ডিজিটাল এই যুগে আমাদের মধ্যে যে সমস্যাটা দেখা যায়, সেটা হলো যে আমরা ফেসবুক-ইউটিউব-স্ন্যাপচ্যাট এবং এরকম সব সাইটের ভীড়ে কাজের সময়টা ঠিক করে উঠতে পারি না। একবার ভেবে দেখো তো, ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকের নিউজ ফীডে যে সময়টা নষ্ট হয়, সেটা অন্য কাজে লাগালে কিন্তু বিশাল কোন কিছু হয়ে যেতে পারতো!
ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলাটা দরকার, যেহেতু যুগটাই এমন। কিন্তু সেজন্যে নিজের ক্রিয়েটিভিটি খোয়ালে তো আর চলবে না! আর ঠিক এই কারণটার জন্যেই শিখে নিতে হবে কিছু টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল। না, এগুলো খুব কঠিন নয়, বরং প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এটা এখন সহজ থেকে সহজতর কাজগুলোর একটা! আজ বলবো এরকমই ৫টি কৌশলের কথা, যেগুলো কাজে লাগালে কার্যকরী ডিজিটাল লাইফ চালাতে পারবো আমরা সবাই।
১। মেসেঞ্জারের নোটিফিকেশন অফ রাখা:
বন্ধুবান্ধবের তো কমতি নেই আমাদের। আর যতো বেশি বন্ধু, ততো বেশি নোটিফিকেশন। মেসেঞ্জারে রাতভর চ্যাট, আর তার ফাঁকে ফাঁকে একটু আধটু কাজ, যেগুলোকে নামমাত্রই ধরা যায়। মেসেঞ্জারের গ্রুপগুলোয় তো সবসময় কেউ না কেউ কথা বলতেই থাকে!
এতে যেটা হয়, দরকারি কোন কাজ করার সময় ব্যাপক একটা বাধার সৃষ্টি করে এই মেসেঞ্জারের কথাগুলো। ধরো তোমার সামনে পরীক্ষা, তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করছো। হুট করে চোখ পড়লো কোন এক বন্ধুর মেসেজে, তুমি গল্প শুরু করলে। গোল্লায় গেল পরীক্ষা, এক ঘন্টা পর তুমি নিজেকে ওই মেসেঞ্জারেই আবিষ্কার করবে!
এইজন্যে খুব কাজের একটা উপায় হচ্ছে নোটিফিকেশন অফ করে রাখা। দরকারি কেউ হলে সে মেসেজ দিয়ে চলে যাবে, সেটা তুমি পরে ফাঁকা সময়ে দেখে নিতেই পারো। কিন্তু অযথা কাজের সময় যাতে মনোযোগ না চলে যায়, সেজন্যে নোটিফিকেশন অফ রাখা হচ্ছে সেরা সিদ্ধান্ত।
২। দিন শুরু করার আগে দিনের কাজের একটা লিস্ট বানাও:
প্রতিদিনে হরেক রকম কাজ থাকে আমাদের। কীভাবে শুরু করবো, কোনটা আগে করবো, বা কী কী কাজ করবো সবকিছু কিন্তু মনে থাকে না আমাদের। এগুলো মনে না থাকার কারণে হুট করে রাতের বেলায় মনে হয়, “আরে! সকালে তো ওই কাজটা করার কথা ছিল!”
এই সমস্যার একটা চমৎকার সমাধান আছে, যেটা একই সাথে ডিজিটাল সময় ব্যবস্থাপনার কাজেও লাগে। তুমি যদি কম্পিউটারে বেশি থাকো, তাহলে সেখান থেকে স্টিকি নোটে লিখে রাখতে পারো দিনের কাজগুলো কি কি। আবার তুমি যদি বেশি ব্যস্ত থাকো মোবাইল ফোনে, সেখানেও টু-ডু লিস্টে দিনের সবগুলো কাজ আগের দিন রাতেই কিন্তু লিখে রাখতে পারো তুমি!
৩। মোবাইলের ওয়ালপেপার হতে পারে কাজের লিস্ট:
আচ্ছা, তোমার মোবাইলে সবথেকে বেশি কোন জিনিসটা দেখো তুমি? মেসেঞ্জার, ইউটিউব বা গেমসের নাম মাথায় আসলেও, এর উত্তর হচ্ছে ওয়ালপেপার। ফোন অন করলেই ওয়ালপেপারের রাজত্ব শুরু! তো এই ওয়ালপেপারকে মহা কাজে লাগানো যায় তোমার সময় বাঁচাতে। কীভাবে?
নিজের দিনের কাজগুলো, বিভিন্ন টিপস আর ট্রিকসগুলো লিখে রাখতে পারি আমরা ওয়ালপেপার হিসেবে। তাতে যেটা হবে, তুমি ফোন খোলামাত্রই চোখে পড়বে দরকারি কাজগুলো, আর তাই সেগুলো শেষ করতে উদগ্রীব হবে তুমিও!
৪। ক্যালেন্ডারকে সহায়ক বানাও
নিজের কাজের হিসাব রাখার জন্যে ক্যালেন্ডার অসাধারণ কাজের একটা জিনিস। একবার ভাবো তো, তুমি কোন একজনের সাথে একটা মিটিং সেট করে রেখেছো দুই সপ্তাহ পরে। তোমাদের কথা হয়েছে, কিন্তু এই দুই সপ্তাহে যে তুমি মিটিংটা পুরোপুরি ভুলে যাবে, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এজন্যেই আছে ক্যালেন্ডার।
তোমার সব প্ল্যান, সব আইডিয়া রেখে দিতে পারো ওই ক্যালেন্ডারেই। সেখান থেকে দৈনিক একবার করে যদি চেক করো, তাহলে দেখবে সবকিছু সুন্দর করে সাজানো আছে সেখানেই। বাকি কাজ একেবারেই তোমার!
৫। প্রোডাক্টিভিটি অ্যাপের ‘প্রোডাক্টিভ’ ব্যবহার
প্রোডাক্টিভিট অ্যাপগুলো সবথেকে ভালো ব্যবহার করা যায় টাইম ম্যানেজমেন্টে। আমার পছন্দের একটা অ্যাপ হচ্ছে Wunderlist. এছাড়া গুগল ক্যালেন্ডারও অনেক কাজে লাগে এই ক্ষেত্রে।
প্রশ্ন আসতে পারে, এই অ্যাপগুলো দিয়ে কী হবে? উত্তরও রয়েছে, এই অ্যাপগুলো তোমাকে তোমার বিভিন্ন কাজ বা টাস্কের হিসাব রাখতে আর আপডেট দিতে সাহায্য করে। একটা ডিটেইলড প্ল্যান রাখতে ও বানাতে এই অ্যাপগুলোর জুড়ি নেই!
প্রযুক্তির এই বিশ্ব দিনকে দিন দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। এই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তোমাকে অবশ্যই টাইম ম্যানেজমেন্ট করে চলতে হবে, আর সেজন্যেই এই টিপসগুলো দেয়া!
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন