আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যায়াম একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। ব্যায়ামের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের কমবেশি জানা থাকলেও এই বিষয়ে একধরনের অনীহা দেখা যায়। যারা জিমে যায়, বডি বিল্ডিং করে তাদের কথা আলাদা, কিন্তু আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তারা “আজ না, কাল”-নীতিতে ব্যায়ামকে এভোয়েড করে চলি। ফলে আজকাল স্থূলতা, করোনারি ডিজিজ ইত্যাদির হার বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
এই লেখায় ব্যায়াম কি, ব্যায়ামের উপকারিতা কী কী , কোন কোন ব্যায়ামগুলো আমাদের শরীরকে আরো সুস্থ করে তুলতে পারে- ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি, ঘরে বসে ব্যায়াম করার নিয়ম, এর সুবিধা অসুবিধাগুলোও আলোচিত হবে। এছাড়া থাকবে যোগ ব্যায়াম করার নিয়ম, যোগ ব্যায়ামের উপকারিতা– এই বিষয়গুলো সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা। শুরুতেই তাই দেখা যাক ব্যায়াম কি।
ব্যায়াম কি?
ব্যায়াম কি সে সম্পর্কে ধারণা মোটামুটি সবারই আছে। Science Daily-এর মতে, Physical exercise is the performance of some activity in order to develop or maintain physical fitness and overall health. তাই বলা যায়, ব্যায়াম হলো একধরনের ফিজিক্যাল এক্টিভিটি, যা পরিকল্পিত, কাঠামোবদ্ধ এবং পুনরাবৃত্তিমূলক, এবং যার মূল উদ্দ্যেশ্য হলো শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখা।
ব্যায়ামের উপকারিতা: কেন ব্যায়াম করবে?
স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য চাই নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম। শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে ও শরীরের ওজনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে শরীরচর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও শরীরের হাড়ের দৃঢ়তা বজায় রাখা, মাংসপেশীর সবলতা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের স্বাভাবিক চলন ক্ষমতা বজায় রাখতে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই।
Personal Fitness
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
তুমি যদি ব্যায়াম না করো তাহলে ধীরে ধীরে তোমার পেশীগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে এবং শরীরে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। তবে হ্যা, ব্যায়াম করার নিয়মাবলী মেনে ব্যায়াম করলেই কেবল পরিপূর্ণ ফলাফল পাওয়া সম্ভব। ব্যায়াম করার নিয়মাবলী আমাদের আলোচনায় আসবে একটু পরেই, কিন্তু তার আগে এসো ব্যায়ামের উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
-
রোগ প্রতিরোধ:
আমরা সাধারণত শারীরিক ফিটনেস রক্ষা এবং ভালো স্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম করে থাকি। তবে ভালো স্বাস্থ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্যও ব্যায়াম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক ব্যায়াম হৃদরোগ, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য আরো অনেক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
-
শক্তি ও ভারসাম্য বৃদ্ধি:
অ্যানেরোবিক ব্যায়াম নামে এক ধরণের ব্যায়াম আছে যা তোমার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করবে, মাংসপেশী ও হাড়ের সবলতা বৃদ্ধি করবে এবং এর পাশাপাশি শরীরের ভারসাম্য রক্ষায়ও সাহায্য করবে। অ্যানেরোবিক ব্যায়াম বলতে আমরা সাধারণত পুশ-আপ, বাইসেপ কার্লস, পুলআপ ইত্যাদিকে বুঝি।
-
ফ্লেক্সিবিলিটি বৃদ্ধি:
ব্যায়াম তোমার শরীরের মাংশপেশীর প্রসারণ ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এছাড়াও তোমার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি করবে যার ফলে ইনজুরি বা আঘাতের প্রবণতা হ্রাস পাবে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ফ্লেক্সিবিলিটি বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে তুমি আগের চেয়ে বেশি আরামবোধ করবে।
-
ওজন নিয়ন্ত্রণ:
ব্যায়ামের উপকারিতা আলোচনা করলে ওজন নিয়ন্ত্রনের কথা চলে আসবেই। প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করো। যদি প্রতিদিন শরীর চর্চা করা সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত সপ্তাহে ৫ দিন সময় বের করে শারীরিক ব্যায়াম করো। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আর চর্বিযুক্ত খাবার কম খেলে দেখবে তোমার ওজন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তাই যারা ওজন বেশি হয়ে যাওয়ায় তা নিয়ে চিন্তায় আছো তারা নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করো ও নিয়ম মেনে খাবার খাও। দেখবে, ওজন ধীরে ধীরে ঠিকই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
আরও পড়ুন:
ওয়ার্ডপ্রেস কী? ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করবেন যেভাবে
-
ভালো ঘুম ও মানসিক শান্তি:
বিশেষজ্ঞরা সবসময়ই পরামর্শ দেন নিয়মিত ব্যায়াম করার জন্য। ব্যায়ামের ফলে শারীরিক দুর্বলতা হ্রাস পায় এবং ব্যায়াম ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে মানসিক চাপ অনেকাংশেই কমে আসে।
-
জীবন মান উন্নয়ন:
তুমি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করা শুরু করো তাহলে কিছুদিন পরই তুমি তোমার জীবনের মানের পরিবর্তন বুঝতে পারবে। সেই সাথে তুমি আবিষ্কার করবে শরীরচর্চা জিনিসটা আসলেই কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম তোমার মানসিক চাপ কমাতে, মুড ভালো রাখতে এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করবে এবং এর ফলে সবসময় তোমার নিজেকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত মনে হবে।
শরীরচর্চা যে কেবল শরীরেরই বন্ধু এমন নয়, মস্তিষ্কেরও বন্ধু। শরীরচর্চার সুফল নিয়ে নানারকম গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। শরীর চর্চা শরীরের পাশাপাশি আমাদের মস্তিষ্ককেও ভালো থাকতে সহায়তা করে নানাভাবে। শুধু যে ভালো রাখে তাই না, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনেও শরীরচর্চার অবদান রয়েছে,
-
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি:
হিপোক্যাম্পাস হচ্ছে মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মানুষসহ সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীতে মস্তিষ্কের উভয় পাশে একটি করে মোট দুটি হিপোক্যাম্পাস থাকে। মস্তিষ্কের এই অংশটি সেসকল ব্যায়ামে সাড়া দেয় যেগুলোতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি ধরে রাখতে সহায়তা করে।
বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন মানুষের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যে সকল ব্যায়াম হৃদপিন্ডের সাথে সম্পর্কিত, সে সকল ব্যায়াম হিপোক্যাম্পাসকে উত্তেজিত ও স্ফীত করে তোলে। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে হিপোক্যাম্পাসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে স্মরণশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
-
মনোযোগ বৃদ্ধি:
স্মরণশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরচর্চা আমাদের মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। নেদারল্যান্ডের স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপর এ নিয়ে গবেষণা করা হয়। সেই গবেষণায় দেখা যায় যে, এরোবিক বা কার্ডিও এক্সারসাইজ অর্থাৎ যে ব্যায়ামগুলো আমাদের হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে সেগুলো মনোযোগ বৃদ্ধিতেও দারুণ সহায়ক।
নেদারল্যান্ডের স্কুলের বাচ্চাদের উপর করা এ গবেষণায় তাদের পড়ালেখার মাঝে ২০ মিনিটের জন্য শরীরচর্চা করতে দেয়া হয়। এ থেকে দেখা যায় তাদের মনোযোগ ধরে রাখার প্রবণতা এবং ক্ষমতা দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে।
-
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি:
নিয়মিত শরীর চর্চা আমাদের শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্ককেও আরো ক্রিয়াশীল করে তোলে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক একদল শিক্ষার্থীর উপর গবেষণা চালিয়ে এই তথ্য বের করেন। শিক্ষার্থীদেরকে পুরো এক বছর ধরে প্রতিদিন ক্লাসের পরে খেলাধুলার করতে উৎসাহ দেয়া হয়।
এক বছর পর দেখা যায় তাদের শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের মধ্যে বাধা এড়িয়ে চলা, একসাথে একাধিক কাজ করার ক্ষমতা, কোন কিছু মনে রাখার ক্ষমতা ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রায় একই রকমের পরীক্ষা করা হয় জার্মান কিছু শিক্ষার্থীর উপর। দেখা যায় যে প্রতিদিন ১০ মিনিট করে খেলাধুলার ফলে তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা, কোন কিছু মনে রাখার ক্ষমতা ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে।
-
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি:
শরীরচর্চা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোন চাপের মধ্যে যদি একটু ব্যায়াম করা যায় তবে তা ওই চাপ থেকে একটু স্বস্তি দেয়। ব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কের এন্ড্রোফিন নামক হরমোন ক্ষরণ করে যা এই স্বস্তি আনতে সহায়ক। এছাড়াও ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের পেশিগুলো একটু শিথিল হয়, ফলে চাপ চাপ ভাবটা আর থাকে না।
চাপ থেকে মুক্তির পাশাপাশি ব্যায়াম আমাদের বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি দেয়। ব্যায়ামের মাধ্যমে নিঃসৃত এন্ড্রোফিন হরমোন মস্তিষ্কে ক্রিয়া করে আমাদের উদ্দীপ্ত করে এবং ভালো থাকার অনুভূতি তৈরি করে। এছাড়াও, ব্যায়াম করার সময় আমাদের ব্যায়াম করার দিকেই মনোযোগ দিতে হয় কিছুটা সময় হলেও। ফলে এইটুকু সময়ে আমাদের মনে যে নেগেটিভ চিন্তাগুলো আসতো তা আর আসে না। এর ফলে বিষণ্ণতাও আস্তে আস্তে কেটে যায়।
-
সৃজনশীলতা বৃদ্ধি:
ব্যায়ামের মাধ্যমে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। গবেষক Lorenza Colzato এর মতে – “প্রতিদিন ব্যায়াম করা সৃজনশীলতা বৃদ্ধির একটি সহজ ও সঠিক উপায়।” তিনি তাঁর যে গবেষণা থেকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন সেই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছিল কিছু ক্রীড়াবিদ ও কিছু সাধারণ মানুষের উপর।
তিনি এলোমেলোভাবে ৪৮ জন ক্রীড়াবিদ বাছাই করেন যারা সপ্তাহে অন্তত চারবার ব্যায়াম করে। একইভাবে তিনি ৪৮ জন সাধারন মানুষ বাছাই করেন যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না। তাদেরকে বলা হয় লেখা ব্যতীত কলমের আর কী কী ব্যবহার হতে পারে তা লিখতে। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় যে, যেসকল মানুষ সপ্তাহে অন্তত চারদিন ব্যায়াম করেছে অর্থাৎ ক্রীড়াবিদরা সাধারণ মানুষের তুলনায় ভালো করেছে। এ থেকেই বোঝা যায় যে, ব্যায়াম সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
-
মস্তিষ্কের বিশ্রাম:
প্রতিদিন পরিমিত মাত্রায় ব্যায়াম ঘুমের ওষুধের মত কাজ করে, এমনকি ইনসোমনিয়া রোগীর ক্ষেত্রেও। প্রতিদিন ঘুমের ৫-৬ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করলে তা শরীরকে উদ্দীপ্ত করে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, পেশীগুলো শিথিল করে। পরে যখন আবার শরীর পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে তখন শরীর সংকেত পাঠায় যে তার বিশ্রাম প্রয়োজন। আর সেই বিশ্রাম হল ঘুম।
ব্যায়াম: কেন করবে না!
ব্যায়ামের কারনে আকস্মিক মৃত্যুও ঘটতে পারে! চমকে গেলে, তাইতো? হ্যা, গবেষণায় দেখা গিয়েছেশ, বসে দেখে অভ্যস্ত এমন ব্যক্তিরা হুট করে ভারী ব্যায়াম শুরু করার কারণে হার্ট এটাকের শিকার হয়। তবে এর হার এবং সম্ভাবনা খুবই কম।
ব্যায়ামের ফলে মৃত্যু ঘটেছে- এমন কেস স্টাডিগুলোতে দেখা যায় যে, ঐ সকল ব্যক্তিরা আগে থেকেই করোনারি হার্ট ডিজিজে ভুগছিলেন। আর তাই গবেষকরা ব্যায়ামের পাশাপাশি ধূমপান না করা, সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা- ইত্যাদি বিষয়ে নজর রাখতে পরামর্শ দেন।
আবার অনেক সময়ে ব্যায়াম করার নিয়মাবলী পুরোপুরি না জেনে, বা বাড়িতে ইন্সট্রাকটর ছাড়া ব্যায়াম করতে গেলে নানা রকমের ইনজুরি হয়। আমার এক বন্ধু তার নিজের ঘরে জাম্পিং জ্যাক (এই ব্যায়াম লাফিয়ে করতে হয়) করতে গিয়ে পা হড়কে পড়ে গিয়েছিলো। তার থুতনিতে সেলাই লেগেছিলো ৬টা!
জিম? নাকি বাড়িতে ওয়ার্কআউট?
ব্যায়ামের প্রসঙ্গ তুললেই সর্বপ্রথম একটা প্রশ্ন মাথায় আসো, জিম যাবো? নাকি বাড়িতে ইউটিউব দেখে ওয়ার্ক আউট করবো? পুরো বিষয়টা আসলে নির্ভর করে ব্যক্তিগত পছন্দের উপর। তবে এই পছন্দের জায়গায় পৌছাতে আরেকটু সাহায্য করতে জিম এবং বাড়িতে ওয়ার্ক আউটের সুবিধা অসুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো।
-
জিমে ব্যায়াম: সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা |
অসুবিধা |
সুযোগ সুবিধা বেশি: ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলো, যেমন ট্রেডমিল, স্টেয়ারক্লাইম্বার, রোয়িং মেশিন- ইত্যাদি পাওয়া যায়। | খরচা একটু বেশি: যেখানেই জিম করো না কেন, বেশ ভালো রকমের একটা খরচা তোমাকে করতে হবে। জিমের খরচ, রুটিন করা খাবারের খরচ- ইত্যাদি তোমাকে বহন করতে হবে। |
কমিউনিটি তৈরি হয়: জিম করতে আসা অন্যান্যদের সাথে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি হয়, যা তোমাকে ব্যায়ামের প্রতি আরো বেশি ফোকাসড হতে সাহায্য করবে। | অতিতিক্ত মানুষের উপস্থিতি: আশেপাশে বেশি মানুষ থাকলে অনেকেরই অসুবিধা হয়। জিমের মতো জায়গা তাদের জন্য আদর্শ নয়। |
-
বাড়িতে ব্যায়াম: সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা |
অসুবিধা |
সুবিধা অনেক: আলাদা করে তোমাকে জিমে যাওয়ায় জন্য তৈরি হতে হবে না। বাড়িতে, নিজের সময় ও সুযোগ মতো ব্যায়াম করলেই হলো। | একঘেয়েমি চলে আসে: জিমে তুমি ফোকাসড এবং মোটিভেট থাকার জন্য আশেপাশে অনেক মানুষকে আইডল হিসেবে খুঁজে পাবে, বাড়িতে তা সম্ভব নয়। |
খরচা নেই: বাড়িতে ব্যায়ামের জন্য নিশ্চই মেম্বারশীপের প্রয়োজন নেই! তাই আলাদা করে খরচাও নেই। | প্রতিনিয়ত অজুহাত: “আজ শরীর ম্যাজম্যাজ করছে, আজ ব্যায়াম না করলে কিছু হবে না!” কিংবা “কাল থেকে ফাটায়ে দিবো ব্যায়াম করে!”- এমন সকল অজুহাত বাসায় বসে ব্যায়াম করলে আসবেই! |
ভিন্নতা আছে: ইচ্ছে হলে তুমি দৌড়ানোর জন্য বাইরে যেতে পারো, নিজের মতো ইউটিউব ভিডিও দেখে কিংবা এপস ব্যবহার করে ওরার্ক আউট করতে পারো। | জায়গা দরকার অনেকটা: বাড়িতে যদি ট্রেডমিল বা এমন সকল উপকরণ আনতে চাও, তাহলে প্রচুর জায়গা ম্যানেজ করতে হবে তোমাকে। |
এখন জেনে নেওয়া যাক কয়েকটি ব্যায়াম, তাদের পদ্ধতি ও উপকারিতা সম্পর্কে!
ঘরে ব্যায়াম করার নিয়ম: প্লাংক
সারা শরীরের, বিশেষ করে পেটের মাসল শক্ত করতে প্লাংক সাহায্য করতে পারে। বাড়িতে বসে কোন প্রকার উপকরণ ছাড়াই এই ব্যায়াম করা সম্ভব।
-
পদ্ধতি
১। হাত এবং পায়ের আঙুলগুলো দিয়ে মাটিতে পুশআপের মতো অবস্থান নাও। এই সময়ে ঘাড়, পিঠ একদম সোজা রাখো।
২। গভীর শ্বাস নাও। শরীর, বিশেষ করে পেটের মাসল এই সময় টানটান রাখো।
৩। এভাবে ৩০ সেকেন্ড করে তিনবার চেষ্টা করো। প্রথম দিকে কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে কাজটা তোমার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
-
উপকারিতা
১। প্লাংক দেহভঙ্গি (posture)-কে উন্নত করে।
২। ব্যাক পেইন থেকে মুক্তি দেয়।
৩। শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ায়।
৪। বিপাকের (Metabolism) হার বাড়ায়।
ব্যায়াম করার নিয়মাবলী: পুশআপ
পুশ আপ এর উপকারিতা অনেক বেশি। গবেষণা প্রমান করে যে, ওজন কমানো থেকে শুরু করে হাড় শক্তিশালী করা পর্যন্ত মোটামুটি বেশ কিছু বেনিফিট পুশআপের মাধ্যমে পাওয়া যায়। তাই ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ার শুরুর দিকে পুশ আপ হতে পারে তোমার প্রথম পছন্দ।
-
পদ্ধতি
১। প্লাংক পজিশন দিয়ে শুরু করো। এই সময় পিঠ ও ঘাড় সোজা রাখতে হবে।
২। এবার কনুই বাঁকিয়ে শরীরকে নিচে নামাও। মাটিতে শরীর স্পর্শ না করিয়ে পুনরায় কনুই সোজা করে পূর্বের অবস্থানে ফেরত যাও।
৩। এভাবে তিনবার করে যতগুলো সেট সম্ভব চেষ্টা করো।
-
পুশ আপ এর উপকারিতা
১। পুশ আপ কাঁধ, বুক, হাতের মাসল শক্ত করে
২। শরীরের উর্ধাঙ্গকে শক্তিশালী করে
৩। হাড়কে করে আরো শক্তিশালী
৪। হৃদপিন্ডে রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, হৃদপিন্ডের পেশীকে শক্তিশালী করে
ব্যায়াম করার নিয়মাবলী: স্কোয়াট
ক্যালরি বার্ণ করার ক্ষেত্রে স্কোয়াটের মতো উপকারী ব্যায়াম কমই আছে। শরীরের লোয়ার ব্যাক এবং হিপকে ফ্লেক্সিবল করার পাশাপাশি স্কোয়াট কোর মাসলকেও শক্তিশালী করে তোলে।
আরও পড়ুন:
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কী? জেনে নিন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড -এর কিছু কার্যকরী ব্যবহার
নামাজ পড়ার নিয়ম: কোন নামাজ কত রাকাত ও নামাজের ফরজ কয়টি?
-
পদ্ধতি
১। হাত দুটো দুই পাশে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়াও, পা দুটো ফাঁকা রাখো। দুই হাত রাখো শরীরের সঙ্গে মিশিয়ে, দুইপাশে।
২। এবার চেয়ারে বসার মতো ভঙ্গিতে বসো। এই সময়ে দুই হাত থাকবে বুকের কাছাকাছি।
৩। এভাবে ১ সেকেন্ড থাকো, পরে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় দাড়াও।
৪। এভাবে তিনবার করে ২০ সেট চেষ্টা করো।
-
উপকারিতা
১। কোর মাসলকে শক্তিশালী করে।
২। প্রচুর ক্যালরী বার্ণ করে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৩। হাড়ের মিনারেলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে।
৪। ব্যাথা উপশমে সাহায্য করে।
ব্যায়াম করার নিয়মাবলী: যোগ ব্যায়াম
যোগ ব্যায়ামের উপকারিতা নিয়ে আসলে আরেকটা আলাদা ব্লগ লিখে ফেলা সম্ভব। না, ভুল হলো! আরো ১০ টা ব্লগ লিখে ফেলা সম্ভব! যোগব্যায়াম-এর ইতিহাস এবং প্রাকটিস অনেক পুরানো, আদি ভারত তো বটেই, বর্তমানেও সারা পৃথীবিতে যোগব্যায়াম অনেক বেশি জনপ্রিয়। আমরা এখানে কয়েকটি যোগ ব্যায়াম করার নিয়ম এবং সেগুলোর উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
-
শবাসন
পা দুটো লম্বা করে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ো, দু’পায়ের মাঝখানে এক থেকে দেড় ফুট জায়গা থাকবে। দুটো হাত লম্বালম্বিভাবে শরীরের দুইপাশে আলগা করে রাখো।
শবাসন শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবিদের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এটি দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ক্লান্তি দূর করে। উচ্চরক্তচাপের সমস্যা দূরীকরনে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
-
বৃক্ষাসন
প্রথমে দু’পায়ের উপর সমানভাবে ভর দিয়ে দাড়াও। এবার ডান পা হাটুর কাছে ভেঙে বাঁ পায়ের হাটুর উপর রেখে, বাঁ পায়ের উপর সোজা হয়ে দাড়াও। এভাবে ৩০ সেকেন্ড থাকো, এরপর পা বদল করে আবার ৩০ সেকেন্ড চেষ্টা করো।
এই ব্যায়ামের ফলে দেহের ভারসাম্য ঠিক হয়। পায়ের পেশি, কোমড়ের ও মেরুদন্ডের হার শক্তিশালী হয়।
-
ভুজঙ্গাসন
প্রথমে শরীরের সকল মাংসপেশী শিথিল করে উপুড় হয়ে শোও। এবার দুই হাতে ভর, মেরুদন্ড বাঁকিয়ে শরীরের উপরের দিকটা যতটা সম্ভব উচু করে রাখো। এভাবে ১৫-২০ সেকেন্ড চেষ্টা করো।
এই ব্যায়াম মেরুদন্ডকে নমনীয় করে, কোমড়ের বাত দূর করে। হজম শক্তি বাড়ায় আর এডরেনাল গ্রন্থির হরমোন নিঃসারণে সাহায্য করে।
Personal Fitness
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
-
পদ্মাসন
প্রথমা পা দুটো ছড়িয়ে বসো। এবার ডান পা হাটুর কাছ থেকে ভেঙে বাঁ পায়ের হাটুর উপরের অংশে রাখো, বাম পা ভাজ করে রাখো ডান পায়ের উপর। খেয়াল রাখো যেন হাটু মাটি থেকে উপরে উঠে না আসে, মাথা-ঘাড়-মেরুদন্ড যেন সোজা থাকে। এভাবে ৩০ সেকেন্ড করে ৪ বার চেষ্টা করো।
এই ব্যায়ামের ফলে পায়ের বাত দূর হয়, মেরুদন্ড সোজা হয়। যাদের সামনের দিকে ঝুকে সারাদিন কাজ করতে হয়, কিংবা আমরা যারা সারাদিন কম্পিউটারের সামনে থাকি বা টেবিলে বসে পরাশোনা করি, তাদের জন্য এই ব্যায়াম বিশেষ উপকারী।
-
বজ্রাসন
হাটু ভেঙে পায়ের পাতার উপর বসো। হাত দুটো রাখো দুই হাটুর উপর। প্রথম দিকে হাটুতে ও গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে, কিন্তু কিছুদিনের অভ্যাসে তা কেটে যাবে।
এই ব্যায়াম হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, পায়ের বাত দূর করে, মেরুদন্ডের হাড়কে শক্তিশালী করে।
শেষ কথা
ব্যায়াম কি, সে বিষয়টা দিয়ে আমরা আলোচনা শুরু করেছিলাম। আমাদের আলোচনা পরবর্তীসময়ে এগিয়েছে ব্যায়ামের উপকারিতা কী কী সেদিকে, পুশআপ স্কোয়াটের মতো ব্যায়ামগুলো কিভাবে করবে, যোগ ব্যায়াম করার নিয়ম, যোগ ব্যায়ামের উপকারিতা কী কী- এই সকল আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা দেখাতে চেয়েছি ব্যায়াম আসলে কতটা জরুরী।
স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য চাই নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, এর কোন বিকল্প নেই। ব্যায়াম শিক্ষার জন্য টেন মিনিট স্কুলে তোমরা পেয়ে যাবে ফাটাফাটি একটা কোর্স! আমাদের এই আলোচনা তোমাকে ব্যায়ামের দিকে আগ্রহী করবে, তোমাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
Reference:
- দাশ, নীলমণি. সচিত্র যোগ-ব্যায়াম
- Britannica
- Encyclopedia of Children’s Health
- GoodRx Health
- HealthCorps
- Healthline
- Insider
- John Hopkins Medicine
- ScienceDaily
- Very well fit
- wikiHow
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course (by Tahsan Khan)
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadik and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
- ঘরে বসে Spoken English Course (by Munzereen Shahid)
- Microsoft Word Course (by Sadman Sadik)
- Microsoft Excel Premium Course (by Abtahi Iptesam)
- Microsoft PowerPoint Course (by Sadman Sadik)
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন