আজকের লেখাটি শুরু করি আমার ভার্সিটি জীবনের একটি গল্প দিয়ে। এইতো কিছুদিন আগে আমার ভার্সিটিতে একটি পোস্টার ডিজাইন কম্পিটিশন হয়। আমি আর আমার বন্ধুরা বেশ আনন্দে অংশগ্রহণ ও করি। তবে বিপত্তি বাঁধে অন্য এক জায়গায়। পোস্টার বানানোর পর জানতে পারি যে শুধু পোস্টার ডিজাইন করলেই হবে না! সবার সামনে সেই পোস্টার প্রেজেন্টেশন ও দিতে হবে। আমার বন্ধুরা তো ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। সেই সময় মনে হয়েছিলো, যদি ছোটবেলায় পোস্টার ডিজাইন ও প্রেজেন্ট করার অভ্যাস থাকতো তাহলে প্রতিযোগীতাটা হয়তো জিতেই যেতাম।
তবে তোমরা কি জানো যে– এখন নতুন কারিকুলামের আলোকে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীরাই পোস্টার ডিজাইন এবং প্রেজেন্ট করা সবই শিখছে স্কুলজীবন থেকে। আজকের এই ব্লগে সেইসব শিক্ষার্থীদের জন্য আমি শেয়ার করেছি— পোস্টার ডিজাইন কিভাবে করতে হয়, এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ, পোস্টার বানানোর ধাপসমূহ এবং টিপস এন্ড ট্রিকস যা ব্যবহার করে অসাধারণ পোস্টার ডিজাইন করে বন্ধুদের তাঁক লাগাতে পারবে।
পোস্টার ডিজাইন এর ধাপসমূহ
পোস্টার বানানোর পুরো প্রক্রিয়াকে আমরা কয়েকটি ধাপে ভাগ করতে পারি।
- পরিকল্পনা
- মার্জিন ও লেআউট
- লেখা ও আঁকা
- ডেকোরেশন ও অলংকরণ
চলো প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি
পরিকল্পনা
পোস্টার ডিজাইন এর প্রথম ধাপ হচ্ছে— পরিকল্পনা করা। যেকোনো কাজ সফল ভাবে শেষ করতে হলে পরিকল্পনার বিকল্প নেই। তাই স্কুলে যখনই কোনো টপিক নিয়ে পোস্টার ডিজাইন করতে বলবে, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ আগাতে হবে।
স্কুলে মূলত দুই ধরনের কাজ দিতে পারে—
- দলগত
- একক
এককভাবে পোস্টার ডিজাইন এর ক্ষেত্রে তুমিই রাজা। তোমার মতে করে পরিকল্পনা করা শুরু করে দিতে পারবে।
তবে দলগত কাজে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে মিলে পোস্টার ডিজাইন করা লাগবে। তাই পরিকল্পনাও করতে হবে দলীয়ভাবে। সবার সাথে বসে পোস্টার ডিজাইন এর মূল জিনিসগুলো নির্ধারণ করে ফেলো।
যেমন-
০১। পোস্টারের সাইজ কেমন হবে?
০২। পোস্টারের ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা হবে নাকি রঙিন হবে?
০৩। কোন ধরনের কলম ব্যবহার করবে?
০৪। লম্বালম্বিভাবে নাকি আড়াআড়িভাবে ডিজাইন করবে?
০৫। কে কোন অংশের কাজ করবে?
০৬। হাতে লিখবে নাকি প্রিন্ট করে বানাবে?
০৭। পোস্টারে ছবি বেশি দিবে নাকি লেখা বেশি দিবে?
এইভাবে মূল বিষয়গুলো নির্ধারণ করে ফেলো। দেখবে কাজ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।
পোস্টার প্রেজেন্টেশন সুপার কোর্স
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
প্রস্তুতি
অনেকতো পরিকল্পনা করলে, পরের ধাপ কী মনে আছে তো? পরিকল্পনার পর যেতে হবে প্রস্তুতিতে। প্রস্তুতিকে আমরা কয়েকটা ধাপে বিভক্ত করতে পারি–
ডিজাইন নির্বাচন করা
পোস্টার ডিজাইন শুরু করার আগেই ডিজাইন এর লেআউট তৈরি করো। কি ধরনের ডিজাইন করতে চাচ্ছো, কি ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড হবে সকল কিছু নির্বাচন করো। ডিজাইন ঠিক হওয়ার পর পোস্টারে কী লিখবে তা নির্ধারণ করো। কোথায় কোথায় ছবি দিবে, সেটিও ঠিক করে ফেলো। পোস্টার ডিজাইনে ছবি ব্যবহার করলে তা দেখতে খুবই সুন্দর হয়। ছবিগুলো কোন সোর্স থেকে নিবে সেটি নির্ধারণ করে রাখবে। কাজের সময় তাহলে সুবিধা হবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণের লিস্ট
এই ধাপে পোস্টার ডিজাইন করার জন্য কী কী উপকরণ লাগবে তা নির্ধারণ করে ফেলো এবং একটি লিস্ট বানাও। সাধারণত একটি পোস্টার ডিজাইনের জন্য নিম্নোক্ত জিনিসগুলো প্রয়োজন হয়-
পোস্টার ডিজাইন করতে যা যা লাগবে
১। বড় আর্ট পেপার
২। রঙ্গিন কাগজ বা পোস্টার পেপার
৩। কালো ও রঙ্গিন কালির কলম
৪। পেন্সিল
৫। ইরেজার
৬। মার্কার বা সাইনপেন
৭। শার্পনার
৮। স্কেল
৯। জ্যামিতি বক্স
১০। হাইলাইটার
১১। কাঁচি
১২। স্কচটেপ
১৩। আঠা
১৪। গ্লিটার
১৫। কর্কশিট
১৬। স্ট্যাপলার ও পিন
১৭। ফোম
১৮। স্টিকি নোটস
১৯। ব্রাশ বা তুলি
২০। দড়ি বা ফিতা
২১। টিস্যু পেপার
২২। টুথপিক ও কটনবাড
মার্জিন ও লেআউট
পোস্টার ডিজাইনের পরবর্তী ধাপ হচ্ছে মার্জিন ও লেআউট। আর্ট পেপার হাতে পাওয়ার পর সবার আগে চারদিকে মার্জিন করে ফেলবে যেন বাকি সব মার্জিনের ভেতরে রেখে সাজানো যায়।
মার্জিনের পাশাপাশি লেআউট করে ফেলবে যে পোস্টারের কোন জায়গায় কী ধরনের উপরকণ যাবে।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের আর্ট পেপার পাওয়া যায়। প্রশ্ন হচ্ছে কোন সাইজের আর্ট পেপারে কত ইঞ্চি মার্জিন দিবে?
তোমাদের জন্য মার্জিন এর একটি বেসিক ধারণা দিয়ে দিলাম নিচেঃ
পোস্টারের/কাগজের সাইজ | চারদিকের মার্জিন |
A0 | ৩ ইঞ্চি |
A1 | ২.৫ ইঞ্চি |
A2 | ২ ইঞ্চি |
A3 | ১.৫ ইঞ্চি |
A4 | ১ ইঞ্চি |
ডিজাইন নির্বাচন
পোস্টার ডিজাইন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-
- চতুর্ভাগ ডিজাইন
- কলাম-ভিত্তিক ডিজাইন
- রো-ভিত্তিক ডিজাইন
- বক্সভিত্তিক ডিজাইন
- ছবিকেন্দ্রিক ডিজাইন
- ফ্লো-চার্ট ভিত্তিক ডিজাইন
এই প্রত্যেকটা ডিজাইন টাইপ তোমাদের প্রিয় আয়মান ভাইয়ার “পোস্টার ডিজাইন সুপার বুক”- এ আলোচনা করেছেন। তোমরা চাইলে বিস্তারিত দেখে নিতে পারো বইটি ডাউনলোড করে।
যেকোনো ধরনের ডিজাইন নির্বাচন করে পোস্টার ডিজাইনের পরবর্তী ধাপ শুরু করতে হবে যেটা হচ্ছে লেখা ও আঁকা।
লেখা ও আঁকা
প্রথমে আলোচনা করা যাক কিভাবে লিখবে পোস্টার ডিজাইনের সময়!
লেখা
সবকিছুই তো হলো এবার আসল কাজ। পোস্টারে তোমার নির্বাচন করা টপিকে লেখা শুরু করতে হবে। পোস্টারে যা যা লিখবে আগে কোনো খাতায় লিখে রাখতে পারো যাতে পোস্টারে কোনো ভুল না হয়।
একটা পোস্টারে মূলত ৩ ধরনের লেখা থাকে।
মূল শিরোনাম বা হেডলাইন
হেডলাইন বা মূল শিরোনামে তোমার প্রেজেন্টেশনের টপিকটি লিখবে। ধরো তোমার টপিক যদি হয়ে থাকে ২১শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে পোস্টার ডিজাইন করতে হবে তাহলে মূল শিরোনামে লিখতে পারো – “২১শে ফেব্রুয়ারি- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস”
হেডলাইন সবসময় বড় করে পোস্টারের শুরুতে লিখবে। চেষ্টা করতে পারো ভিন্ন রঙ এর কলম ব্যবহার করতে এবং মজার টাইটেল রাখতে।
সাপোর্টিং লাইন বা সাবহেডিং বা উপশিরোনাম
সাপোর্টিং লাইনে তোমার টপিক নিয়ে সুন্দর করে সারসংক্ষেপ দিতে পারো। ইন্টারেস্টিং কিছু তথ্য দিতে পারো টপিক সম্পর্কিত।
ব্যাখ্যা
হেডলাইন ও সাপোর্টিং লাইন এর পরে এবার পুরো পোস্টারটি ডিজাইন করো বিভিন্ন ব্যাখা দিয়ে। যেমন ধরো ২১শে ফেব্রুয়ারির টপিক নিয়ে লিখলে এর ইতিহাস, শহীদ মিনার, কারা প্রাণ দিয়েছিলো এসব কিছু নিয়ে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে ফেলতে পারো। ছবির জন্য ইন্টারনেট থেকে ছবি ডাউনলোড করে, প্রিন্ট করে লাগাতে পারো। খবরের কাগজ কিংবা কোনো ম্যাগাজিন থেকে ভালো ছবি পেলে সেটিও ব্যবহার করতে পারো।
নতুনরূপে অনলাইন ব্যাচ ২০২৪ (৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি)
কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:
আঁকা
লেখার পর কাজ হচ্ছে পোস্টারে বিভিন্ন ছবি আঁকা কিংবা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা। ছবি ডাউনলোড করার জন্য নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারোঃ
১। গুগলে যে জিনিসের ছবি চাচ্ছো সার্চ অপশনে তা টাইপ করো।
২। ইমেজ (image) অপশনে ক্লিক করো।
৩। পছন্দের ছবিটি ডাউনলোড করো।
৪। প্রিন্ট করো।
এছাড়া এই ওয়েবসাইটগুলো থেকে সুন্দর, রঙ্গিন ছবি তুমি ডাউনলোড করে নিতে পারবে ফ্রি-তেই।
ইন্টারনেট ছাড়াও তুমি চাইলে বই, ম্যাগাজিন, খবরের কাগজ থেকে কাটআউট সংগ্রহ করতে পারো। চেষ্টা করবে ছবিটি যেন সুন্দর, স্পষ্ট ও রঙিন হয়। এমন যেন না হয় যে তোমার পোস্টারের ডিজাইন এর সাথে ভালো লাগছে না।
ডিজাইন ও অলংকরণ
পোস্টার ডিজাইনের শেষ ধাপ হচ্ছে ডিজাইন ও অলংকরণ। বিভিন্নভাবে তুমি পোস্টারটাকে সুন্দরভাবে ডিজাইন করতে পারো। পোস্টারের সৌন্দর্য বাড়াতে অনেকেই রঙ, গ্লিটার, স্টিকার ইত্যাদি ব্যবহার করে। অনেকে মার্জিনটাকে সুন্দর করে ডিজাইন করে।
ধরো, তুমি চিকন বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মার্জিন তৈরী করলে। বা মসুরের ডাল ব্যবহার করে ডিজাইন করলে। আসলে পোস্টার সাজানোর কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই।
অলংকরণ এর পর পোস্টারটি পড়ে দেখো কোথাও কোনো ভুল করেছ কিনা!
পোস্টার ডিজাইন ও প্রেজেন্টেশন এর বিস্তারিত জানতে ‘পোস্টার প্রেজেন্টেশন সুপার বুক’ বইটির পিডিএফ ডাউনলোড করতে পারো!
অসাধারণ পোস্টার ডিজাইন এর জন্য অতিরিক্ত কিছু টিপস
- পোস্টার বানানোর জন্য বড় আর্ট পেপার বেছে নেওয়াই ভালো। কারণ, বড় কাগজে জায়গা বেশি থাকায় অনেক তথ্য দিতে পারবে। দূর থেকে সহজে পড়া যাবে।
- হরেক রঙের কলম ব্যবহার করতে পারো পোস্টারটিকে আকর্ষণীয় করার জন্য।
- ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে সবসময় হালকা রঙয়ের আর্ট পেপার বাছাই করবে, যাতে যেকোনো আঁকা, লেখা ও ছবি বেশ ভালোভাবে ফুটে ওঠে।
- পোস্টারের হেডলাইনটিতে মজার কিছু ব্যবহার করতে পারো
- পোস্টারে লেখার আগে হালকা করে পেন্সিল দিয়ে দাগ দিয়ে নিতে পারো যাতে লেখা সোজা ও সুন্দর হয়।
- দলগত কাজের ক্ষেত্রে কে কোন পার্ট লিখবে কিংবা কোন কাজ করবে তা আগেই নির্ধারণ করে রাখো।
- পোস্টারে অনেক লেখা দিয়ে ভরিয়ে ফেললে দেখতে সুন্দর দেখায় না। তাই কম লেখা ও বেশি ছবি ব্যবহার করবে।
- ইন্টারনেট থেকে যখন তথ্য নিবে বারবার চেক করবে তথ্য নির্ভুল কি না। টিচার ও বড়দের দেখিয়ে নিবে তথ্য সঠিক আছে কিনা।
ব্যাস, এভাবেই তুমি একটি তাক লাগানো পোস্টার ডিজাইন করতে পারবে। মনে রাখবে, পোস্টার ডিজাইন কিংবা সুন্দর করার বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। নিজের মেধা ও ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে চেষ্টা করবে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে।
পোস্টার ডিজাইন এর পর তো সেটা সবার সামনে প্রেজেন্টও করতে হবে, তাইনা? তোমরা কি জানো, তোমাদের সবার প্রিয় আয়মান ভাইয়া পোস্টার প্রেজেন্টেশন এর উপর একটি কোর্স লঞ্চ করেছে তোমাদের জন্য, যাতে তোমরা তাক লাগানো পোস্টার ডিজাইন এর পাশাপাশি অসাধারণভাবে পোস্টার প্রেজেন্টেশন দেওয়াও শিখতে পারো। আর এই কোর্সটি কিন্তু একদম ফ্রি। দেরি না করে কোর্সটিতে এনরোল করো।
বছরজুড়ে অভিজ্ঞ টিচারদের সাথে ক্লাস 6-10 এর পড়াশোনা ও পরীক্ষার জন্য সেরা প্রস্তুতি নিতে আজই ভিজিট করো আমাদের অনলাইন ব্যাচ ২০২৫ -এ:
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিংকে: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন