পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবার শুনে নাও।
সহজলভ্য ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এখন সংবাদ পাওয়া যেমন খুব সহজ তেমনি প্রযুক্তির সহায়তায় ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে দেয়াও অনেক সহজ। বানোয়াট সংবাদে প্রণোদিত হয়ে অনেক দুঃখজনক ঘটনা ঘটতেও আমরা দেখেছি গত কয়েক বছরে।
শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বেই এখন ভুয়া সংবাদ বা FAKE NEWS একটি বিরাট সমস্যা। তাই বলে কি আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ জানা বন্ধ করে দিবো? অবশ্যই না! একটু সর্তক হলেই কিন্তু আমরা ভুয়া সংবাদের ভিড়ে আলাদা করে ফেলতে পারি আসল সত্যকে।
চলুন, দেখে নেই ৬টি এমন উপায়–
১। ওয়েবসাইটের অদ্ভুত ডোমেন নেইম
সহজ ভাষায়, ডোমেন নেইম হলো ওয়েবসাইটটির নাম। যেমন– ১০ মিনিট স্কুলের ডোমেন নেম– 10minuteschool.com। এখন কোন সংবাদ দেখার পর ওয়েবসাইটির নাম পর্যালোচনা করেই অনেক সময় আমরা বুঝে যেতে পারি সংবাদটি আসল কিনা।
যদি নামটি অনেক বেশি অদ্ভুত, বেমানান, পরিচিত সংবাদ মাধ্যমের নামের কাছাকাছি ও বড় হয়ে থাকে, তখন সেটির ভুয়া সংবাদ মাধ্যম হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যেমন– CrazyNewsBD724.to আপনারাই বলুন নামটা বিশ্বাস যোগ্য কিনা!
২। ওয়েবসাইটের অন্যান্য সংবাদ
যদি ওয়েবসাইট ও সংবাদ ২টিই প্রায় বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়, তখন আমরা যদি সেই ওয়েবসাইটের অন্যান্য সংবাদগুলোর দিকে তাকাই তাহলেও অনেক রহস্যের জট খুলে যাবে। ধরুন– আপনার কাছে “নোয়াখালীর যুবকের জ্বালানী ছাড়া ইঞ্জিন আবিষ্কার” আর্টিকেলটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে। এখন ওয়েবসাইটটির বাকি সংবাদগুলো যদি হয়– “কুড়িগ্রামে স্বর্ণের খনি আবিষ্কার” কিংবা “কচুপাতায় রয়েছে ক্যান্সারের মহৌষধ”। তাহলে আপনার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে এটি ভুয়া সংবাদ।
ভুয়া সংবাদ প্রসারের মূল মাধ্যমই হলো এই ক্লিকবেইট।!
৩। পরিচিত সংবাদমাধ্যমে সংবাদটি না আসা
কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম রয়েছে যারা সর্বজনস্বীকৃত, বহু বছর ধরে টিকে রয়েছে, নিরপেক্ষ এবং পেশাদার। যেমন– BBC, New York Times, The Guardian ইত্যাদি। বাংলাদেশে যেমন- প্রথম–আলো, BDNews24.com, The New Age ইত্যাদি। এখন যেই সংবাদটি আপনি পেলেন, সেটি তখনই সত্য হবে যখন আপনি দেখবেন সেটি স্বনামধন্য পত্রিকাগুলোতেও ছাপা হয়েছে।
৪। সংবাদটি ভবিষ্যৎ অতিপ্রাকৃত ঘটনার কথা বলছে
অতিপ্রাকৃত ঘটনার প্রতি মানুষের আগ্রহ বরাবরই অনেক বেশি।আর এই আগ্রহকেই পুঁজি করে অনেক ভুয়া সংবাদ ছড়ানো হয়ে থাকে। অনেক সময় সেখানে “নাসার গবেষণা মতে”, “বিজ্ঞানীদের ঘোষণা” ইত্যাদি বাক্যাংশ যুক্ত থাকে যাতে সংবাদটি বিশ্বাসযোগ্য হয়।
যেমন- “নাসার ভবিষ্যতবাণী, ৩০ নভেম্বর থেকে ১০ দিন সূর্য উঠবে না পৃথিবীতে” । পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন সংবাদটি ভুয়া। তারপরও যদি দ্বন্দ্ব থাকে, তাহলে অনুসরণ করতে পারেন ৩ নং ধাপটি।
৫। ক্লিকবেইট শিরোনাম
ক্লিকবেইট হলো বেইট বা টোপের মতো চিত্তাকর্ষক কিছু যাতে মানুষ সেই লিংকে ক্লিক করতে প্রবল আগ্রহী হয়। ভুয়া সংবাদ প্রসারের মূল মাধ্যমই হলো এই ক্লিকবেইট।
অনেক সময়ই ক্লিকবেইট গুলো হয়ে থাকে তারকা বা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের কেন্দ্র করে। অর্থাৎ, যখনই দেখবেন কোন শিরোনাম অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক বা এতে কোনো সম্মানিত ব্যক্তির অখ্যাতির কথা রয়েছে, তখন তার ভুয়া সংবাদ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
৬। ওয়েবসাইটটি রম্য
অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে রম্যসংবাদ পরিবেশন করা হয়। যদিও তাদের প্রথম দেখায় মনে হবে পেশাদার সংবাদ মাধ্যম। এসব ওয়েবসাইটের কাজ ভুয়া সংবাদ উপস্থাপন নয় বরং মানুষকে বিনোদন দেয়া। এদের অধিকাংশ পাঠক বিনোদনের জন্যই সংবাদ গুলো পড়ে থাকেন, যদিও অনেক সময় নব্য পাঠকেরা এগুলোকে সত্য মনে করে ফেলেন।
এজন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সংবাদটি যদি অনেক হাস্যরসাত্মক হয়ে থাকে, তাহলে সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে ওয়েবসাইটটি রম্য বা স্যাটায়ার। যেমন– theonion.com ইত্যাদি।
সত্য সংবাদ যেমন আমাদের বিশ্ব নাগরিক করে তুলতে পারে তেমনি ভুয়া সংবাদ আমাদের মননকে মধ্যযুগীয়ও করে তুলতে পারে। এজন্যই বুদ্ধিমানের পরিচয় কোন কিছু করা, ভাবা বা বলার আগে সংবাদের সত্যতা যাচাই করা এবং সত্যতা যাচাই করেই কোনো সংবাদ শেয়ার করা।
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন