পুরোটা পড়ার সময় নেই ? ব্লগটি একবার শুনে নাও !
Mind algorithm কি? এটা কেন-ই বা তোমার জানা দরকার? আর যদি জানা থাকে তাহলে তুমি কী কী করতে পারবে?
ধরো, তুমি যদি কম্পিউটার চালাতে না পারতে, তাহলে কি তুমি তোমার কাজগুলো ইচ্ছামত করতে পারতে? কখনোই না। এর জন্য তোমাকে কম্পিউটার শিখতে হয়েছে। তুমি যদি না শিখে কম্পিউটার চালানো শুরু করো, তাহলে নিজের ইচ্ছামত কাজ তো করতেই পারবে না; উপরন্তু কম্পিউটারেরও যেকোনো ক্ষতি হতে পারে!
ঠিক একইভাবে আমাদের জীবনে আমরা যা খুশি তা-ই করতে পারি যদি আমাদের মনকে আমরা সঠিকভাবে পরিচালনা করা শিখে যাই। আর এ কারণেই আমাদের মাইন্ড এলগোরিদম বা মনের পরিভাষা সম্পর্কে জানতে হবে।
মন কী?
মন এমন এক বস্তু যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, ল্যাবরেটরিতে টেস্টটিউবে ভরে পরীক্ষাও করা যায় না, তবে অনুভব করা যায়। একে আমরা আমাদের কম্পিউটারের সাথে তুলনা করে দেখতে পারি। কম্পিউটারের দুটো অংশ- হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার। হার্ডওয়্যার ধরা যায়, দেখা যায়, ছোঁয়া যায় কিন্তু সফটওয়্যার? এর অস্তিত্ব আছে তবে ধরা ছোঁয়া যায় না। এটা না হলে কম্পিউটার চালানোও যায় না।
ঠিক তেমনি মনও মানুষের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানীদের ভাষায়, আমাদের মনের ৩টি প্রকার আছে-
১. সচেতন মন
২. অবচেতন মন
৩. অচেতন মন
মন কিভাবে কাজ করে?
আমরা সব সময় সচেতন মনের দ্বারা চালিত হই। এটি আমাদের সব কাজকে মনিটরিং করে যাতে কোন ভুল না হয়। কিন্তু সবথেকে শক্তিশালী হচ্ছে অবচেতন মন। সচরাচর এর কাজ আমরা অনুভব করতে পারি না।
কিন্তু আমরা যত কাজ করছি, যা কিছু দেখছি, যা কিছু বোঝার বা শেখার চেষ্টা করছি সব কিছু ব্যাকআপ হয়ে থাকছে আমাদের মস্তিষ্কে এবং এ কাজটাই করে আমাদের অবচেতন মন।
আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি অবচেতন মন জেগে ওঠে এবং তার কর্ম তৎপরতা শুরু করে। ব্যাকআপে থাকা সকল তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে কাজের প্রেরণা দান করে, তথ্যগুলোকে মস্তিষ্কের স্থায়ী মেমোরিতে জমা করে। এভাবে আমরা যা দেখি বা যা কিছু চিন্তা করি সবই ঘুমের ঘোরে অবচেতন মন আমাদের মেমোরিতে ঢুকিয়ে দেয়।
একজন মনোবিজ্ঞানী বলেছেন,
“তোমার স্মৃতিকে গোডাউনের মত যা-তা দিয়ে ঠেসে রেখো না, কাজের গুলো জমা করো, অপ্রয়োজনীয়গুলো ফেলে দাও।”
মাইন্ড পাওয়ারকে কাজে লাগানো
প্রথমত, অচেতন মন মাইন্ড এলগোরিদমে তেমন একটা প্রভাব ফেলে না। তাহলে বাকি থাকে Conscious মাইন্ড বা চেতন মন আর sub-conscious মাইন্ড বা অবচেতন মন। যেহেতু এদের মধ্যে বাস্তবে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো sub-conscious মাইন্ড; আমাদের কাজ করাকে এই sub-conscious মাইন্ড বা অবচেতন মনই কন্ট্রোল করছে।
অন্যদিকে, আমাদের Conscious মাইন্ড বা সচেতন মন ভীষণ উন্নত আর বুদ্ধিমান। কিন্তু বাস্তবে এর শক্তি অনেক কম। আর এজন্যই সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমরা জানি-বুঝি অথচ সেই ভুল কাজগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কারণ কাজ করাটা পুরোপুরি নির্ভর করে Sub-conscious মাইন্ডের উপর।
নিজেকে সফল করার জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ একটি বড় হাতিয়ার।
অনেক বছরের গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা অনেকাংশেই উদ্ধার করতে পেরেছেন এই Sub-conscious মাইন্ডের কাজ করার প্রক্রিয়া। আর এর দ্বারাই মাইন্ড এলগোরিদম বা মনের পরিভাষা পরিচালিত হয়।
Sub-conscious মাইন্ড বা অবচেতন মনকে কন্ট্রোল করার উপায়
দুনিয়ার সব সফল মানুষেরাই তাঁদের Sub-conscious মাইন্ড কন্ট্রোল করার প্রক্রিয়া জানেন। আর সেজন্যই তাঁরা এতো উপরে পৌঁছাতে পেরেছেন। এক গবেষণায় জানা যায়, Sub-conscious মাইন্ড Conscious মাইন্ড থেকে ৩০ হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। কিন্তু Sub-conscious মাইন্ডকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়?
Principle 1: Practice positive self-talk
আমরা প্রায় সময় নিজে নিজে কথা বলি বা অসংখ্য চিন্তা করি। ধরো, কারো সামনে পরীক্ষা আর আর সে মনে মনে বলছে, “আমার তো কিছুই পড়া হয় নাই, আমি শিওর ফেল করবো।” আবার কেউ হয়তো অন্য সমস্যায় আছে আর সে নিজেকে বলছে, “সবাই তো বলছে আমি জীবনে কিছুই করতে পারবো না; আমি হয়তো আসলেই কিছু করতে পারবো না”।
এই ধরণের অসংখ্য চিন্তা-ভাবনা আমাদের নরমাল বা Conscious মাইন্ড করলেও sub-conscious মাইন্ড এমনভাবে গ্রহণ করে যেখান থেকে আমরা আর বের হতে পারি না। তাই নিজের সাথে সব সময় এই ধরনের নেতিবাচক কথা বলা বাদ দিতে হবে।
Principle 2: Practice visualization
আমরা যদি আমাদের জীবনের যে কোনো বিষয় নিয়ে কল্পনা করতে থাকি তাহলে Sub-conscious মাইন্ড সেটা ধারণ করে রাখে আর আমাদের goal এ পৌঁছাতে সাহায্য করে। সেজন্য তুমি যা হতে চাও, তা নিয়ে আগে থেকে কল্পনা করা খারাপ কিছু না! তবে অবশ্যই Visualizing এর ক্ষেত্রে ‘রিয়েলিটি’ চিন্তা করে কল্পনা করা উচিত যতটা সম্ভব।
Principle 3: Practicing dream analysis
প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে লিখে রাখতে পারো, তুমি পরের দিন কী কী করতে চাও। ঠিক একইভাবে নিজেকে নিয়ে তুমি কি স্বপ্ন দেখো তা যদি লিখে রাখো তাহলে তুমি পরোক্ষভাবেই Sub-conscious মাইন্ডকে অর্ডার দিচ্ছো তোমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নিজেকে তুমি কত্খানি প্রস্তুত করলে সেটা যাতে সব সময় মাথায় থাকে।
পজিটিভ ইনপুট
Sub-conscious মাইন্ডকে তোমার সব সময় পজিটিভ ইনপুট দিতে হবে পজিটিভ আউটপুট পাওয়ার জন্য। তুমি কি জানো এর পিছনে বিজ্ঞানসম্মত কারণও আছে?
আমাদের Sub-conscious মাইন্ড বা অবচেতন মনের কাজ অনেকটা মেশিনের মত। এর কাজই হলো ইনপুট নেওয়া আর সেটাকে প্রসেস করে আউটপুট দেয়া। সেজন্য বলা হয়ে থাকে, সব সময় পজিটিভ ইনপুট করো। তুমি যত বেশি পজিটিভ চিন্তা-ভাবনা ইনপুট করবে তত বেশি তোমার অবচেতন মন সেই মত কাজ তোমার শরীরকে দিয়ে করাবে।
চিন্তাকে চিহ্নিত করো
নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে যে চিন্তাগুলো তোমাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করো। নেতিবাচক চিন্তাগুলো বারবার মনে এলে অকারণেই অস্থির হয়ে উঠবে। তাই প্রথমে চিন্তার উৎসটা খুঁজে বের করো।
এরপর ভাবনাগুলোকে একেবারে থামিয়ে দাও। ইতিবাচক চিন্তা করা শুরু করো। ভাবো তোমার জীবনে ইতিবাচক কী কী দিক রয়েছে। এ ছাড়া ইতিবাচক বিষয়গুলোর একটি তালিকাও তৈরি করতে পারো। নেতিবাচক চিন্তাগুলো যখন মাথায় আসবে, তখন ইতিবাচক চিন্তার সেই তালিকাটি দেখো।
নিজেকে সফল করার জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ একটি বড় হাতিয়ার। জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে সেই যাত্রা এখনই শুরু করতে পারো। অতীতের কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণা আর নয়, নয় ভবিষ্যতের জন্য দুশ্চিন্তা। এর চেয়ে বরং কেবল এই মুহূর্তে কী ঘটছে, সেদিকে মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করো।
নিজের উপর বিশ্বাস রাখো, সাফল্য তোমার দরজায় কড়া নাড়বেই!
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন