রাতে ঘুমের আগে ৬টি অভ্যাস: Stress vs Good Night

June 8, 2018 ...

পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবারে শুনে নাও!

 

রাতের ঘুম যেন আমাদের সারাদিনের পরিশ্রান্ত মস্তিষ্কের তৃষ্ণার্ত প্রার্থনা। তবে সভ্যতার অগ্রসরতার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে আমাদের মস্তিষ্কই ইদানীং বেশ তালগোল পাকিয়ে একাকার।

কারণ আমরা এই আধুনিক যুগে নিশাচর প্রাণীদের মতোই রাত জাগতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। অভ্যাসটি এখন এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকলেও আমরা রাত জেগে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের ময়নাতদন্ত শুরু করি। আমি নিজেই নিজের এই বিষয়টি খেয়াল করেছিলাম। তবে খুব সহজেই কিছু পন্থা অবলম্বন করে রাতের রুটিনে বেশ পরিবর্তন আনা সম্ভব। 

সচরাচর আমরা গভীর রাতকে নিজেদের পাঠ্যবইয়ের পড়াশোনা, অ্যাসাইনমেন্ট কিংবা প্র্যাকটিক্যাল খাতা লেখার জন্য বরাদ্দ রাখি। আর তার ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুকিং তো আছেই।

তবে রাতে ঘুমানোর আগে আমরা এমন কিছু বিষয় চর্চা করতে পারি যা আমাদেরকে সম্ভাবনাময় শৃঙ্খলতার শিকলে বেঁধে রাখতে সহায়তা করবে এবং দেহ ও মন উভয়ই সুস্থ স্বাভাবিক থাকবে।

কীভাবে? চলো তবে জেনে নিই এরকম ৬টি অভ্যাস! 

রাতে ঘুমানোর আগে করণীয় ৬টি অভ্যাসঃ 

১. ঘুমের ১ ঘণ্টা আগে হারিয়ে যাই বই কিংবা ব্লগের সাম্রাজ্যে

বিখ্যাত ব্যক্তিরা কিন্তু সেটিই করতেন। আমরা সকলেই কোনো না কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীর জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করি। সেটি হতে পারে লাইফ হ্যাকস বিষয়ক কোনো বই কিংবা ব্লগ, হতে পারে উৎসাহমূলক কোনো ব্লগ, হতে পারে মহাকাশ নিয়ে অজানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজা, হতে পারে বিখ্যাত ব্যক্তিদের সফলতার রহস্য, হতে পারে উপন্যাস, গল্প কিংবা সাম্প্রতিক বিষয়ক সাড়া ফেলে দেয়া কোনো খবরের আদ্যপান্ত।

তবে রাতে ঘুমানোর আগে কিছু সময়ের জন্য বই কিংবা আর্টিকেল পড়ার অভ্যাসটি সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই কার্যকর এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তা প্রমাণিত। বলা হয়ে থাকে আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি অথবা অবসাদগ্রস্থ মনের জন্য যে মানসিক চাপ তৈরি হয় সেটির জন্য ‘কর্টিসল’ নামক এক ধরনের হরমোন দায়ী। আর এই কর্টিসল হরমোনকে নির্দিষ্ট মাত্রায় নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখে একটি কাজ। আর তা হলো রাতে ঘুমানোর আগে কিছু সময়ের জন্য বই পড়া। সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের নেতৃত্বে ছিলেন নিউরোসাইকোলজিস্ট ডা. ডেভিড লিউইস। তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে, রাতে ঘুমানোর আগে অন্তত ৬ মিনিটের জন্য নিজের পছন্দের মত কোনো বই পড়লে তা মানসিক চাপের মাত্রাকে শতকরা ৬৮ ভাগ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম।

The Sleep Council-এর মতে প্রায় ৩৯ ভাগ মানুষ যারা রাতে ঘুমানোর পূর্বে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তারা বছর শেষে প্রতিদিনই সুস্থ স্বাভাবিক ঘুম উপহার পেয়েছেন এবং বিভিন্ন রোগবালাই থেকেও মুক্তিলাভ করেছেন।

তুমি যখন রাতে ঘুমানোর আগে তোমার পছন্দের টপিক নিয়ে পড়া শুরু করো তখন তোমার মন সেই বই কিংবা আর্টিকেলের মধ্যে ডুবে যায় এবং তুমি তোমার মানসিক চাপ বা হতাশার কথা ক্ষণিকের জন্য ভুলে যাও। রোমাঞ্চকর কোন গল্পের বই তোমাকে অন্য ভুবনের পথিক বানিয়ে দেয়, তুমি সেই গল্পের সুতোয় নিজের কল্পনাকে বুনতে শুরু করো। মেন্টাল স্ট্রেস লেভেল কমতে থাকে এবং কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণও স্বাভাবিক মাত্রায় কমে যায়। তুমি আস্তে আস্তে ভুলে যাও তোমার হতাশার কথা।

রাতে ঘুমের আগে কিছুক্ষণের জন্য যদি মহাকাশ বিষয়ক কোনো বই বা আর্টিকেলে সময় দিই, সেখানে আমাদের মানসিক চাপ বা হতাশগ্রস্ত মন খুব সহজেই মহাকাশের বিশালতার কাছে হার মানবে। আমরা অসীম মহাকাশের নভোচারী হয়ে কল্পনার রাজ্যে অজানা অদেখাকে ছুঁয়ে দেখতে পারবো।

আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা সময় বই অথবা ব্লগের জন্য বরাদ্দ রাখি। আর তার মধ্যে প্রথম ১৫ মিনিট সময় জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক কোনো বই অথবা আর্টিকেল পড়ি। বই হিসেবে কার্ল স্যাগানের বইগুলোকেই বেছে নিই। প্রথমেই মহাকাশ বিষয়ক বই পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে মনকে প্রসারিত করা, যেখানে মানসিক চাপ খুবই তুচ্ছ এবং কল্পনার বিশালতার কাছে পরাজিত।

রাতে ভালো একটি ঘুমের জন্য অবশ্যই মনকে পজিটিভ এবং মোটিভেট করা প্রয়োজন। আর তার জন্য প্রেরণামূলক কোনো ব্লগের প্রয়োজনীয়তা সূর্যের আলোয় মুখরিত দিনের মতোই দৃশ্যমান। প্রেরণা বা উৎসাহমূলক কোনো গল্প বা মহৎ ব্যক্তিদের জীবন নিয়ে লেখা কোনো ব্লগ আমি শেষের ১৫ মিনিটের জন্য রাখি।

কারণ ঘুমানোর ঠিক ১৫ মিনিট পূর্বে একটি পজিটিভ চিন্তা অথবা সঠিক প্রেরণা তোমার মস্তিষ্ককে জানান দেয় পরবর্তী দিনগুলো থেকে কীভাবে কাজ করলে তুমি সফল হতে পারবে, কী কী বিষয়ে তোমার পরিবর্তন আনা জরুরি, কোন অভ্যাসগুলো তোমার ত্যাগ কিংবা চর্চা করা প্রয়োজন। এগুলো সবই তোমার মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করে রাখে। তোমাকে মানসিক প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে। তোমার মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে এবং ঘুমানোর সময় ‘এন্ডরফিন’ নামক হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয় যার ফলে তুমি নতুন প্রেরণায় উজ্জীবিত হও।

মাঝের ১৫ মিনিট কিন্তু আমরা কিছু টোটকা শিখে নিতে পারি। বলা হয়ে থাকে রাতে ঘুমের আগে এবং ভোরবেলায় কঠিন পড়াগুলো মনে থাকে বেশি। তাই এই সময়টায় তুমি লাইফ হ্যাকস বিষয়ক কোনো বই অথবা ব্লগ পড়ে নিতে পারো। দৈনন্দিন জীবনে যা সবসময়ই তোমাকে কাজে দিবে এবং মনে রাখার জন্য উত্তম সময় বলেই তুমি সহজেই টোটকা সম্বলিত পদক্ষেপগুলো নিজের আয়ত্ত্বে আনতে পারবে।

আরো বাকি ১৫ মিনিট শুধু তোমার ইচ্ছার উপর রেখে দিতে পারো। যেমন আমি এই ১৫ মিনিট গুগলে বিভিন্ন অজানা বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি, ডিকশনারিতে নতুন কিছু শব্দ শিখি, অথবা আজকের ঘটে যাওয়া খবর পড়ি। ঘূর্ণায়মান গোলক পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এর চেয়ে ভালো উপায় আর কী হতে পারে!

ব্যস! হয়ে গেলো তো পারফেক্ট ১ ঘণ্টা? এভাবে রাতে ঘুমানোর আগে ১ ঘণ্টা বই অথবা ব্লগ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলো এবং কিছুদিনের মধ্যেই নিজের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন লক্ষ করো। The Sleep Council-এর মতে প্রায় ৩৯ ভাগ মানুষ যারা রাতে ঘুমানোর পূর্বে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তারা বছর শেষে প্রতিদিনই সুস্থ স্বাভাবিক ঘুম উপহার পেয়েছেন এবং বিভিন্ন রোগবালাই থেকেও মুক্তিলাভ করেছেন।

তাহলে বুঝতেই পারছো যে মাত্র কয়েক মিনিটের বই পড়ার কাছে তোমার দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ কতটাই অসহায়!

২. রাত ৭টার পর থেকে ‘নো ক্যাফেইন’

যদি মনে হয় যে আজ রাতে তোমার বাড়তি কোনো জরুরি কাজ নেই, পড়াশোনার চাপ এতটাও নেই যে তোমাকে রাত জাগতেই হবে, তবে অবশ্যই রাতে সময়মত তোমার ঘুম দরকার। অযথা জেগে থাকার তো কোনো কারণও নেই, তাই না? আর তার জন্য সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে চা কফি থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। সময় হিসেবে সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে কেন?

যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়টে অবস্থিত হেনরি ফোর্ড হাসপাতালের ‘স্লিপ ডিসঅর্ডারস রিসার্চ সেন্টার এন্ড মেডিসিন’ বিভাগের গবেষকরা ১২ জন সুস্থ স্বাভাবিক পুরুষ ও মহিলার ওপর একটি পরীক্ষা চালান, যাদের সবাই প্রতিদিন পরিমিত মাত্রায় এবং নিয়মমাফিক ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় পান করেন। সেই সাথে এই ১২ জন পুরুষ এবং মহিলা সবাই-ই স্বাভাবিক ঘুমের রুটিন মেনে চলেন। তাদের ঘুমের রুটিনের দিকে তাকালে দেখা যায় তারা সবাই প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে ১টার মধ্যে ঘুমাতে যান এবং সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে ঘুম থেকে ওঠেন।

গবেষকরা এবার তাদেরকে রাতে ঘুমের ঠিক ০,৩ এবং ৬ ঘণ্টা আগে কফি খেতে দিলেন এবং কয়েকদিন পর দেখা গেল যে, ঘুমের ঠিক ৬ ঘণ্টা আগে কফি পানের ফলে স্বাভাবিক ঘুমের ১ ঘণ্টা সময় ব্যহত হয়। ঠিক একই ভাবে ৩ ঘণ্টা আগে কফি পানের ফলে স্বাভাবিক ঘুমের প্রায় ২-৩ ঘণ্টা সময় ব্যহত হয় এবং ০ ঘণ্টা অর্থাৎ যেই সময় ঘুমাতে যাবার কথা ঠিক সেই সময়ই কফি পান করার ফলে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা স্বাভাবিক ঘুম ব্যহত হয়। অনেকে সারারাত জেগে থাকেন।

‘Body Clock’ বা ‘দেহ ঘড়ির’ জন্য জেফরি সি হল, মাইকেল রশবাস এবং মাইকেল ডব্লিউ ইয়ং-এর নোবেল প্রাপ্তির কথা হয়তো অনেকেই শুনেছো। রাতে ঘুমানোর ৬ ঘণ্টা আগেও ৩০০-৪০০ মিগ্রা. কফি পান তোমার ‘দেহ ঘড়ির’ নির্দিষ্ট কক্ষপথকে বেশ বাধাগ্রস্থ করে দিতে পারে এবং তোমার মানসিক চাপও বেড়ে যাতে পারে, সেরোটনিন নামক হরমোনের মাত্রাও কমে যেতে পারে যার ফলে তুমি সামান্য কোনো কারণেই ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকো। তবে দিনের অন্যান্য সময়ে নির্দিষ্ট মাত্রায় কফি পানের উপকারিতাও রয়েছে।

আমরা সাধারণত রাতে ঘুমানোর আদর্শ সময় হিসাবে রাত ১২ টা থেকে ২টা পর্যন্ত সময় বেছে নিই। তাই সন্ধ্যা ৭টা এমনই এক সময় যা তোমাকে এই সময়ের আগ পর্যন্ত চা কিংবা কফি পানে দেহ এবং ঘুমে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে না। 

তাই সন্ধ্যা ৭টার পর এখন থেকে আর ‘নো ক্যাফেইন’।  

৩. কয়েক মিনিটের ব্যায়ামও কিন্তু মন্দ নয়

‘ব্যায়াম’ নামটি শুনলেই যেন জগতের সব অলসতা আমাদের শরীরে জেঁকে বসে। ভাবতে থাকি ‘ব্যায়াম ছাড়া কি মানুষ বেঁচে আছে না?’

হ্যাঁ, বেঁচে আছে অবশ্যই। কিন্তু সুস্থভাবে?

‘Journal Of Sleep Research’-এর গবেষণা অনুযায়ী যারা রাতে ঘুমের আগে সর্বোচ্চ ৩৫ মিনিটের হালকা ব্যায়াম করার অভ্যাস করেছেন তারা অন্যদের তুলনায় বেশ ভালো ঘুমাতে পারছেন এবং হার্টের বিভিন্ন সমস্যা থেকেও মুক্তি মিলছে।

আবার যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনায় অবস্থিত ‘অ্যাপালাশিয়ান স্টেট ইউনিভার্সিটি’-এর একদল গবেষক প্রমাণ করেন যে, সন্ধ্যা ৭টা থেকে ঘুমের ২-৩ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত যে কোনো সময়ে কয়েক মিনিটের ব্যায়াম একজন ব্যক্তিকে বিরতিহীন ঘুম উপহার দিতে সক্ষম। এমনকি গবেষণায় এটিও বেরিয়ে এসেছে যে রাতে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম, সকালের যে কোনো ব্যায়ামের চেয়েও কার্যকর।

তবে হার্ভার্ড হেলথ স্কুলের অধ্যাপক ড. ক্যুয়ান রাতে ঘুমের আগে ব্যায়ামের ব্যাপারে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন। যেমন: যদি রাত জেগে কাজ করার কিংবা গভীর রাতে ঘুমানোর পরিকল্পনা থাকে তবে যেন ঘুমানোর কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে সেই নির্দিষ্ট কাজ অথবা ব্যায়াম শেষ করা হয়।

কিছু সময়ের ব্যায়াম আমাদের দেহের রক্ত প্রবাহমাত্রা স্বাভাবিক রাখে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, প্রোস্টেট ক্যান্সারসহ নানাবিধ রোগবালাই হতে রক্ষা করে। আর রাতে ঘুমানোর আগে রুটিনমাফিক ব্যায়াম আমাদের মাংসপেশীতে প্রোটিন সঞ্চরণে ভূমিকা রাখে। আর আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখন কর্টিসল, এড্রেনালিন ইত্যাদি হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক রূপ নিতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে আমাদের ঘুম ভালো হয়।

তবে একটু খেয়াল রাখা প্রয়োজন যেন ঠিক ঘুমের আগ মুহূর্তেই আমরা ব্যায়াম করতে বসে না পড়ি। কারণ এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ব্যায়াম এবং ঘুমের মাঝখানে অন্তত ২-৩ ঘণ্টা ব্যবধান রাখা উচিত।

৪. ৩-৫ মিনিটের মেডিটেশন হোক প্রতিরাতের অভ্যাস

কেমন হয় যদি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর ঠিক ৫ মিনিট পূর্বে আমরা কল্পনায় রূপকথার শহর ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যানে হারিয়ে যাই? ছুঁয়ে দেখি সবুজ গালিচার এই অসাধারণ চতুর্ভূজাকৃতির বাগানকে? কিংবা কেমন হয় যদি নিজেই একটি মনের বাড়ি কল্পনা করি যেখানে রয়েছে হাজারো পাখির সুমধুর কোলাহল?

মনকে প্রফুল্ল রাখতে মেডিটেশনের জুড়ি নেই । ঘুমের ব্যাঘাত জনিত অন্যতম একটি রোগ হচ্ছে ‘ইনসোমনিয়া’। প্রতিদিন ঘুমের আগে ৩-৫ মিনিটের মেডিটেশন এই রোগের প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। মেডিটেশনকে স্বাভাবিক ঘুমের মহৌষধও বলা হয়ে থাকে। ধরো, তুমি কিছুতেই মাথা থেকে দুশ্চিন্তা দূর করতে পারছো না, বই বা ব্লগ পড়াতেও মনোযোগ দিতে পারছো না। তখন মনকে একটি সঠিক ফোকাসে এনে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে জানান দিতে পারো যে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে তোমার সকল অবসাদ বেরিয়ে যাচ্ছে। একে বলে রিল্যাক্সেশন। যা  মেডিটেশনের সর্বপ্রথম ধাপ। রাতে ঘুমের জন্য কয়েক মিনিট এই রিল্যাক্সেশন মেথড অনুসরণ করলে ঘুম হবে বিরতিহীন, এমনকি স্লিপ সাইকেলও হয় পরিপূর্ণ ।

একটি ‘Night’ তখনই  ‘Good’ হবে যখন আমরা সুস্থদেহে, প্রশান্ত মনে এবং মানসিক চাপবিহীন উৎফুল্ল মেজাজে ঘুমাতে পারবো।

রাতে ঘুমের আগে মেডিটেশন অকস্মাৎ অনিয়মিত হৃৎকম্পনকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, বিভিন্ন স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে আনে। যেহেতু মেডিটেশনের পরপরই তুমি ঘুমাচ্ছো, সেহেতু ঘুম পূর্ব রিল্যাক্সেশনের সাথে স্বাভাবিক ঘুম তোমাকে অল্প সময়ে গভীর ঘুমের তৃপ্তি প্রদান করবে।

তাই নিয়মিত রাতে গুডনাইট বলার আগে নিশ্চিত করো ৩-৫ মিনিটের মেডিটেশন।

Personal Fitness

কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • বাসায় ব্যায়ামের নিয়ম এবং ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবহার
  • ফুল বডি ট্রেইনিংয়ের পাশাপাশি শরীরের আলাদা আলাদা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করা
  •  

    ৫. ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে সাবধানতা

    ছোটবেলা থেকেই আমরা এই ব্যাপারে যথেষ্ট ধারণা নিয়েছি যে সারাদিন ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাব কিংবা কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ মেলে রাখার পরিণাম কত ভয়াবহ! কুফলসমূহ যতই আমাদের সামনে যুক্তির সাথে তুলে ধরা হোক না কেন, আমরা সুফল ভেবেই সকাল থেকে রাতে ঘুমের আগ পর্যন্ত ভক্তিভরে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে মশগুল থাকি।

    স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপের স্ক্রিনে ‘ব্লু লাইট’ থাকে এবং তা থেকে গুচ্ছাকারে ফোটন কণা নির্গত হয়। এই ব্লু লাইট থেকে আগত ফোটন কণা আমাদের মস্তিষ্ককে ‘মেলাটোনিন’ নামক এক ধরনের হরমোন ক্ষরণে বাধা প্রদানে উৎসাহিত করে। যার ফলে আমরা নিদ্রাহীনতায় ভুগি। আমাদের হাতে যদি এখন সারা রাত স্মার্টফোন ধরিয়ে চ্যাট করতে দেয়া হয়, আমরা কিন্তু তাই-ই পারব। এর কারণ হচ্ছে দীর্ঘদিনের অভ্যাস এবং ব্লু লাইটের ক্ষতিকর প্রভাব।

    ইতোমধ্যে তুমি মনে মনে প্রশ্ন করতে পারো যে, তবে রাতে ব্লগ পড়বো কীভাবে? ফোন কি বন্ধ করে রাখবো ঘুমানোর আগে?

    উত্তর হচ্ছে- আমরা এখন এমনই একটি অবস্থায় দাঁড়িয়েছি যেখানে স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপের সংস্পর্শ ছাড়া এক মুহূর্তও ভাবতে পারি না। তবে প্রযুক্তি বসে নেই। যেহেতু ঘুমের আগে স্মার্টফোনের কিংবা ল্যাপটপের ‘ব্লু লাইট’ আমাদের চোখ ও মস্তিষ্কসহ দেহ ঘড়ির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, তাই আমরা ফোনে ‘Night Mode’ চালু রাখতে পারি।

    তোমরা যারা অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার কর এবং যাদের ফোনে নাইট মোড নেই তারা খুব সহজেই প্লে স্টোর থেকে ‘Twilight’, ‘Darker’, ‘Blue Light Filter’ ইত্যাদি জনপ্রিয় অ্যাপগুলো ডাউনলোড করে নিতে পার। আর অ্যাপল ডিভাইস ব্যবহারকারিদের আইওএস ১১-এর পর থেকেই ফোনে কিংবা আইপ্যাড বা ম্যাকবুকে (যে কোন ভার্সনের ম্যাক ওএস) নাইট মোড অপশনটি সংযুক্ত করা আছে।

    কিন্তু তাই বলে নাইট মোড চালু রেখেই রাত পার করা বোকামি। যখন আমরা ঘুমানোর ১ ঘণ্টা আগে বই অথবা ব্লগ পড়ার জন্য স্মার্টফোনের শরণাপন্ন হবো, তখন এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। সর্বোপরি রাতে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার যত কম করা যায় ততই স্বাস্থ্যের জন্য মঙ্গল। গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, ঘুমানোর পূর্বে একটানা দুই ঘণ্টা স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের ব্যবহার মেলাটোনিনের মাত্রা শতকরা ২২ ভাগ কমিয়ে ফেলে। যার ফলে আমরা সহজেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে যাই। ঘুম এবং চোখের দূরত্ব ক্রমশই বাড়তে থাকে।

    তাই রাতে ঘুমানোর আগে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার হোক পরিমিত এবং তা যেন ইতিবাচক ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়।

    ৬. আগামীকালকের কাজগুলো মনে আছে তো?

    প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তুমি পরবর্তী দিনের জন্য প্রস্তুত তো? যদি উত্তর হয় ‘প্রস্তুত হওয়ার কী আছে? ঘুম থেকে উঠলে তো আগামী দিন এমনিই চলে আসে!’

    তাহলে বলবো আজ থেকেই একটি অভ্যাস রাতে ঘুমানোর আগে যুক্ত করে ফেলো। তা হলো আগামীকালের জন্য কী কী করার আছে তার একটি ছোট্ট টু-ডু লিস্ট। এই অভ্যাসের সাথে যদি তোমার সখ্যতা গড়ে ওঠে তবে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে একধাপ উপরে তোমার অবস্থান নিশ্চিত করতে পারো।

    ‘The father of hydrogen bomb’ খ্যাত পদার্থবিদ এডওয়ার্ড টেলারের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে।

    তা হলো “The science of today is the technology of tomorrow”।

    ধরে নাও আগামীদিনের পরিকল্পনা তোমার সেই বিজ্ঞানেরই অংশ যা ভবিষ্যতে তোমাকে দারুণ সব প্রযুক্তি উপহার দিবে। তোমাকে পরবর্তী দিনের জন্য আগের রাতের এই ছোট্ট পরিকল্পনা শৃঙ্খলতার চাদরে ঢেকে উষ্ণতা প্রদান করবে, যার প্রতিটি ভাঁজে আছে ‘সাফল্য’। তোমার জীবনে অধ্যবসায়ের আবির্ভাব হবে ।

    কোথায় লিখে রাখবে আগামীদিনের কাজগুলো?

    Microsoft To-Do, Evernote, Todoist ইত্যাদি নামকরা অ্যাপ কিন্তু ডাউনলোড করে নিতেই পারো তোমার স্মার্টফোনে। তবে আরেকটি সেরা অ্যাপের কথা না বললেই নয়! তা হলো ‘Google Keep’। অ্যাপল, অ্যান্ড্রয়েড কিংবা মাইক্রোসফট ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই বিনামূল্যে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারবে।

    তবে আজ থেকেই শুরু হয়ে যাক এই দারুণ ৬টি অভ্যাস!

    আমরা সকলেই রাতে বন্ধুদের সাথে চ্যাট করার সময় আলাপচারিতার শেষ মুহূর্তে একটি কমন কথা বলি। আর তা হলো ‘Good Night’। কিন্তু সব ‘Night’ কি ‘Good’ হয়?

    একটি ‘Night’ তখনই ‘Good’ হবে যখন আমরা সুস্থদেহে, প্রশান্ত মনে এবং মানসিক চাপবিহীন উৎফুল্ল মেজাজে ঘুমাতে পারবো। সফল ব্যক্তিদের জীবনী ঘাঁটতে গেলেও কিন্তু উপরোক্ত কাজগুলোই খুঁজে পাবে। আর এই অভ্যাসের বশেই তাঁরা সফলকাম মানুষের কাতারে দাঁড়াতে পেরেছেন।

    এই ৬টি অভ্যাসের সাথে জড়িয়ে নাও তোমার প্রাত্যহিক রুটিন। লক্ষ্য করো তোমার মানসিক চাপ কমছে না বাড়ছে। প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে যেন নিজেকেই বলতে পারো সত্যিকারের Good Night।

    তবে আজ থেকে তুমি তৈরি তো?

    [সফল ব্যক্তিরা আরও কি কি করতেন? দেখতে পারো ভিডিওটি  https://youtu.be/kvB0AYO7E9w ]

    এই লেখাটির অডিওবুকটি পড়েছে তাহমিনা ইসলাম তামিমা


    ১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/

    ১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com

    ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

    দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

    আপনার কমেন্ট লিখুন