পুরোটা পড়ার সময় নেই? ব্লগটি একবার শুনে নাও।
টেনশন বা দুশ্চিন্তা মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি যেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। টেনশন ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া আজকাল কঠিন ব্যাপার!
বিভিন্ন গবেষণার ফলে প্রমাণিত হয়েছে, মানসিক চাপ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে। নিউ ইয়র্কের রচেস্টার মেডিকল সেন্টারের ‘সেন্টার ফর মাইন্ড-বিডি রিসার্চ’ এর মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক ড. ক্যাথি হেফনার বলেন, “বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে, দুশ্চিন্তা, স্বল্পপুষ্টির খাবার খাওয়া বা ব্যায়াম করার অনীহার ফলে যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা যায়, মানসিক চাপের ফলেও সৃষ্ট সমস্যাগুলো সাধারণত আরও ভয়াবহ হয়ে থাকে।”
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার কিছু উপায় নিয়ে সাজানো হলো এই লেখাটি; যে উপায়গুলো মানসিক চাপ কমিয়ে হৃদয়ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
১। মেডিটেশন
মানসিক চাপ দূর করে মনকে শান্ত করার জন্য মেডিটেশন একটি অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম। কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয় এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২৫ মিনিট করে টানা ৩ দিন মেডিটেশন করলে তা হতাশা এবং দুশ্চিন্তা অনেকখানিই দূর করতে সহায়তা করে। ড. হেফনার বলেন, “ইয়োগা, ধ্যান ইত্যাদি শরীরে দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।”
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা নিয়মিত ইয়োগা করেন তারা তুলনামূলক কম শারীরিক সমস্যা বা প্রদাহে ভোগেন।
আরো পড়ুন: মেধার চর্চায় মেডিটেশন
২। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
দুশ্চিন্তাকে মাথা থেকে দূরে রাখতে হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। আপনার মস্তিষ্ক এবং হাত ব্যস্ত থাকে এমন কোন কাজ করুন যেমন গেম খেলুন বা কোন হস্তশিল্প তৈরি করুন। বলা হয়ে থাকে, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” এটি কিন্তু বাস্তবিকই সত্য। আপনি কোনো কাজ না করে অলসভাবে শুয়ে বসে থাকলে হতাশা আর দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘিরে ধরবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই যে কোনো প্রোডাক্টিভ কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
৩। ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলুন
মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা করে রাখার অভ্যাস কখনোই হৃদযন্ত্রের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। নিউরোসায়েন্স এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ক্ষমা করার পরিবর্তে ক্ষোভ জমা করে রাখলে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং সেই সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ে।
ডক্টর সিমন্স বলেন, “আপনি ভাবতেই পারবেন না মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা থাকলে তা কত দ্রুত এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের ক্ষতি সাধন করে। তাই নিজের ঘাড় থেকে এই আপদ নামিয়ে মানসিকভাবে সুস্থ থাকুন সব সময়।”
৪। বাস্তববাদী হওয়া
যে কোনো ঘটনা বা ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে এ আশঙ্কায় অনেকে অযথা উৎকণ্ঠিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, জীবন মানেই কিছু সমস্যা থাকবে এবং এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে যা জীবনে কাম্য নয়। তবে এও ঠিক, সবকিছুর সমাধান রয়েছে ও সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। কাজেই বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে। ফলে কিছুটা টেনশন কমে যাবে। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের প্রতি অতিরিক্ত আবেগী মনোভাব দূর করতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, গবেষকদের মতে প্রিয় ফুটবল দলের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হারও বেড়ে যায়।
তাই তুচ্ছ কারণে উত্তেজিত হওয়া যাবে না। কারণ জীবনের মূল্য এর চেয়ে ঢের বেশি।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
৫। নির্ভুল হওয়ার চিন্তা বাদ দিন
যারা সাধারনণত টাইপ ‘এ’ চরিত্রের মানে সবসময় শুদ্ধ চরিত্রের অধিকারী হতে চান তারাই মূলত হৃদরোগে বেশি ভোগেন।
অধ্যাপক হেফনারের মতে, এ ধরনের অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে মনোভাব শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিচরিত্রে শত্রুতার মনোভাব তৈরি করে। তিনি বলেন, টাইপ ‘এ’ চরিত্রের পেছনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে, এ ধরনের মনোভাব ব্যক্তিমনে অন্যদের প্রতি প্রবল বিদ্বেষ তৈরি করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ যা পরে হৃদরোগ ডেকে আনে। তাই সবসময় ভালো চিন্তা করুন এবং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন।
৬। ক্যাফেইন নেওয়া কমিয়ে দিন
ক্যাফেইন খুব দ্রুত আপনার ইন্দ্রিয়কে সজাগ করে তুলে এবং মানসিক চাপ বর্ধক হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এটা তখনই ভালো যদি আপনি কোনও হিংস্র বাঘের মুখে পড়েন।
তাই ঘন ঘন চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ুন। কেননা এসবে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে।
এমনকি জিরো-ক্যালরি বা চিনিহীন বলে বাজারজাত করা কোমল পানীয় থেকেও নিজেকে দূরে রাখুন।
৭। তালিকা তৈরি করুন
আপনার মনে হতে পারে আপনি শত শত সমস্যায় ভুগছেন। তাই আপনার দুশ্চিন্তার কারণগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। দেখবেন, অল্প কয়েকটির পর আর কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। এর মধ্যে কিছু সমস্যা থাকবে যেগুলো কমবেশি সবারই থাকে। আপনি উপলব্ধি করবেন যে আপনার আসলে দুশ্চিন্তা করার খুব বেশি কারণ নেই। এটা আপনার দুশ্চিন্তা কমাতে এবং আপনাকে মানসিকভাবে শান্তি দিবে।
প্রাণ খুলে হাসলে শতকরা বিশভাগ বেশি ক্যালরি পোড়ানো যায়
৮। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান
সবসময় একাকী থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি হৃদযন্ত্রেরও ক্ষতি করতে পারে। এমনকি কখনও হৃদরোগ ধরা না পড়লেও ক্ষতির আশংকা থেকেই যায়।
তাই একাকী ঘরে বসে না থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে পড়ুন। তবে এক্ষেত্রে প্রকৃত বন্ধু নির্বাচনে সচেতন হতে হবে।
৯। প্রাণ খুলে হাসুন
২০০৫ সালে পরিচালিত গবেষণায় জানা যায়, সবসময় গম্ভীর থাকার বদলে প্রাণ খুলে হাসলে শতকরা বিশভাগ বেশি ক্যালরি পোড়ানো যায়। প্রাপ্তবয়স্ক কিছু মানুষকে নিয়মিত হাস্যকর এবং তুলনামূলক গম্ভীর চলচ্চিত্র দেখানোর পর গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন।
নিয়মিত আমোদ-প্রমোদ হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে দেয়। ২০১০ সালে প্রকাশিত আমেরিকান জার্নাল অফ কার্ডিওলজি’র তথ্যানুসারে, হাসি-ঠাট্টার ফলে দেহের সংবহনতন্ত্র বা বিভিন্ন নালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ঠোঁটের কোণে সবসময় এক চিলতে হাসি রাখুন কিংবা পারলে মন খুলে হাসুন।
১০। ডায়েরি লিখুন
আপনি হয়তো কখনোই ডায়েরি লেখেননি। যে বিষয়টি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে সেটি একটি ডায়রিতে লিখুন। পাশাপাশি আপনি কী চান বা কী করলে আপনার ভালো লাগত সেই বিষয়টিও লিখুন। ডায়েরি লেখার এই অভ্যাসটি মানসিক চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করবে আপনাকে।
১১। পাওয়ার ন্যাপ বা পর্যাপ্ত ঘুম:
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে না ঘুমিয়ে থাকার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সুস্থ থাকতে হলে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। এক্ষেত্রে সময়ের চেয়ে কতটা নিশ্চিন্তে (sound sleep) ঘুমানো গেলো তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
‘ঘুম’ থেকে ভালো Stress Looser আর কিছু হতে পারে না। তাই যখন কোনোও কিছুই আর ভালো লাগবে না বা মনে হবে কোনো কিছুতেই মন দিতে পারছেন না, তখন একটু নিরিবিলি জায়গা দেখে পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে নিন। দুশ্চিন্তা কেটে যাবে!
এ কথা যেমন সত্যি যে, টেনশন মানুষের জীবনে স্বচ্ছন্দ গতি এবং স্বাভাবিক চলার পথে বিঘ্ন ঘটায়, তেমনি এ কথাও অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে, জীবনে কিছু পরিমাণ টেনশন থাকা প্রয়োজন। কেননা, এই টেনশন জীবনের কাজ করার পেছনে উৎসাহ জোগায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে, কাজ করার পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।
আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:
- Communication Masterclass by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course by Ayman Sadik and Sadman Sadik
- ঘরে বসে Spoken English Course by Munzereen Shahid
- Microsoft Office 3 in 1 Bundle
- English Grammar Crash Course by Sakib Bin Rashid
- ঘরে বসে Freelancing by Joyeta Banerjee
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারেন এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com
১০ মিনিট স্কুলের লাইভ এডমিশন কোচিং ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিঙ্কে: www.10minuteschool.com/admissions/live/
আপনার কমেন্ট লিখুন