জ্যোতি সিংহ পান্ডের কথা মনে পড়ে?
কী পড়ছে না মনে? ২০১২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লীর চলমান বাসে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে গণধর্ষণ, এখন মনে পড়েছে? কিংবা আমাদের তনু? মশালগুলো কি সব নিভে গেলো? রাস্তায় দাঁড়িয়ে ব্যানারে আর স্লোগানে ‘বিচার চাই বিচার চাই’ এবং সাথে মোমবাতি নিয়ে প্রতীকি প্রতিবাদ। আপনি যদি সচেতন নারী হন, তাহলে চলুন আপনার সচেতনতাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে এবং আপনাকে রক্ষার ভার আপনার হাতেই তুলে দিই।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে হরমোনের বিষাক্ততায় আপনারা খুবই অসহায়, খুবই অনিরাপদ। তবুও আপনারা হাসিমুখের ভান নিয়ে পথ চলেন! কত ঝামেলা, বৈষম্যকে প্রতিদিনের রুটিন ভেবেই পাশ কাটিয়ে দিন পার করছেন, কতোই না সহ্য ক্ষমতা দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা!
মাথা নিচু করে শ্রদ্ধা জানাই আপনাদের।
১৮৬০ সালের আগ পর্যন্ত ভারতবর্ষে শুধুমাত্র ধর্ষণ কিংবা জোর করে নারীদেহে হাত না দেয়া পর্যন্ত ‘সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্ট’ হিসেবে গণ্য হতো না। তখন তো ‘ইভটিজিং’ শব্দই ছিল অপরিচিত। অর্থাৎ ‘৬০ সালের পর থেকে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে থাকে। ১৯৭৬ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স বাতাসে ভেসে বেড়ানো ‘ইভটিজিং’ নামটি পরিবর্তন করে রাখেন ‘ওমেনটিজিং’। ২০০০ সালে এসে বাংলাদেশ সরকার যৌন হয়রানি বিষয়টিকে কঠোরতর অপরাধ হিসেবে দেখতে শুরু করে এবং যৌন হয়রানির সংজ্ঞা হয় এরকম:
‘’If a man, with a view to fulfilling his illegal sexual desire outrage a woman’s modesty or makes erotic gesture, such act of the man will amount to sexual harassment’’
সে যাই-ই হোক, আমাদের মা-বোনেরা কর্মস্থলে কাজের তাগিদে কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য বিভিন্ন সময় একা একা পথ চলতে থাকেন কিন্তু তা মোটেও নিরাপদ নয়। তাই বলে কি পথ চলা থেমে থাকবে? অবশ্যই না। একবিংশ শতাব্দীতে এখন অনলাইনে ইভটিজিং করাও সহজ আবার তা প্রতিরোধ করার উপায়ও অনেক সহজ, শুধু একটু জেনে রাখা দরকার। স্মার্টফোন এখন সবার হাতে হাতে, কিন্তু মেয়েদের জন্য সেই স্মার্টফোনে নিত্য নৈমত্তিক অ্যাপসের পাশাপাশি কিছু স্বীয় প্রতিরক্ষক অ্যাপ ইনস্টল করে নেয়া প্রয়োজন যা নীরব রাস্তা কিংবা অপরিচিত স্থানে একা পথ চলার সময় খুবই কার্যকর।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
তাহলে চলুন আপনাদেরকে এরকম দারুণ কিছু অ্যাপসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।
Circle of 6
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে ৬ জনের একটি গ্রুপ নিয়ে অ্যাপটির কাজ। Tech 4 Good-এর আনা এই অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস যে কেউ ব্যবহার করতে পারবেন। ২০১১ সালে হোয়াইট হাউস পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সেল্ফ ডিফেন্স অ্যাপটি আমার পছন্দের প্রথম তালিকাতেই রাখলাম। প্রায় ৩৬টি দেশের সাড়ে ৩ লক্ষ ব্যবহারকারী প্রতিনিয়ত সেবা পেয়ে যাচ্ছেন।
আরো পড়ুন: যেসব এপ্লিকেশন আপনার স্মার্টফোন ব্যবহারকে করবে আরো সহজ
কীভাবে কাজ করে?
কোনো + আইকন দেখতে পাচ্ছেন? হ্যাঁ এটা হচ্ছে ৬ জন বিশ্বস্ত বন্ধু বা পরিবার যাদেরকে আপনি চাইলেই যে কোনো বিপদে পাশে পাবেন বলে আপনার বিশ্বাস, তাদেরকে অ্যাড করতে পারবেন। তাহলে অ্যাড করে ফেলুন আপনার বিশ্বস্ত ৬ জন বন্ধু বা পরিবারের কোনো সদস্যকে।
কোনো পিন আইকন দেখা যাচ্ছে? যদি দেখতে পান তাহলে সেটি হলো ‘Come get me’, অর্থাৎ আমাকে নিয়ে যাও। যদি নীরব স্থানে একা একা কোনো ভয়ংকর পরিস্থিতির স্বীকার হতে যাচ্ছেন বলে মনে করেন কিংবা আপনি ঘরে ফিরতে অনিরাপদ বোধ করছেন বলে মনে করেন, তাহলে আপনার সার্কেলকে আপনার সহায়তার বার্তা পাঠাতে পারেন। আপনার জিপিএস ট্র্যাক করে সহজেই তারা আপনাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে পারবে। তবে অবশ্যই আপনার ফোনে জিপিএস অন করে রাখতে হবে।
এছাড়া ফোন ও চ্যাট আইকন আপনাকে ফোনকল সেবা কিংবা বিপদের মুহূর্তে যখন আপনার আওয়াজ করা বিপজ্জনক, তখন চ্যাটের মাধ্যমে আপনার অবস্থার কথা ৬ জনের সার্কেলের যে কাওকেই বলতে পারবেন।
তাহলে আপুরা আর দেরি না করে অত্যাবশ্যক এই অ্যাপটি ইনস্টল করে ফেলুন।
একটি ভিডিও দেখে নিতে পারেন: https://youtu.be/ejTdbhI_Yyo
bSafe
‘Never Walk Alone’ মূলমন্ত্র নিয়ে ডেভেলপার Bipper USA-এর আনা এই অ্যাপটি বেশ সাফল্যের সাথেই ১২৩টি দেশের প্রায় ১ লক্ষ ব্যবহারকারীকে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এই অ্যাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ প্রশংসনীয়। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস সহ যে কোনো প্ল্যাটফর্মের জন্য উন্মুক্ত এই অ্যাপটি।
কীভাবে কাজ করে?
ইনস্টল করার পর ফেসবুক অথবা ফেসবুক ছাড়াও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
SOS বাটন চালু করলে আপনার অ্যাড করা অভিভাবকরা তৎক্ষণাৎ আপনার অবস্থান সম্পর্কে তাদের ফোনে একটি অ্যালার্ম পাবে। শুধু তাই নয়, আপনার ফোনের সবকিছু অর্থাৎ ভয়েস এবং ভিডিও রেকর্ডিং তারা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
আবার ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমেও SOS বাটন চালু করতে পারবেন। নিচের ছবির মতো এভাবে ভয়েস অ্যাক্টিভেশন অন করতে হবে:
আপনার কার্যাবলী তদারকি করতে পারবেন আপনার অ্যাড করা অভিভাবকরা। ভিডিও স্ট্রীমিং অন করে রাখাই শ্রেয়।
আপনি অবশ্যই আপনার বিশ্বস্ত কাওকে আপনার কন্টাক্ট লাইব্রেরিতে অ্যাড করতে পারেন। তবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজনকে Primary Contact হিসেবে অ্যাড করে রাখা ভাল। যেমন ধরুন, আপনি প্রতিদিন উত্তরায় যাওয়া আসা করেন, কাজ শেষে অনেক রাত হয়ে যায় মাঝে মাঝে। সেক্টরগুলো থমথমে হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপনার উত্তরায় থাকা বিশ্বস্ত বন্ধু বা আত্মীয়কে Primary Contact-এ রাখতে পারেন। আর যেদিকে আপনার যাওয়া আসা কদাচিৎ, সেখানে আপনার পছন্দমতো বিশ্বস্ত বন্ধু বা আত্মীয়কে অ্যাড করে নিতে পারেন।
অপরিচিত জায়গায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে লাইভ জিপিএস ট্র্যাকিং সুবিধাটি সত্যিই অনেকটা নিশ্চিন্ত নিরাপত্তা এনে দেয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনার অভিভাবক ইনভাইটেশন গ্রহণ করলে সরাসরি আপনার অবস্থান জানতে পারবেন এবং তিনিও আপনার ভ্রমণের ভার্চুয়্যাল সঙ্গী!
একটি নির্দিষ্ট সময় বসিয়ে টাইমার সেট করুন। ধরুন প্রতি ৫ মিনিট পরপর আপনি আপনার অ্যাপটি চেক করছেন, মানে আপনার উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। কিন্তু কোনো কারণে ঐ নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও আপনার কোনো সাড়া না পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার অ্যাপটি আপনার ট্রাস্টেড কন্টাক্টে থাকা অভিভাবকদের জানিয়ে দিবে আপনার অবস্থান।
এছাড়াও উচ্চশব্দের সাইরেন ফিচার রয়েছে যা আপনার বিপদে কিছুটা হলেও আক্রমনকারীকে দুইবার ভাবাবে, এবং আপনিও কিছু করার সময় পেয়ে যাবেন।
তাহলে ইনস্টল করে নিন আপনার ভ্রমণসঙ্গীকে।
এই ভিডিওটি আপনাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে: https://youtu.be/2ijxRTE7Ez0
Life 360
৩৬০ ডিগ্রীতে আবদ্ধ করে রাখবে আপনাকে এই অ্যাপটি। ২০০৮ সালে প্রকাশ পাওয়া এই অ্যাপটির ব্যবহারকারী প্রায় দশ লক্ষেরও উপরে। অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস এবং উইন্ডোজসহ সব প্ল্যাটফর্মেই পাওয়া যাবে এই অ্যাপটি।
কীভাবে কাজ করে?
অনেকটা উপরের দু’টি অ্যাপের মতোই। আপনাকে আপনার পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের অ্যাড করে নিতে হবে। কিছু নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করে রাখতে হবে ম্যাপে, যেখানে আপনি এবং আপনার পরিবারের সবাই-ই বেশিরভাগ সময় যাওয়া আসা করেন। এসব স্থানে পৌঁছে যাওয়া মাত্রই আপনার সার্কেলের সবাই অ্যালার্ট পাবে। আপনার আপডেট সম্পূর্ণ নিরাপদ। ইনস্টল করার পর ফোন নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে অন্যান্য অ্যাপের মতোই। আপনার বিশ্বস্ত বন্ধু কিংবা পুরো পরিবারকে একটি ইনভাইটেশন কোড পাঠাতে হবে যেই কোড দিয়ে তারা আপনার সার্কেলে প্রবেশের সুযোগ পাবে।
এছাড়াও এই অ্যাপটির মাধ্যমে গ্রুপ চ্যাটও সম্ভব।
প্রতিনিয়ত স্কুল-কলেজে যাওয়া আসা করা ছোট বোনদের জন্য এই অ্যাপটি দারুণ কার্যকর।
তাহলে দেরি না করে ইনস্টল করে নিন আপনার ফোনে।
ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন: https://youtu.be/VfXI4iigick
Glympse
২০১৪ সালে Webby অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত রিয়েল টাইম লোকেশন শেয়ারিং এই অ্যাপটি বেশ সাজানো গোছানো। অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস সহ সব প্ল্যাটফর্মেই অ্যাপটি সেরা। এই অ্যাপটির একটি ভিন্নতা হলো আপনার শেয়ার করা অবস্থান জানার জন্য আপনার ফোনের অন্যপ্রান্তের বন্ধুকে এই অ্যাপটি ডাইনলোড না করে নিলেও চলবে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Personal Fitness
কীভাবে কাজ করে?
প্রথমে নিশ্চিত করুন যে স্মার্টফোনে জিপিএস চালু আছে। অ্যাপটি অন করার পরে Send Glympse নির্বাচন করুন। ফোন থেকে আপনার কন্টাক্ট লিস্টটি সিনক্রোনাইজ করা হবে যাতে ব্যবহারকারীরা একটি ই-মেল বা ফোন নম্বর নির্বাচন করতে পারেন। প্রাপক নির্বাচনের পরে, নির্বাচন করুন Glympse কতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে সেবা প্রদান করবে। এটি ১৫ মিনিট থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবেন।
যখন Glympse-এর মেয়াদ শেষ হয়, ব্যবহারকারীরা আর অ্যাকাউন্টটি ট্র্যাক করতে পারবে না। একবার Glympse সেট করা হওয়ার পর প্রেরক যেকোন সময় Glympse বাতিল করতে পারেন। এছাড়াও অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই নিকটাত্মীয়র কাছে আপনার অবস্থান পাঠাতে পারবেন।
তাহলে আর দেরি না করে এই অ্যাপটিও ইনস্টল করে নিন।
ভিডিওটি দেখতেও ভুলবেন না: https://youtu.be/RraWZJk2Mn4
শেষ কিছু কথা
‘নিরাপত্তা’ যখন আপনার একা চলার পথে শুধু আভিধানিক শব্দই মনে হবে, আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটিকে তখন নিজের নিরাপত্তার কাজে লাগান। কখনো স্বল্প ব্যাটারি লাইফ নিয়ে বাইরে বের হবেন না। যতক্ষণ আপনি উপরের অ্যাপগুলো চালাচ্ছেন, ততোক্ষণ আপনার প্রতি মুহূর্তের জন্য জিপিএস কাজ করছে, অডিও-ভিডিও পাঠানোর জন্যও বেশ ভালো ব্যাটারি লাইফ প্রয়োজন। তাই একা বের হওয়ার জন্য আপনার স্মার্টফোনকে গুছিয়ে নিন।
প্রতিটি থানার পুলিশের নম্বর সংরক্ষণ করে রাখুন। অ্যাপ দিয়েই যে আপনার নিজেকে রক্ষা করতে হবে তা নয়। আশেপাশে যা পাবেন, আক্রমণকারীর দিকে ছুঁড়ে মারবেন। এতে খারাপ লাগার কিছু নেই। কারণ আপনি মানুষের আক্রমণের প্রতিশোধ নেননি, জানোয়ারের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করেছেন শুধু। নিরাপদ হোক আপনার পথ চলা।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery by Mark Anupom Mollick
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন