্দের ব্যবহার এড়িয়ে চলো:
পরিচিত শব্দ বলতে মূলত সহজ এবং যে শব্দগুলো সচরাচর ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে বোঝানো হয়েছে। যেমন: Book, Pen, Board. এই ধরণের সহজ, ছোট্ট আর সচরাচর ব্যবহৃত শব্দগুলোকে যে কোনওভাবে পাসওয়ার্ড কিংবা পাসওয়ার্ডের অংশ হিসেবে ব্যবহার করার ঝুঁকি নেওয়াটা বোকামি।
তাই, এ ব্যাপারটায় সতর্কতার সাথে এড়িয়ে গিয়ে যে ধরণের শব্দের কোনও অর্থ কিংবা অস্তিত্ব নেই সেগুলো ব্যবহার করা উচিত। যেমন: xyzbdpq, ghijkr, bvtyui এ ধরণের অদ্ভুত কম্বিনেশনের অক্ষর পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
একই পাসওয়ার্ড একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা অনুচিত:
প্রতিটি প্রোফাইলের আলাদা পাসওয়ার্ড নির্ধারণ করা জরুরি। ফেসবুক আর ই-মেইল, উভয় অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড যদি অভিন্ন হয় তাহলে কিন্তু বিষয়টা একটু ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিটা প্রোফাইল কিংবা ডিভাইসের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বতন্ত্র পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাটা আবশ্যক।
পাসওয়ার্ড লিখে রাখাটা অনিরাপদ:
আমাদের অনেকেই অনেকসময় পাসওয়ার্ড মনে রাখতে না পারার কারণে সেটাকে কোথাও লিখে রাখি যেটা একটা বড় ধরণের বোকামি। লিখে রাখা হলে সেটা কোনো না কোনো সময় কারো না কারো চোখে পড়তে পারে।
তবে, এক্ষেত্রে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, একাধিক প্রোফাইলের একেকটার একেকরকম পাসওয়ার্ড; এতগুলো মনেই বা রাখবো কীভাবে? না লিখে তবে মনে রাখবার উপায়টাই বা কী? সেক্ষেত্রে তোমরা “Lastpass” বা এরকম কিছু অ্যাপ ব্যবহার করতে পারো। এই ধরণের অ্যাপগুলো পাসওয়ার্ড মনে রাখার ব্যাপারে বেশ সহায়ক!
পাসওয়ার্ডকে শক্তিশালী করতে যা যা করা যেতে পারে-
বারোটার বেশি হোক পাসওয়ার্ডের ক্যারেক্টারের সংখ্যা:
আকারে বড় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাটা নিরাপদ। কারণ, এ ধরণের পাসওয়ার্ড অনুমান করতে বেশ বেগ পেতে হয়। তাই, পাসওয়ার্ড নির্ধারণ করার সময় ক্যারেক্টার সংখ্যা অন্তত ১২ কিংবা এর বেশি হওয়াটাই ভালো।
নাম্বার বা ডিজিট ব্যবহার করা যেতে পারে:
পাসওয়ার্ডে নাম্বারের ব্যবহার একে আরও শক্তিশালী করে তোলে। তাই, পাসওয়ার্ডে অক্ষরের পাশাপাশি বেশ কিছু নাম্বার সুকৌশলে বসিয়ে নিলে পাসওয়ার্ড এর দৃঢ়তা বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।
যেমন: xygh5498
আপার কেস বা ক্যাপিটাল লেটার ব্যবহারে বৈচিত্র্য:
পাসওয়ার্ড দেওয়ার সময় মাঝেমাঝে ক্যাপিটাল লেটার ব্যবহার করা হলে জিনিসটা আন্দাজ করা বেশ জটিল হয়ে যায়। তাই, অন্যান্য ক্যারেক্টারের ফাঁকে-ফাঁকে দু-চারটা আপার কেস বা ক্যাপিটাল লেটার বসিয়ে নিজের পাসওয়ার্ডকে আরও স্বতন্ত্র করে তোলো।
যেমন: xygh5498RCHD
চিহ্নের ব্যবহারে ঝুঁকি কমবে বহুগুণে:
পাসওয়ার্ডে অক্ষর আর নাম্বারতো সবাই ব্যবহার করে। এসবের পাশাপাশি যদি !,?, @, #,&, * এই ধরণের চিহ্নগুলোকে ব্যবহার করা যায় তবে তোমার পাসওয়ার্ড চলে যাবে অনুমানের সকল সীমার উর্ধ্বে!
যেমন: xygh5498RCHD@#&!*
একই পাসওয়ার্ড দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার নয়:
আমরা অনেকেই অলসতা করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করি না। ফলে, একই পাসওয়ার্ড দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হতে থাকে। এটা অনুচিত। তাই, নির্দিষ্ট সময় পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করাটা বেশ জরুরি।
উপরের বর্জনীয় জিনিসগুলোকে সতর্কতার সাথে এড়িয়ে গিয়ে করণীয় কৌশলগুলো অবলম্বন করতে পারলে তোমার পাসওয়ার্ডের ক্ষমতা আর তোমার তথ্যের নিরাপত্তা দুটোই বাড়বে।
এই পাসওয়ার্ড জিনিসটা খুব সংবেদনশীল। এটা নিয়ে হওয়া ছোট্ট একটু ভুলে ঘটে যেতে পারে অনেক বিপত্তি।
তাই, কেবল পাসওয়ার্ড নির্ধারণ কিংবা পরিবর্তনে সতর্কতা অবলম্বন করলেই হবে না পাসওয়ার্ডের গোপনীয়তা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও অনেক বেশি সতর্কতা জরুরি।
লেখাটি লিখতে সহায়তা করেছে তাওহিদা আলী জ্যোতি
এই লেখাটি নেয়া হয়েছে লেখকের ‘নেভার স্টপ লার্নিং‘ বইটি থেকে। পুরো বইটি কিনতে চাইলে ঘুরে এসো এই লিংক থেকে!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন