ইতিহাসের বিখ্যাত ৩টি মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা

February 21, 2018 ...

পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবার শুনে নাও।

‘মন বোঝা বড় দায়’ এমন কথা আমরা প্রায়ই শুনি! সত্যিই, বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষের যুগেও মানুষের মন সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন সামান্যই। মনোবৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে সুবিশাল একটি জগত এখনও মানুষের জ্ঞানের পরিধির বাইরে রয়ে গেছে।

যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে গেছেন মানুষের মনের কার্যপ্রণালীর রহস্য উদঘাটন করতে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা চমকপ্রদ তথ্য। এমনই তিনটি বিচিত্র মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা সম্পর্কে জেনে নাও লেখাটি থেকে।

Asch Conformity Study

ইংরেজিতে বিখ্যাত একটি কথা আছে, ‘Majority is always right.’ মানুষের অভ্যাসই এমন, সে স্রোতের বিপরীতে যেতে চায় না। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়া অনেক সহজ, কিন্তু হুজুগের বিপরীতে নিজের বিশ্বাসের অটল থাকা যে কতোটা কঠিন- এ পরীক্ষায় সেটিই ফুটে উঠেছে।

১৯৫১ সালে ড. সলোমন অ্যাচ এই পরীক্ষাটি করেন। খুব সহজ পরীক্ষা- পাশাপাশি দুটি কার্ড রয়েছে। একটি কার্ডে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের তিনটি লাইন, আরেকটি কার্ডে কেবল একটি লাইন আঁকা। এক পলক দেখেই বলে দেওয়া যায় দ্বিতীয় কার্ডের লাইনটির দৈর্ঘ্য প্রথম কার্ডের তৃতীয় লাইনটির সমান, কারণ বাকি লাইন দুটি হয় বেশি ছোট নাহয় বেশি বড়।

 

১০০ জন পরীক্ষার্থীর ১০০ জনই উত্তর দিবে তৃতীয় লাইন। কিন্তু এখানে ড. অ্যাচ একটি মজার ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। ১০০ জন পরীক্ষার্থীর ৯৯ জনকেই ড. অ্যাচ আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলেন, তারা সবাই শিখিয়ে দেওয়া ভুল উত্তর দিয়ে গেল।

ফলে ১০০ তম পরীক্ষার্থী বেশ বিভ্রান্ত হয় গেল, সে তো আর জানে না বাকিরা ইচ্ছা করে ভুল উত্তর দিয়েছে! দেখা গেল সেও অন্য সবার মতো ভুল উত্তরটাই নির্বাচন করলো, অথচ ভুলটা এতই প্রকট যে একটি শিশুও বলে দিতে পারতো সঠিক উত্তর!

আসলে ১০০তম পরীক্ষার্থী ঠিকই জানতো সঠিক উত্তর, কিন্তু বাকি সবার প্রভাবে বিভ্রান্ত হয়ে সে ভুল উত্তরটিকেই সঠিক বলে ভেবে নিয়েছিল। আমাদের বাস্তব জীবনেও এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অনেকে ‘বন্ধুরা খায়, সিগারেট টানলে cool লাগবে দেখতে’ এরকম অনেক কারণে প্রভাবিত হয়ে ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ে।

ঘরে বসে Freelancing

কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত গাইডলাইন।
  • আন্তজার্তিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (যেমন: Upwork, Fiverr) এ নিজের প্রোফাইল তৈরি এবং কাজ পাবার উপায়।
  •  

    ঘুরে আসুন:  ভুল করে আবিষ্কারের ৫টি মজার ঘটনা

    রেস্টুরেন্টে খেতে বসে শুরুতেই খাবারের একগাদা ছবি তুলতে হবে কারণ ‘সবাইকে জানাতে হবে না যে আমি দুপুরে কী দিয়ে খেয়েছি! এটাই তো এখনকার ট্রেন্ড!’ এরকম অনেক ‘ট্রেন্ড’ নিজের অজান্তেই অনুসরণ করে চলেছি আমরা, কারণ একটাই- ‘আর সবাই করছে, আমি না করলে কেমন দেখায়!’

    অনেক অভিভাবক সন্তানদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়তে বাধ্য করেন, কারণ ‘পাশের বাসার অমুকের ছেলে পড়ছে!’ এরকম অজস্র উদাহরণ যেন ড. অ্যাচের পরীক্ষার ফলাফলকেই সমর্থন করে- মানুষ সবসময় চায় অন্য সবার মতো হতে, অথচ চাইলে সে এরচেয়েও অনেক ভাল কোথাও পৌঁছতে পারতো।


    36575588 1967265846656866 4615991147616010240 n

    আরো পড়ুন: আমরা সত্যিই চাঁদে গিয়েছিলাম? কন্সপিরেসী থিওরী পর্ব-১


    A Class Divided

    যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল শিক্ষক জেন এলিয়ট তাঁর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এই পরীক্ষাটি করেন। দুইদিন ব্যাপী চলে এই পরীক্ষাটি। প্রথমে এলিয়ট ক্লাসের শিক্ষার্থীদের দুই দলে বিভক্ত করেন। প্রথম দলে নিলেন যাদের চোখের রঙ নীল, দ্বিতীয় দলে রাখলেন যাদের চোখের রঙ বাদামী।

    তারপর ঘোষণা করে দিলেন যে নীল দলের মর্যাদা বেশি, তাদের মেধা-বুদ্ধি-শক্তি সবই বাদামী দলের চেয়ে বেশি। শুধু তাই নয়, তিনি সবার সামনে বাদামী দলের সদস্যদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করতে থাকলেন, এবং দুই দলের সদস্যদের মেলামেশা, কথা-বার্তা সব বন্ধ করে দিলেন।

    buddhi, mon, moner khela, Psychology, science hacks, science tips

    এরকম ছোট ছোট অনেকগুলো পদক্ষেপের ফলাফলটা হলো অভাবনীয়! নীল দলের শিক্ষার্থীরা এলিয়টের কাছে বিশেষ মর্যাদা পেয়ে, প্রশংসামূলক কথা শুনে নিজেদেরকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাবা শুরু করলো। দেখা গেল, ক্লাসে তারাই এখন সবচেয়ে মনোযোগী, কোন কিছু না বুঝলে সাথে সাথে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রেও তারা এগিয়ে।

    এলিয়ট একটি ক্লাস টেস্ট নিলেন, সেখানেও নীল দল বাদামী দলের সদস্যদের চেয়ে অনেক ভাল ফলাফল করলো! এ পর্যন্ত নাহয় ঠিক ছিল, কিন্তু এরপর বেশ দুঃখজনক একটি ব্যাপার ঘটলো- নীল দলের শিক্ষার্থীরা বাদামী দলের শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করলো এবং একরকম খবরদারি ফলাতে থাকলো

    বাদামী দলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় খারাপ করে, এলিয়টের তিরস্কার শুনে হীনম্মন্যতায় ভুগতে শুরু করলো এবং সবদিক থেকেই পিছিয়ে পড়তে লাগলো।

    Personal Fitness

    কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • বাসায় ব্যায়ামের নিয়ম এবং ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবহার
  • ফুল বডি ট্রেইনিংয়ের পাশাপাশি শরীরের আলাদা আলাদা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করা
  •  

    পরের দিন এলিয়ট একই পরীক্ষা চালালেন, কিন্তু এবার যাদের চোখের রঙ বাদামী তাদেরকে নীল চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে মর্যাদা বেশি দিলেন! আশ্চর্যের ব্যাপার, দেখা গেল ফলাফলও রাতারাতি উল্টে গেছে! অর্থাৎ নীল দলের শিক্ষার্থীরা সবকিছুতে পিছিয়ে পড়তে শুরু করেছে বাদামী দলের চেয়ে!

    পরীক্ষাটির সাথে বাস্তব জীবনের কোন মিল খুঁজে পাচ্ছো? অনেক সময় পরীক্ষায় খারাপ করে শিক্ষক-অভিভাবকের কাছে বকুনি শুনে আমরা আরো দমে যাই, দেখা যায় ফলাফল আরো খারাপ হতে থাকে। অথচ একটু উৎসাহ পেলে ফলাফল রাতারাতি বদলে যেতে পারে।

    তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উচিত সুযোগ পেলেই মানুষকে উৎসাহ যোগানো। প্রত্যেকটি মানুষেরই কিছু না কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে, আমাদের উচিত সেগুলো তুলে ধরা, সেগুলোর প্রশংসা করা। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- মনের মাঝে সবসময় ইতিবাচক চেতনা ধারণ করা।

    জীবনের চলার পথে অনেক ব্যর্থতা আসবে, কিন্তু তাই বলে কখনো আশা হারালে চলবে না। Whether you think you can or you can’t, you’re right.

    Kitty Genovese Case  

    ১৯৬৪ সালের কথা। নিউইয়র্ক শহরে কিটি জেনোভেস নামের এক তরুণী নিজের বাসার সামনে রাস্তায় নির্মম ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ড সে সময়ে দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে।

    একটু সাহস করে এগিয়ে এসে উদ্যোগ নিলেই পরিবর্তন আনা সম্ভব

    বিখ্যাত সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, কিটি জেনোভেস যখন আক্রমণের শিকার হন, আশেপাশে জনা চল্লিশেক মানুষ ছিল, যাদের অনেকেই ছিল তার প্রতিবেশী, চেনা-জানা মানুষ। কিন্তু ঘটনার সময় কেউ এগিয়ে আসেনি তাকে সাহায্য করতে, আক্রমণ থেকে বাঁচাতে। পুলিশে ফোন পর্যন্ত করেনি একজন মানুষও।

    ব্যাপারটি নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। কেন এতগুলো মানুষের কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি? গবেষণায় এর ব্যাখ্যায় দুটো বিষয় উঠে এসেছে-  ‘Diffusion of Responsibility’ এবং ‘Bystander Effect’

    খুব সহজ একটা উদাহরণ দিই- প্রায়ই দেখা যায় বিল্ডিং এর অমুক তলায় কেউ খুব ভীষণ শব্দে গান বাজাচ্ছে। পুরো বিল্ডিং এর সবাই বিরক্ত, কিন্তু কেউ গিয়ে বলতে যায় না গানের আওয়াজ কমানোর জন্য।

    buddhi, mon, moner khela, Psychology, science hacks, science tips

    সবার ভেতরেই চিন্তা কাজ করে, ‘খামাখা আমার এই ভেজালে জড়ানোর দরকার কী? এতো মানুষ আছে, কেউ না কেউ নিশ্চয়ই বলবে!’ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন ‘কেউ না কেউ তো করবেই’ এর জালে আটকা পড়ে থাকার উদাহরণ দেখতে পাবে, যেখানে অন্যায়ের প্রতিবাদে কেউ এগিয়ে আসছে না।

    এজন্যই ৫% খারাপ মানুষ ৯৫% ভাল মানুষের উপর ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ পায়। কিন্তু এতে দমে যাওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজন একটু নেতৃত্বের, একটু সাহস করে এগিয়ে এসে উদ্যোগ নিলেই পরিবর্তন আনা সম্ভব।


    আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন: 



    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com


    ১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com

    ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি অনলাইন ব্যাচ ২০২৩

    দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই দেশসেরা শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হও ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাসে, নাও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সম্পূর্ণ সিলেবাসের 💯তে💯 প্রস্তুতি!

    আপনার কমেন্ট লিখুন