আমার কলেজ বন্ধু মুহিবকে দেখতাম ক্লাস শুরু হওয়ার আগে, টিফিন পিরিয়ডে কিংবা বোরিং কোন ক্লাসের মাঝে শেষের সারিতে বসে বসে গল্পের বই পড়ছে। সব থেকে অবাক করার বিষয় হলো প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন বই পড়ছে সে। কীভাবে এত তাড়াতাড়ি বই শেষ করতে পারে এটা ভেবেই আমি চিন্তিত।
আমার বাসার বুকশেলফে অনেক বই আছে। টুকটাক ভালোই বই পড়া হয়। কিন্তু একটা বইতো এক সপ্তাহের আগে কোনো দিনই শেষ করা যায় না। একদিন মুহিবকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম। মুহিব হেসে আমাকে চিন্তা করতে মানা করলো আর ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিলো অনেকগুলো ইউটিউব লিংক।
রিভিউ কিংবা চ্যাপ্টার সামারি আগে পড়ো
প্রথম কাজ হিসেবে তোমারা অনেকেই যে কাজটি করো না, তা হলো বুক রিভিউ কিংবা চ্যাপ্টার সামারি পড়া। একটা বই শুরু করার আগে একটু গুগল করে নাও,ইউটিউবে কিছু রিভিউ দেখে নাও। তাহলে বই সম্পর্কে তোমার ধারণা হবে আর বইয়ের ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্টগুলো তুমি আগে থেকে জানলে তোমার আগ্রহ অনেক বেড়ে যাবে। তুমি সেই ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্টগুলো পাওয়ার জন্যে অধীর আগ্রহ নিয়ে পড়ে যাবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা!
চ্যাপ্টার সামারি সব থেকে বেশি কাজে আসে তখন যখন তোমার হাতে সময় অনেক কম। তুমি চ্যাপ্টার সামারিগুলো থেকেই বই সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে নিতে পারবে।
মনে মনে পড়ো
ছোট বেলা থেকেই আমরা একটা অভ্যাসের মধ্যে বড় হই, সেটা হলো জোরে জোরে পড়া। একদম ছোটবেলা থেকে ক্লাসরুমে অনেকটা এমন করে পড়ানো হতো, “অ-তে অজগরটি আসছে তেড়ে” সাথে সাথে পুরো ক্লাস জুড়ে “অ-তে অজগরটি আসছে তেড়ে।”
ছোটবেলার এই অভ্যাস হয়তো পাঠ্যবই পড়ার ক্ষেত্রে অনেক কার্যকর, কিন্তু সাধারণ বই পড়ার ক্ষেত্রে তা একদমই না। যখন আমরা প্রতিটা শব্দ উচ্চারণ করে করে পড়ি তখন কথা বলার সাথে সাথে পড়তে যেয়ে পড়ার গতি কমে যায় কয়েক গুণে। তুমি একটু পরীক্ষা করেই দেখতে পারো, দেখবে উচ্চারণ করে করে পড়লে যত গুলো শব্দ এক মিনিটে শেষ করা যায়, মনে মনে পড়লে সেই সময়ে প্রায় দ্বিগুণ শব্দ কভার করা যায়।
আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে মনে মনে পড়ার সময়ও আমরা পড়াটা মস্তিষ্কের মধ্যে বলতে থাকি অর্থ্যাৎ ঠোঁটে উচ্চারণ করে করে না পড়ে মাথার মধ্যে উচ্চারণ করে করে পড়া! এই সমস্যাটাকে বলা হয় Sub-vocalization. অনেক বিশেষজ্ঞই বলেন, মানুষের দ্রুত পড়ার ক্ষমতাকে কমানোর অন্যতম প্রধান কারণ এই Sub-vocalization.
তাই পড়ার সময় মুখে কিংবা মস্তিষ্কের ভিতরে কোন জায়গাতেই উচ্চারণ করে করে পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। বিনা বাধায় শুধু চোখ বুলিয়ে পড়ে যাও।
পয়েন্টার ব্যবহার করো
পড়তে বসার সময় একটা কলম, হাইলাইটার কিংবা একটা সরু কাঠিকে পয়েন্টার হিসেবে ব্যবহার করতে থাকো। যদি কিছুই না পাও হাতের কাছে ব্যবহার করো হাতের আঙ্গুলটাকেই।
পয়েন্টার ব্যবহার করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ একটা বড় প্যারাগ্রাফ পড়ার সময় আমরা বারবার হারিয়ে ফেলি কোন লাইনে ছিলাম। অনেক সময় একবার পড়ে আসা লাইনকেই আবার পড়তে শুরু করি! এই ভুলগুলোর জন্যে পড়ার মাঝে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে পরবর্তীতে আবার খুঁজে নিয়ে পড়া শুরু করতে হয়। পয়েন্টার ব্যাবহার করলে এরকম ঝামেলার কোন সুযোগই নেই।
পয়েন্টার ব্যবহারের আরেকটা চমৎকার দিক আছে। অনেক সময় এমন হয়, পড়তে পড়তে অন্যদিকে মন চলে যায়। অনেকগুলো লাইন পড়ে ফেলেছি কিন্তু মনোযোগ নেই একদমই! এই হঠাৎ করে অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় পয়েন্টার ব্যবহার করলেই।
তুমি যখন পয়েন্টার ব্যবহার করবে তখন এমনিতেই তোমাকে এক্সট্রা একটা এফোর্ট দিতে হবে, যার ফলে হাত চালানোর জন্যে হলেও তোমাকে মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। যখন তুমি পড়ার সময় পয়েন্টার ব্যবহার করবে, তখন মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হলে দেখবে তোমার পয়েন্টার থেমে আছে। তাই পয়েন্টার বা গাইড ব্যবহার করলে দেখবে তোমার পড়ার মনোযোগ কয়েক গুণে বেড়ে গিয়েছে।
আরো পড়ুন: স্কুলজীবনে যেই গল্পের বইগুলো পড়া উচিত
পয়েন্টারকে সাধারণের থেকে বেশি গতিতে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও
তোমার চোখ আস্তে আস্তে পড়ে অভ্যস্ত। কিন্তু এই অভ্যাসকে তো দূর করতে হবে তাইনা? এই অভ্যাসকে প্রশ্রয় দিও না। প্রথম প্রথম পয়েন্টার যখন ব্যবহার করবে তখন দেখা যায় আস্তে আস্তে পড়ার সাথে সাথে আস্তে আস্তে হাত চলছে কিন্তু এটা আসলে ঠিক না। নিজের পড়ার গতির থেকে পয়েন্টার এর গতিকে বেশি রাখো যেনো নিজের উপর একটা প্রেশার তৈরি হয়। তোমার পয়েন্টারের গতি বাড়ানোর সাথে সাথে তোমার অনেক দিনের গড়া অভ্যাস ভাঙতে থাকবে। চোখের পড়ার গতিও বাড়তে থাকবে।
একাধিক শব্দ একসাথে পড়ার অভ্যাস তৈরি করা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যাদের পড়ার গতি কম তারা পড়ার সময় একটা একটা করে শব্দ পড়ে পড়ে লাইন কম্পলিট করে। একটা একটা করে শব্দ দেখে দেখে পড়লে গতি কম হওয়াটাই আসলে স্বাভাবিক। এজন্যে পড়ার সময় বইটাকে চোখ থেকে একটু দূরে রেখে একই সাথে দুইটা-তিনটা করে শব্দ পড়ার প্র্যাক্টিস করতে হবে।
শুরুতে একটু সমস্যা হবে, কিন্তু আস্তে আস্তে শুরু করলে এক সাথে ৫-৬টা শব্দও পড়ে ফেলা সম্ভব।
ডেডলাইন সেট করো
যখনই একটা বই পড়তে বসবে, হিসাব করে বসবে। কত পৃষ্ঠার বই, কয়টা চ্যাপ্টার আছে। এগুলো গুণে নিয়ে কত দিনে বইটা শেষ করতে চাও তার সিদ্ধান্ত নিয়ে নাও শুরুতেই। আর তার সাথে পড়তে বসলেই ঠিক করে নাও কতক্ষণ সময়ে তুমি কতটুকু পড়বে। ধরো, তুমি আধা ঘণ্টায় দুটো চ্যাপ্টার শেষ করতে চাও। এমন ডেডলাইন ধরে নিলে দেখবে ঠিকই আধা ঘণ্টা পরে তোমার দু’টো চ্যাপ্টার পড়া শেষ।
আসল কথা হচ্ছে চিন্তা, ডেডলাইন তোমার ব্রেইনে একটা প্রেশার দেয়। অন্য কিছু করতে গেলেও মাথায় বেজে ওঠে “আরে আমারতো ২টা চ্যাপ্টার বাকি আছে।” তাই তুমি বিনা বাধায় লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারো সহজেই।
Microsoft Office 3 in 1 Bundle
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
নিজের রেকর্ড নিজে ভাঙতে থাকো
তুমি ১ মিনিটে কতগুলো শব্দ পড়তে পারো, তা আজকেই বের করে ফেলো। কীভাবে বের করবে? চলো পড়ার গতি নির্ণয়ের একটি সহজ পদ্ধতি জেনে নেই।
প্রথমে তোমার পছন্দ মতন একটা বই নিয়ে যে কোন একটা পৃষ্ঠা বের করো। তারপর পাঁচটি সমান লাইন বেছে নিয়ে তাদের শব্দ সংখ্যা গুণে ফেলো। শব্দ সংখ্যাকে পাঁচ দিয়ে ভাগ করলে অর্থাৎ গড় করলে তুমি জেনে যাবে গড়ে প্রতি লাইনে কতটি করে শব্দ আছে।
তারপর স্টপ ওয়াচ চালু করে এক মিনিটে কত লাইন পড়ে শেষ করেছো সেটা দেখে নাও। লাইন সংখ্যাকে গড়ে প্রতি লাইনে শব্দ সংখ্যা দিয়ে গুণ করলেই বের হয়ে যাবে তোমার রিডিং স্পিড! সবশেষে যদি ৪০০ বের হয়, এর মানে হলো তোমার রিডিং স্পিড ৪০০ শব্দ/মিনিট।
খুব সহজেই তুমি নিজের পড়ার গতি সম্পর্কে ধারণা পাবে রিডিং স্পিড বের করে নিলে। এখন কাজ শুধু একটাই, প্রতি সপ্তাহে নিজের স্পিড চেক করতে থাকো। নিজের আগের তৈরি করা স্পিডের রেকর্ডকে ভাঙতে থাকো প্রতিনিয়ত।
মিউজিক প্লে করে পড়তে বসো
একটা গবেষণায় দেখা গিয়েছে পড়ার সময় যদি ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক প্লে করা হয় তাহলে পড়ার গতি তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। সেটা হতে পারে স্টাডি মিউজিক কিংবা ক্লাসিকাল মিউজিক। এর কারণ হিসেবে বলা হয় মিউজিক মানুষের মস্তিষ্ককে শিথিল করে। যে কারণে প্রশান্তির মাঝে চিন্তা ভাবনা কমে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়!
Digital Distraction দূরে রাখো
হাতে বই নিয়ে বসে পড়ার সময় পাশে মোবাইল ফোন রেখো না। রাখলেও ফেসবুক আর ম্যাসেঞ্জারের নোটিফিকেশনগুলো বন্ধ করে রেখো। কারণ পড়তে বসলেই পাশে “টিং” শব্দ করে নোটিফিকেশন আসবে, তারপর তুমি বই রেখে সেই নোটিফিকেশনের পিছনে ছুটে যাবে। এতে স্পিড রিডিং কেনো, তোমার রিডিং প্রোসেসটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
আধা ঘণ্টা পরে হয়তো তোমার মনে পড়বে বইয়ের কথা, তখন তুমি বই হাতে নিয়ে বসে দেখবে কিছুই পড়া হয়নি! তাই ফোনকে হাতের কাছ থেকে দূরে রাখো। যদি ওয়ার্ড মিনিং দেখার জন্যে ফোন খোলাই লাগে নোটিফিকেশনগুলো অফ করে পড়তে বসতে ভুলো না।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন