পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!
“আমরা আমাদের চারপাশকে কীভাবে গ্রহণ করব এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করবে নিজস্ব চিন্তাধারার উপর। কোন পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করতে হলে প্রথমে প্রয়োজন নিজেকে পরিবর্তন করা। অন্যদিকে নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে, প্রয়োজন নিজের চিন্তাধারাকে পরিবর্তন করা”। কথাগুলো Stephen R. Covey-এর লেখা ‘7 Habits of Highly Effective People’ বইটি থেকে নেয়া হয়েছে, যেখানে তিনি আলোচনা করেছেন অত্যন্ত সক্রিয় ব্যক্তির ৭টি অভ্যাস নিয়ে। চলো আজকে দেখে আসি কী আছে এই বইয়ে এবং সেই অভ্যাসগুলো কী কী।
বইয়ের শুরুতেই লেখক সাফল্যের সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করেছেন। যেখানে তিনি বলেছেন সময়ের সাথে সাথে সাফল্যের সংজ্ঞারও পরিবর্তনের কথা। সাফল্যের মূল ভিত্তি হিসেবে আগে যেখানে ‘Character ethic’-কে ধরে নেয়া হতো এখন সেখানে ‘Personality ethic’-কে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। এখন সবাই সাফল্য অর্জন করতে খোঁজে বিভিন্ন shortcut যা আপাতদৃষ্টিতে কার্যকর মনে হলেও স্থায়ী কোন ফল দিতে কখনোই সক্ষম হয় না। অত্যন্ত সক্রিয় ব্যক্তির যে ৭ টি অভ্যাস রয়েছে তা নিচে আলোচনা করা হলো।
Habit 1: Be Proactive
জীবনের গতি পথে সব সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই নিয়ে থাকি, তবুও খারাপ কিছু হলে দোষারোপ করি পরিস্থিতির। অনেক কিছুই আমাদের হাতে থাকে না, কিন্তু সেটি নিয়ে অভিযোগ না করে কীভাবে মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করাই একজন বুদ্ধিমানের কাজ। ধরো, দিনের শুরুতেই তোমার কারো সাথে ঝগড়া হলো। এখন তার প্রভাব তোমার সারাদিনের কাজে পড়বে কিনা তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে তোমার উপর। তুমি কি পরিস্থিতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে চাও? না নিজের পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করতে চাও যা শুধু তোমার হাতেই রয়েছে? এই মনোভাবই বলে দিবে ভবিষ্যতে তোমার অবস্থান কোথায় হবে।
Proactive হতে হলে সব reactive উক্তিগুলোকে proactive-এ পরিবর্তন করে ফেলা যেতে পারে। যেমন:
Reactive: তার ব্যবহারে আমি খুবই বিরক্তবোধ করি।
Proactive: আমি আমার অনুভুতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
“It is our willing permission, our consent to what happens to us, that hurts us far more than what happened to us in the first place.” -Stephen Covey
Habit 2: Begin with the end in mind
ধরো তুমি মারা যাওয়ার পর, তুমি কেমন মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে চাইবে? খুবই ভালো একজন মানুষ হিসেবে নাকি খারাপ একজন মানুষ হিসেবে? সব সিদ্ধান্তরই সব সময় শেষ পরিণতি বিবেচনা করে নেয়াই হলো একজন সক্রিয় মানুষের অভ্যাস। লেখকের মতে কোন জিনিস আমরা দুইবার তৈরি করি। একবার আমাদের মনে, আরেকবার বাস্তবে।
অনেকেরই চিন্তা সেই মনেই রয়ে যায় এই ভেবে যে এটি আমাকে দ্বারা হবে না। নিজেই সেখানে নিজের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এসব বাধা থেকে মুক্তি পেতে হলে আজ থেকেই কাজ শুরু করে দাও। নিজের একটি Personal Mission Statement তৈরি করো। যেমন: তুমি একজন শিক্ষক এবং তুমি তোমার ছাত্রদের কাছে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে চাও।
Habit 3: Put first things first
নিজেকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে জীবনের priority-গুলোকে খুঁজে বের করো। তুমি জীবনে কী অর্জন করতে চাও সেটি বিবেচনা করে তোমার কার্যক্রমগুলো ঠিক করো। যেগুলো সবচেয়ে বেশি জরুরি সেগুলোকে আগে শেষ করো। কাজ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা কখনোই যেন তোমার মৌলিক চাহিদাগুলোকে যেন আনুষঙ্গিক না করে দেয়। এসব দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
“The challenge is not to manage time, but to manage ourselves.” -Stephen Covey
Habit 4: Think Win Win
পারস্পরিক কল্যাণ কামনাই এই অভ্যাসের মূল উদ্দেশ্য। নিজের অনুভূতি, মূল্যবোধ এবং প্রতিশ্রুতির দিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া, সেইসাথে অন্যের অনুভুতির প্রতি লক্ষ্য রাখাও খুব জরুরি। বিশ্বাস করো যে সবার জন্যই যথেষ্ট রয়েছে। এমন কাজ করো যেখানে দুই পক্ষই লাভবান হয় এবং সবাই যেন সেখানে সম্মতি প্রদান করে। যদি দুই পক্ষের কোন পক্ষই লাভবান না হতে পারে সেই পরিস্থিতিতে “no deal”-কেই সবেচেয়ে ভালো বিকল্প ধরে নেয়া কাম্য।
“To go for Win-Win, you not only have to be nice, you have to be courageous.” – Stephen Covey
Habit 5: Seek First to Understand, Then to Be Understood
সক্রিয় ব্যক্তিরা অন্যের সঙ্গে সঠিক এবং সফলভাবে যোগাযোগ এবং সেইসাথে অন্যের মতামত শোনায় অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। লেখক পারস্পারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই নীতিকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। সক্রিয় ব্যক্তিরা শুধু কার্যকরভাবে শোনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন না, বরং নিজেকে তাদের জায়গায় চিন্তা করে তাদের কথার অর্থ অনুভব করার যথার্থ চেষ্টা করেন। অন্যের চাহিদা এবং অনুভূতি বোঝার উপর নির্ভর করবে সবাই তাকে কতটুকু শ্রদ্ধা করবে।
“You have to build the skills of empathic listening on a base of character that inspires openness and trust.” – Stephen Covey
Habit 6: Synergize
সক্রিয় ব্যক্তিরা বিশ্বাস করেন “Two heads are better than one”। যেকোনো বিষয়ে অন্যের সঙ্গে পরামর্শ করা একজন বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন তারা। পারস্পারিক বিশ্বাস এবং সমঝোতায় কাজ করলে অনেক ভালো সমাধান পাওয়া সম্ভব। বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পারিক দ্বন্দ্ব মোকাবেলায়ও এই বিষয়টি অধিক কার্যকর বলে প্রমাণিত।
“The key to valuing differences is to realize that all people see the world, not as it is, but as they are.” – Stephen Covey
Habit 7: Sharpen the Saw
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে যেমন: শারীরিক, মানসিক, আবেগ এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো সমান তালে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই একজন সক্রিয় ব্যক্তির মূল উদ্দেশ্য। সক্রিয় হতে হলে নিজেকে পুনরুদ্ধার করার সময় দিতে হয়। কাজের পাশাপাশি এসব বিষয়ের খেয়াল রাখাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এই বিষয়গুলোর চর্চাই আমাদের মানুষের সঙ্গে পারস্পারিক সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হবে।
“Not a day goes by that we can’t at least serve one other human being by making deposits of unconditional love.” -Stephen Covey
এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে আব্দুল্লাহ আল মেহেদী
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন