90/10 principle: সুখ থাকুক হাতের মুঠোয়

November 21, 2018 ...

আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছুই ঘটে, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করার কোন সুযোগই নেই। সমস্যা হলো যে, এটি নিয়ন্ত্রণ করার কোন সুযোগ নেই জেনেও আমরা ওই ঘটনাগুলো নিয়েই সারাদিন পড়ে থাকি, আমাদের মনোযোগ কেড়ে নেয় সেগুলো। আর তাই জীবন সবসময় সুখী হয় না, সুখে থাকতে পারি না আমরা। এই ধরণের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্যে চমৎকার একটা সূত্র আছে।

সূত্রটার নাম ‘90/10 Principle’। Stephen Covey নামের এক ভদ্রলোকের আবিষ্কার। তিনি এখানে দেখিয়েছেন কীভাবে জীবনের ছোটখাটো নিয়ন্ত্রণহীন খারাপ ঘটনাগুলোকে ইতিবাচক শক্তি বা Positive energy দিয়ে বশে আনা যায়। তিনি পুরো ধারণাটা একটা গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

গল্পটা বলা যাক।

একটা ছোট পরিবার। বাবা, মা এবং ছোট্ট একটি মেয়ে। তারা একদিন সকাল বেলা নাস্তা করছে। ছোট মেয়েটা হঠাৎ ভুল করে চায়ের কাপ ফেলে দেয় বাবার ইস্ত্রি করা শার্টের উপর। বাবা তো রেগে আগুন! মেয়েকে প্রচণ্ড একটা ধমক দিলেন, স্ত্রীকে বকাবকি করলেন, কেন সে চায়ের কাপ টেবিলের কিনারে রাখল? বকা খেয়ে আহ্লাদী মেয়েটি জোরে কেঁদে উঠল। কিছুক্ষণ পর শার্ট পাল্টিয়ে এসে বাবা দেখেন তার মেয়ে তখনও কান্না করছে, খাবার এখনও শেষও করেনি। তিনি আরো ধমকালেন মেয়েকে। মেয়ে আরো বেশি কান্না করতে শুরু করল।

ইতোমধ্যে মেয়ের স্কুলের বাসটাও চলে গেল। এখন বাবাকেই স্কুলে পৌঁছে দিতে হবে। এসব ভেবে বাবার মনে আরো রাগ জমে উঠল। মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দেবার পথে স্বাভাবিকের চাইতে জোরে গাড়ি চালাতে গিয়ে জরিমানা গুণতে হলো। যে মেয়ে প্রতিদিন বাবাকে বাই না বলে স্কুলে ঢোকে না, সেই মেয়ে আজ বাবাকে বিদায় না জানিয়ে এক দৌড়ে চলে গেল স্কুলে। তিনি অফিসে পৌঁছালেন ১৫ মিনিট দেরি করে। খেয়াল করে দেখলেন তাড়াহুড়োয় অফিসের ব্রিফকেস আনতে ভুলে গেছেন।

এখন আরো বিপদ, অফিসের বস তার উপর চড়া। দিন তীব্র খারাপের দিকে যেতে লাগলো। অফিসের কাজও ঠিকমতো হলো না। রাত্রে অফিস শেষে বাসায় এসে দেখলেন মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। অথচ অন্যদিন বাবা আসলেই সবার আগে মেয়ে দৌড়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে, জিজ্ঞেস করে “বাবা, আমার জন্যে কী এনেছো?” আজ সে আসলো না। তার স্ত্রীও আজ অনেকটাই নীরব। তিনি একা একা খাওয়াদাওয়া করলেন। তারপর ঘুমিয়ে পড়লেন। দিনটা তো খারাপ গেলোই, এখন রাতটাও। এভাবে পরিবারের মাঝে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হলো।

অথচ গল্পটা যদি এমন হতো, ছোট্ট মেয়েটা ভুল করে চায়ের কাপ ফেলে দিল। ফেলে দিয়েই ভয় আর অনুশোচনায় সে কান্না করতে শুরু করলেই বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন- “থাক্‌, সমস্যা নেই। আমিও অনেকবার আমার বাবার গায়ে চা ফেলেছি। তবে হ্যাঁ, এখন থেকে সাবধান, ঠিক আছে?” মেয়েটা একটু হেসে বললো- “আচ্ছা বাবা, আর হবে না”।

Personal Finance Course

সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সঠিক গাইডলাইন পেয়ে জীবনের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলো পূরণ করার যাত্রা সহজ করতে আজই এনরোল করুন এই কোর্সটিতে।

 

মেয়ে তখন স্কুলে গেল। বাবা সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে সুন্দর করে ৫ মিনিট আগেই অফিসে পৌঁছালেন। অফিসের বস তার কাজের প্রশংসা করলেন। সারাদিন অফিসে কাজ করে রাতে বাসায় আসতেই মেয়েটা দৌড়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো, বাবার আনা চকলেটগুলো একটা একটা করে খেতে লাগলো। পুরো পরিবার হাসি আর আনন্দের সাথে ডিনার করলো। একটি সুখী ও সুন্দর পরিবার দেখা গেলো।

 

দিনটা অনেক সুন্দর গেল, তাই না?

প্রথম গল্প আর শেষ গল্পের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। প্রথম গল্পে বাবার মেজাজের কারণে পুরো দিনটাই খারাপ গেল পরিবারের সবার জন্যে। আর পরের গল্পটা খুব সহজেই সুন্দর হয়ে গেল শুধুমাত্র বাবা তার মেজাজ ঠিক রেখেছেন, এইজন্যে। স্টিফেন কভে বলেন- প্রথম ঘটনাটি পুরোটাই বাবার দোষ। কারণ, চায়ের কাপ পড়ে যাবার মতো আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মধ্যে ১০% এমন ঘটনা থাকে যেগুলোর উপরে আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিন্তু ঐ ১০% অনিচ্ছাকৃত ঘটনার উপর আমাদের Reaction কী হবে, সেটার উপর নির্ভর করে বাকি ৯০% ঘটনা ঠিকভাবে যাওয়া না যাওয়া।

প্রথম গল্পে বাবা ১০% সেই ঘটনাটি নিয়েই ভেবেছেন, নেতিবাচকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। ফলাফল? একটি বাজে দিন। দ্বিতীয় গল্পে বাবা সেই ১০% ঘটনাটিকেই অনিয়ন্ত্রিত ভেবে ধরে নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। ফলাফল? একটি ভালো দিনের সমাপ্তি।

আমাদের জীবনে অনেক সময় এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যেগুলোতে আমাদের কোন হাত না থাকলেও তাতে অনেক সমস্যা হয়। ধরো, স্যুটেড বুটেড হয়ে প্রেজেন্টেশন দিতে যাচ্ছো, হঠাত উপর থেকে একটা কাক তোমার কালো স্যুটে প্রাকৃতিক কর্ম সেরে দিলো। এখন তুমি তো আর কাককে আক্রমণ করতে পারবে না, বিষয়টি মেনে নিয়ে তোমাকে স্যুট পরিষ্কার করার উপায় খুঁজতে হবে

তাহলেই দিনটা খারাপ না হয়ে ভালোর দিকে যাবে।

এরকম অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। আসল কথা হল, তোমার সুখ, তোমার সাফল্য সবই নিজের কাছে। তুমি চাইলেই পারো এসব বদলাতে। তোমার ইচ্ছাশক্তিই আসলে নিয়ন্ত্রণ করবে তোমার জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য।


১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com

 

৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

আপনার কমেন্ট লিখুন